Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ২৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

জনসমর্থনহীন আ.লীগকে ফের ক্ষমতায় বসাতে চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করছে প্রশাসন এবং পুলিশের বিতর্কিত ও দলবাজ কর্মকর্তারা -রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:৫৩ পিএম | আপডেট : ১:১৭ পিএম, ২৪ নভেম্বর, ২০১৮
বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, নৌকার প্রার্থীদের বিজয়ী করতে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের প্রতিনিয়ত গোপন বৈঠক চলছে। প্রশাসন এবং পুলিশের বির্তর্কিত ও দলবাজ কর্মকর্তারা জনসমর্থনহীন আওয়ামী লীগকে ফের ক্ষমতায় বসানোর জন্য নানা চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। শনিবার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।             
রিজভী বলেন, গত ২০ নভেম্বর মঙ্গলবার রাতে ঢাকা অফিসার্স ক্লাবের চার তলার পিছনের কনফারেন্স রুমে এক গোপন মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সচিব সাজ্জাদুল হাসান, জনপ্রশাসন সচিব ফয়েজ আহমদ, নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালউদ্দীন আহমদ, পানিসম্পদ সচিব (শেখ হাসিনার অফিসের প্রাক্তন ডিজি) কবির বিন আনোয়ার, বেসামরিক বিমান পরিবহন সচিব মহিবুল হক, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার ও মহানগরী রিটার্নিং অফিসার) সদস্য সচিব আলী আজম, প্রধানমন্ত্রীর এপিএস-১ (বিচারক কাজী গোলাম রসুলের মেয়ে) কাজী নিশাত রসুল।
এছাড়াও পুলিশের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন র‌্যাব, ডিএমপি ও কাউন্টার টেররিজমের কর্মকর্তারা।
রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করে বলেন,  রাত সাড়ে ৭টা থেকে আড়াই ঘন্টা ধরে চলা এ মিটিংয়ে সারাদেশের ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং সেট-আপ ও প্ল্যান রিভিউ করা হয়। ডিআইজি হাবিব জানায়, পুলিশ সূত্রের খবর অনুযায়ী ৩৩টি সিট নৌকার কনফার্ম আছে এবং ৬০-৬৫ টিতে কনটেস্ট হবে, বাকী আর কোনো সম্ভাবনা নেই। কাজেই সাংঘাতিক কিছু করা ছাড়া এটি উৎরানো যাবে না।
বিস্তারিত আলোচনা শেষে মূল সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, নির্বাচন কমিশন থেকে বিএনপি-ফ্রন্টকে চরম অসহযোগিতা করা হবে, যতই চাপ দেয়া হোক প্রশাসনে হাত দেয়া যাবেনা, ধরপাকড় বাড়ানো হবে, প্রার্থী গুম খুন করে এমন অবস্থা তৈরী করা হবে যাতে তারা নির্বাচন থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হয়। সেটির আলামত ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে যশোর জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি ও বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী আবু বকর আবুকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেয়ার মধ্য দিয়ে।  
তিনি বলেন, বৈঠকে আরও বলা হয়, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যদি শেষ পর্যন্ত ভোটে থেকে যায় তাহলে ভোটের দিন পর্যন্ত ধরপাকড়ের তান্ডব চালানো হবে নির্দয়ভাবে, যেনো ভোট কেন্দ্রে কেউ হাজির হতে সাহস না করে। আর যদি ধানের শীষের অনুকুলে ভোটের হাওয়া ঠেকানো না যায়, তবে মিডিয়া ক্যু করে নৌকাকে জিতানো হবে, বিটিভির মাধ্যমে ফলাফল ঘোষণা করে সব মিডিয়াতে তা রিলে করার ব্যবস্থা করা হবে। একবার ফল ঘোষণা করতে পারলে তারপরে নির্মমভাবে সব ঠান্ডা করা হবে। এরপর থেকে এ ধরণের সভা খুব বেশি করা যাবেনা, তবে কনসালটেশন করে কাজ করা হবে। এছাড়াও উন্নয়ন প্রকল্প তদারকির নামে আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষে ৮ জন আওয়ামী দলীয় কর্মকর্তা দিয়ে মনিটরিং সেল গঠন করে পুলিশ সদর দপ্তর। এছাড়া বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক ও বর্তমান ৪৫ জন সিনিয়র কর্মকর্তাকে ৬৪ জেলার উপদেষ্টা (মেনটর) নিয়োগ করে একটি নজিরবিহীন সরকারী আদেশ জারী করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এ নিয়ে বিএনপির লিখিত আপত্তির প্রেক্ষিতে তা বাতিল করতে বাধ্য হয়। কিন্তু গোপনে ঐসব কর্মকর্তারা জেলায় জেলায় মনিটরিংয়ের কাজ এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন। এর বাইরে সারাদেশের ভোট ইঞ্জিনিয়ারিং করার লক্ষ্যে শেখ হাসিনা প্রথম তালিকার ৬ জন সচিবকে নিয়ে একটি গুপ্ত কমিটি গঠন করেছেন। সেই কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হলো ঢাকা অফিসার্স ক্লাবে। মুলত: এখানে সব ধরণের অফিসারদের গমনাগমণ ঘটে থাকে, তাই বিরোধী পক্ষের চোখ এড়ানো সহজ হবে মনে করে অফিসার্স ক্লাবে গুরুত্বপূর্ণ এই সভাটি বসে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ক্ষমতাসীনরা আসন্ন ভোট নিয়ে কি ভয়ঙ্কর পরিকল্পনায় মেতে উঠেছে। উপরোক্ত দলবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও কর্মকান্ড সুনির্দিষ্টভাবে নির্বাচন কমিশনকে লিখিত আকারে জানানো হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে সরকারের এজেন্ডা নির্বাচন কমিশন কখনো প্রকাশ্যে কখনো নীরবে-নিভৃতে বাস্তবায়ন করছে-এই অভিযোগ এখন সর্বত্র ভুরিভুরি। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিরসন করতে সক্ষম হয়নি। মোদ্দাকথা তফশীল ঘোষনার পরও আওয়ামী প্রশাসনিক দাপটের ছবিটা মোটেও বদলায়নি। কিন্তু কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে কতিপয় কমিশনার তাদেরকে স্বপদে বহাল রাখতে তৎপর। নির্বাচন কমিশন ক্ষমতাসীনদের স্বার্থে কাজ করছে বলেই এই অভিযোগগুলো থেকে ছিটকে আসা কাদা তারা ঠেকাতে পারে না। বিতর্কিত নির্বাচনী কর্মকর্তাদের নির্বাচনী কর্মকান্ড থেকে সরাতে হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে তাদেরকে প্রত্যাহার করতে হবে।


 

Show all comments
  • রিপন ২৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১১:৫৬ পিএম says : 0
    যা পড়লাম এবং চলমান ঘটনাপ্রবাহের ওপর নজর রেখে যা বুঝলাম তাতে উত্থাপিত অভিযোগটি শতভাগ সত্য বলেই মনে হচ্ছে।অযথা অত কষ্ট না করে লোভে লাগাম টেনে পিঠটান দেয়াটাই এখন সরকারের পক্ষে সুস্থ মস্তিষ্কের পরিচায়ক হবে বলে মনে করি। ঘুণে ধরে যাওয়া কাঠামোটি থেকে মড়মড় পতনের আওয়াজ পাওয়া যায়! জোড়াতালি দিয়ে রক্ষার চেষ্টা এখন বৃথা। মানে মানে কেটে পড়াই বেহেতর। কথায় বলে, লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু। কথায় আরও বলে, যশ থাকতেই কীর্তন ক্ষ্যান্ত দিতে হয়। ক্লাবটির গোপন বৈঠকে পুলিশের ডিআইজি মি. হাবিবের দেয়া যে বয়ান ফাঁস হয়ে বাইরে বেরিয়ে পড়লো,তাতে সরকারের হালফিল লেজেগোবরে অবস্থার অফিসিয়াল পরিমার্জিত চিত্রটিই ফুটে উঠেছে। এর চেয়ে আর বেশি কিছু বলা তাঁর পক্ষে বর্তমান পদগত অবস্থান থেকে সম্ভব নয়। বাস্তব অবস্থা কিন্তু মি. হাবিবের দেয়া বয়ানের চেয়েও অনেক অনেক ... অ ..নে .. ক... ভয়াবহ। মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। দিন দিন তাদের ক্রোধ এত বেড়ে যাচ্ছে যে, আখেরে পস্তাতে হবে। সুন্দরের চিহ্নটুকুনও মিলবে না জনরোষের আদিম ক্ষত্রিয় বহিঃপ্রকাশে।রক্ত দেখতে ভালো লাগে না। কিন্তু চোরায় না শোনে ধর্মের কাহিনি। বেহেড গাধার মতো চোরায় ছুটছে ওই রক্তে ভাসা পরিণতির পথে। বাঙালি জাতটাকে চিনে নিলে নিজেদেরই কল্যাণ। বজ্জাতি করে করে এদের ক্ষেপিয়ে দিলে, অক্ষরে অক্ষরে এরা হাতেকলমে হাটুরে কিল-কনিতে বুঝিয়ে দেয় - হাড়ে হাড়ে বজ্জাতিতেও এরা কম যায় না! এরা প্রয়োজনে নির্ভীক দ্রোহী দ্রঢ়িমায় দুর্বিনীত স্পর্ধিত উচ্চারণ তোলে, "ভাত দে হারামজাদা, নইলে মানচিত্র খাবো।" মনে আছে?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ