Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সরকার রাষ্ট্রীয় অর্থে বিএনপির বিরুদ্ধে কুৎসিত সাইবার যুদ্ধ শুরু করেছে- রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:৪২ পিএম | আপডেট : ১:৪৪ পিএম, ১ ডিসেম্বর, ২০১৮

সরকার আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে রাষ্ট্রীয় অর্থে বিএনপির বিরুদ্ধে কুৎসিত সাইবার যুদ্ধ শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, সরকার বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনকে বাধাদান এবং তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো তাদের ভয়ংকর প্রোপাগান্ডায় সয়লাব। ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার ইত্যাদি ছড়িয়ে দিচ্ছে বিদ্বেষমূলক নানা সুপার ইমপোজ করা ছবি, টেম্পারড নকল অডিও-ভিডিও। মূলত: এইসব নির্জলা মিথ্যাচার, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অশ্লীল রুচিহীন প্রোপাগান্ডা চালিয়ে তাদের দশ বছরের গুম-খুন- অত্যাচার-নিপীড়ন-জেল-জুলুম-সর্বগ্রাসী লুটপাট ও দুঃশাসন থেকে সরকার ভোটারদের দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। শনিবার বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ এই ধরনের গর্হিত অপকর্মে অর্ধ শতাধিক অনলাইন পোর্টাল, ইউটিউব চ্যানেল এবং ফেসবুক গ্রুপ ব্যবহার করছে। বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। নামে-বেনামে ভুয়া আইডি’র ফেসবুকে প্রতিদিন হাজার হাজার ডলার ব্যয় করে প্রমোশন দিয়ে বুস্ট করছে। আওয়ামীলীগের এইসব প্রোপাগান্ডা অনলাইন পোর্টাল, ইউটিউব চ্যানেল এবং ফেসবুক গ্রুপের মধ্যে রয়েছে-বাংলা ইনসাইডার, বাংলা নিউজ পোস্ট, আমাদের রাজনীতি, চিরায়ত বাংলাদেশ, নিউজ ফর অল, ছবির মত দেশ, বাংলাদেশী ভাইরাল ভিডিও, চেয়ারম্যান সাব, গেরিলা ৭১, শোন হে বাঙালী, সাইবার ফোর্স ৭১, রক্ত ঋণ একাত্তর, বঙ্গবন্ধু সাইবার ফোর্স, বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল ব্রিগেড, আওয়ামী সাইবার ব্রিগেড, আম জনতা, ভোরের পাতা, গুজবে কান দিবেন না, মোহাম্মদ এ আরাফাত প্রভৃতি। প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত আপনজনদের নামেও সাইবার ওয়েবসাইট খুলে অবান্তর, কাল্পনিক, উদ্ভট অপপ্রচার চালাতে হিসেববিহীন অর্থ ব্যয় করছে আওয়ামী লীগ।
তিনি বলেন, বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ প্রোপাগান্ডার কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান হলো আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডি অফিসে স্থাপিত-‘সেন্টার ফর রিসার্চ এন্ড ইনফরমেশন-সিআরআই’। যার চেয়ারম্যান এবং হেড অফ স্ট্রাটেজি অ্যান্ড প্রোগ্রামার ট্রাষ্টি প্রধানমন্ত্রীর আপনজনরা। বিএনপির এই নেতা বলেন, ১৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বঙ্গবন্ধু সেনা পরিষদ ও মুক্তিযোদ্ধা বিসিএস অফিসার্স কল্যাণ সমিতি’র এক যৌথ আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা ও আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম তাদের নেতাকর্মীদেরকে ফেসবুকে ভুয়া আইডি খুলে সাইবার যুদ্ধে নামার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাংঘাতিক লড়াই হবে। আগামী লড়াইয়ে শুধু প্রতিহত করা নয়, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে ধ্বংস করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ‘নামে-বেনামে’ ভুয়া আইডি খুলুন। আপনাদের নাতি-নাতনিদের নামে-বেনামে একটার জায়গায় ১০টা কেন, প্রয়োজনে একশটা ফেসবুক আইডি খুলতে বলুন। এরপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বেশুমার ফেক আইডি খুলে বিএনপি, দেশের জনগণের প্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ মিথ্যাচার চালাচ্ছে।
রিজভী বলেন, কয়েক মাস আগে আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় সম্পাদক মন্ডলীর সঙ্গে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন এবং ঢাকা মহানগর কমিটির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বৈঠকে মাঠ দখল বিষয়ে অনলাইনে প্রচারণার নানা কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়। ঐ বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অনলাইনে বিএনপির বিরুদ্ধে প্রচারণার সমন্বয়ের দায়িত্ব দেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুরকে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, শুধু তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও নোংরা-অশ্রাব্য -কুৎসা অপপ্রচারের জন্য কথিত সাংবাদিক সৈয়দ বোরহান কবির চটি টাইপের অনলাইন পোর্টাল ‘বাংলা ইনসাইডার’ ও ভিডিও চ্যানেল ‘বাংলা নিউজ পোস্ট’ চালাচ্ছে। তার সাথে রয়েছে সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এ. আরাফাত নামের জনৈক আওয়ামীপন্থী কথিত বুদ্ধিজীবী। আছে ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমানের কয়েকজন চিহ্নিত নেতা। তারা প্রতিদিন মনগড়া আজগুবি সব নিউজ-ভিডিও রচনা করছে। তথ্য সন্ত্রাস চালাচ্ছে, যেটা পুরোটাই ঈর্ষা-প্রতিহিংসায় ভরা। মিথ্যার বেসাতি।
ধানমন্ডিতে আলিশান ভবনে বোরহান কবির ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের নামে প্রতিষ্ঠান খুলে সেখানে বসে এই প্রোপাগান্ডা তৈরি করে সামাজিক গণমাধ্যম গুলোকে দূষিত করছে। ’বাংলা নিউজ পোস্টে’ টেকনোলজি ব্যবহার করে বানানো মিথ্যা কুরুচিপূর্ণ ভিডিওগুলো প্রতিদিন বিজ্ঞাপন আকারে ফেসবুক ও ইউটিউবে ছড়াচ্ছে।
রিজভী বলেন, এই আওয়ামী গোষ্ঠীর প্রতিহিংসা ও অপপ্রচার আর তথ্য সন্ত্রাসের নির্মম টার্গেট করা হয়েছে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে। জাতীয়তাবাদী শক্তির অবিসংবাদিত কান্ডারী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং এ মুহূর্তে জনগণের পক্ষে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর তারেক রহমানের প্রশ্নাতীত গ্রহণযোগ্যতা ওদের প্রসুপ্তি কেড়ে নিয়েছে। হিংসুকরা জানে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে এ প্রজন্মের সবচেয়ে মননশীল, অসামান্য প্রজ্ঞা, কর্মনিষ্ঠ আর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতার নাম তারেক রহমান।
তিনি বলেন, তারেক রহমানকে নিয়ে সংঘবদ্ধ এবং বহুমাত্রিক ষড়যন্ত্রের জাল বিছানো হয়েছে সবখানে। তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ হিসাবে দাঁড় করানো হয়েছে তথ্য সন্ত্রাসকে। ভূতুড়ে অশরীরী আত্মারা যেমন দিনের আলো সহ্য করতে পারেনা, রাতের ঘুটঘুটে আঁধারেই তাদের বিচরণ, তেমনই তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বিচক্ষণতায় ঠিকরে পড়া ব্যক্তিত্বের মহিমা সহ্য করতে না পেরে অপপ্রচার-প্রপাগান্ডাকে বেছে নিয়েছে তারা। দেশপ্রেমিক মানুষের প্রিয় ঠিকানা বিএনপিকে দৃঢ় গণতান্ত্রিক ভিত্তিমূলে দাঁড় করানোর প্রত্যয়ে রাজনীতির মাঠে আবির্ভাবের পর থেকেই তাকে নিয়ে শুরু হয় কুচক্রীদের নীলনকশা। তবে ২০০১ এর নির্বাচনে বনানীতে চেয়ারপার্সনের অফিস হাওয়া ভবনে বসে সুসংগঠিত ব্যবস্থাপনা, সুদক্ষ নির্বাচনী প্রচারণায় তথ্য প্রযুক্তির প্রথম প্রয়োগে বিশাল সাফল্য ও বিজয়ের পর আওয়ামী কাশিমবাজার কুঠির চক্রান্তকারীদের গায়ে আগুন ধরে যায়। বনানী অফিস আর তাঁর বিরুদ্ধে আষাঢ়ে গল্পের অপপ্রচারের তুফান শুরু হয়। ষড়যন্ত্রের ডালপালা পল্লবিত হতে থাকে। সেই নীলনকশার ষোলকলা পূর্ণতা পায় ১/১১’র ষড়যন্ত্রকারীদের মাধ্যমে। তথ্য সন্ত্রাস ও মামলা দিয়েই ক্ষান্ত না হয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা তার প্রাণনাশ করতে কোন রকম অভিযোগ ছাড়াই ২০০৭ সালের ৭ মার্চ জরুরী বিধিমালায় গ্রেফতার করে । বর্বরতম নির্যাতনের সঙ্গে নজিরবিহীন এক মিডিয়া-বিদ্বেষের শিকারে পরিণত করা হয় তাঁকে।
বিএনপি নেতা আরও বলেন, এখনও সেই নোংরা মিথ্যাচার চালানো হচ্ছে নানা ডাইমেনশনে। এখন অনলাইনে আওয়ামী সমর্থক এবং পেইড অ্যাক্টিভিষ্টরা কোন প্রমাণ তথ্য ছাড়াই জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতে ভয়ংকর হাইপার প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে।
রিজভী বলেন, তথ্য সন্ত্রাসীদের তত্ত্বগুরু হিটলারের মন্ত্রী জোসেফ গোয়েবলস। সে তত্ত্ব প্রচার করেছিল আওয়ামী লীগ এই প্রোপাগান্ডা তত্ত্বের সর্বাধিক প্রয়োগ করে চলেছে তারেক রহমানসহ জিয়া পরিবারের ওপর। বেঘোরে থাকা এই অপরিণামদর্শী অর্বাচীনরা উপলব্ধি করেনা যে, আজ থেকে আশি বছর আগে প্রচারিত গোয়েবলস এর তত্ত্ব এই তথ্যপ্রযুক্তির ধাবমান কালে গ্লোবাল ভিলেজে অচল। মিথ্যার পুনরাবৃত্তিতে সত্যে পরিণত করার ধাপ্পাবাজির কৌশল এখন অকেজো-সেকেলে। সবাই এখন সচেতন। হাতে হাতে এখন মাল্টিমিডিয়া সেল ফোন। দুনিয়ার মুহূর্তের খবর ইন্টারনেটের মাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছে প্রতিটি মানুষের কাছে। মিথ্যা দিয়ে সত্যকে ঢাকা অসম্ভব। তা হিতে বিপরীত হয়।
সরকারের সমালোচনা করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে বন্দী করে রাখার কারণে ক্ষুদ্ধ জনগণের রোষ প্রতিহত করতেই এই মিথ্যা প্রচারণা। গণতন্ত্রকে হত্যা করে গণতন্ত্রের বন্ধ দুয়ারের চাবি পুলিশের হাতে দেয়া হয়েছে, সুতরাং পুলিশী অনাচার ও অপকর্ম ঢাকতেই এ মিথ্যা প্রচারণা। বর্তমান ভোটারবিহীন সরকারের ১০ বছরের দুঃশাসন, নিজেদের অপকর্ম, লক্ষ লক্ষ কোটি লুট, শেয়ার বাজার লুট, বাংলাদেশ ব্যাংক লুট, বেসিক ব্যাংক লুট, সোনালী, রুপালি, অগ্রণী, জনতা, কৃষি ব্যাংকসহ সকল ব্যাংক লুট, সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করার খবর যাতে চাপা থাকে, সেজন্যই এ মিথ্যা প্রোপাগান্ডা। বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মীদের হত্যা, বিচারবর্হিভূত হত্যা, গুম, খুনের খবর ঢাকতেই এ মিথ্যা প্রচার, মানুষের সকল অধিকার হরণ করে উন্নয়ণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটের খবর চাপা দিতেই এ মিথ্যা প্রচারণা, প্রধান বিচারপতিকে বন্দুকের জোরে পদত্যাগ করতে ও দেশ ছাড়তে বাধ্য করে বিচার বিভাগকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে এনে সেটির যথেচ্ছ ব্যবহার করে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া, বিচার বিভাগ থেকে ন্যায় বিচারকে কবরস্থ করে দেয়ার এবং প্রশাসনকে দলীয়করণের মাধ্যমে ধ্বংস করার খবর ঢাকতেই সংঘবদ্ধ চক্রকে দিয়ে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার করা হচ্ছে।
তিনি সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এই অপপ্রচার থেকে বিরত থাকুন এবং শালীন ও ইতিবাচক রাজনীতি করুন। সত্য দিয়ে সত্যকে মোকাবিলা করুন। আগামী নির্বাচনে ব্যালটের মাধ্যমে এই প্রোপাগান্ডার জবাব দেবে ভোটার’রা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ