পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রাম ব্যুরো : উপমহাদেশের প্রখ্যাত ও প্রবীণ আলেমেদ্বীন-বুজুর্গ চট্টগ্রামের রাউজান কাগতিয়া আলীয়া দরবার-এর প্রতিষ্ঠাতা ‘গাউছুল আজম’ খ্যাত শাহসুফি হযরত আল্লামা ছৈয়্যদ তফজ্জল আহমদ মুনিরী (ম.জি.আ.) পীর সাহেব কাগতিয়া আর নেই। তিনি গতকাল (বুধবার) সকাল ১০টায় রাজধানী ঢাকার এ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। তিনি ৩ ছেলে, ৬ মেয়েসহ নাতি-নাতনী, অসংখ্য আত্মীয়-পরিজন ও অগণিত ভক্ত-মুরিদান, গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। কাগতিয়ার পীর সাহেবের ইন্তেকালের খবরে রাউজান ও বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চল ছাড়াও দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা লাখো ভক্ত-মুরিদানের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। সর্বস্তরের আলেম-মাশায়েখ, ইসলামী চিন্তাবিদগণ ও ইসলামী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ কাগতিয়ার পীর সাহেবের ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ ও রূহের মাগফিরাত কামনা করেছেন।
গত রাত ১০টায় মরহুম পীর সাহেবের প্রতিষ্ঠিত কাগতিয়া এশাতুল উলুম কামিল (এমএ) মাদরাসা ময়দানে তাঁর নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর কাগতিয়ায় পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়। জানাযায় সর্বস্তরের অগণিত তাওহিদী জনগণ অংশগ্রহণ করেন। পীর সাহেব কাগতিয়ার ইন্তেকালের খবর পৌঁছার সাথে সাথেই কাগতিয়াসহ রাউজানে ও চট্টগ্রামে ধর্মপ্রাণ তৌহিদী জনতা, ভক্ত-মুরিদানগণ শোকে ভেঙে পড়েন। অনেকে কাগতিয়া দরবার শরীফে পৌঁছে যান এবং তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে মরহুম পীর সাহেবের লাশ কাগতিয়া ময়দানে এসে পৌঁছায়। সকাল থেকে রাতে জানাযার পূর্ব পর্যন্ত কাগতিয়া মাদরাসা ও দরবারে খতমে কোরআন, দোয়া-দরুদ পাঠ, জিকির-আজকার করা হচ্ছিল। অগণিত মানুষ সেখানে শোকাচ্ছন্ন পরিবেশে সমবেত হন।
তিনি ১৯২৩ সালে চট্টগ্রামের রাউজান থানার কাগতিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সেখানে তিনি সুবিশাল ও অত্যাধুনিক আলীয়া মাদরাসা, খানকাহ্সহ বিভিন্ন ইসলামী প্রতিষ্ঠান ও কাগতিয়া আলীয়া দরবার প্রতিষ্ঠা করেন। মুনিরিয়া তবলিগ ও যুব তবলিগ কমিটি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। চট্টগ্রামসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ও দেশ ছাড়িয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অরাজনৈতিক, তরিকতভিত্তিক ও সুশৃঙ্খল এ আধ্যাত্মিক সংগঠনের শাখা রয়েছে। এসব শাখা থেকে নিয়মিত এশায়াত মাহফিল ও বার্ষিক এশায়াত সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। দেশের তরুণ-যুবকদের সঠিক পথে পরিচালিত করার ক্ষেত্রে কাগতিয়ার পীর সাহেবের প্রতিষ্ঠিত এসব সংগঠনের ভূমিকা, অবদান অপরিসীম ও ব্যতিক্রমী। কাগতিয়ার পীর সাহেব অত্যন্ত জনদরদী, শিক্ষাবিদ ও হক্কানী পীরে কামেল হিসেবে আজীবন সর্বমহলে সুপরিচিত ও সম্মানিত এক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তবে তিনি সবসময় ছিলেন প্রচারবিমুখ। ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বহু দেশেই কাগতিয়ার পীর সাহেবের ভক্ত-অনুরক্ত ও মুরিদান রয়েছেন অগণিত। তাদের মাঝেও পড়েছে শোকের ছায়া। এদিকে কাগতিয়ার পীর সাহেবের অবর্তমানে তাঁর পুত্র অধ্যক্ষ ছৈয়্যদ মুনির উল্লাহ আহমদী (ম.জি.আ.) তরিকতের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের শোক
গতকাল কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফের পীর সাহেব কেবলা আলহাজ্ব হযরত মাওলানা অধ্যক্ষ ছৈয়্যদ তফজ্জল আহমদ মুনিরী (রহঃ)-এর ইন্তেকালে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি, আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীন, সিনিয়ার সহ-সভাপতি, আলহাজ্ব মাওলানা কবি রূহুল আমীন খান ও মহা-সচিব, আলহাজ্ব মাওলানা শাব্বীর আহমদ মোমতাজীসহ সংগঠনের উচ্চপদস্থ নেতৃবৃন্দগণ গভীর শোক প্রকাশ করে এক বিবৃতিতে বলেন, আলহাজ্ব হযরত মাওলানা অধ্যক্ষ ছৈয়্যদ তফজ্জল আহমদ মুনিরী (রহঃ) ছিলেন দেশের পীর-মাশায়েখদের মধ্যে অন্যতম। তিনি বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের একজন হিতাকাক্সক্ষী ও অতিনিকটের ব্যক্তি ছিলেন। তিনি কাগতিয়া এশাতুল উলুম এম, এ, কামিল মাদরাসা প্রতিষ্ঠাসহ আরো অনেক মাদরাসা, মসজিদ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। তিনি দেশের একজন সফল ও সার্থক অধ্যক্ষ ছিলেন। তাছাড়া তিনি ইলমে তাসাওফ জগতের একজন প্রখ্যাত ব্যক্তিত্বও ছিলেন। সব শেষে তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করে নেতৃবৃন্দ আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন এবং তার পরিবার-পরিজন, মুরীদান, মুহিব্বীন যেন এ শোকে ভেঙ্গে না পড়ে সেজন্য তাদের সমবেদনা জানান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।