পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শেখ হাসিনার নির্দেশনায় নির্বাচন কমিশন ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ কথাটা তামাদি করে ফেলেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, সরকারের পক্ষে ইসির নজিরবিহীন পক্ষপাতিত্ব ভোটারদেরকে হতাশ ও ক্ষিপ্ত করে তুলছে। নির্বাচন সামনে রেখে দেশব্যাপী গ্রেফতারের মহোৎসব চলছে। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর থেকে গ্রেফতারের পরিমাণ বেড়ে গেছে। গতকাল পর্যন্ত ২০০০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে চাপিয়ে দেয়া শত শত মামলার বোঝায় নির্বাচনের মাঠ দূরে থাক, ঘরে পর্যন্ত থাকতে পারছে না ধানের শীষের প্রার্থীর নেতা-সমর্থকরা। বৃহস্পতিবার (৬ ডিসেম্বর) বেলা১১টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সরকার নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে অভিযোগ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করে আবারো ক্ষমতায় থাকার জন্য নানা কলাকৌশল ও নীলনক্সা তৈরী করেছে এই অবৈধ সরকার। আর এই প্রহসনের অংশ হিসেবেই বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে সরকার গায়ের জোরে দুরে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে। বিপুল জনপ্রিয় দেশনেত্রী বেগম জিয়া ও জনগণকেই শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় ভয়, তাই আইন-ন্যায়বিচারের তোয়াক্কা না করে সরকার বেগম জিয়াকে কারাগারে আটকে রেখেছে। শেখ হাসিনা বসে বসে কষছেন নির্বাচনে কারচুপির অভিনব মহাফন্দি। তারা জানেন, অন্যায় পথে নির্বাচন অনুষ্ঠান ছাড়া জনসমর্থনশূন্য আওয়ামী লীগের একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের অন্য কোনো উপায় নেই। তাই নির্বাচনী ব্যবস্থা এবং আজ্ঞাবাহী নির্বাচন কমিশনকে নিয়ন্ত্রণে রেখে আবার ক্ষমতায় যেতে চান। সেজন্য বিরোধী দলের ওপর অত্যাচার নির্যাতন-নিপীড়ন এবং যতো রকম কৌশল আছে সরকার প্রয়োগ করছে।
সারাদেশে হামলা, মামলা, গ্রেফতারের কথা তুলে ধরে রিজভী বলেন, যারা ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশী এবং প্রার্থী হয়ে যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন এধরণের ২৭ জন নেতা মিথ্যা মামলায় এখন কারাগারে আটক আছেন। নির্বাচনের মাঠে বিএনপি-কে ঘায়েল করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে নামে-বেনামে, গায়েবি মামলায় বিএনপির নেতাকর্মীদের বন্দীত্বের লাল দেয়ালের ভেতরে ঘিরে রাখা হয়েছে। মামলা আর পুলিশি হয়রানির কারণে নেতাকর্মীরা ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এরপরও ক্ষান্ত হচ্ছে না আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, পরিবারের অন্য সদস্যদের হয়রানি করা হচ্ছে। পুলিশি হেনস্তার ভয়ে বিএনপি’র মনোনীত প্রার্থীরা আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্ভয়ে প্রচারণা চালাতে পারবেন কি না সে নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন তারা।
তিনি বলেন, সারাদেশে যারা ভোট গ্রহণ করবেন সেই ডিসি, এসপি এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড গঠনের নির্দেশনা নির্বাচন কমিশন তো দেনইনি; উল্টো তাদের পক্ষপাতিত্বের দিকেই উস্কে দিয়েছে ইসি। নির্বাচন কমিশনে দফায় দফায় ডেকে এনে সেমিনার, প্রশিক্ষণ, কর্মশালা, সংলাপের নামে বিএনপি প্রার্থীদের হয়রানী করার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। অধিকাংশ রিটার্নিং অফিসার আওয়ামী অনুমোদিত মনোবৃত্তির দ্বারা প্রণোদিত। আমরা খবর পেয়েছি, আইন মন্ত্রণালয়ে জেলা দায়রা জজদের নিয়ে একটি সভা হয়েছে। সেখানে আইন সচিব নির্দেশ দিয়েছেন যে, নির্বাচনের পূর্বে তারা যেনো বিএনপি’র কাউকে জামিন না দেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে গ্রেফতার বাড়াতে মনিটরিং সেলও খোলা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বদলে আসন্ন নির্বাচন আবর্জনাময় হয়ে উঠতে পারে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ঢাকার হাইকোর্ট অঙ্গন থেকে শুরু করে পুরান ঢাকার জজ কোর্ট, মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট কোর্টসহ সারাদেশের জেলা পর্যায়ের আদালতগুলোর আঙ্গিনায় ‘ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই’ অবস্থা। কোথাও ধানের শীষের প্রার্থীরা জামিনের আবেদন নিয়ে হাজির হচ্ছেন; কোথাও কর্মীরা জামিন চেয়ে আবেদন করছেন; কোথাও গ্রেফতার ঠেকাতে আগাম জামিনের আবেদন, কোথাও স্বামী-স্ত্রী-পুত্র-কন্যাদের পুলিশি গ্রেফতার ঠেকাতে আদালতের শরণাপন্ন হতে হচ্ছে। কোর্ট-কাচারীগুলোয় হাজার হাজার বিএনপি নেতাকর্মীদের বিচারপ্রার্থীর উপস্থিতির নজিরবিহীন এমন দৃশ্য অতীতে কোনো ভোটের সময় দেখা যায়নি।
সিইসির সমালোচনা করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, সিইসি’ শব্দটি উচ্চারণ করলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে সাবেক সিইসি কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদের নাম। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে তার ভূমিকা দেশ-বিদেশে নিন্দিত-কলংকিত। ক্ষমতাসীনদের ‘নাচের পুতুল’ ওই কাজী রকিব এখন ইতিহাসের পাতায় ১৭৫৭ সালের বিশ্বাসঘাতক মীর জাফর আলী খাঁর সঙ্গে তালিকাভুক্ত। জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করে কাজী রকিব যে পথে হেঁটেছেন বর্তমান সিইসি কে এম নূরুল হুদাও যেন সে পথেই চলতে শুরু করেছেন। শুধু তাই নয়, সেটাকে এক ডিগ্রি বৃদ্ধি করে নৈতিকতার মাথা খেয়ে নিজের ভাগিনাকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী করেছেন। তার সাথে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে বসে বৈঠকও করছেন।
তিনি বলেন, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে প্রশাসনের সচিব-বিভাগীয় কমিশনার-ডিসি-এসপি এমন ৯২ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে তাদের বদলি ও প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক পরিচিতি, কর্মকান্ডের তথ্যও দেয়া হয় নির্বাচন কমিশনে। এদের মধ্যে মাত্র একজন এসপি (নারায়ণগঞ্জ) বদলি করে সেখানে আরো কট্টর আওয়ামীপন্থী ও বিতর্কিত এসপি হারুনকে পদায়ন করা হয়। আমি আবারো বলছি অবিলম্বে পক্ষপাতদুষ্ট ৯২ জনকে বদলী করুন। না হয় নির্বাচনে কোন গ্রহনযোগ্যতা আসবে না।
বিএনপির এই নেতা বলেন, গণতন্ত্রকে জিম্মি করে রাখা হয়েছে। সাংবিধানিক অধিকার যেমন সংকুচিত তেমনি ক্ষমতায় থেকে লুটপাটকারীদের অর্থের দৌরাত্ব কালো থাবার মতো বিস্তার লাভ করেছে। এই অবস্থা থেকে জনগণকে মুক্ত করতে গণতন্ত্র রক্ষার যুদ্ধে নেমেছে বিএনপি, ২০দল এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
আওয়ামীলীগের প্রার্থীরা আচরণ বিধি লঙ্ঘন করলেও নির্বাচন কমিশন নিরব, নিশ্চুপ অভিযোগ করে রিজভী বলেন, গতকাল ৫ ডিসেম্বর যুব সমাবেশ আয়োজনের নামে জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো হয়েছে। নেতাকর্মীরা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে মিছিল ও মোটরসাইকেল মহড়া দিয়ে সমাবেশে অংশ নিয়েছে, যা পুরোপুরি নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন। গতকাল বিকেলে প্রকাশ্যে এই আয়োজন চললেও রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে নিয়োজিত জেলা প্রশাসক আহমেদ কবির বলেছেন, বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা জানি আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোন ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হবে না। এধরণের সভা করার বিরুদ্ধে রিটার্নিং অফিসারের মৌখিক আশ্বাস মিথ্যার বেসাতি ছাড়া অন্য কিছু নয়।
এসময় তিনি জানান, বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা কলেজের ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি মীর সরফত আলী সপুকে দুই দিনের রিমান্ড শেষ হওয়ার পর আবারও আর একটি মিথ্যা মামলায় রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। তিনি মীর সরফত আলী সপু’র ওপর জুলুমের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং অবিলম্বে তার মিথ্যা মামলাসহ রিমান্ড প্রত্যাহার করে নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।