ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
মো. এনামুল হক লিটন ও সাহেনা আক্তার হেনা
মরণ নেশা মাদক আমাদের গোটা সমাজকে গ্রাস করেই চলেছে। এর শিকার যুব-তরুণ সমাজ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাদকের বিরুদ্ধে যতই পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, ততই অভিনব কৌশলে বাড়ছে এর ব্যবহার। মাদক সেবনের আরেক নাম মৃত্যু। যে কোনো ধরনের মাদক সেবনের অর্থই হলো নিজেকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া। স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী-চাকরিজীবীরাও ক্রমাগত জড়িয়ে যাচ্ছে মাদকের জালে। উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরাও মাদক সেবনে আগ্রহী হয়ে উঠছে। মাদকের মরণ নেশায় আসক্ত হয়ে বহুমাত্রিক অপরাধে লিপ্ত হয়ে যাচ্ছে তারা। শুধু তাই নয়, মাদক ব্যবসা আর ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে সাথে বেড়ে চলেছে চুরি-ছিনতাই, বখাটেপনা, ইভটিজিংসহ নানা অপরাধ। মাদকবিরোধী অভিযানের জন্য একটি বিশেষ টিম করা হয়েছে। ব্যাপক অভিযানও চলছে। তা সত্ত্বেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে মাদক সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িতরা। চট্টগ্রামের যত্রতত্র মাদকদ্রব্য আগের চেয়ে বরং আরো বেশি সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, মাদক ব্যবসার লাগাম যেন কেউ টেনে ধরতে পারছে না। ২০১২ সালের ১৮ মে চট্টগ্রামের আসাদগঞ্জের একটি গুদাম থেকে র্যাব ১২ কোটি টাকার পৌনে তিন লাখ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ চার ব্যক্তিকে আটক করেছিল। র্যাব-০৭ এর ওই অভিযানটি ছিল দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা। ওই সময় মিয়ানমার থেকে বিপুল ইয়াবা টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে প্রবেশের পর চট্টগ্রাম হয়ে সারাদেশে একযোগে পাচারের বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে। মাদকের ব্যবহারজনিত সমস্যাটি নতুন নয়। আশির দশকের শুরুতে বাংলাদেশে প্রথম এর বিস্তার ঘটে। ক্রমে তা আজ মারাত্মক সামাজিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। মাদকের সর্বনাশা ছোবল থেকে যুব সমাজকে রক্ষায় মাদকবিরোধী অভিযান টিমকে তৎপর থাকতে দেখা গেলেও মাদক ব্যবসা কোনোভাবেই বন্ধ হতে দেখা যাচ্ছে না। উপরন্তু আগের চেয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। অভিজ্ঞ মহলের মতে, মাদকবিরোধী অভিযান টিমের অদক্ষতাসহ কোথাও কোথাও মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠছে। এতে প্রতীয়মান হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যে অভিযানগুলো চালাচ্ছে তা মূলত অভিযানের নামে আইওয়াশ। কারণ অভিযানকারী টিমের হাতে যারা ধরা পড়ছে, তারা মূল ব্যবসায়ী নয়, মূল ব্যবসায়ীরা কৌশলে সবসময় থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ফলে নিত্যনতুন নামে মাদকের প্রসার ঘটিয়ে চলছে মুনাফালোভীরা। তারা ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ নানা নামের মাদকদ্রব্যের চালান নিয়ে আসছে দেশে এবং ছড়িয়ে দিচ্ছে সব জায়গায়। দেশে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য প্রবেশ করছে জল-স্থল-অন্তরীক্ষ পথে। মিয়ানমার ও ভারত থেকে অবাধে প্রবেশ করছে মাদকদ্রব্য। সরকারি তথ্যানুযায়ী, দেশে মোট মাদকাসক্তের সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ। অথচ বেসরকারি সূত্রে এর সংখ্যা ৯০ লাখের কাছাকাছি। মাদকের ব্যবহারজনিত সমস্যাটি কোনো দেশের একক নয়। এটি আজ আন্তর্জাতিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। বিশ্বের সব দেশের মতো বাংলাদেশেও মাদকের ভয়াবহতা বিস্তার লাভ করেছে। যুবসমাজ ডুবে যাচ্ছে অন্ধকার জগতে। বিপথগামী হয়ে পড়ছে তারা। অভিভাবকরাও এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। মাদক সেবনের বিভিন্ন কারণ রয়েছে। এর মধ্যে সহজলভ্যতা মাদক গ্রহণের অন্যতম কারণ। বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে মাদকের বেচাকেনা হয়। চিহ্নিত স্পট সম্পর্কে পত্র-পত্রিকাগুলোয় প্রায়ই সংবাদ প্রকাশিত হতে দেখা যায়। এ ছাড়া এক শ্রেণীর মুনাফালোভী ফার্মাসিস্ট ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া বিভিন্ন ওষুধ বিক্রি করে, যা মাদক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বন্ধুবান্ধবের পাল্লায় পড়ে, মাদকাসক্ত বন্ধুদের সাথে চলতে গিয়েও অনেকে মাদকদ্রব্য গ্রহণে বাধ্য হয় এবং ধীরে ধীরে আসক্ত হয়ে পড়ে। শখের বশে অথবা পারিবারিক নানা সমস্যার কারণেও অনেকে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। বেকারত্ব, সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া, ব্যবসায় ক্ষতি কিংবা পরীক্ষায় অকৃতকার্য ইত্যাদি কারণেও মাদকে আসক্ত হয় কেউ কেউ। তা ছাড়া ব্যক্তিত্বের কিছু সমস্যা যেমনÑ অ্যান্টিসোশ্যাল পার্সোনালিটি, শৈশবে বিকাশের সমস্যা, মানসিক কিছু রোগ, পারিবারিক টানাপোড়েনের কারণে অনেকেই মাদকে আসক্ত হয়ে যায়। মাদকদ্রব্য এখন সহজলভ্য হওয়ায় বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে উঠতি বয়সের যুবক ও স্কুল-কলেজের ছাত্ররাও হেরোইন, গাঁজা, ইয়াবা ও ফেনসিডিল আসক্ত হয়ে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। আমরা মনে করি, মাদকদ্রব্যের অবাধ বিস্তার ও অপব্যবহার রোধে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মাদকের কবল থেকে রক্ষার জন্য সবাইকে একসঙ্গে দায়িত্ব পালন এবং মাদক ব্যবসায় জড়িতদের আইনের হাতে সোপর্দ করতে হবে। একই সঙ্গে মাদকদ্রব্য যাতে দেশে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য দেশের অভ্যন্তরে এদের যে চেইন রয়েছে, তা ভেঙে দিতে হবে। এ জন্য ব্যাপক গণসচেতনতা গড়ে তোলার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে ব্রতী হতে হবে। যে কোনো মূল্যে দেশ ও সমাজকে মাদকমুক্ত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।