Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভোটের আগেই নির্বাচনকে ‘ছুটি’

এরশাদ হাসপাতালে রওশন নীরব

স্টালিন সরকার | প্রকাশের সময় : ৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম | আপডেট : ১২:০৮ এএম, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৮

‘কবিতা তোমায় দিলাম আজকে ছুটি/ ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী-গদ্যময়/পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি’। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘ছাড়পত্র’ কবিতায় ‘কবিতাকে ছুটি’ দেয়ার মতোই সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদের জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের এখন ‘ভোটকে ছুটি’ দেয়ার অবস্থা। দেশের তৃতীয় বৃহৎ রাজনৈতিক দলটির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় ভোটের আগেই নির্বাচনকে ছুটি দেয়ার বার্তা দিয়েছেন। কেউ হতাশ হয়ে ঢাকা থেকে গ্রামে ফিরে যাচ্ছেন। অনেকেই চোখের পানি ফেলছেন, কেউ কেউ লাঙ্গল প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনে প্রচারণা দূরের কথা, ভোটকেন্দ্রে না যাওয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গতকাল মহাজোটের আসন বণ্টনের পর দলের কয়েকজন নেতার অনুভ‚তি জানতে চাইলে তারা জাপার হালফিল চিত্র তুলে ধরেন। বলেন, দলকে কার্যত বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। মেরুদন্ডহীন এরশাদের কিছু দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সুবিধাবাদী কিছু নেতা দলের লাঙ্গলকে ‘নৌকায়’ তুলে দিয়েছে। এরশাদ অসুস্থতার নাটক সাজিয়ে কর্মীদের কাছে নিজের ইমেজ রক্ষা করছেন।
সারাদেশ থেকে লাঙ্গলের মনোনয়নের প্রত্যাশায় জাতীয় পার্টির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ঢাকায় আসেন। সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রত্যেকেরই সঙ্গে ছিল কয়েকজন করে কর্মী। দীর্ঘ দিন থেকে ঢাকায় অবস্থানের পর ভগ্ন মনে ফিরে যাচ্ছেন তারা। দিনাজপুর থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী এক নেতা বলেন, দলের একদিকে হয়েছে মনোনয়ন বাণিজ্য; অন্য দিকে দল বিক্রি। এখন গ্রামে ফিরে যাচ্ছি, তবে নির্বাচনে ভোট দিতে যাবো না। রংপুরের এক নেতা বলেন, রংপুরে জাপাকে দেয়া হয়েছে দুটি আসন। বোঝা যায় নির্বাচনে আমাদের অবস্থা। জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধের রাজনীতি করি। নৌকার প্রার্থীর ভোট চাইতে গেলে মানুষ তো পেটাবে। অতএব অবার নির্বাচনে কোথাও থাকছি না।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের আসন ভাগাভাগি হয়েছে। দুই জায়ান্ট শক্তি গতকাল প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে। সে তালিকায় আওয়ামী লীগ থেকে ১৪ দল ও মহাজোটর শরিক দল এবং বিএনপি থেকে ২০ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্টের জন্য ৯৪ আসন রেখে দলীয় প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণা করা হয়। এমনকি মহাজোট থেকে ১৪ দলের ১৬ জন প্রার্থীর তালিকাও প্রকাশ করা হয়। কিন্তু ব্যতিক্রম শুধু জাতীয় পার্টি। দলটি কতগুলো আসনে প্রার্থী দিচ্ছে তা এখনো জানেন না দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এরশাদের বাসায় নিত্য যাতায়াত করেন এমন এক নেতা বলেন, পাঁচ বছর পরমুখাপেক্ষী রাজনীতি করার খেসারত দিচ্ছেন স্যার (এরশাদ)। তিনি নিজেকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছেন যে, ‘তার অসুস্থতা’ মানুষ বিশ্বাস করে না। দেশের রাজনীতিতে এরশাদ এখন ‘প্রবাদের বাঘ এলো রাখালের গল্পের মতোই’ মিথ্যাবাদী রাখাল হয়ে গেছেন। তিনি দলের ভেতরে কিছু পাতি নেতার সমন্বয়ে ‘বনানী অফিস সিন্ডিকেট’ তৈরি করে আসন বাণিজ্য করেছেন। মহাসচিব পরিবর্তন করে নাটক করছেন। এতে আমাদের চরম মূল্য দিতে হচ্ছে। আগের মহাসচিব হাওলাদার ‘বিতর্কিত’ আর নতুন মহাসচিব রাঙ্গা ‘মহাবিতর্কিত’ ব্যক্তি। মহাজোট থেকে জাপাকে যে আসন দেয়া হয়েছে, সেখান থেকে ১০ জন এমপি হয়ে আসা কঠিন। তবে বিপুল সংখ্যা বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মী এবার ভোট দিতে যাবেন না।
জামায়াত আধা নিষিদ্ধ-আধা বৈধ দল হলেও দলটি ২০ দলীয় জোট থেকে প্রত্যাশিত আসন পেয়ে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় নামার পথে। এখনো ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি না হলেও বড় এই তিন দল এখন ভোটযুদ্ধে। কেবল ব্যতিক্রম ‘ক্ষমতাসীন বিরোধী দল’ খ্যাত এরশাদের জাতীয় পার্টি। দলটিকে মহাজোট থেকে ৩৬টি আসন দেয়া হলেও দলটির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ভোটের আগেই নির্বাচনকে জানাচ্ছে ছুটি। রাগে-দুঃখে-ক্ষোভে তারা কুঁকড়ে গেছেন। এরশাদের ঘাঁটি খ্যাত রংপুরের ছয় আসনের মধ্যে জাতীয় পার্টিকে দেয়া হয়েছে মাত্র দুটি আসন। বগুড়ায় চারটি, ঢাকায় দুটি, সুনামগঞ্জে একটি, ফেনিতে একটি এবং ময়মনসিংহসহ যে সব আসন জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে, সেগুলো কার্যত বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এসব আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের নির্বাচন যুদ্ধে প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ ভোট পাওয়ার অবস্থা নেই। যে আসনগুলো জাতীয় পার্টিকে দেয়া হয়েছে, তার কয়েকটি আওয়ামী লীগের পছন্দের প্রার্থীদের জন্য; আবার কয়েকটি আসনে নৌকা ও লাঙ্গলের প্রার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হচ্ছে।
মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে দলের মহাসচিব পদ থেকে রুহুল আমিন হাওলাদারকে বাদ দেয়া হয়েছে। নতুন মহাসচিব করা হয় মশিউর রহমান রাঙ্গাকে। জানা গেছে, ২০০১ সালে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেয়া এই রাঙ্গার প্রতি দলের অধিকাংশ নেতাকর্মীর আস্থা নেই। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে রওশন এরশাদ ‘সরব’ থাকলেও এবার তিনি রহস্যজনকভাবে নীরব। দলের একাধিক নেতা জানান, রওশন এরশাদ এবার স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, শেষ বয়সে তিনি স্বামী এইচ এম এরশাদের মতের বাইরে যাবেন না। সে জন্যই কয়েকদিন থেকে ‘দলের অভ্যন্তরে মহাকান্ড এবং মনোনয়ন বাণিজ্য’ ঘটলেও তিনি নিরবতা পালন করছেন।
মহাজোটের শরিকদের জাসদ হাসানুল হক ইনু তিন, জাসদ মঈনুদ্দিন খান বাদল (আম্বিয়া গ্রুপ) এক, নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর তরিকত ফেডারেশন দুই, জেপি মঞ্জু দুই, মেননের ওয়ার্কার্স পার্টি পাঁচ, বি চৌধুরীর যুক্তফ্রন্ট তিন আসন পেয়েছে। এরশাদের জাতীয় পার্টিকে ৩৬ আসন দেয়া হলেও আসলে কতজন আসন পাচ্ছেন তা প্রকাশ করা হয়নি। নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়ার ভয়ে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতে বিলম্ব করা হচ্ছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দলের সিনিয়র নেতাদের অবস্থা কিংকর্তব্যবিমূঢ়। লাঙ্গলের জন্য কোন কোন আসন ছাড়া হয়েছে সে তথ্য নীতি নির্ধারকরাও প্রকাশ করছেন না। তবে গতকাল জাতীয় পার্টির যাদের সঙ্গেই কথা হয়েছে, তাদের অধিকাংশই জানান, তারা ব্যক্তিগতভাবে এবার নির্বাচনী ডামাডোলে থাকবেন না। নিজ নিজ এলাকায় ফিরে গিয়ে ঘরে বসেই থাকবেন, নির্বাচনী প্রচারণায় জড়াবেন না। এমনকি অনেক নেতাই এবার ভোট দিতে যাবেন না বলে জানান।



 

Show all comments
  • Abdulla Al Mamun ৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৩৯ এএম says : 0
    আল্লাহ না করুক এরশাদ সাহেব এ অবস্থায় মারা গেলে।মানুষ কে সেটা বিশ্বাস করাতেও অনেক সময় চলে যাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Bonna Siddiqui ৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৩৯ এএম says : 0
    বেচারা এরশাদের অবস্থা এস কে সিনহার মতো।
    Total Reply(0) Reply
  • Aminul Islam Badhol ৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৩৯ এএম says : 0
    চুপ ভাই কিছু ভাবছে …
    Total Reply(0) Reply
  • Guljar Ahmed ৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৪০ এএম says : 0
    কম খরচে অধিক বিনোদন দেওয়া পার্টির নামই তো জাতীয় পার্টি
    Total Reply(0) Reply
  • Shihab Saifu ৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৪০ এএম says : 0
    মাঠে আওয়ামীলীগ, হাসপাতালে জাতীয়পার্টি, আদালতে বিএনপি, গ্রেপ্তার আতংকে জামায়াত। এই হলো- নির্বাচনী লেভেল -ফিল্ড!
    Total Reply(0) Reply
  • AL Amin ৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৪১ এএম says : 0
    জাতীয় পার্টি একটা অসুস্থ দল,এরা ৩০০ আসনে নির্বাচন করলে এমনিতেই ৪০/৪৫ টা আসন পেতো, আর এখন ৩৬ টা থেকে কয়টা পাবে কে বলতে পারে?
    Total Reply(0) Reply
  • Yasin Abdul Mannan ৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৪২ এএম says : 0
    পাবলিক এত বোকা না। কারন ওনার দল এখন ওনার হাতে নাই। ওনার দল সরকারের হাতে ।যদি উনি বিদ্রোহ করেন তাহলে মামলা রায় কালকেই হয়ে যাবে প্রয়োজনে শুক্রবারে কোড বসানো হবে মাহবুব আলম তৈরি আছেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Miah ৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৪২ এএম says : 0
    অস্থির হওয়ার প্রয়োজন নাই। ৩০ তারিখের পরই ওরা জাতীয় বিলুপ্ত পার্টি হিসেবে জাদুঘরে চলে যাবে। জনগন তাই করবে। এরশাদের অসুখও পুরোপুরি সেরে যাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mustafiz Masum ৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৪৩ এএম says : 0
    এই লোকটার জন্য আমার করুনা ও হয়না। তবে খারাপ লাগে, ওর ব্যক্তিত্বহীনতা আর ওর স্ত্রীর চাটুকারীতার কারনে ডিজিটাল সৈরাচার তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সফল হইছে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ