Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সরকারের নির্দেশেই বিএনপি প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল

সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

সরকারের নির্দেশে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে রিটার্নিং অফিসাররা মূলতঃ সৎ মায়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ডেকে এনে বৈঠক করে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সেই নির্দেশনা অনুযায়ী বিএনপিসহ বিরোধী দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র গণহারে বাতিল করা হয়েছে। গতকাল (মঙ্গলবার) বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রে অসংখ্য ত্রুটি থাকার পরেও সেগুলোকে বাতিল করা হয়নি। দুর্নীতি মামলায় দন্ডিত হওয়ার তথ্য গোপনের অভিযোগ থাকার পরেও সরকারি দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়নি। অথচ বিএনপির মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া বেশীরভাগ প্রার্থীদেরকেই কথা বলতে দেননি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রিটার্নিং অফিসার হায়াত উদ দৌলা খান।
তিনি বলেন, নির্বাচনী আচরণবিধির বিধান হচ্ছে, প্রার্থীদের বিরুদ্ধে যদি কোন অভিযোগ থাকে তাহলে তাদেরকে কথা বলার সুযোগ দিতে হবে। কোন ডকুমেন্টস উপস্থাপন করতে চাইলে তা করতে দিতে হবে। কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তা যদি শুরুতেই প্রার্থীকে থামিয়ে দেন, তাহলে বুঝতে হবে রিটার্নিং অফিসার দুরভিসন্ধি নিয়ে কাজ করছেন। এভাবে সারাদেশেই রিটার্নিং অফিসাররা তুচ্ছ বিষয় নিয়ে বিএনপির মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, তফসিল ঘোষণার পরে রিটার্নিং অফিসাররা নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে কাজ করেন, সেক্ষেত্রে তাদের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া চলবে না। কিন্তু যদি রিটার্নিং অফিসার বা নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত অন্য কোন কর্মকর্তা কোন রাজনৈতিক দলের স্বার্থের পক্ষে কাজ করেন, তাহলে তা হবে গুরুতর অসদাচরণ। এটি সমগ্র নির্বাচন কমিশনকেই প্রশ্নবিদ্ধ করবে। কিন্তু বর্তমানে নির্বাচন কমিশন, শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং নির্বাচনে ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের ভোটে নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়, জনমনে শঙ্কা ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, দেশব্যাপী রিটার্নিং অফিসারদের কর্মকান্ডে নির্বাচনে জনমতে সঠিক প্রতিফলন ঘটকে কি না তা নিয়ে মানুষের মধ্যে জিজ্ঞাসা তৈরি হয়েছে। এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন এবং তাদের নিয়ন্ত্রিত রিটার্নিং অফিসাররা যা করছেন তা কেবলই প্রহসন। আয় কমে গেলেও ক্ষমতাসীন মন্ত্রী-নেতাদের সম্পদ বাড়ে, অথচ এগুলিতে দুদক ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের চোখ এড়িয়ে যায়। আসন্ন নির্বাচন এবং গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে আবারও দেশব্যাপী গভীর অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশের আগ্রাসী তৎপরতা ও নির্বিচারে দেশব্যাপী বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতার অভিযানে ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনেরই ছবি মানুষ দেখতে পাচ্ছে। যেন পাতানো কিছু একটা করতে যাচ্ছে অবৈধ শাসকগোষ্ঠী। স্বৈরশাসিত এই দেশে আগামী দিনে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অধঃপতনের লক্ষণগুলোই ফুটে উঠছে।
তিনি বলেন, এবারের নির্বাচন নিয়ে জনবিরোধী কোন পদক্ষেপ নিতে গেলে এই অবৈধ আধিপত্য অভিলাষী সরকার নিজেরাই নিজেদের পতন ডেকে আনবে। ভোটারদের বঞ্চিত করে ভাগ্নে শাহজাদাদের বিজয়ী করার নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না। বর্তমান শাসকগোষ্ঠী পুলিশের ওপর নির্ভরপরায়ণ ও সামর্থহীন। সুতরাং গণভিত্তি নেই বলেই এদের পতন অত্যাসন্ন।
দন্ড হওয়ার পরও সরকার দলীয় প্রার্থীদের বৈধ ঘোষণার তীব্র সমালোচনা করে বিএনপির এই নেতা বলেন, হাইকোর্টে ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও আমানউল্লাহ আমানসহ বিএনপির পাঁচ নেতার আবেদন নাকচ হওয়ার দিনে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, কারও দন্ড হলে আপিল বিচারাধীন থাকলেই চলবে না, এমনকি আপিলে মুক্তি পেলেও নিস্তার নেই। তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। এখন আমাদের প্রশ্ন, অ্যাটর্নি জেনারেলের এই ব্যাখা যদি বিবেচনায় নেয়া হয় তাহলে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এবং কক্সবাজারের এমপি আব্দুর রহমান বদির এমপি পদ কি অবৈধ নয়? অ্যাটর্নি জেনারেল নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে সংবিধান ও আইনের ব্যাখা দেন সরকার প্রধানকে খুশী করার জন্য। মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দিনের আমলে ২০০৭-০৮ সালে ক্যাঙ্গারু কোর্টে বিএনপি’র যে নেতারা দন্ডিত হয়েছিলেন তাদের আপিল বিচারাধীন থাকলেও তাদের সবার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। অথচ ঐ ক্যাঙ্গারু কোর্টে দন্ডিত ও সাজা স্থগিত না থাকা অবস্থায় দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন মখা আলমগীর। ১৩ বছরের সাজা নিয়ে শুধুমাত্র আপিল করে এখনও এমপি হিসেবে বহাল আছেন হাজী সেলিম, তার মনোনয়নপত্রও বৈধ বলে বিবেচিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের স্বার্থে আইন এক ধরনের ও বিএনপির ক্ষেত্রে আইন আরেক ধরনের। অ্যাটর্নি জেনারেলের ব্যাখাও একই রকম।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আতাউর রহমান ঢালী, প্রফেসর ড. মামুন আহমেদ, কেন্দ্রীয় নেতা মো. মুনির হোসেন প্রমূখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ