Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নতুন দিগন্তে রেল

একনেকে ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন : পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা থেকে ট্রেন যাবে খুলনা ও বরিশাল

প্রকাশের সময় : ৫ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪০ পিএম, ৪ মে, ২০১৬

নূরুল ইসলাম : এবার পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা থেকে ট্রেন যাবে খুলনা ও বরিশাল। ঢাকা থেকে ট্রেনে খুলনা যেতে এখন সময় লাগে ১২ ঘণ্টা। রেলের এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সময় লাগবে সর্বোচ্চ চার ঘণ্টা। একইভাবে সর্বোচ্চ সাড়ে তিন ঘণ্টায় যশোর এবং চার ঘণ্টায় বরিশাল যাওয়া যাবে। ২০১৮ সালে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন থেকে ঢাকা থেকে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর, মাওয়া, ফরিদপুরের ভাঙ্গা, গোপালগঞ্জ, কাশিয়ানি, ভাটিয়াপাড়াঘাট, নড়াইল, যশোর হয়ে খুলনা যাবে ট্রেন। এর সাথে প্রকল্পের তৃতীয় অংশ বাস্তবায়িত হলে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে মাদারীপুর হয়ে ট্রেন যাবে বরিশাল হয়ে পটুয়াখালী। গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা। পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে কোনো মূল্যে নির্ধারিত সময়েই পদ্মা সেতুর কাজ শেষ করার নির্দেশ দেন। সেইসঙ্গে পদ্মা সেতুর ওপর রেললাইনের অংশ ২০১৮ সালের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন। পদ্মার সেতুর উপর রেলওয়ের এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশে রেলওয়ের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। রাজধানীর সাথে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে চালু হবে উন্নতমানের ট্রেন। বাড়বে গতি, কমবে সময় ও দূরত্ব।  
রেল সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু রেল প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর, সিরাজদিখান ও মাওয়া হয়ে নতুন রেললাইন পদ্মা সেতুতে গিয়ে উঠবে। সেখান থেকে চলে যাবে ফরিদপুরের ভাঙ্গা জংশনে। এরপর ভাঙ্গা থেকে যাবে গোপালগঞ্জ হয়ে কাশিয়ানি জংশন স্টেশনে। সেখান থেকে ভাটিয়াপাড়া ঘাট হয়ে নড়াইল হয়ে যশোর যাবে। যশোর থেকে খুলনা পর্যন্ত বর্তমানে যে রেললাইন আছে সেটি দিয়ে ট্রেন যাবে খুলনা। নতুন এই রেলপথ দিয়ে যাতায়াতে ঢাকা থেকে খুলনার দূরত্ব কমবে ২১২ কিলোমিটার। বর্তমানে রেলপথে এই দূরত্ব ৪১২ কিলোমিটার। অর্থাৎ ঢাকা থেকে খুলনার দূরত্ব কমে হবে ২১২ কিলোমিটার। তখন খুলনায় যেতে সময় লাগবে সর্বোচ্চ সাড়ে তিন ঘণ্টা। একইভাবে যশোরের বর্তমান রেলপথের দূরত্ব ৩৫৬ কিলোমিটার থেকে ১৮৪ কিলোমিটার কমে হবে ১৭২ কিলোমিটার। ট্রেনে এই পথ পাড়ি দিতে সময় লাগবে সর্বোচ্চ তিন ঘণ্টা। সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু রেল প্রকল্পের আওতায় ঢাকার গে-ারিয়া হবে চার লেনের জংশন স্টেশন। এখান থেকে ব্রড গেজের ট্রেন পদ্মা সেতু হয়ে খুলনা যাবে। ঢাকার গে-ারিয়া থেকে পোস্তগোলা হয়ে রেললাইন পদ্মা সেতু পর্যন্ত যাবে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর ও সিরাজদিখান হয়ে। এজন্য পোস্তগোলায় বুড়ীগঙ্গা ও মুন্সিগঞ্জের ধলেশ্বর নদীতে পৃথক রেলব্রিজ নির্মাণ করা হবে। ঢাকা-গে-ারিয়া সেকশনে ৩ কিলোমিটার ডাবল লাইনসহ প্রকল্পের আওতায় মোট ১৭২ কিলোমিটার নতুন মেইন লাইন নির্মাণ করা হবে।
জানা গেছে, পুরো প্রকল্পের আওতায় নতুন রেলপথের জন্যে ৬৬টি বড় এবং ২৪৪টি ছোট রেলসেতু নির্মাণ করতে হবে। এ ছাড়া ১৬৯ কি.মি. মেইন লাইন, ৪৩ কি.মি. লুপ ও সাইডিং লাইন এবং ৩ কি.মি. ডাবল লাইনসহ মোট ২১৫ কি.মি. ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণ করা হবে। ৬৬টি বড় ব্রিজ, ২৪৪টি ছোট ব্রিজ/কালভার্ট ছাড়াও নির্মাণ করা হবে ১টি হাইওয়ে ওভারপাস, ২৯টি লেভেল ক্রসিং ও ৪০টি আন্ডারপাস। এর বাইরে ১৪টি নতুন স্টেশন বিল্ডিং নির্মাণ এবং ৬টি বিদ্যমান স্টেশনের উন্নয়ন ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ, ২০টি স্টেশনে টেলিযোগাযোগসহ সিবিআই সিস্টেম সিগন্যালিং ব্যবস্থা স্থাপন, কমপক্ষে ১০০টি ব্রডগেজ যাত্রীবাহী কোচ সংগ্রহ এবং ১৬৬৪ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। নতুন স্টেশনের মধ্যে ঢাকার গে-ারিয়া, ফরিদপুরের ভাঙ্গা, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি এবং পদ্মাবিল হবে ফোর লেনের জংশন। ১৪টি নতুন স্টেশনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলোÑনিমতলী, শ্রীনগর, সিরাজদিখান, মাওয়া, শিবচর, ভাটিয়াপাড়াঘাট ও নড়াইল।
রেল সূত্র জানায়, ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে প্রথমে ট্রেন ভাঙ্গা হয়ে নড়াইল এবং যশোর হয়ে খুলনা যাবে। ভাঙ্গা থেকে ফরিদপুরের দিকে রেলপথ বর্তমানে চালু আছে। এই পথ ছাড়াও মাদারীপুর হয়ে বরিশাল যাবে নতুন রেললাইন। এটি প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ে রয়েছে বলে সূত্র জানায়। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বরিশাল রেল প্রকল্প হাতে নেয়া হয় গত বছর। আর এ রেলপথ নির্মাণে ব্যয় হবে ৯ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। এই অর্থের মধ্যে ৭ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ ও সরকারের ১ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে পটুয়াখালীর পায়রাবন্দর পর্যন্ত রেললাইন স্থাপন করা হবে। ২০২১ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে ২০১৭ সালের জুলাইতে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রথম ধাপে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে বরিশাল পর্যন্ত প্রায় ১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২০১৪ সালের ২৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেলপথ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে ভাঙ্গা থেকে বরিশাল পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ করে পায়রা সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের নির্দেশনা দেন। নতুন রেললাইন নির্মাণ করা হলে পদ্মা সেতুর মাধ্যমে ঢাকা থেকে বরিশালের দূরত্ব কমবে ১৮৫ কিলোমিটার। ট্রেনে ভ্রমণ করতে সময় লাগবে সর্বোচ্চ সাড়ে চার ঘণ্টা। তখন মানুষ বরিশাল থেকে ঢাকায় এসে তাদের প্রতিদিনের কাজকর্ম শেষে আবার বরিশাল ফিরে যেতে পারবেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে খুলনা, যশোর, বেনাপোল, দর্শনা, মংলাবন্দর, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুরসহ দেশের উত্তরাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও আধুনিক হবে।
সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের সময় বরিশাল অংশে রেললাইন নির্মাণের কাজ শেষ নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে ট্রেনে বরিশাল যেতে হলে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। অথচ রেলওয়ের ইতিহাস বলছে ব্রিটিশ আমলে ‘বরিশাল এক্সপ্রেস’ নামে একটি আন্তর্জাতিক ট্রেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের শিয়ালদহ থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশ বা পূর্ববঙ্গের খুলনা পর্যন্ত চলাচল করত। ১৯৬৫ সালের ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের কারণে বরিশাল এক্সপ্রেস ট্রেনটি বন্ধ করে দেয়া হয়। ১৯৪৭ সালের ভারতের দি টাইমস অব ইন্ডিয়া পত্রিকায় বরিশাল এক্সপ্রেসের একটি ছবি প্রকাশিত হয়। ছবিতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বনগাঁ স্টেশনে থাকা বরিশাল এক্সপ্রেসে সাতচল্লিশের দেশবিভাগ পরবর্তী শরণার্থীদের দেখা যায়।














































 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নতুন দিগন্তে রেল
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ