পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নাছিম উল আলম : বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা সম্প্রসারিত হলেও বিতরণ ও সরবরাহ ব্যবস্থা এখনো টেকসই হয়নি। এখনো আকাশে মেঘ জমলে খোদ বরিশাল বিভাগীয় সদরেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। গভীর রাতে নগরবাসীর ঘুম ভাঙে বিদ্যুৎ না থাকার কারণেই। শুধু বিদ্যুৎ ঘাটতি নয়, নাজুক ও সেকেলে বিতরণ ব্যবস্থা বরিশাল মহানগরীসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলবাসীকে যথেষ্ট দুর্ভোগে ফেলছে প্রতিনিয়ত।
এমনকি অনেক ক্ষেত্রে পল্লী বিদ্যুতের চেয়েও পিডিবি’র নিয়ন্ত্রণাধীন কোম্পানী ‘ওজোপাডিকো’র বিতরণ ব্যবস্থা নাজুক। ফলে বরিশাল বিভাগীয় সদরসহ অপর ৫টি জেলা সদরের মানুষ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া নিয়ে এখনো শুধু স্বপ্ন দেখে। কিন্তু অনেক স্বপ্ন বাস্তবায়নের দাবী করা হলেও চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ ঘাটতির পাশাপাশি নাজুক বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা গোটা দক্ষিণাঞ্চলবাসীর দুঃখ-কষ্টকে আরো বাড়িয়ে তুলছে। এমনকি ওজোপাডিকো’র ৩৩ কেভি সাবস্টেশনগুলোর দীর্ঘদিনের পুরনো ও নি¤œমানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের কারণে তাদের নিজস্ব গ্রাহকের সাথে পল্লী বিদ্যুতের লক্ষ লক্ষ গ্রাহকও চরম দুর্ভোগের শিকার প্রতিনিয়ত। বরিশাল মহানগরীতে পশ্চিামাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানী-ওজোপাডিকো’র দুটি বিতরন বিভাগের আওতায় লক্ষাধীক গ্রাহককে তিনটি ৩৩/১১ কেভী সাব-স্টেশন থেকে প্রায় ৩০টি ফিডারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবারহ করা হচ্ছে। এসব ফিডারের বর্তমানে প্রায় ৫ শতাধিক ১১/.০৪ ট্রান্সফর্মার থাকলেও তার অন্তত অর্ধেকই দীর্ঘদিনের পুরনো। উপরন্তু এসব ট্রান্সফর্মার নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। আর রক্ষনাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ট্রান্সফর্মার অয়েলসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রিকাল সরঞ্জামেরও অভাব প্রকট। এছাড়া বিভিন্ন ফিডার ইনচার্জগন তার নিজস্ব এলাকাভূক্ত ট্রান্সফমারগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। উপরন্তু নগরীর ৫ শতাধিক ট্রান্সফর্মারের অন্তত অর্ধেকই ওভারলোড হয়ে আছে। ফলে প্রায়সই নগরীর অনেক জনবহুল এলাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানের ট্রান্সফর্মার পুড়ে যাচ্ছে। তাপ প্রবাহ বৃদ্ধির সাথে ট্রান্সফর্মার বিকল বা বিকল হবার ঘটনাও বাড়ছে। বিগত গ্রীষ্ম মৌসুম বরিশাল মহানগরীর দুটি বিদ্যুৎ বিতরন বিভাগের আওতাভ’ক্ত এলাকায় প্রায় ৫০টি ট্রান্সফর্মার পুড়ে যায় বা বিকল হয়। চলতি মৌসুমে সে সংখ্যা কিছুটা কম হলেও ট্রান্সফর্মার নিয়ে দুর্ভোগ রয়েছে নগরবাসীর। একটি ট্রান্সফর্মার বিকল হলে তা পুনর্বাসন বা পূণর্বহালে ২৪ ঘন্টা থেকে ৭২ ঘন্টাও সময় লেগে যাচ্ছে। ফলে ঐ এলাকার মানুষের দুর্ভোগ অনেকটাই মানবিক সমষ্যা পর্যন্ত গড়াচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভ্রাম্যমান ট্রান্সফর্মার দিয়ে পরিস্থিতি সাময়িকভাবে সামাল দেয়া হলেও তা কোন স্থায়ী সমাধান নয়।
এমনকি বরিশাল মহানগরীতে ট্রান্সফর্মার বিকল বা পুড়ে যাবার হার ওজোপাডিকো’র অন্য যেকোন বিতরন বিভাগের চেয়ে বেশী বলে মন্তব্য করেছেন কোম্পানিটির ঊর্ধ্বতন মহল। এর পেছনে ফিডার ইনচার্জ-প্রকৌশলীদের উদাশীনতা ও অবহেলাকে দায়ী করা হলেও বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সঠিক কারন নির্ণয় করে যথাযথ পদক্ষেপও গ্রহণ করা হচ্ছে না।
উপরন্তু বরিশাল মহানগরীর ৩৩ কেভী ৩টি সাবস্টেশনের বিদ্যুৎ সরঞ্জামাদী পর্যন্ত অনেকটাই মেয়াদ উত্তীর্ণ বলে জানা গেছে। বাসবার ও ব্রেকারের মত অতি গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎ সরঞ্জামগুলো প্রায়ই অকার্যকর হয়ে পড়ছে। রূপাতলী মূল সাব-স্টেশন থেকে কাশিপুর ও পলাশপুর সাবস্টেশন পর্যন্ত ৩৩কেভী সঞ্চালন লাইন এবং এর ব্রেকার ও বাসবারগুলোতে গোলযোগ নিয়মিত ঘটনা। এমনকি সামান্য ঝড়ো হায়াতেও নগরীর ৩৩কেভী লাইন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে নানা ত্রুটির কারনে। এছাড়াও মূল লাইন থেকে বাজবার ও ব্রেকার সমুহের লুপ ও জাম্পারগুলোও প্রায়ই অকার্যকর হয়ে পড়ছে। আর এসব ৩৩কেভী লাইনের যেকোন গোলযোগই গোটা নগরীর বিশাল এলাকাকে বিদ্যুৎবিহীন করে দেয়।
এমনকি ইতোপূর্বে কাশীপুর বা পলাশপুরে যেকোন একটি ৩৩কেভী লাইন বিকল হলেও বিকল্প ব্যবস্থায় অন্য সাবস্টেশন থেকে বিদ্যুৎ এনে কিছু ফিডার চালু রাখা যেত, এখন তাও অসম্ভব হয়ে পড়ছে। বছর চারেক আগে দপদপিয়া সাব-স্টেশন থেকে পলাশপুর মুখি একটি বিকল্প ৩৩ কেভী লাইন নির্মান কাজ শুরু হলেও ঝড়ে কিছু তার ছিড়ে পড়ার পরে সে কাজটি পরিত্যক্ত করা হয়েছে।
এসব কিছুর সাথে দক্ষিনাঞ্চলে ওজোপাডিকো’র সিষ্টেম লসও অনেক। গ্রাহকের মিটারের হিসেবে এসিষ্টেম লস এখনো গড়ে প্রায় ১১%। আর লাইন ও বাসবার-এর ইউনিট হিসেব করলে সিষ্টেম লসের পরিমান গড়ে ১৩%-এর মত । ভোলার মনপুরাতে সিষ্টেম লস সবচেয়ে কম ৩.৬০%-এর মত। আর চরফ্যশনে তা গ্রাহক পর্যায়ে প্রায় ২১% এবং লাইন ও বাসবার পর্যায়ে ৩২%-এর মত। যা অত্যন্ত অস্বাভাবিক ঘটনা। ঝালকাঠীর কাঠালিয়াতে লাইন লসের পরিমাণও প্রায় ১৫%-এর মত।
অপরদিকে এখনো দক্ষিণাঞ্চলে অনেক আবাসিক গ্রাহকের মিটার পরিদর্শন না করেই বিল করার অভিযোগ প্রতিষ্ঠিত সত্য। কতিপয় মিটার রিডারের এসব অনিয়মের জন্য প্রতিনিয়তই কতৃপক্ষ বিড়ম্বনায় পড়ছেন। বিষয়টি অস্বীকার না করে এ অনিয়ম দুর করার চেষ্টার চলছে বলে জানিয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলীগণ।
অপরদিকে ওজোপাডিকো গঠিত হবার পরে অনেক নতুন নিয়ম চালু হলেও আজ পর্যন্ত গ্রাহকদের স্বার্থে তেমন কোন ব্যাবস্থা গ্রহন করতে পারেনি কোম্পানীটি। আজ পর্যন্ত দক্ষিনাঞ্চলের বিদ্যুতের অভিযোগ কেন্দ্রগুলো সার্বক্ষণিক চালু রাখাসহ মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষন সহ গ্রাহকের লাইনের ত্রুটি দুর করতে কোন যানবাহন সংগ্রহ করতে পারেনি কোম্পনীটি। অথচ এর সাথে গ্রাহকদের সুষ্ঠু সেবা পাবার বিষয়টিসহ প্রতিষ্ঠানটির সুনাম এ বাণিজ্যিক বিষয়ও জড়িত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।