পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : সরকারে পরিবর্তন ঘটানোর দাবিতে হাজার হাজার ইরাকি বাগদাদের রাস্তায় বিক্ষোভ মিছিল করার প্রেক্ষিতে শিয়া প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল এবাদি এ সপ্তাহে পার্লামেন্টে হাজির হন। তিনি কিছু নতুন মন্ত্রী নিয়োগ করে এ প্রক্রিয়ায় গতি আনার আশা ব্যক্ত করেন। পার্লামেন্টের আইন প্রণেতারা তার দিকে পানির বোতল ছুঁড়ে, টেবিল চাপড়ে ও ক্ষমতা ছাড়ার স্লোগান দিয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানান।
তাদের একজন চিৎকার করে বলেন, এ অধিবেশন অবৈধ।
হৈচৈকারী বিরোধীদের রেখে প্রধানমন্ত্রী এবাদি অন্য কক্ষে চলে যান। সেখানে সমর্থক আইন প্রণেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন তিনি। কয়েকজন নতুন মন্ত্রী নিয়োগ করা হয় যারা সবাই টেকনোক্র্যাট, দলের লোকজন নন। গোষ্ঠীগত বিরোধ ও দুর্নীতি অবসান এবং এ সবের সমর্থনকারীদের পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্য এ পদক্ষেপ নেয়া হয়।
কিন্তু ইরাক সরকারের অন্যান্য কর্মকা-ের মত এ পদক্ষেপও প্রত্যাশাপূরক নয়। কয়েকজন নতুন মন্ত্রী নিয়োগ করা হয়েছে এবং তা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দফতরে। এর মধ্যে রয়েছে তেল, পররাষ্ট্র ও অর্থ। বৃহস্পতিবারে পার্লামেন্টের নতুন অধিবেশন বাতিল করা হয়েছে।
প্রায় দু’ বছর আগে ইসলামিক স্টেট (আইএস) উত্তর ইরাকের বিস্তীর্ণ এলাকা অধিকার করে নেয়ার ঘটনা ওবামা প্রশাসনকে সমাপ্ত ঘোষণা করা যুদ্ধে পুনরায় জড়িত হতে বাধ্য করে। ইরাকের রাজনৈতিক ব্যবস্থা মোটেই কাজ করছে না, পার্লামেন্টে এ সপ্তাহে সংঘটিত ঘটনার মত ঘটনাবলী সংঘটিত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার বাগদাদে আকস্মিক সফরে আসেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জোসেফ আর. বাইডেন জুনিয়র। ২০০৬ সালে সিনেটর হিসেবে তিনি এক প্রবন্ধে ইরাককে শিয়া, সুন্নী ও কুর্দি এলাকায় ভাগ করার আহবান জানিয়েছিলেন। মনে হয় এখন একটি প্রশ্ন করা সমীচীন হবে যা প্রায় এক শতাব্দী আগে বিদেশী শক্তিদের বিপর্যস্ত করেছিল তা হল ইরাক কি একটি শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে কার্যকর থাকতে যাচ্ছে?
ইরাকে কয়েকজন রাষ্ট্রদূত ও জেনারেলের সাথে কাজ করা আমেরিকান কর্মকর্তা আলি খেদেরি বলেন, আমি সার্বিকভাবে মনে করি বর্তমান কাঠামোর অধীনে তা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, দেশটির সমস্যার একমাত্র সমাধান হচ্ছে কনফেডারেশন অথবা ইরাককে টুকরো করা। তিনি একে এক ত্রুটিপূর্ণ পৃথিবীর জন্য ত্রুটিপূর্ণ সমাধান বলে আখ্যায়িত করেন।
বর্তমানে আমেরিকার ইরাক নীতির তীব্র সমালোচক খেদেরি বলেন, এ নীতি অব্যাহতভাবে দেশের বিরাজমান রাজনৈতিক সমস্যার বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে চলেছে। তিনি বলেন, ইরাক হচ্ছে, সহিংস, অকার্যকর বিবাহ এবং আমরা তার মধ্যে অলৌকিক কিছু ঘটানোর জন্য মার্কিনিদের জীবন ও অর্থ ঢেলে চলেছি। এর পরিবর্তে আমাদের একটি গ্রহণযোগ্য বিভক্তি বা বিয়েবিচ্ছেদের চিন্তা করা উচিত যা ইরাকের বিভক্ত সম্প্রদায়গুলোকে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার দেবে।
গত বছর ইউরোপীয় বিষয় নিয়ে লেখার সময় খেদেরি বলেন, ওয়াশিংটনের উচিত তার কৃত্রিম সীমান্ত নির্ধারণ পরিত্যাগ করা এবং ইরাককে টুকরো হতে দেয়া। তিনি কৃত্রিম সীমান্ত বলতে পথম মহাযুদ্ধের পর অটোম্যান সা¤্রাজ্য ভেঙে পড়ার প্রেক্ষিতে ব্রিটেন ও ফ্রান্স কর্তৃক মধ্যপ্রাচ্যের নতুন মানচিত্র সৃষ্টির কথা উল্লেখ করেন।
ইরাক ও সিরিয়ায় তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকাসহ লিবিয়া, আফগানিস্তান ও অন্যান্য দেশে তাদের বিস্তার লাভ, প্যারিস ও ব্রাসেলসে হামলা ইত্যাদির প্রেক্ষিতে হয়ত সহজেই ভুলে যাওয়া যেতে পারে যে ইরাকে রাজনৈতিক ব্যর্থতার পরিণতিতে আইএস সম্মুখ সারিতে উঠে আসে। ইরাকের এ গোষ্ঠি রাজনীতিতে এবাদির পূর্বসূরি ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী নূরী আল মালিকি।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন যে ইরাকের ঐক্য রক্ষা এখনো তাদের নীতি। কিন্তু বাগদাদে জাতিসংঘের কর্মকর্তারা কীভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইরাকের এ বিভক্তি সামাল দেবে তা নিয়ে সন্তর্পণে গবেষণা শুরু করেছেন।
ইরাকের প্রাণপ্রবাহ যে সম্পদ সেই তেলের মূল্য কমে যাওয়া, আইএসের বিরুদ্ধে ভয়ংকর এবং অতি সম্প্রতি দেশের উত্তরে শিয়া মিলিশিয়া ও কুর্দিদের মধ্যকার লড়াই ইত্যাদির ফলে রাজনৈতিক সমস্যার আরো অবনতি হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলেছেন, এটা দেশে এক নতুন, সহিংস লড়াই শুরু হয়ে যেতে পারে।
মনে হচ্ছে ইরাক ইতিহাসের ঘূর্ণাবর্তে পাক খাচ্ছে যার বারবার পুনরাবৃত্তি ঘটছে।
এক দশক আগে ইরাককে তিন ভাগে ভাগ করার কথা বললেও জো বাইডেন ইরাকের ঐক্য বজায় রাখার জন্য কাজ করেছেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার বাগদাদে আমেরিকান কূটনীতিক ও সামরিক সদস্যদের কাছে তিনি সেই পুরনো প্রস্তাবের পুনরুল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আপনারা সব জায়গার কথা ভাবুন যেখানে আমরা শান্তি রক্ষা করতে চাইছি। ভাবুন, সে সব জায়গাতেই আমরা পুরুষ ও নারী যোদ্ধাদের পাঠিয়েছি। এমন সব স্থান আছে যেখানে ইতিহাসের কারণে কৃত্রিম সীমান্ত তৈরি করা হয়েছে, কৃত্রিম রাষ্ট্র সৃষ্টি করা হয়েছে যা সম্পূর্ণ পৃথক জাতিগোষ্ঠী, ধর্ম, সাংস্কৃতিক গ্রুপ নিয়ে গঠিত। তিনি বলেন, এ নিয়ে আপনারা থাকুন, এক সাথে থাকুন।
একশ’ বছর আগে ব্রিটিশ মহিলা কর্মকর্তা ও গুপ্তচর গার্ট্রুড বেল আধুনিক ইরাকের সীমান্ত চিহ্নিত করেন। একটি নতুন দেশ সৃষ্টি করার পর তিনি লেখেন, আমরা একটি ব্যাপক রাজনৈতিক কর্মসূচির প্রতি আমাদের বরাবরের অশ্রদ্ধা নিয়ে এ কাজে নিয়োজিত হই। মুক্তি পেতে যাচ্ছে এমন একটি ডকুমেন্টারি ‘লেটারস ফ্রম বাগদাদ’-এ মিস বেলের জীবন ও কর্মের পরিচয় রয়েছে, যাতে দেখা যাবে যে একশ’ বছরের মধ্যে ইরাকে কত কমই পরিবর্তন ঘটেছে।
এমনকি আজো তার কাজের প্রভাব অনুভূত হয়। এ সপ্তাহে এবাদি ইরাকের রাজা ফয়সালের বংশধর শরিফ আল বিন হুসেনের কথা উল্লেখ করেন যাকে মিস বেল ১৯২১ সালে ইরাক শাসনের জন্য মনোনীত করেন। কিন্তু ইরাকি আইন প্রণেতারা ইরাকের ব্যর্থ রাজকীয় শাসনের স্মৃতি বলে তাকে প্রত্যাখ্যান করেন।
ইরাকে আজকের যে সমস্যা তা সাদ্দাম হোসেনের নিষ্ঠুরতার উত্তরাধিকার। সাদ্দাম হোসেনের সুন্নী প্রধান প্রশাসনের অধীনে শিয়া ও কুর্দিরা নিপীড়নের শিকার হয়। সুন্নীরা এখন বলে যে সাদআমের অন্যায়ের জন্য তারা অযৌক্তিক প্রান্তিকীকরণের শিকার হচ্ছে।
জাতিসংঘে একজন মানবাধিকার কর্মকর্তা ইরাক সফরের পর এ সপ্তাহে আবেগজড়িত ভাষায় বলেন, ইরাকের দীর্ঘ স্মৃতি রয়েছে, কিন্তু স্বপ্ন নেই।
এ বছর দি নিউইয়র্ক টাইমসের সাথে এক সাক্ষাৎকারে নূরী আল মালিকি বলেন, তিনি যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন এ ইতিহাস অতিক্রম করতে অক্ষম ছিলেন। তিনি বলেন, কুর্দিরা তাদের অতীতের ক্ষতিপূরণ চাইছিল। সে সাথে শিয়ারাও।
শিয়া নেতৃত্বের মধ্যে বিভক্তি রয়েছে। যেমন মালিকি ও অন্যান্য শিয়া নেতারা এবাদির পুনর্গঠন কাজের বিরোধিতা করছেন, যা ইরাকের রাজনৈতিক সংকটের অন্যতম কারণ।
মালিকি ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রিত্বের পদ হারানোর পর ইরাকের তিন ভাইস প্রেসিডেন্টের একজন হন। গত গ্রীষ্মে এবাদি ভাইস প্রেসিডেন্টের পদগুলো বিলুপ্ত করার মাধ্যমে পরিবর্তন আনতে চাইলে বাধার সম্মুখীন হন। দু’জন ভাইস প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়তে অস্বীকার করেন। তাদের বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেয়া হয়। তাদের একজন হলেন মালিকি। এখনো তিনি ভাইস প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ দখল করে আছেন এবং নিজেকে ইরাকের ভাইস প্রেসিডেন্ট বলে দাবি করেন।
তিনি আর প্রধানমন্ত্রী হতে চান না বললেও বহু ইরাকি কর্মকর্তা ও পশ্চিমা কূটনীতিকের ধারণা যে তিনি সে পরিকল্পনাতেই কাজ করছেন।
এবাদির আরেক বড় শত্রু হচ্ছেন হাদি আল আমেরি। তার রয়েছে ইরান সমর্থিত শক্তিশালী মিলিশিয়া বাহিনী। তিনিও এবাদিকে অপসারণ করতে চান। তবে তিনি বলেন, ইরাকে গণতন্ত্র নেই। তিনি ইরাকিদের ঐক্যবদ্ধ করতে এবাদির ব্যর্থতার সমালোচনা করে প্রকারান্তরে তার পক্ষ সমর্থন করে বলেন, এমনকি যদি কোনো নবীও ইরাক শাসন করতে আসেন, তিনিও সব পক্ষকে সন্তুষ্ট করতে পারবেন না। সূত্র দি নিউইয়র্ক টাইমস।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।