পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়ে ফেলেছেন বলে মনে করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটুয়াখালী-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ভাগ্নে (আপন বোনের ছেলে) এস এম শাহজাদা সাজু। আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে গতকাল তিনি চিঠি পান। সেখানে আওয়ামী লীগের আর এক মনোনয়ন প্রত্যাশী আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেছেনে-আমাকে মনোনয়ন না দেবার কারণ একটি, সেটি হলও শাহজাদা সিইসি’র ভাগ্নে। সিইসি-কে ক্ষমতাসীনদের পক্ষে কাজে লাগানোর জন্যই তাঁর ভাগ্নেকে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে। এই মনোনয়ন সিইসি’র জন্য স্বার্থের সংঘর্ষের একটি সুস্পষ্ট ক্ষেত্র তৈরি করেছে, যার কারণে ইসি স্বীয় পদে থাকার নৈতিক অধিকার সম্পূর্ণভাবে হারিয়েছেন। সোমবার (২৬ নভেম্বর) সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, সিইসির পক্ষে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনা করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার যে আওয়ামী লীগের অঘোষিত নেতা তা তাঁর কর্মকাণ্ডে প্রমাণিত। সিইসি নির্বাচন কমিশনের প্রধান হওয়ার কারণে নিজে নৌকায় না উঠে ভাগ্নেকে নৌকার মাঝি করলেন। ভাগ্নে সাজুর মনোনয়নের প্রেক্ষিতে সিইসি উচ্চ নৈতিক মান প্রদর্শন করে অবিলম্বে স্বীয় পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে তিনি একটি উদাহরণ দিয়ে বলেন, প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সততা, নিরপেক্ষতার অনন্য দৃষ্টান্ত উল্লেখযোগ্য, যার তুলনা বর্তমানে নেই বললেই চলে। ২০০১ সালের নির্বাচনে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব ডক্টর শাহ মোহাম্মদ ফরিদ স্বেচ্ছায় মুখ্য সচিবের পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন-যাতে স্বার্থের সংঘাতের প্রশ্ন কোনভাবেই উঠতে না পারে। কারণ সেই নির্বাচনে তার ভাই বিএনপি’র মনোনয়ন পেয়েছিলেন। যদিও তিনি নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন না। তবু তিনি পদত্যাগ করে এক অসাধারণ নজীর স্থাপন করেছিলেন। বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার সেই নৈতিকতা ও মূল্যবোধের দায়-দায়িত্ব থেকে অনেক দুরে অবস্থান করেন। আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি যে, ভাগ্নে সাজুর মনোনয়নের প্রেক্ষিতে সিইসি অনুরূপ উচ্চ নৈতিক মান প্রদর্শন করে অবিলম্বে স্বীয় পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন।
ইসি সচিবকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বিএনপি নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাষায় কথা বলে আসছেন ইসি সচিব হেলাল উদ্দিন সাহেব, দ্রুত দলবাজ ইসি সচিবকে নির্বাচন কমিশন থেকে প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। কারণ আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের সাথে সুর মিলিয়ে বিরামহীন রাজনৈতিক বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। একতরফা ও নীলনকশার পাতানো নির্বাচনের মূল ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন ইসি সচিব। সরকার পরিকল্পিতভাবে সাজানো ভোটার বিহীন আরেকটি নির্বাচন করার জন্য দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার অংশ হিসাবে নির্বাচন কমিশনে হেলাল উদ্দীন সাহেবকে নিয়োগ দিয়েছে। ইসি সচিব মূলত: নির্বাচন কমিশন পরিচালনা করছে। বাকী পাঁচ সদস্যের কমিশনারদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে জোরে সোরে তোড়জোড় চালাচ্ছেন তিনি।
তিনি বলেন, বিগত ৫ জানুয়ারির ভোটার বিহীন নির্বাচনের রূপকার ইসির তৎকালীন সচিব বর্তমান পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমামের পরামর্শে নির্বাচন কমিশনকে পরিচালনা করেন হেলাল উদ্দীন। ক্ষমতাসীন মহলের অন্দরে অবাধ বিচরণ নির্বাচন কমিশন সচিবের। ভোটার বিহীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ অনুগ্রহ ভাজনদের সমমর্যাদা বহন করে চলছেন তিনি।
'গত শনিবার নির্বাচন ভবনে বিএনপিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে ইসি সচিব ভবিষ্যতে সতর্কতার সাথে কথা বলতে বলেছেন।'-তার এই বক্তব্য প্রমাণ করে তিনি নির্বাচন কমিশনের সচিব নন। তিনি নির্বাচন কমিশনে আওয়ামী লীগ শাখার প্রধান নেতা। ইসি সচিব গোপনে সবচেয়ে অজনপ্রিয় একটি সরকারকে আবার অবৈধ পন্থায় ক্ষমতায় আনার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন।
রিজভী বলেন, বিশেষ সুবিধাভোগী হেলালউদ্দিন আহমদ ২০১৭ সালের ৩০ জুলাই ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে যোগদান করে চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ পূর্ণ সচিব পদে সরকার তাকে পদোন্নতি দেয়। অথচ ২০১২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি জেলা প্রশাসক ছিলেন। অল্প সময়ের মধ্যে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসাবে তাকে নির্বাচন কমিশনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সরকার সচিব হিসাবে নিয়োগ দিয়েছে। তিনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মহিউদ্দিন আহমদের একান্ত সচিব ছিলেন। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। আওয়ামী লীগ পন্থী আমলা হিসাবে তার পরিচিতি ব্যাপক। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি। প্রশাসনের ভেতরে সরকারের প্রভাবশালী একজন আমলা। প্রধানমন্ত্রী, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে তার হাস্যোজ্জ্বল ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাসছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে তার ব্যক্তিগত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রসংশামুলক পোষ্ট দেয়া আছে। এসবে প্রমাণিত হয় তিনি নিরপেক্ষ নন, চরম দলবাজ এবং আওয়ামী লীগের অন্ধ অনুসারী।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, গত ৮ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে হেলাল উদ্দীন আহমদ আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তফসিল ঘোষণার আগে তিনি পরিকল্পনা কমিশনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেন। হেলাল উদ্দীনের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর মূখ্যসচিব এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন নিরাপত্তা বিভাগের সচিব চট্টগ্রামের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পুলিশ সুপারদের ডেকে গত ১৬ নভেম্বর বৈঠক করেছেন। পরবর্তীতে ২০ নভেম্বর চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার, তার এলাকার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের ডেকে সরকারের পক্ষে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। এসব ঘটনায় নির্বাচনী আইনের প্রতি তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেছেন। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা ইসি সচিবের ভয়ে তটস্থ। সরকারের ইচ্ছে অনুযায়ী দক্ষ ও নিরপেক্ষদের বদলি করে নির্বাচন ভবনটি তিনি আওয়ামীপন্থী ক্যাডারদের দিয়ে সাজিয়েছেন।
এ ধরণের চিহ্নিত, দলবাজ ও সরকারের চরম সুবিধাভোগী ইসি সচিব স্ব-পদে বহাল থাকলে কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। ইসি সচিবের বিরুদ্ধে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দাখিল করলেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। অবিলম্বে ইসি সচিবকে প্রত্যাহার করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের জন্য তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। দল নিরপেক্ষ এবং চৌকস কাউকে দ্রুত হেলাল উদ্দীনের স্থলে নিয়োগ দেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ফেনীসহ কিছু কিছু জেলার পুলিশ সুপারগণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) ডেকে নিয়ে সভা করে তাদেরকে সরকারের পক্ষে কাজ করার চাপ দিচ্ছেন এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানির বিষয়ে ব্রিফ করছেন। তারা বলছেন এসিআর আমাদের হাতে, নির্বাচনের রেজাল্ট আমাদের হাতে দিবেন, এসিআর নিয়ে যাবেন। ইতোমধ্যে আমরা ফেনীসহ অন্যান্য জেলার বেশ কিছু পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহারের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনে পত্রের মাধ্যমে অবহিত করেছি।
গ্রেফতার ও বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে নির্যাতন-নিপীড়ন প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের হামলা, গ্রেফতার ভয়-ভীতি প্রদর্শন, নেতাকর্মীদের পুলিশ দিয়ে হয়রানি হুমকি ধমকি দেয়া হচ্ছে। রাজধানীসহ সারাদেশে নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে হানা দিচ্ছে পুলিশ। এ সময় নেতাকর্মীদের খোঁজ করার নামে তল্লাশি ও ভাঙচুরের অভিযোগও রয়েছে। অনেক সময় নেতাকর্মীদের না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের আটক করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কোনও কোনও বাড়িতে পরিবারের মহিলা সদস্যদের অকথ্য গালি গালাজ ভয় ভীতি প্রদর্শন করছে পুলিশ। শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্যরাই নয় কোথাও কোথাও ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ শাসক দলের নেতাকর্মীরা বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে হামলা করছে। এই মূহুর্তে পুলিশী শক্তির ব্যবহার ছাড়া আওয়ামী ঝুলিতে এখন আর কিছু নেই। গতকালও বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য একরামুল হক বিপ্লবকে তার উত্তরার বাসা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।