Inqilab Logo

শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বাংলাদেশ-কুয়েত সহযোগিতা আগামীতে আরো বাড়বে

হাসিনা-জাবের বৈঠক

প্রকাশের সময় : ৫ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪২ পিএম, ৪ মে, ২০১৬

বিশেষ সংবাদদাতা : বাংলাদেশ-কুয়েত সহযোগিতার নতুন দিক উন্মোচন হলো। আগামী দিনগুলোতে তা আরো বিস্তৃত হবে। দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে সে কথাই বললেন, ঢাকা সফররত কুয়েতি প্রধানমন্ত্রী শেখ জাবের আল-মুবারক আল-হামাদ আল-সাবাহ। তার কথায় সুর মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেন, মুসলিম উম্মাহর জন্য দুই দেশ এক সাথে কাজ করতে চায়।
বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করছিলেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। এসময় পররাষ্ট্র সচিব বারবারই এই বিষয়ে জোর দিচ্ছিলেন। বলছিলেন বন্ধুপ্রতীম দুটি দেশের মধ্যে এই দ্বি-পাক্ষিক আলোচনা হৃদ্যতাপূর্ণ ছিলো।
পররাষ্ট্র সচিব জানান, ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে ক্রমেই একটি মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পথে বাংলাদেশের এগিয়ে চলার প্রশংসা করেন কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, মোটা দাগে ছয়-সাতটি বিষয় আসে এই আলোচনায়। যার মধ্যে অন্যতম হিসেবে গুরুত্ব পায় মুসলিম উম্মাহর শান্তির পক্ষে দুই দেশের সহাবস্থান। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দুই নেতাই তাদের স্ব-স্ব অবস্থানের কথা উল্লেখ করেন এবং সন্ত্রাস নির্মূলে একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। আলোচনায় আসে বাংলাদেশে বিনিয়োগ প্রসঙ্গ। প্রধানমন্ত্রী বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশের কথা তুলে ধরেন। আর কুয়েতি প্রধানমন্ত্রী তাদের এ বিষয়ে আগ্রহের কথা স্পষ্ট করেন। তথ্য প্রযুক্তি, শিল্পায়ন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে আরো বেশি বেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনার কথা এতে উঠে আসে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতির দিকটি আলোচনায় আসে। এবং এই ঘাটতি কমিয়ে আনতে একটি যৌথ সভার প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। যা দ্রুততার সঙ্গে আয়োজনের উদ্যোগ নিতে দুই পক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
পররাষ্ট্র সচিব জানান, আলোচনায় আসে কুয়েতে বর্তমানে কর্মরত দুই লাখ বাংলাদেশীর কথা। এই সংখ্যা আরও কিভাবে বাড়ানো যায় তা নিয়ে কথা হয়। সামরিকখাতে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘ সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে। এই সহযোগিতা আরও দৃঢ় আরও বিস্তৃত করার বিষয়েও সম্মত হন তারা। এছাড়াও কারিগরি ও অর্থনৈতিক খাতেও সহযোগিতা আরও বাড়ানোর কথা বলেন দুই নেতা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, কুয়েতের আমীরকে বাংলাদেশ সফরে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর শেখ হাসিনাকে সফরে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী।
 এর আগে বিকেল ৩টা ২০ মিনিটের দিকে প্রতিনিধি দল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে পৌঁছান কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা জানান শেখ হাসিনা। এর পরপরই দুই নেতা একান্ত বৈঠকে অংশ নেন। শিমুল হলে বৈঠকটি স্থায়ী হয় প্রায় ১৫ মিনিট। তারপর তারা প্রতিনিধিদের নিয়ে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেন। পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এতে আলোচনা হয়।
দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল,  প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক ই এলাহী চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম প্রমুখ। কুয়েতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন দেশটির প্রথম উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ সাবাহ খালেদ আল-হামাদ আল-সাবাহ, অর্থ ও তেলমন্ত্রী আনাস খালেদ আল-সাবাহ, শিক্ষামন্ত্রী ড. বদর হামাদ আল-ইসা, উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী খালেদ সুলেইমান আল-জারাল্লাহ, কুয়েতের আরব অর্থনৈতিক উন্নয়ন ফান্ডের (কেফায়েদ) মহাপরিচালক আবদুল ওয়াহাব আল-বাদেরসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।
চার চুক্তি সই ঃ
এদিকে বাংলাদেশ ও কুয়েতের মধ্যে উন্নয়ন সহযোগিতামূলক চারটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বিনিয়োগ, সামরিক সহযোগিতা এবং সড়ক যোগাযোগ বিষয়ক এই চুক্তিগুলো স্বাক্ষরের ফলে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো জোরদার হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর তেজগাঁওস্থ কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী শেখ জাবের আল মুবারাক আল সাবাহর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পরে চুক্তিগুলো স্বাক্ষরিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী শেখ জাবের আল মুবারাক আল সাবাহ’র উপস্থিতিতেই দুই দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও কর্মকর্তারা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
প্রথমেই স্বাক্ষরিত হয় বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা চুক্তি। কুয়েতের শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী ড. বদর আহমদ আল ইসা এবং বাংলাদেশের শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ‘দি এগ্রিমেন্ট ফর দি প্রমোশন এন্ড রিসিপ্রোকাল প্রটেকশন অব ইনভেস্টমেন্ট’ শীর্ষক এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। পরে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ায় বাংলাদেশে বিনিয়োগের একটি নতুন দুয়ার উন্মোচিত হয়েছে। এরপর স্বাক্ষরিত হয় কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের ভিসা সহজীকরণ সংক্রান্ত চুক্তি। কুয়েতের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রদূত খালেদ সুলায়মান আল জারাল্লাহ এবং বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান ‘দি এগ্রিমেন্ট অন মিউচুয়্যাল এক্সেমপশন অব প্রাইয়র এন্ট্রি ভিসা ফর হোল্ডারস অব ডিপ্লোম্যাটিক, স্পেশাল এন্ড অফিসিয়াল পাসপোর্ট’ শীর্ষক চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
এছাড়া, বাংলাদেশ এবং কুয়েতের মধ্যে সামরিক খাতে প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সহযোগিতা চুক্তিটিতে স্বাক্ষর করেন কুয়েতের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রদূত খালেদ সুলায়মান আল জারাল্লাহ এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান।
সবশেষে স্বাক্ষরিত হয় ঋণ সহায়তা চুক্তি। বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে পায়রা নদীর ওপর লেবুখালী সেতু নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পে অর্থায়নের লক্ষ্যে কুয়েতের আরব অর্থনৈতিক উন্নয়ন ফান্ডের (কেএফএইডি) সঙ্গে স্বাক্ষরিত এ ঋণচুক্তিতে সই করেন কেএফএইডি’র মহাপরিচালক আবদুল ওয়াহাব আল-বাদর এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব মাহমুদা বেগম।
এটি পায়রা ব্রিজ প্রকল্প নিয়ে দ্বিতীয় ঋণ চুক্তি। এই চুক্তির আওতায় কুয়েতের ফান্ডের পরিমাণ ১৫ মিলিয়ন কুয়েতি দিনার বা ৫০ মিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ। এর আগে, ২০১২ সালের মার্চ মাসে কেএফএইডি’র সঙ্গে আরেকটি ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় যাতে কুয়েতি ফান্ডের পরিমাণ ছিল ১৪ মিলিয়ন কুয়েতি দিনার বা প্রায় ৪৮ মিলিয়ন ডলার।
সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক ও জনপথ ডিভিশনের আওতাধীন সড়ক ও জনপথ দপ্তর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের মুখ্য উদ্দেশ্য পায়রা নদীর ওপর লেবুখালীতে বরিশাল-পটুয়াখালী সড়কে ১৪৭০ মিটার দীর্ঘ একটি সেতু নির্মাণ করা। এই ব্রিজটি নির্মিত হলে সরাসরি রাজধানীর সঙ্গে পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। ফলে পায়রা সমুদ্র বন্দর এবং দেশের অন্যতম বৃহৎ পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো উন্নত হবে।
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে সফরের মূল কার্যক্রম শুরু করেন কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী শেখ জাবের। আজ বৃহস্পতিবার সকালেও থাকবে কুয়েতের প্রধানমন্ত্রীর একাধিক কর্মসূচি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাংলাদেশ-কুয়েত সহযোগিতা আগামীতে আরো বাড়বে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ