পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে এবার নারী ভোটাররা অনেক প্রার্থীর জন্য বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে। কোনো কারণে নারী ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে না গেলে অনেক প্রার্থীর জন্য কাল হয়ে দাঁড়ারে। এবারের সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ১০ কোটি ৪১ লাখ ৪২ হাজার ৩৮১ জন। এর মধ্যে নারী ভোটারের সংখ্যা ৫ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার ২৭৬। নারী ভোটারের চেয়ে পুরুষ ভোটার ৮ লাখ ৮১ হাজার ৮২৯ জন বেশি। আর পুরুষ ও নারী ভোটারের অনুপাত ৫০ দশমিক ৪২:৪৯ দশমিক ৫৮। দশ বছরে নতুন ভোটার বেড়েছে দুই কোটি ৩২ লাখ। এর মধ্যে ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী নারী ভোটারের সংখ্যা প্রায় এক কোটি ১৬ লাখ। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই প্রথম দেশে ৬টি আসনের ৮০০টি কেন্দ্রের প্রায় ৪২৬৭টি কক্ষে ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা হবে। ২১ লাখ ২৪ হাজার ৪১১ জন ভোটার ইভিএমে ভোট দেয়ার সুযোগ পাবেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো ইশতেহার তৈরির কাজ করছে। এর মধ্যে কয়েকটি ইশতেহার প্রকাশিত হলেও প্রধান দলগুলো খসড়া চূড়ান্ত করার কাজে ব্যস্ত। এখনো রাজনৈতিক দলগুলো তাদের চ‚ড়ান্ত ইশতেহার ঘোষণা করেনি। দেশের মোট ভোটারের প্রায় ১৫ শতাংশ তরুণ। এর মধ্যে তরুণী অনেক বেশি রয়েছে। সুতরাং তাদের গুরুত্ব দিয়ে বিশেষ করে তাদের কর্মসংস্থান, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ও কোটা ইত্যাদি বিষয়ে সুস্পষ্ট ঘোষণা থাকা উচিত প্রধান দুই দলের। তবে শুধু ঘোষণাই নয়, এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের কৌশল ও সময়সীমাও ইশতেহারে থাকতে হবে। ইশতেহার শুধুমাত্র জনতুষ্টির কথা ভেবে কথার ফুলঝুরি হয়ে থাকার বিষয় নয়। বরং এটি রাজনৈতিক দলের বিশ্বাস, দর্শন ও আদর্শেরও প্রতিফলন। সুতরাং রাষ্ট্রের সর্বস্তরে দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়ন রোধ, গণতান্ত্রিক চর্চা, মানুষের কথা বলা তথা ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার মতো বিষয়গুলোতে প্রধান দলগুলো তাদের অবস্থান স্পষ্ট করবে এটা মনে করে দেশের তরুণীদের প্রত্যাশা। দেশে নারীর ক্ষমতায়নের কথা অনেক হয়েছে। এখন ইশতেহারে তা বাস্তবায়নের দিকনির্দেশনা থাকতে হবে। এমনকি যে দল হারবে, তারা বিরোধী দল হিসেবে সেসব দিকনির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে বলে দাবি জানিয়েছে নারীনেত্রীরা। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রায় আড়াই কোটি তরুণ ভোটার অংশ নিতে যাচ্ছেন। ভোটারের হিসাবে প্রায় আড়াই কোটি তরুণ ভোটার। সেই সঙ্গে মোট ভোটারের অর্ধেক অংশই হচ্ছেন নারী। পাঁচ কোটির বেশি ভোটারই নারী ভোটার। বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনগুলোতে পুরুষ ভোটারের তুলনায় নারী ভোটারদেরই বেশি ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত দেখা যায়। তাই ফলাফল নির্ধারণে বড় ফ্যাক্টর তারা। বিশ্লেষকরা বলছেন, নবম সংসদ নির্বাচনের পর যারা ভোটার হয়েছেন, তাদের আমরা তরুণ ভোটার হিসেবেই বিবেচনা করতে পারি।
নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম ইনকিলাবকে বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের প্রায় অর্ধেক নারী ভোটার। তাই নির্বাচনকালীন সময়ে নারীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ বজায় রাখতে সচেষ্ট থাকবে নির্বাচন কমিশন। নারীরা যাতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে যাতে আজকের মধ্যেই বাতিল হওয়া প্রার্থীদের সার্টিফাইড কপি দেয়া হয়।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ভোটার ছিল ৮ কোটি ১০ লাখ ৮৭ হাজার। এবার ভোটারের সংখ্যা ১০ কোটি ৪১ লাখ ৪২ হাজার ৩৮১ জন। দশ বছরে ভোটার বেড়েছে দুই কোটি ৩২ লাখ। প্রতিটি আসনে ভোটার বৃদ্ধির সংখ্যা গড় প্রায় ৭৭ হাজার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা ইসিতে মনোনয়নপত্র জামা দিয়েছেন। আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে দলীয়ভাবে চ‚ড়ান্ত প্রার্থিতা ঘোষণা দেবেন। এরপর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করবেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৯ কোটি ১৯ লাখ ৬৫ হাজার ১৬৭ জন। বর্তমান ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে প্রস্তুত ভোটার তালিকায় ভোটার সংখ্যা ১০ কোটি ৪১ লাখ ৪২ হাজার ৩৮১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫ কোটি ২৫ লাখ ১২ হাজার ১০৫ জন এবং নারী ভোটার ৫ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার ২৭৬ জন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। পাতানো ওই নির্বাচনে ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় এমপি নির্বাচিত হয়। অন্য আসনগুলোতে যে ভোট হয়েছে, তাতে দেখা যায় ভোট প্রদানের গড় হার মাত্র পাঁচ শতাংশ। মূলত ২০০৮ সালের পর ২০১৮ সাল এই ১০ বছরে ভোটার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে দুই কোটি ৩২ লাখ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন এই ভোটারদের আশা-আকাক্সক্ষা ভিন্ন মাত্রার। শিক্ষিত ও বয়সে তরুণ এই নারীরা ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে তুলনামূলক সৎ ও যোগ্য প্রার্থীদেরই ভোট দেবেন। বিষয়টি সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোও নারী ভোটারদের নির্বাচনে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছেন। নির্বাচনী ইশতেহারে নারীর উন্নয়নের বিষয়টি পেতে যাচ্ছে বিশেষ গুরুত্ব। অবশ্য ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নারী ভোটারদের গুরুত্ব দিয়েই তাদের নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। এই বিপুল সংখ্যক ভোটারের মধ্যে অর্ধেক নারী ভোটার কার্যত এবারই প্রথম ভোট প্রয়োগ করে আইনসভার জন্য নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে।
ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারের ব্যাপারে জানা গেছে, নারীর জন্য সংরক্ষিত আসনের পরিবর্তে সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে। এ ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ বাধ্যতামূলক মনোনয়নের বিধান করা হবে। তবে এই বিধান প্রণয়ন করা হলেও আগামী অন্তত দু’টি নির্বাচনে ১০ শতাংশ সংরক্ষিত নারী আসন রাখা হবে ৩০০ আসনের বাইরে। এছাড়া, সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানে শিশুদের জন্য ডে-কেয়ার স্থাপন, বেসরকারি ডে-কেয়ার স্থাপনে ঋণ সুবিধা দেয়ার প্রতিশ্রুতিও থাকবে। নারীর সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নারীদের ওপর সংঘটিত নানা অত্যাচার বৈষম্য দূর করা, সামাজিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিকভাবে মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা।
এবার প্রথম দেশের ৬টি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ৬টি আসনের ৮০০টি কেন্দ্রের প্রায় ৪২৬৭টি কক্ষে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএমে ভোট গ্রহণ হবে। এতে মোট ২১ লাখ ২৪ হাজার ৪১১ জন ভোটার ইভিএমে ভোট দেয়ার সুযোগ পাবেন। ঢাকা-১৩, ঢাকা-৬, চট্টগ্রাম-৯, রংপুর-৩, খুলনা-২ ও সাতক্ষীরা-২ আসন ইভিএম ব্যবহারের জন্য নির্ধারণ করা হয়। সেখানেও ১১ লাখ নারী ভোটার ইভিএমে ভোট প্রদান করবে।
২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ যে ‘দিনবদলে’র নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছিল, মনে করা হয় ওই ইশহেতার তরুণ প্রজন্মের ভোট আকর্ষণে দারুণ ভূমিকা রেখেছিল। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে তাদের ইশতেহারের স্লোগান ছিল ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’ যেখানে সুশাসন, গণতন্ত্রায়ন ও ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা, জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমা নাগালে রাখা, শিল্পায়ন বাড়ানোসহ নানা প্রতিশ্রুতি ছিল। দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধও ঘোষণা করা হয়েছিল ওই ইশতেহারে।
বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করায় ওই বছর তারা কোনো ইশতেহার না দিলেও পরবর্তীতে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ২০৩০ সাল পর্যন্ত তাদের একটি লক্ষ্যমাত্রা ভিশন ২০৩০ ঘোষণা করেন, যেখানে সামাজিক ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার কথা বলা হয়। রূপরেখায় মানবাধিকার, সুশাসন নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি দূর করারও অঙ্গীকার করা হয়। নারীদের শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা, প্রধানমন্ত্রীর একক ক্ষমতা ভারসাম্য করতে সংসদীয় গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে সংস্কার এবং দ্বিকক্ষবিশিষ্ট জাতীয় সংসদ গঠনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার কথাও বলা হয় ভিশন ২০৩০-এ।
এবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ইশতেহারে কী থাকছে? ২৪ নভেম্বর আওয়ামী লীগের ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক ইনকিলাবকে বলেন ইশতেহারের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী ১১ ডিসেম্বর ঘোষণা করা হতে পারে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে প্রবৃদ্ধি বাড়ানো এবং দারিদ্র্যের হার কমানোর লক্ষ্য সামনে রেখে এবার আওয়ামী লীগের ইশতেহার ঘোষণা করার ইঙ্গিত দেন তিনি। তবে শোনা যাচ্ছে, এবার দলটির ইশতেহারে গ্রামকে শহর বানানো তথা শহরের সুবিধা গ্রামাঞ্চলে পৌঁছে দেয়ার অঙ্গীকার থাকছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার বক্তব্যেও গ্রামকে শহরে উন্নীত করার কথা উঠে এসেছে।
সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলন ইস্যুতে তরুণদের একটি বড় অংশের সাথে সরকারের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে অনেক তরুণী পুলিশের হয়রানির শিকার হয়েছেন। এ বিষয়ে সরকারি দল বিষয়টি সমাধানে কিছু করেনি। ফলে এবার আওয়ামী লীগের ইশতেহারে তরুণ-তরুণীদের নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা থাকছে না বলে জানা গেছে। আবার বিশেষ করে শিক্ষিত তরুণীদের উন্নয়নে সম্পৃক্ত করার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা থাকতে পারে। আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির ইশতেহারে এবার প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য, দুদকের সংস্কার, সরকারি অর্থায়নে দরিদ্রদের শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থান, চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫, চাহিদা অনুযায়ী কোটা সংস্কারের মতো বিষয়গুলো প্রাধান্য পেতে পারে। সেই সাথে এ মুহূর্তে দেশের অন্যতম বড় সঙ্কট রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত পাঠানোর অঙ্গীকারও থাকতে পারে তাদের ইশতেহারে।
গণসংহতির সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের লক্ষ্য আইনগত ও সাংবিধানিক দিক থেকে নারীর সমতা নিশ্চিত করা। নিরপত্তা নিশ্চিত ও অন্যান্য সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিসরে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি নিশ্চিত করা, ঘরে-বাইরে কর্মস্থলে নারীর যে নিরাপত্তার প্রশ্ন, বিশেষত যৌন হয়রানি নিয়ে যে নীতিমালা রয়েছে, সেটি আইনে পরিণত করার বিষয়টি থাকবে। পাশাপাশি শিক্ষা কার্যক্রমে যৌন হয়রানি শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার মতো কাজগুলোও তারা করতে চান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।