পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একাদশ জাতীয় নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেয়ে বিদ্রোহী হওয়া আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা পরিষ্কার বোল্ড আউট হয়েছেন। রোববার নির্বাচন কমিশনের মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাইয়ের সময় দলের অধিকাংশ বিদ্রোহী প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়ে গেছে। আর যাদের মনোনয়ন বৈধ হয়েছে তারাও টেনশনে আছেন ভবিষ্যতে তাদের ভাগ্যে কি ঘটে। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে পারবেন কিনা। তাই খুব সাবধানে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সকল কাজ সম্পন্ন করছেন।
সূত্র জানায়, অধিকাংশ বিদ্রোহী প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় স্বস্তি বিরাজ করছে আওয়ামী লীগের। দলের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়ার আগেই মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় দলের কাজ কমে গেছে; সাথে কেন্দ্রীয় সংগঠনের পেরেশানি। না হয় বিদ্রোহীদের নিয়ে বসে তাদের সঙ্গে সমঝোতা করা, প্রার্থীতা প্রত্যাহারের অনুরোধ করা, দলের নেতাকর্মীরা যেন তাদের পক্ষে কাজ না করে সে বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া ও মনিটরিং করাসহ অনেক কাজ কমে গেছে।
আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনী জোট মহাজোটের শরিকদের জন্য যেসব আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেয়নি, ওইসব আসনে আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। মনোনয়ন ফরমে ভুলত্রুটিসহ নানাবিধ কারণে তাদের মনোনয়ন বাতিল করেছে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসাররা।
আর যে কয়েকটি আসনে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন তাদের সংখ্যা খুবই কম। তবে দলের যেসব ‘স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ, দলের শীর্ষ নেতাদের কপালে তারা ভাঁজ ফেলছেন। এছাড়া তবে অভ্যন্তরীন কোন্দল নিয়ে চিন্তিত আওয়ামী লীগ।
সূত্র জানায়, দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাতকার নেয়ার সময় গণভবনে সকলকে উদ্দেশ্য করে দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হুশিয়ারি উচ্চারণ করার অনেকেই বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচনে দাড়াননি। তাই বিদ্রোহী নিয়ে এবার বেশি একটা ঘাম ঝড়াতে হচ্ছে না দলকে।
জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের চিঠি পাওয়া একজন প্রার্থী ছাড়া বাকি সবার মনোনয়নপত্র বৈধ বলে গতকাল রোববার জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কুড়িগ্রাম-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য জাকির হোসেনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয় ‘অসম্পূর্ণ ও তথ্যের ঘাটতি’ থাকায়।
বর্তমানে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে নেত্রকোনা-১ আসনে সাবেক এমপি মোস্তাক আহমেদ রুহি, লক্ষীপুর-২ আসনে কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল, মেহেরপুর-১ আসনে জয়নাল আবেদিন, মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনে বর্তমান এমপি মকবুল হোসেন, পিরোজপুর-১ আসনে বর্তমান একেএমএ আউয়াল, পিরোজপুর-৩ আসনে বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজী, আওয়ামী লীগের আশরাফুর রহমান ও ডা. আনোয়ার হোসেন, কুড়িগ্রাম-২ আসনে জাতীয় পার্টির পনির উদ্দিন আহমেদ, নীলফামারি-৪ আসনে জাতীয় পার্টির শওকত চৌধুরী।
তবে কয়েকজন প্রার্থী এখনো দলের মনোনয়ন পাবার বিষয়ে আশাবাদি। তারা ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত দলের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করছেন।
লক্ষীপুর-২ আসনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মোহাম্মদ নোমান। এই আসনে মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী শহিদুল ইসলাম পাপুলের। তিনি এখনও দলের মনোনয়ন পাবার বিষয়ে আশাবাদি। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি পাপুলকে মনোনয়ন দিলে তিনি এ আসনটি দলকে উপহার দিতে পারবেন। আসনটি বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগের ঘাটিতে পরিণত হবে।
যেসব আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীদের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে: কুমিল্লা-২ (হোমনা-তিতাস) হোমনা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. আবদুল মজিদ ও জাসদ প্রার্থী বড়–য়া মনোজিৎ ধীমান। কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর) আসনে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার ও তার ছেলে আহসানুল আলম কিশোর। কুমিল্লা-৪ আসনে সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ, খাগড়াছড়িতে সাবেক সংসদ সদস্য যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সমীর দত্ত চাকমা, নেত্রকোনা-১ আসনে সাবেক এমপি জালাল উদ্দিন তালুকদারের ছেলে শাহ কুতুব উদ্দিন তালুকদার রুয়েল, নেত্রকোনা-৪ আসনে হেভিওয়েট ক্যান্ডিডেট শফী আহমেদের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। পটুয়াখালী-১ আসনে জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, ঢাকা-১৭ আসনে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বাতিল আর চিত্রনায়ক ফারুক স্থগিত।
কুমিল্লা-১১ আসনে জাকের পার্টির প্রার্থী তাজুল ইসলাম বাবুল, সিলেট-২ আসনে বিশ্বনাথের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান এবং অধ্যক্ষ ড. এনামুল হক সরদার। রংপুর-১ আসনে আসাদুজ্জামান বাবলু, সাতক্ষীরা-১ আসনে বিএম নজরুল ইসলাম ও বিশ্বজিৎ সাধু, যশোর-৩ আসনে শাহীন চাকলাদার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে আনিছুর রহমান, সৈয়দ তানভীর হোসেন, শাহজাহান আলম সাজু, সফিউল্লাহ, আশরাফ উদ্দিন; ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনে মমিনুল হক সাঈদ,
নাটোর-৪ আসনে ১৪ দলের শরিক জাসদের (ইনু) রনি পারভেজ আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। নাটোর-১ আসনে সাম্যবাদী দলের বীরেন্দ্রনাথ সাহা, নরসিংদী ২-আসনে জাসদের প্রার্থী জায়েদুল কবির, লক্ষীপুর-৪ আসনে বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে থেকে।
এছাড়াও মেহেরপুর-১ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মিয়াজান আলী, সাবেক এমপি আবদুল মান্নান, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইয়ারুল ইসলাম ও কেন্দ্রীয় শ্রমিককল্যাণ লীগের সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান; মেহেরপুর-২ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক, আহমেদ আলী, মোখলেসুর রহমান মুকুল, নূরজাহান বেগম, ওয়াসিম সাজ্জাদ লিখন, লক্ষীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য লায়ন এমএ আওয়াল ও যুবলীগ নেতা মাহবুব আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। আউয়াল ১৪ জোটের শরিক তরিকত ফেডারেশনের প্রার্থী ও ওই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। কুমিল্লা-১১ আসনে জাকের পার্টির প্রার্থী তাজুল ইসলাম বাবুল, কুড়িগ্রাম-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী চৌধুরী সফিকুল ইসলাম ও আবু সুফিয়ান এবং জাসদ প্রার্থী সলিমুল্লাহ ছলি, রংপুর-১ আসনে আসাদুজ্জামান বাবলু, ময়মনসিংহ-৪ আসনে আমিনুল হক শামীম, নীলফামারী-৪ আসনে রশিদুল ইসলাম আক্তার হোসেন বাদল, আমিনুল ইসলাম সরকার ও আমেনা কোহিনুর, হবিগঞ্জ-৩ আসনে সংরক্ষিত নারী আসনের বর্তমান এমপি আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে।
দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন জমার আগেই জানিয়ে দেন, ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ হলে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের অঙ্গীকারনামায়ও সই নিয়ে রাখা হয়েছে এবার।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পায়নি এমন অনেকেই মধ্যে বিদ্রোহী প্রার্থী বা দলীয় কোন্দল সাথে জরিয়ে পরছে এ প্রসঙ্গে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল বলেছেন, বড় দলের মধ্যে কিছু থাকে। তবে সময় মতো সবাই ঐক্য হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মনোনয়ন চিঠি দেওয়ার পর বঞ্চিত নেতাদের সমর্থকরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ক্ষোভ-বিক্ষোভ ও অবরোধ করেন। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এক সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কেউ প্রার্থী হলে তাকে আজীবনের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত আছে।’ শেষ পর্যন্ত দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের সঙ্গে বোঝাপড়া না হলে কতজন ‘বিদ্রোর্থী প্রার্থী’ হিসেবে ভোটের মাঠে থাকে, তা ৯ ডিসেম্বর জানা যাবে। তবে ক্ষুব্ধ নেতারা বিদ্রোহী প্রার্থী’ থেকে গেলে কী হবে, এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন শীর্ষ নেতারা। আবার মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে প্রার্থীদের দলের বিপক্ষে কাজ করা নিয়েও শঙ্কায় আওয়ামী লীগ।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তথ্য অনুযায়ী, একাদশ সংসদ নির্বাচনে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৩০৫৬। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা হয় ৪৯৮। এদের মধ্যে ৯৫ জন ছিল আওয়ামী লীগের।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।