Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নির্বাচন কমিশনে নিয়মিত রুদ্ধদ্বার বৈঠক করছেন এইচ টি ইমাম- রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৩৩ পিএম

নির্বাচন কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের নিয়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম নিয়মিত রুদ্ধদ্বার বৈঠক করছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, এইচ টি ইমাম নিয়মিত নির্বাচন কমিশনে যান এবং গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। এমনকি তিনি নির্বাচন কমিশনে কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকদেরকেও দেখে নেয়ার হুমকি দিচ্ছেন। শনিবার (৮ নভেম্বর) সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, কয়েকদিন আগে একজন সাংবাদিক এইচ টি ইমামের কাছে প্রশ্ন করেছিলেন যে, ঢাকার আদাবরে আওয়ামী লীগের দুজন মারা গেল, হেলমেট পরে ছাত্রলীগ শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা করলো কিন্তু কোনও পদক্ষেপ নেয়া হলো না, আর বিএনপি অফিসের সামনে পুলিশী হামলার ঘটনায় মামলা হলো এবং গ্রেফতার করা হলো বিএনপি নেতাকর্মীদের? এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তিনি ক্ষেপে যান এবং সাংবাদিককে বলেন-আপনি কি বিএনপি করেন? মওদুদ আহমদের ওপর ককটেল হামলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এইচ টি ইমাম সাংবাদিকদের বলেন-আপনি কি মওদুদ?

গণমাধ্যমকে সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণে নিতে সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ইসিতে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির সদস্যরা নিয়মিত যাতায়াত করেন। তারা যতবার নির্বাচন কমিশনে গিয়েছেন ততবার সেখানে কর্তব্যরত সাংবাদিকদের হুমকি-ধামকি দিয়েছেন। সাংবাদিকদের প্রশ্ন পছন্দ না হলে তাদেরকে রাজনৈতিক দলের কর্মী বলে ট্যাগ দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, সাংবাদিকদের লিস্ট করে তাদের বিষয়ে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। আগামী রোববার রাতে এইচ টি ইমামের বাসায় ইসি বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের ডাকা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালক কমিটির কো চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময় করবেন বলে রোববার রাত ৮ টায়, ১ নম্বর হেয়ার রোডস্থ বাসভবনে- এ জন্যে সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়ে এ বার্তা পাঠিয়েছেন। মতবিনিময়ের নামে মূলত: গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণের কৌশল নিয়েছেন এইচ টি ইমাম। এমনিতে ভোট কেন্দ্রে সাংবাদিকদের প্রবেশে নির্বাচন কমিশন কঠোর বিধিমালা জারি করেছে। তাতেও আশ্বস্ত না হতে পেরে এখন গণমাধ্যমকে সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করতে তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে।

তফসিল ঘোষণার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, সারা দেশে গ্রেফতার ও মিথ্যা মামলার হিড়িকে নেতাকর্মীদের জীবন বিপন্ন ও বিপর্যস্ত। কোন মামলা ছাড়াই অনেককে গ্রেফতার করা হচ্ছে। নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি করা হচ্ছে। তাদেরকে এলাকা ছাড়া করা হচ্ছে, ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। গুম-খুন-অপহরণ করা হচ্ছে। এর দায় নিতে হবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদাকে। কেননা জনপ্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের অধীনে।

তিনি বলেন, গত ২৪ নভেম্বর নুরুল হুদা বলেছিলেন, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্দেশনা ছাড়া আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে গ্রেফতার করছে না। আমাদের কথা পুলিশ মান্য করে। আমাদের কথার বাইরে গিয়ে বিনা কারণে কাউকে গ্রেফতার করে না। তার কথাই প্রমাণ করে যে, তফসীল ঘোষণার পরে এখন যে গুম, খুন, গ্রেফতার, মামলা, রিমান্ড চলছে সবই কি তাহলে তাঁর নির্দেশেই হচ্ছে?

ইসির প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সৃষ্টি করার লক্ষ্যে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণসহ পুলিশ ও জনপ্রশাসনের সকল অপতৎপরতা নিয়ন্ত্রণ করুন। ক্রসফায়ার, গুম, খুন, গ্রেফতার মিথ্যা মামলা, দমন, নির্যাতন বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিন। ডিবি অফিসকে গুমের ঘাঁটি বানানো হয়েছে অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ক্ষমতাসীনদের স্বার্থে একতরফা নির্বাচনের জন্য পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকধারী পুলিশও দিনকে দিন ভয়ংকর হয়ে উঠছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) অফিসকে গুমের নতুন ঘাঁটি বানানো হয়েছে। গত ১৯ নভেম্বর বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী যশোর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আবু বকরের লাশ বুড়িগঙ্গা থেকে উদ্ধারের পর তার সহকর্মী বিএনপি নেতা কেশবপুর উপজেলার মজিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য সাইফুর রহমানকে ঢাকায় ডেকে এনে মিন্টু রোডে ডিবি কার্যালয়ে ঢুকিয়ে গুম করা হয়েছে। সাইফুর রহমানের পরিবার ও সহকর্মীরা জানিয়েছেন ডিবি পুলিশের কর্মকর্তা পরিচয়ে একজন ফোন করলে তিনি ঢাকায় আসেন। গত ২৭ নভেম্বর দুপুর ১২টার দিকে তিনি মিন্টু রোডে ডিবি কার্যালয়ে ঢোকেন। এরপর তার আর খোঁজ মিলছে না। এর আগে দলের মনোনয়নপত্র তুলতে ঢাকায় এলে অপহরণ করা হয় একই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আবু বকরকে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে গত ২৬ নভেম্বর অনলাইন এক্টিভিস্ট রবিউল আউয়াল সোহাগকে কুমিল্লা থেকে তুলে নেয়ায় পর এখন পর্যন্ত তার কোনও সন্ধান পাচ্ছে না তার পরিবার।

আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আপনারা এই দেশ এবং এই সমাজেরই মানুষ, কেন আপনারা সরকারের স্বার্থে মনুষ্যত্বহীন কাজে নিজেদেরকে জড়ান? আপনারা সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল, মত, বিশ্বাসের মানুষের ওপর সহিংস নিষ্ঠুরতা কিভাবে অবলীলায় চালাতে পারেন? এরাও এই দেশেরই মানুষ। আপনারা কি নিশ্চিত যে, আওয়ামী লীগ চিরদিনের জন্য ক্ষমতায় থাকবে? আপনারা কিসের লোভে গণতন্ত্র, নাগরিক স্বাধীনতা, মানুষের জীবন ও নিরাপত্তাকে বিপদের মধ্যে ঠেলে দিতে কুণ্ঠিত হচ্ছেন না? আপনাদের আহবান জানাই-অবৈধ শাসকগোষ্ঠীর স্বার্থে আপনারা মানুষের ভোটাধিকার ছিনিয়ে নেবেন না। নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করতে সহায়তা করুন। নিজ দেশের নাগরিকদের গুম-খুনে নিজেদের হাতকে রঞ্জিত করবেন না। আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা, আপনারা নিরপেক্ষ থাকুন।

খুলনার বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি ও পুলিশ কমিশনারকে ভোট জালিয়াতির মাষ্টার মাইন্ড উল্লেখ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সেটিরই প্রতিফলন নগরবাসী লক্ষ্য করেছে। ওই নির্বাচনে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে খুলনা মহানগরে ৩৫০ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে নিয়ে এসে ৯৬ কেন্দ্রে দায়িত্ব দেয়া হয়। তাদেরকে দিয়ে অভিনব কায়দায় ভোট জালিয়াতির দৃশ্য দেখেছে নগরবাসী। এই কর্মকর্তারা ভোটের দিন তাদের বুকের ব্যাজ খুলে বিভিন্ন কেন্দ্রে ব্যালট পেপারে সিল মেরে ব্যালট বাক্সে ঢোকায়। ভোটের আগের দিন গভীর রাতে তারা ৩৫ শতাংশ সিল মেরে ব্যালট পেপার বাক্সে ঢুকিয়ে ফেলে। সিস্টেমেটিক সন্ত্রাসী কায়দায় ব্যালট বাক্স ভর্তি করার বাকী দৃশ্য সকাল থেকে ভোটাররা অবলোকন করতে থাকে, যা আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ