পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৯ আসনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন বিএনপির প্রার্থী কফিল উদ্দিন। মনোনয়পত্র পূরণ করার সময় বানানে বা অন্যকোন বিষয়ে ভুল ছিল না। কিন্তু সামান্য বিদ্যুৎ বিল বকেয়া এতেই বাঁধে বিপত্তি। এর কারণ দেখিয়ে তার মনোনয়নপত্রটি বাতিল করে দেন ঢাকা রিটার্নিং কর্মকর্তা। কয়েকটি আসনে প্রার্থীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেও আবেদন করা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিনের মনোনয়নপত্রটিও বাতিল করা হয়েছে। তার মনোনয়নপত্র বাতিল করার কারণ হিসেবে জেলা প্রশাসক তথা রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেছেন-রাজনৈতিক দলের মনোনয়নে প্রার্থী ঘষামাজা করেছেন।
এছাড়া টাঙ্গাইল-৮ আসনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র প্রার্থী আব্দুল লতিফ মিয়া। মনোনয়পত্র পূরণ করার সময় বানানে ভুল হওয়ায় নিজের নাম ও আসন নম্বর ফ্লুইড দিয়ে মুছে শুদ্ধ করেছিলেন তিনি। এতেই বাঁধে বিপত্তি। ফ্লুইড দিয়ে মুছে পরিবর্তনের কারণ দেখিয়ে তার মনোনয়নপত্রটি বাতিল করে দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
শুধু এই তিনটি আসনেই নয়, এমন ঠুনকো সব কারণে বাতিল করা হয়েছে শত শত মনোনয়নপত্র। সেসব ভুল সংশোধনযোগ্য। গত ১০ নভেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তাদের এ সংক্রান্ত নির্দেশনাও দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একটি পরিপত্র জারি করে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বলা হয়েছিল- ছোটখাটো ত্রুটির জন্য কোন মনোনয়নপত্র বাতিল করা যাবে না। যদি বাছাইয়ের সময় এমন কোন ত্রুটি বিচ্যুতি নজরে আসে যা তাৎক্ষণিকভাবে সংশোধন সম্ভব, তা হলে মনোনয়নপত্র দাখিলকারীর দ্বারা তা সংশোধন করিয়ে নিতে হবে। ইসির এই নির্দেশনা সত্বেও প্রার্থীর স্বাক্ষর নেই, টিপসই নেই, স্ট্যাম্প সংযোজন না করা, শিক্ষাগত যোগতার সনদ না দেয়া, আয়কর রিটার্ন জমা না দেয়া ইত্যাদি নানা কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা।
এছাড়া মনোনয়নপত্রের বৈধতা পেতে ইসিতে নাটোর-২ আসনের বিএনপি প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া, সাবেক মন্ত্রী মীর নাছির, সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি আপিল করেছেন। এছাড়া ঋণখেলাপির কথা বলে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, জাতীয় পার্টির রুহুল আমিন হাওলাদার, আফরোজা আব্বাসসহ অসংখ্য প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে।
এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দেখা গেছে বিকল্পধারা বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরীরর ক্ষেত্রে। একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় সোয়া কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করেও তার মনোনয়ন বৈধ বলে ঘোষণা দিয়েছেন মুন্সিগঞ্জের জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা। ঋণখেলাপি থাকা প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধি স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে লিখিতভাবে মাহীর বিরুদ্ধে ঋণখেলাপির অভিযোগ এবং আপত্তি জানালেও বৈধতা দেয়া হয়েছে। একই আইনে দুই রকম প্রয়োগের বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে সারাদেশেই আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।
এ বিষয়গুলোর আইনি ভিত্তি নিয়ে ইসি কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাওয়া হলে, তারা বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তাদের এটি ঠিক হয়নি। ছোটখাটো ভুলের জন্য কারো মনোনয়নপত্র বাতিল না করে প্রার্থীকে ডেকে এনে সংশোধন করিয়ে নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। তারা কেন সেটি করতে পারেননি, তা বলা যাচ্ছে না। তবে প্রার্থীরা আপিল করলে এসব কারণে রিটার্নিং কর্মকর্তার মনোনয়ন বাতিলের সিদ্ধান্ত টিকবে না। কর্মকর্তারা বলছেন, ইসি নির্দেশনা সঠিকভাবে না মানার কারণেই দশম সংসদ নির্বাচনের পূর্বে যেনতেন কারণে প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিতদের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল। অন্যথায় ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় প্রার্থী নির্বাচিত হতো না। সে সময় নামের বানানের সামান্য ভুলের জন্যও মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছিল। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, আপিলে সবার প্রতি মেরিট দেখে সিদ্ধান্ত দেয়া হবে। কোনো প্রকার পক্ষপাত করা হবে না।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ৩ হাজার ৬৫ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এগুলো যাচাইয়ের পরে ৭৮৬ জনের প্রার্থিতা বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। গত ২ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে ২ হাজার ২৭৯টি মনোনয়নপত্র বৈধ ও ৭৮৬টি অবৈধ বলে ঘোষণা করেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা। এগুলোর মধ্যে বিএনপির ১৪১টি, আ.লীগের ৩টি এবং জাতীয় পার্টির ৩৮টি মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। আর স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে ৩৮৪টি। অবশ্য রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এরইমধ্যে ৫৪৩ জন প্রার্থী নির্বাচন কমিশনে আপিল করেছেন। এরমধ্যে গতকাল বুধবার আপিলের শেষদিনে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ারসহ ২২২টি আপিল আবেদন জমা পড়েছে। এর আগে প্রথম দিন ৩ ডিসেম্বর ৮৪টি এবং দ্বিতীয় দিন ৪ ডিসেম্বর ২৩৭টি আপিল আবেদন জমা পড়ে। এসব আপিলের শুনানি আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়ে চলবে আগামী শনিবার পর্যন্ত।
এজন্য নির্বাচন ভবনের ১১ তলায় ট্রায়াল রুম তৈরি করা হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনার, নির্বাচন কমিশনের সচিব ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটরা সেখানে উপস্থিত থাকবেন। আজ সকাল ১০টা থেকে শুনানি শুরু হবে বলে জানিয়েছেন ইসি কর্মকর্তারা। তারা জানান, শুনানিতে আপিলকারীরা তাদের আইনজীবী নিয়ে আসতে পারবেন। সেখানে আদালতের বেঞ্চের মতো করেই তারা মুভ করবেন। শুনানির প্রথম দিন আজ বৃহস্পতিবার ১ থেকে ১৬০, দ্বিতীয় দিন আগামীকাল শুক্রবার ১৬১ থেকে ৩১০ এবং তৃতীয় দিন শনিবার ৩১১ থেকে ৫৪৩ ক্রমিকের আপিলের শুনানি হবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও শাহাদাত হোসেন চৌধুরী আপিল শুনানি নেবেন। আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ১১ তলায় আপিল শুনানির জন্য প্রস্তুত এজলাস ইসিতে আপিল শুনানির জন্য প্রস্তুত এজলাস।
আপিল করার সময় শেষ হওয়ার পর গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ৩-৫ ডিসেম্বর নির্ধারিত সময়ে ৫৪৩টি আপিল আবেদন আমরা পেয়েছি। পুরো কমিশন ৬-৮ ডিসেম্বর তা শুনবে। শুনানি শেষে আপিলের রায় সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে দেওয়া হবে। ইসি সচিব বলেন, আপিল আবেদনের ক্রমিক ১-১৬০ নম্বর পর্যন্ত শুনানি চলবে বৃহস্পতিবার, ১৬১-৩১০ নম্বরের শুনানি শুক্রবার এবং ৩১১ থেকে ৫৪৩ নম্বরের শুনানি হবে শনিবার। সে হিসাবে খালেদা জিয়ার আপিল আবেদনের শুনানি শেষ দিন শনিবার হতে পারে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কর্মসময় হিসাব করলে তিন দিনে শুনানির সময় দাঁড়ায় ৩৬ ঘণ্টা সেই হিসেবে প্রতিটি আপিল নিষ্পত্তিতে গড়ে ৪ মিনিটেরও কম সময় পাওয়া যাবে। প্রথম দিনে ১৬০টি আপিল শুনানির জন্য রাখা হয়েছে, ওই দিন প্রতিটি শুনানি করতে গড়ে সাড়ে ৪ মিনিট করে সময় লাগবে। ইসি সচিব বলেন, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে সবার শুনানি শেষ করা হবে। যতক্ষণ লাগবে ততক্ষণ শুনানি চলবে।
সংবাদ সম্মেলনে ইসি সচিব আরো বলেন, এবার ৭৮৬টি বাতিল মনোনয়নপত্রের মধ্যে ৩৮৪টি স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অধিকাংশই ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর গড়মিলের কারণে বাদ পড়েছে তাদের ক্ষেত্রে শুনানিতে সময় কম লাগবে। রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের মধ্যে ঋণ খেলাপ, বিল খেলাপ ও স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি মিলিয়ে অন্তত ১৩০ জন আপিলকারী রয়েছেন। বাকিদের দলীয় প্রত্যয়ন না থাকা, হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দেওয়াসহ হরেক রকমের আইনি ব্যত্যয় রয়েছে। সেক্ষেত্রে ৫৪৩টি আবেদন শুনতে তিন দিন পর্যাপ্ত বলে মনে করেন ইসি কর্মকর্তারা। ৫৪৩টি আবেদনের মধ্যে অধিকাংশই মনোনয়নপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে। তবে প্রার্থিতা বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে কতজন এবং দলভিত্তিক তথ্য জানাতে পারেনি ইসি। রায়ে সার্টিফাইড কপি সরবরাহের বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, যাদের আপিল আবেদন নামঞ্জুর হবে (অর্থাৎ রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে) তাদের রায়ের নকল কপি যেন দ্রুত দেওয়া হয় সে ব্যবস্থা থাকবে।
দেশের ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া দুই হাজার ৫৬৭ জন প্রার্থীর সংখ্যা মধ্যে বাতিল হয় ৪০২ জন। স্বতন্ত্র হিসেবে দাখিল করা ৪৯৮ জনের মধ্যে ৩৮৪ জন বাতিল হওয়ার পর বৈধ প্রার্থী রয়েছে ১১৪ জন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ২৬৪টি আসনে ২৮১ জন প্রার্থীর মধ্যে নৌকার বৈধ প্রার্থী ২৭৮ জন, বাতিল ৩ জন। বিএপির ২৯৫টি আসনে ধানের শীষে ৬৯৬ জন প্রার্থীর মধ্যে বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা ৫৫৫ জন, বাতিল হয়েছে ১৪১ জন। জাতীয় পার্টি ২১০ আসনে ২৩৩ জন প্রার্থীর মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে বৈধ প্রার্থী ১৯৫ জন, বাতিল হয়েছে ৩৮ জন।
উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ৯ ডিসেম্বর প্রত্যাহার এবং ৩০ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।