Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নবাববাড়ি বিক্রির পর এবার পারিবারিক কবরস্থান ও কেন্দ্রীয় মসজিদ দখলের পাঁয়তারা

বগুড়ার সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ

প্রকাশের সময় : ৫ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪৬ পিএম, ৪ মে, ২০১৬

মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে : বগুড়া নববাবাড়ি বিক্রি হওয়ার পর নবাব পরিবারের পূর্বপুরুষদের প্রতিষ্ঠিত শহরের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত এখন ধর্মপ্রাণ মুছুল্লিরা। মসজিদের সামনে অবস্থিত নবাব সৈয়দ আবদুস সোবাহান চৌধুরীর কবর সেখানে থাকবে কি না তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা। কারণ বগুড়ার এই মসজিদটিও পুরার্কীতি নিদর্শন হিসাবে প্রতœতত্ত্ব বিভাগের তালিকাভুক্ত। কিন্তু সেটিও একশ্রেণীর অর্থলোভী মানুষ ভেঙে বহুতল মার্কেট করতে একাধিকবার চেষ্টা করেন। এতোদিন সাধারণ মুছুল্লিদের বাধার কারণে তারা সফল হতে না পারলেও নবাববাড়ি বিক্রির ঘটনার পর ঐ অর্থলোভী মানুষদের থাবা থেকে বগুড়ার এই প্রাচীন মসজিদ ও নবাবের কবরস্থান শেষ রক্ষা হবে কি না সেই প্রশ্নে উদ্বিগ্ন বগুড়াবাসী। বগুড়ার বিশিষ্টজনরা মনে করেন, ঊনবিংশ শতাব্দীতে বগুড়া শহরের রূপকার নবাব সৈয়দ আবদুস সোবাহান চৌধুরী তার স্বজনদের বলেছিলেন, তার কবর যেন মসজিদের পাশে দেয়া হয়। যেভাবে কবি নজরুল বলেছিলেন, ‘মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিয়ো ভাই / যেথায় রোজ সকালে মোয়াজ্জিনের আযান শুনতে পাই।’
বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী নবাববাড়ি নাটকীয়ভাবে বিক্রির ঘটনায় বগুড়াবাসীর মর্মবেদনার কথার সূত্র ধরে অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে ৯ বছর আগে নবাবের কবরের জায়গা জবরদখলের প্রচেষ্টার চাঞ্চল্যকর তথ্য। বগুড়া শহরের ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র নিউ মার্কেট এলাকায় অবস্থিত কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ। এটি স্থাপিত হয় মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহের সময়। সেটি নির্মাণ করেন নবাব সোবাহান চৌধুরীর স্ত্রী সৈয়দা তহুরুননেছার মাতামহ (নানা) বগুড়ার কুন্দুগ্রামের বিখ্যাত জমিদার সৈয়দ আকবর আলী চৌধুরী। তখন বগুড়া শহরে সেটিই ছিল মোগল স্থাপত্য রীতিতে তৈরি তিন গুম্বুজবিশিষ্ট প্রথম জামে মসজিদ। এই মসজিদের প্রবেশ পথের দুই পাশের একদিকে রয়েছে নবাব সৈয়দ আবদুস সোবাহান চৌধুরীর কবর, তার স্ত্রী সৈয়দা তহুরুননেছা ও নবাবজাদা আলতাফ আলী চৌধুরীর কবর। আরেক পাশে রয়েছে নবাব পরিবারের অন্যান্য সদস্যের কবর। বগুড়া শহরের সুত্রাপুর মৌজার জেএল নং ৮২, খতিয়ান নং ২৪, দাগ নং ১৪৮৭ ও ১৪৮৯ দাগে অবস্থিত কবরস্থানটির পরিমাণ প্রায় তিন শতক জায়গা। নবাব সৈয়দ আবদুস সোবাহান চৌধুরী ১৯১৪ সালে তার বসতবাটি বগুড়ার নবাব প্যালেসে ইন্তেকাল করেন। ১শত ২ বছর আগে তার ইন্তেকালের পর কালের প্রবাহে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। ঐ মসজিদ ও কবস্থানকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বহু দোকানপাট ও আধুনিক মার্কেট, যা বর্তমানে বগুড়া শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যস্ত বানিজ্যিক এলাকা। যেখানে ২০ স্কয়ার ফিট একটি দোকান ঘরের পজিশন বিক্রী হয় ৭০ লাখ থেকে কোটি টাকায়। স্থানীয় প্রভাবশালী অর্থ লোভীদের চোখ পড়েছে নবাবের কবরস্থানের প্রতিও।
স্থানীয় ব্যবসায়ি ও মুছুল্লীদের অভিযোগ, সাম্প্রতিক সময়ে শাসক দলের এক আইনজীবী নেতা নবাব এস্টেটের আইন উপদেষ্টার পরিচয় দিয়ে লোকবল নিয়ে এসে কবরস্থানটি দখলের চেষ্টা করেন। কিন্তু স্থানীয় ব্যবসায়ী ও মসজিদের মুছুল্লীরা বাধা দিলে তিনি স্থান ত্যাগ করেন। তখন মুছুল্লীদের ঐ আইনজীবী নেতা জানান যে, তাকে নবাব বংশের উত্তারাধিকারির দাবিদার সৈয়দ হামদে আলী চৌধুরী কবরস্থানটি দলিল মূলে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দিয়েছেন। এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে নবাব এস্টেটের কর্মকর্তা সৈয়দ হালিম চৌধুরীর সাথে কেন্দ্রীয় বড় মসজিদের সামনে নবাব আব্দুস সোবাহান চৌধুরী ও অন্যান্যের কবর এস্টেটের অর্থে সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ না করে ব্যক্তিবিশেষকে দায়িত্ব দেওয়ার কারণে তা যে জবরদখল করার প্রচেষ্টা চলছে, সে সম্পর্কে জানতে চাইলে, তিনি বলেন, ২০০৭ সালের দিকে তাদের তৎকালীন আইন উপদেষ্টা এড. তবিবুর রহমানকে (এই ব্যক্তির নাম উল্লেখ করবেন না) রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল মাত্র! কিন্তু সেখানে কোন স্থায়ী স্থাপনা তৈরীর অনুমতি দেওয়া হয়নি।
ঐদিনের ঘটনা সম্পর্কে কেন্দ্রীয় বড় জামে মসজিদের সাবেক সহকারি সেক্রেটারি আব্দুল খালেক বাবলু অভিযোগ করেন, তিনি ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন। অ্যাডভোকেট তবিবুর রহমান নামের ব্যক্তি তার লোকবল ও ইট সিমেন্ট নিয়ে এসে নির্মাণ কাজ শুরু করে দখলের চেষ্টা করেন। তখন মসজিদের মুছুল্লিসহ বাধা দিলে তিনি ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে বাধ্য হন। তাদের আশংকা, ওই লোকটি এখনো সুযোগের অপেক্ষায় আছে। কারন ৮ বছর পর যখন নবাববাড়ি বগুড়ার শাসকদলের শীর্ষ নেতার ছেলে বগুড়া চেম্বারের সভাপতি মাসুদুর রহমান মিলন, ঐ সংগঠনের আরেক সহ সভাপতি শফিকুল হাসান জুয়েল ও সাবেক সহ সভাপতি আব্দুল গফুর ক্রয় করার পর নবাব সৈয়দ আবদুস সোবাহান চৌধুরীর কবর ও কবরস্থানের জায়গার ভবিষ্যত নিয়ে তাই উদ্বেগ উৎকণ্ঠা প্রকাশ করছেন স্থানিয় ব্যবসায়ী ও মুছুল্লীরা। এব্যাপারে মসজিদের সহকারি সেক্রেটারি মোঃ রাসেদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মসজিদটি নবাব ওয়াকফ এস্টেটের অর্ন্ত ভুক্ত। তা তহুরুননেছা চৌধুরানী কৃত ওয়াকফ দলিলে ( ইসি নং ৩৬৭৫) উল্লেখ আছে। এ বিষয়ে ওয়াকফ পরিদর্শক মোঃ মাহবুবর রহমানের সাথে কথা বলে জানা গেছে মসজিদ ও কবরস্থান ওয়াকফ সম্পত্তি। বগুড়ায় নবাবের সব কিছু একে একে হারিয়ে গেলেও তার কবরস্থানটি যেন রক্ষা পায় সেজন্য বগুড়াবাসী সরকার ও সচেতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নবাববাড়ি বিক্রির পর এবার পারিবারিক কবরস্থান ও কেন্দ্রীয় মসজিদ দখলের পাঁয়তারা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ