পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হাসান সোহেল : চাকরির বয়স আছে ৬ মাস। দীর্ঘ ৮ বছর একই পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। একবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়ে চাকরিও করেছেন। তারপরও আবার টাঁকশালের সেই সদ্যবিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জিয়াউদ্দীন আহমেদ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের চেষ্টা চলছে। দেশের একমাত্র টাকা ছাপানোর প্রতিষ্ঠানটিতে আলোচিত জিয়াউদ্দীন আহমেদ পুনর্নিয়োগ পাচ্ছেন বলে বাংলাদেশ ব্যাংকে গুঞ্জন চলছে। দীর্ঘদিন থেকে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন কবে বিদায় হচ্ছে নানা অনিয়ম, আর্থিক কেলেঙ্কারী ও অফিসের গেষ্ট হাউজে কুকুর পালনের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনার অভিযোগে অভিযুক্ত এই কর্মকর্তা। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মনে করেন, দেশের জন্য প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব অপরিসীম। দেশের সব কাগুজে নোট এখানে মুদ্রিত হয়। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা এই প্রতিষ্ঠানটির জন্য জরুরী। এখানে নেতৃত্ব দানের ক্ষেত্রে সৎ, দক্ষ ও অভিজ্ঞ লোক নিয়োগে কোনোরূপ ভুল হলে রাষ্ট্রের জন্য বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে বলে মনে করেন তারা। এদিকে এই কর্মকর্তার নিয়োগ যাতে না হয় সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আগেই আপত্তি দেয়া হয়েছিল। এমনকি ওই স্থানে যে কর্মকর্তাকে নিয়োগের সুপারিশ করেছিল সেই কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকান্ডের অভিযোগ থাকায় অর্থ মন্ত্রণালয় তাকে নিয়োগ দেয়নি। আর তাই টাকশালে একজন দক্ষ ও সৎ কর্মকর্তাকে নিয়োগ প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
সূত্র মতে, ২০০৮ সালে টাঁকশালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেন জিয়াউদ্দীন আহমেদ। ২০১৪ সালে সরকারি চাকরির বয়স শেষ হলে তিনি এলপিআরে চলে যান। পরে তাকে ২ বছরের জন্য আবারো চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়। সম্প্রতি ওই চুক্তির মেয়াদও শেষ হয়। একাধারে দীর্ঘ ৮ বছর দায়িত্ব পালন করে প্রতিষ্ঠানটিতে স্বেচ্ছাচারিতার অভয়ারণ্য তৈরি করেছেন। প্রতিষ্ঠানটিকে কব্জায় নিতে নিজস্ব বলয় তৈরি করে তাদেরকে দিয়ে সবকিছু পরিচালনা করতেন। তাদের বিরুদ্ধে বলার মতো কারো সাহস না থাকায় চাকরির ভয়ে মুখ বুজে সব কিছু সহ্য করতেন কর্মকর্তারা।
সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরদের (ডিজি) চুক্তিভিত্তিক বয়সসীমা ৬২ বছর। জিয়াউদ্দীন আহমেদ একজন নির্বাহী পরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তা, যা ডিজিদের চেয়ে এক গ্রেড নিচে। স্বাভাবিকভাবে এই পদে নিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা ডিজিদের অপেক্ষা বেশী হওয়া কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
সূত্র মতে, ইতোমধ্যে জিয়াউদ্দীন আহমেদের বয়স ৬১ বছর ৫ মাস। ৬২ বছর হতে আর মাত্র ৭ মাস বাকী। এই কর্মকর্তার বিপক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংকের আপত্তি উপেক্ষা করে বাকী ৭ মাসের জন্য পুনরায় নিয়োগের সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতী। অথচ ৭ মাস পর আবার নতুন করে অন্য কাউকে এই পদে নিয়োগ দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, জিয়াউদ্দিন আহমেদকে ৭ মাসের জন্য নতুন করে নিয়োগ দেয়া হবে সরকারের একটি চরম ভূল। অত্যন্ত সংবেদনশীল ও স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠানের প্রধান নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারকে আরও সাবধানী হওয়া অত্যাবশ্যক। এরুপ সিদ্ধান্ত নেয়া হলে দেশের ইতিহাসে স্বল্প মেয়াদের চুক্তিভিত্তি নিয়োগে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হবে। তাদের মতে, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত কার স্বার্থে এই ধরণের জণস্বার্থ বিরোধী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তা বোধগম্য নয়। এই নিয়োগ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মধ্যেও চাপা ক্ষোভ ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপ ছাড়া এরূপ রহস্যজনক সিদ্ধান্ত বাতিল করা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা।
জিয়াউদ্দিন ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকাকালীন প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতির আখড়া হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। নিজস্ব বলয়ের মাধ্যমে সব কাজ পরিচালনা করতেন। এমনকি অফিসের গেষ্ট হাউজে কুকুর পালনের মতোও কাজ করেছেন। কুকুর দুটিকে অনেকে প্রতিদিন বয়লার মুরগি খাইয়ে জিয়া উদ্দিনের আস্থাভাজন হওয়ার চেষ্টা করতেন। টাকশালে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতে, দীর্ঘদিন একই পদে থেকে তিনি ‘হীরক রাজার রাজত্ব’ কায়েম করেছিলেন। অনেক কর্মকর্তা মুখ খুলতে চাইলেও চাকরির ভয়ে কিছু বলতেন না। সম্প্রতি জিয়াউদ্দিনের চুক্তিভিত্তিক মেয়াদ শেষ হওয়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরণের স্বস্তি ফিরে আসলেও পুনঃচুক্তির নিয়োগের গুঞ্জনে আবারো তাদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে।
টাকশাল নামে পরিচিত দ্যা সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন বাংলাদেশ লিমিটেড নামের এই প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনস্থ। এমনিতেই প্রতিষ্ঠানটিতে দীর্ঘদিন থেকে অনিয়ম পিছু ছাড়ছে না। ২০১০ সালে ক্রয় করা বিদেশি প্রতিষ্ঠান কেবিএ-নোটাসিস সুইসের টাকা ছাপানোর মেশিনটির দাম ১২৪ কোটি টাকা ও ২০১৪ সালে ক্রয় করা একই কোম্পানির মেশিনটির দাম ১৪২ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। যা মেশিন দুটির প্রকৃত দামের অধিক। এই মেশিন দুটি ক্রয়ে বড় ধরণের অনিয়ম নিয়ে এখনো দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান চলছে। এর শেষ না হলেও নতুন করে এই বিতর্কিত ব্যবস্থাপনা পরিচালককেই নিয়োগ দেয়ার পাঁয়তারা চলছে। আর এতে করে আবারও বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানটিকে বলে আশঙ্কা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
দীর্ঘদিনে প্রতিষ্ঠানটিকে জিয়াউদ্দিন তার ইচ্ছাপূরণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। অত্যাধুনিক মেশিন নির্ভর এই প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনার কোনো যোগ্যতা না থাকলেও সাবেক গভর্নরের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত এই কর্মকর্তা দীর্ঘদিন একই পদে থেকে গেছেন। জানা যায়, জিয়া উদ্দিন একজন বাংলা সাহিত্যের ছাত্র। প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা, উৎপাদন কৌশল, কাঁচামালের সময়ভিত্তিক সংস্থানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তার ন্যূনতম কোনো ধারণা নেই।
এদিকে এমনিতেই বাজারমূল্যের চাইতে বেশি মূল্যে টাকা ছাপানোর মেশিন কেনার মাধ্যমে সরকারের শত শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এরপর আবার রিভার্জ চুরির ঘটনায় টালমাটাল বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকের মতে, এই ধরণের বিতর্কিত ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়া হলে প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসের মুখে পড়বে।
টাকশালের সদ্য বিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউদ্দীন আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, পুনর্নিয়োগের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এমনকি এ সম্পর্কে আমার সাথে কেউ যোগাযোগও করেনি। তবে কিছু কর্মকর্তা আমাকে ফোন করে বলেন, ‘স্যার আপনিই হচ্ছেন এমডি।’ তাদেরকে আমি বলেছি, এ সম্পর্কে কিছুই জানি না। চাকরির বয়সের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৬/৭ মাস আছে চাকরির বয়স। তারপরও সরকার দায়িত্ব দিলে বা যোগ্য মনে করলে আমি দায়িত্ব পালন করবো।
যন্ত্রপাতি ক্রয়ে দুদকের অনুসন্ধানের বিষয়ে তিনি বলেন, তদন্ত করে সঠিক নিয়মেই যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়েছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে। তাই বিষয়টির সুরহাও হয়ে গেছে। তিনি বলেন, যেখানে কেনাকাটা আছে, সেখানেই দুর্নীতি আছে। তারপরও সততার সাথে কাজ করেছি। এক্ষেত্রে আমার কোন দূর্বলতা নেই। গেষ্ট হাউজে কুকুর পালনের বিষয়ে তিনি বলেন, হ্যাঁ আমার দুটি কুকুর ছিল। এটা থাকতেই পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।