Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নতুন প্রযুক্তির ডেবিট ক্রেডিট কার্ড আসছে

অবশেষে টনক নড়ল বাংলাদেশ ব্যাংকের

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

অবশেষে টনক নড়ল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের। একই সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া সম্প্রতি জালিয়াতি রোধ এবং লেনদেনকে নিরাপদ করতে বর্তমান প্রচলিত ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের বদলে ইএমভি প্রযুক্তির কার্ড ব্যবহারে নির্দেশনা দেয়। বর্তমান কার্ডগুলি ভারতে ১ জানুয়ারি থেকে বিকল হয়ে যাবে। দৈনিক ইনকিলাবে গত সোমবার ‘ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি ঠেকাবে ইএমভি প্রযুক্তি’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের টনক নড়ে।
গত সোমবারই নড়ে-চড়ে বসে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকও নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডে নতুন প্রযুক্তি সংযোজনের নির্দেশ দেয়। একই সঙ্গে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের পর ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ অর্থাৎ পুরানো প্রযুক্তির কার্ড ইস্যু না করারও নির্দেশ দিয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্ট এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠিয়েছে। এর আগে চলতি বছরের জুনের মধ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সব ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড চিপ ও পিনযুক্ত তথা দুই স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা করার নির্দেশনা থাকলেও তা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান। এ কারণে নতুন করে আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এটিএম কার্ড জালিয়াতি রোধে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের তাগিদ দিয়েছেন আর্থিক এবং আইটি খাত সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তারা আশঙ্কা করছেন, এখনই ব্যবস্থা না নিলে আবারও বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরি ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। আর তাই ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি রোধে নিরাপত্তার জন্য প্রাধান্য দিতে হবে ইএমভিকে। এক্ষেত্রে অবশ্যই চিপ কার্ড করতে হবে। একই সঙ্গে প্রয়োজন অ্যান্টি স্কিমিং ডিভাইস।
সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে প্রচলিত ম্যাগনেটিক স্ট্রিপযুক্ত কার্ডের তুলনায় চিপযুক্ত কার্ড বেশি নিরাপদ। ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ কার্ডের পেছনে কালো রঙের যে ফিতা বা ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ থাকে, তাতে গোপনীয় তথ্য সংরক্ষিত থাকে। প্রতারকরা স্কিমিং ডিভাইসের মাধ্যমে এ ধরনের কার্ডের তথ্য চুরি এবং তা দিয়ে নকল কার্ড তৈরি করে এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে পারে। আর চিপযুক্ত কার্ডের তথ্য সংরক্ষিত থাকে কম্পিউটার মাইক্রো চিপে। স্কিমিং ডিভাইস কোনোভাবে এ ধরনের কার্ড থেকে তথ্য চুরি করতে পারে না। যে কারণে বিশ্বব্যাপী এখন চিপভিত্তিক কার্ডের ব্যবহার বাড়ছে।
কার্ডভিত্তিক লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে গত বছরের ২৪ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক একটি নির্দেশনা দেয়। ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ইস্যু করা সব ব্র্যান্ডের কার্ড চিপ ও পিনযুক্ত হতে হবে। ম্যাগনেটিক স্ট্রিপযুক্ত সব কার্ড ২০১৮ সালের ৩০ জুনের মধ্যে চিপভিত্তিক করতে হবে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সব কার্ডের লেনদেন অবকাঠামো আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পিসিআই ডাটা সিকিউরিটি স্ট্যান্ডার্ড সার্টিফাইড করতে বলা হয়।
এ ছাড়া কার্ডভিত্তিক সব ধরনের লেনদেনের তথ্য এসএমএসের মাধ্যমে জানাতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়। আর এজন্য নতুনভাবে স্থাপিত সব এটিএম বুথ বাধ্যতামূলকভাবে চিপ কার্ড পরিচালনার প্রযুক্তি, এন্টি স্কিমিং প্রযুক্তি, পিন গার্ড এবং এনক্রিপ্টেড পিন প্যাড সংবলিত করার নির্দেশনা দেয়া হয়। আগে স্থাপিত এটিএম বুথ এসব প্রযুক্তি সংবলিত করার জন্য গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে অনেক ব্যাংক এখনও আগের এটিএম বুথ সরিয়ে নতুন প্রযুক্তির বুথ বসাতে সক্ষম হয়নি। যে কারণে চিপ প্রযুক্তির কার্ড সরবরাহ করতে পারেনি।
এর আগে ৩০ জুনের মধ্যে সব কার্ড চিপ ও পিনযুক্ত করার নির্দেশ দিয়ে সার্কুলার জারি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ব্যাংকগুলো তা বাস্তবায়ন করেনি। এমন পরিস্থিতিতে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের পর থেকে নতুন কার্ড ইস্যু করার ক্ষেত্রে ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ প্রযুক্তির ব্যবহার করা যাবে না। একইসঙ্গে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আগে ইস্যু করা ব্র্যান্ডেড ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ কার্ডে চিপ ও পিনভিত্তিক করার প্রক্রিয়া জরুরি ভিত্তিতে শেষ করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত দেশের ব্যাংকগুলোতে মোট কার্ডের সংখ্যা এক কোটি ৪২ লাখ ৬১ হাজার। এসব কার্ডের মাধ্যমে মোট লেনদেন হয় ১৫ হাজার ৭২৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে এক কোটি ৩০ লাখ ৫৫ হাজার ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন হয় ১৪ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা। সারাদেশে মাত্র ১০ লাখ ৩২ হাজার ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৩৩ কোটি টাকা। আর প্রিপেইড কার্ড রয়েছে এক লাখ ৭৪ হাজার, যেখানে ২৩ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ক্রেডিট কার্ড

৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১
৩ এপ্রিল, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ