Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অপরিশোধিত উপাত্ত আসলে ব্যবহার করা যায় না

প্রকাশের সময় : ৪ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : উপাত্ত হচ্ছে নতুন তেল, টেসকো ক্লাবকার্ডের পিছনের গুণীব্যক্তি গণিতবিদ ক্লাইভ হামবি ঘোষণা করেছিলেন। পরে তার এ মতের বিশদ ব্যাখ্যা দেন ন্যাশনাল অ্যাডভার্টাইজার্স এসোসিয়েশনের মাইকেল পামার। তিনি বলেন, উপাত্ত হচ্ছে ঠিক অপরিশোধিত তেলের মত। এটা মূল্যবান, কিন্তু যদি অপরিশোধিত থাকে তবে আসলে তা ব্যবহার করা যায় না। একে মূলব্যান করে তুলতে গ্যাস, প্লাস্টিক, রাসায়নিক ইত্যাদি সামগ্রীতে পরিবর্তন করতে হয় যা লাভজনক পণ্য হয়ে ওঠে। সে রকম উপাত্তকেও ভেঙ্গেচূরে ফেলে মূল্যবান করে তুলতে বিশ্লেষণ করতে হয়।
এর মধ্যে একটি ভুল আছে। তেল হচ্ছে প্রাকৃতিক সম্পদ। একে খুঁজে পেতে হয়, কূপ খনন করতে হয় এবং ভূগর্ভ থেকে পাম্প করে তুলতে হয়। বিপরীত দিকে উপাত্ত হচ্ছে একেবারেই অপ্রাকৃতিক বিষয়। আহরণ ও পরিশোধন করার আগে তাকে সৃষ্টি করতে হয়। প্রশ্ন ওঠে যে আসলে কে এই জাদুকরী সম্পদ সৃষ্টি করেন? জবাবঃ আপনি ও আমি। সেই পুরনো দিনে টেসকো ক্লাবকার্ডের যুগে আমরা টেসকোতে কেনাকাটার দ্বারা তা করেছি যা ক্রয়কৃত পণ্যের সাথে আমাদের সংযুক্ত করতে পারে। যখন ইন্টারনেট প্রাধান্য বিস্তার করল, আমাদের উপাত্ত উৎপাদনশীলতা ব্যাখ্যামূলক ভাবে বৃদ্ধি পেল। কারণ, আমরা অনলাইনে যা কিছুই করি তা ডিজিটাল উপাত্তের ট্রেইল রেখে যায় যা সহজেই ইন্টারনেট কর্পোরেশনগুলোর নিজের হয়ে যেতে পারে যাদের সেবা আমরা নিয়ে থাকি।
বৃহৎ ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠান গুগল ও ফেইসবুক হচ্ছে তেল জায়ান্ট এক্সন ও শেল, সে তুলনায় টেসকো ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মাত্র। তবে তেল জায়ান্টরা ন্যূনতম পক্ষে প্রকৃত ভোক্তাদের কাছেই তাদের সামগ্রী বিক্রি করে, কিন্তু সাইবার স্পেসের নিষ্কাশনশীল প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত উপাত্ত ট্রেলের বিনিময়ে নিছক বিনামূল্যের সেবা প্রদান করে। তারপর তারা সেগুলোকে দ্রুতগতি অনলাইন নীলামের এক বিশাল গোপন বৈশ্বিক ব্যবস্থায় বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে বিক্রি করে। আর এ প্রক্রিয়ায় তারা নতুন ধরনের একটি শিল্প সৃষ্টি করেছে যাকে হার্ভার্ড স্কলার শোসানা জুবফ নজরদারি পুঁজিবাদ বলে আখ্যায়িত করেন।
এ নয়া ব্যবস্থাকে জোরদার করে তোলার বড় আইডিয়া হচ্ছে যে ব্যবহারকারীরা সকল কাজ করে। গুগল সার্চ চালিয়ে, ফেইসবুকে পোস্টিং স্ট্যাটাস আপডেট করে, টুইটিং করে, লিংকড ইনের উপর আমাদের সিভি স্থাপিত করে আমরা এভাবে বিনামূল্যে তৈরি উপাত্ত প্রদান করি যা বিজ্ঞাপন দালাল ও বিজ্ঞাপন দাতাদের কাছে নিষ্কাশিত, পরিশোধিত ও বিক্রি হতে পারে যারা ইন্টারনেট কোম্পানিগুলোর প্রকৃত ক্রেতা।
তাই নতুন নিষ্কাশন শিল্পের শক্তি যোগানো এ প্রাকৃতিক সম্পদকে ভোক্তা উদ্ভূত বিষয় নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এতে রয়েছে মলমে মাছি। বিষয় হচ্ছে যে এ বিষয়ের বেশিরভাগই নির্দোষ ও অক্ষতিকর, আবার অনেকটাই নয়। বস্তুত এর কিছু ক্ষতিকর দিক অবিশ্বাস্য। আর এভাবে তাত্ত্বিক অর্থে যে কোম্পানি সমূহের সেবার উপর তা স্থিত তা এ ধরনের আতংক প্রকাশের জন্য অনুবর্তী আইনগত দায়সহ বোধগম্যভাবে দায়ী হবে।
মার্কিন আইনের একটি দীর্ঘ বিস্মৃত বিধি কম্যুনিকেশনস ডিসেন্সি অ্যাক্ট অব ১৯৯৬-এর ২৩০ ধারায় বহু বছর আগে এ সম্ভাব্য অবনতির বিষয় নিষ্ক্রিয় করা হয়। এটা বলছে যে, ইন্টারঅ্যাকটিভ কমপিউটার সার্ভিসের কোনো প্রদানকারী বা ব্যবহারকারী অন্য তথ্য বিষয় সরবরাহকারী কর্তৃক সরবরাহকৃত কোনো তথ্যের প্রকাশকারী বা বক্তা হিসেবে বিবেচিত হবে না। জেল কার্ড থেকে রেহাই প্রাপ্ত হিসেবে এ ব্যক্তিকে আঘাত করা কঠিন হবে। কংগ্রেসের দু’জন সদস্য একেবারে শেষ মুহূর্তে বিলের মধ্যে ঢুকে পড়েন এবং এক হাজার পৃষ্ঠারও বেশি প্রধান আইনি বাগাড়ম্বরের মধ্যে আটকা পড়েন যাকে একজন ভাষ্যকার “কিভাবে দু’জন কংগ্রেস সদস্য এক ট্রিলিয়ন বা সে পরিমাণ অর্থ সৃষ্টিতে সাহায্য করলেন’ বলে সংক্ষিপ্তায়ন করেছেন।
কিন্তু যদি ফেইসবুক ও সহযোগীরা ব্যবহারকারীদের-উদ্ভূত সমস্যার কারণে জেলে না যান, তাহলেও সমস্যা থেকে যায় যে যদি তাদের ব্যবহারকারীরা কিছু ভয়ংকর জিনিস দেখতে পান যা লোকেরা অনলাইনে পোস্ট করেছে, তখন তারা তাদের গ্রাহকত্ব বাতিল করতে পর্যাপ্ত কারণে বাধ্য হবেন। সে কারণে কোম্পানিগুলোকে আপলোড করা সব জিনিস পরিশোধন করার পথ বের করতে হবে। তারা এটা করবেন ব্যবহারকারীদের আপত্তিকর বিষয় চিহ্নিত করে, মেশিন-লার্নিং সফটওয়ার মোতায়েন করে এবং মডারেটরদের গোপন বাহিনী নিয়োগ করে যা ঝামেলাপূর্ণ ও ক্লান্তিকর কাজ।
কোম্পানিগুলো এভাবে এক অনিষ্পন্ন কাজ ও কঠিন জায়গার মধ্যে আটকে পড়ে। একদিকে তাদের প্রয়োজন গতিশীলতা, কারণ তারা তাদের নিজস্ব সম্পদ প্রদান করে। অন্যদিকে তাদের উপাত্ত প্রবাহ যদি খুব বেশি দূষণ কবলিত হয় তখন তাদের অর্থ সঞ্চালন আটকে যাবে। এটা তাদের জন্য কারো দুঃখবোধ করার জন্য প্রায় যথেষ্ট। সূত্র ঃ দি গার্ডিয়ান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অপরিশোধিত উপাত্ত আসলে ব্যবহার করা যায় না
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ