দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
উপর্যুক্ত হাদীসে ইঙ্গিত রয়েছে যে, মানুষ ইবাদত বন্দেগীতে ভারসাম্য রক্ষা করা পরিবারের অধিকার আদায়ের সাথে সাথে দেহ ও মনের সুস্থতা নিশ্চিত করবে। কারণ, দেহ মনের সুস্থতা ছাড়া মানুষ আল্লাহর ইবাতে পূর্ণাঙ্গভাবে করতে পারে না। তাই কাজের ফাঁকে অবসর সময়ে মানুষের সীমিত পরিসরে চিত্ত বিনোদন উদযাপন করা শুধু বধ নয়; বরং কোনো কোনো সময় জরুরী ও হয়ে পড়ে।্ সহীহ মুসলিমের অপর বর্ণনায় রয়েছে,রাসূল স. হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনিল আস রা. কে লক্ষ্য করে বললেন: হে আবদুল্লাহ নিশ্চয়ই তুমি তো সব সাওম পালন করো। এবং সারা রাত জেগে থেকে ইবাদত করো, নিশ্চয় তুমি যদি এ রকম করেই থাক, তাহলে তোমার চোখ দূর্বল ও ক্লান্ত হয়ে পড়বে। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, মানব শরীরের সুস্থতা, মনের প্রশান্তি ও পুরো জীবনের সঠিক ব্যবহার ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যবাশ্যকীয় এক বিধান। সে হিসেবে বিনোদন মানুষের জন্য গুরুত্বপূণ।
খ. আবূ হুযাইফা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সালমান আল ফারিসী রা. ও আবুদ দারদা রা. এর মাঝে রাসূল স. ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টি করে দিলেন। একদিন সালমান রা. আবুদ দারদা রা. এর সাথে সাক্ষাত করতে গিয়ে লক্ষ্য করলেন যে, তার স্ত্রী জীর্ণ শীর্ণ কাপড় পরে বির্মষ অবস্থায় আছেন। তখন তিনি তাকে বললেন তোমার এ কী দশা? তিনি বললেন, তোমার ভাই আবুদ দারদা দুনিয়াবিমুখ হয়ে গেছে। তারপর আবুদ দারদা রা. বাড়িতে আসলেন, তিনি তার মেহমানের জন্যে খাবার তৈরি করলেন, তারপর তাকে বললেন, খাও তিনি নিজে বললেন, আমি রোযাদার। সালমান আল ফারিসী রা. বললেন তুমি না খেলে আমি খাচ্ছি না। বর্ণনাকারী বললেন, তারপর তিনি খেলেন। যখন রাত হলো তখন আবুদ দারদা রা. রাতের নামাজের জন্যে দাঁড়াতে গেলেন, কিন্তু সালমান রা. বললেন তুমি শুয়ে পড়ে। তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। তারপর আবার উঠতে চাইলেন, কিন্তু সালমান রা. বললেন ঘুমাও। অতঃপর যখন রাতের শেষাংশ হলো, তখন সালমান রা. বললেন এবার ওঠ. তারপর তারা দুজন নামাজ আদায় করলেন। তারপর সালমান রা. আবুদ দারদা রা. কে লক্ষ্য করে বললেন, তোমার ওপর তোমার প্রভুর হক আছে, তোমার ওপর তোমার নিজের নাফস এর হক রয়েছে। তোমার ওপর তোমার পরিবারের হক রয়েছে। প্রত্যেক হরদারকে তার হক প্রদান করো। তারপর আবুদ দারদা রা. রাসূলূল্লাহ স. এর কাছে এসে তা জানালে রাসূলুল্লাহ স. বললেন, সালমান সত্যই বলেছে।
উপর্যুক্ত হাদীস গুলো থেকে প্রমানিত হয় যে, মানুষের আত্মার প্রশান্তি তথা বিশ্রামের প্রতি যত্মশীল হওয়া উচিত। সময়ের একটি অংশ আনন্দ ও প্রফুল্লতায় কটানো বাঞ্জনীয়, যাতে কাজের প্রতি বিরক্তকর ভাব দূর হয় এবং ক্লান্তি বিদূরিত হয়, সাথে সাথে পূর্ণ একাগ্রতা ও স্বত:স্ফূর্তভাবে আল্লাহ তাআলার ইবাদতে মশগুল থাকা যায়।
ইসলামে বিনোদনের বৈশিষ্ট্যঃ ইসলামের প্রতিটি বিধানই যেহেতু সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ, ভারসাম্যপূর্ণ ওমানবরুচির সাথে সামঞ্জস্যশীল, তাই অন্য কোন বিনোদন ব্যবস্থার তুলনায় ইসলাম প্রদর্শিত বিনোদন ব্যবস্থা আলাদা ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ঠমন্ডিত। নিম্নে আমরা ইসলামের বিনোদন ব্যবস্থার কতিপয় বৈশিষ্ঠ্য তুলে ধরছি।
মহান আল্লাহর বন্দেগীর প্রেরণাযুক্ত ঃ আল্লাহর প্রতি ঈমানের একান্ত দাবি হলো, মানুষের সমগ্র জীবনটাই সর্বাপস্থায় তার বন্দেগীর অনুভূতির সজ্জীবিত থাকবে, আর জীবনের সকল কাজকর্ম একমাত্র তার নির্দেশ অনুযায়ী পরিচারিত হবে। জীবনের আনন্দ নিরানন্দ ব্যস্ততা ও অবসর যাপন, ছোট খাট সবটুকুই ইসলামী শরীআতের আলোকে হওয়াটাই বান্দাহর বন্দেগীর দাবি। এ নিরিখে একজন আল্লাহর বান্দাহ বিনোদনকে এভাবে গ্রহণ করবেন যে, আমার দেহ মনের সুস্থতা আমাকে হক্কুল্ল্াহ (আল্লাহর হক্ব) ও হক্কুল ইবাদ (বান্দাহর হক্ব) আদায়ে সক্ষম রাখবে, পূর্ন উদ্যম ও একাগ্রতা নিয়ে আমার ওপর মহান আল্লাহ কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব আঞ্জাম দিতে পারব। তাহলে একজন মুমিন ব্যক্তি তার জীবনে যে সময়টুকু শরীয়ত নির্ধারিত সীমারেখা মেনে চিত্ত বিনোদনে ব্যয় করবেন,তা নিঃসন্দেহে আল্লাহর বন্দেগীর আওতায় গণ্য হবে।
(চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।