Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

‘সরকারের জন্য দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে ইসি’

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম | আপডেট : ১:৪৫ এএম, ২৪ নভেম্বর, ২০১৮

সরকারের অনুকূলেই সমতল ভূমি নির্মান করতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, পুলিশ অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করবে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে না হয়। কারণ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ঐক্যফ্রন্টের বিজয় ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। গতকাল (শুক্রবার) সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, সারাদেশজুড়ে গ্রেফতার, হামলা নির্যাতন থামছেই না। এখনও আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু না হলেও আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা এলাকায় এলাকায় মাইকিং করে মাঠে ময়দানে সভা-সমাবেশ করে করে যাচ্ছে, নৌকার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে। নারায়নগঞ্জে শামীম ওসমান বিশাল প্রচারণা সভা করেছে, কিশোরগঞ্জের ভৈরবে নাজমুল হাসান পাপনের পক্ষে মাইকিং করে সমাবেশ অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া সকল জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মিছিল করে, সমাবেশ করে নৌকার পক্ষে ভোট চাচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের এলাকায় যেতে বাধা দিচ্ছে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। ঘরোয়া বৈঠক করতে চাইলে সেখানে চলছে সশস্ত্র হামলা। বিএনপির লোক ঘরের ভিতর সভা করতে পারছেন না অথচ আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশনের চোখের সামনে বড় বড় সমাবেশ করছে, নৌকার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে। নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ করে সারাদেশ আওয়ামী লীগের ফেস্টুন, ব্যানার ও পোস্টারে ছেয়ে গেছে।
তিনি বলেন, প্রশাসন ও পুলিশে কর্মরত বিতর্কিত ও দলবাজ কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের বরাবরে আবেদন করলেও সিইসি আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সভায় বলেছেন কোন কর্মকর্তাকে বদলী করা হবে না। বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে বিতর্কিতদের সরানোর আহবানের বিপরীতে সিইসির এ ধরণের বক্তব্যে দলবাজ কর্মকর্তাদের আরও বেপরোয়া করে তুলবে। গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে উচ্চ পদস্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে নির্বাচন কমিশনরে বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার নির্দেশসমূহ এবং উপস্থিত কিছু পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্যে মনে হয় উভয় পক্ষই সরকারের অনুকূলে একতরফা নির্বাচনেরই একটা গোপণ ছক তৈরি করে রেখেছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, এর আগে পুলিশ কমিশনার বলেছিলেন তফশীল ঘোষণার পরে গায়েবি মামলা দেয়া হবে না, অথচ এখনও অব্যাহতভাবে গায়েবি মামলা দায়ের করা হচ্ছে। এই বৈঠকে একজন নির্বাচন কমিশনার সারাদেশে পুলিশের দায়ের করা গায়েবী মামলা দায়েরের বিষয়ে তুমূল আপত্তি তুললেও সেটিকে গ্রাহ্য করা হয়নি। বৈঠকের কিছুক্ষণ আগে পুলিশের কিছু বিতর্কিত দলবাজ কর্মকর্তাদের একটি তালিকা বিএনপি’র একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনে জমা দিলেও প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ তো গ্রহণ করেনই নি, বরং বৈঠকে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তাদের আশস্ত করে বলেন যে, আপনাদের প্রতি আমাদের বিশ্বাস আছে। আপনারা আতঙ্কিত হবেন না। আরেকজন এসপি বলেছেন, বিএনপি এবং ঐক্যন্ট যেভাবে সংগঠিত হচ্ছে তাতে তারা ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠবে এবং সেক্ষেত্রে তীক্ষ্ন নজর রাখতে হবে।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়-বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ কর্মকর্তারা একজোট হয়ে বৈঠক করেছেন। বৈঠকের আলোচনায় মনে হয়-বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্টকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন থেকে কিভাবে দমন করে চাপিয়ে রাখা যায়, তারই মহাপরিকল্পনা হয়েছে সেখানে। তাদের আলোচনায় এটি অত্যন্ত সুষ্পষ্ট যে, দলীয় চেতনায় সাজানো পুলিশ কর্মকর্তাদের কোন নড়চড় করবেন না নির্বাচন কমিশন
তিনি বলেন, প্রতিদিন প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে ক্ষমতাসীন দলের নিম্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের পরেও কেন নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি? বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশীদের লাশ নদীতে ভেসে উঠছে, মিথ্যা মামলায় কারাগারে পাঠানো হচ্ছে, গ্রেফতার করা হচ্ছে, হামলা করা হচ্ছে, রিমান্ডে পৈশাচিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে, আর গুম ও বিচার বহির্ভ‚ত হত্যাকান্ড সরকারের দৈনন্দিন কর্মসূচিতে পরিণত হয়েছে। অথচ এসব বিষয়ে তো কোন পুলিশ কর্মকর্তা সেখানে কোন বক্তব্য উত্থাপন করেননি। রিজভী বলেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে হলে সমতল মাঠ তৈরী করতে হবে, বিতর্কিত ও দলবাজ পুলিশ কর্মকর্তা ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করতে হবে। নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের দিয়ে প্রশাসন সাজাতে হবে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে সরকার সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানকে নির্লজ্জভাবে ব্যবহার করছে। এই ব্যবহার হচ্ছে বেপরোয়া ও নির্বিচারভাবে। প্রধানমন্ত্রীর নাম ব্যবহার করে ‘বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংক’ সদস্য ব্যাংকগুলোর কাছে আগামী ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রায় একশো কোটি টাকার কম্বল দাবি করেছে। গত ২০ নভেম্বর ব্যাংক এ্যাসোসিয়েশনের এক সভায় সিদ্ধান্তের বরাত দিয়ে আগামী ২৭ নভেম্বর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে নমূনা কম্বল এবং পরের পনের দিনের মধ্যে পুরনো ব্যাংকগুলোর কাছে ৫০ হাজার এবং নতুন ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ১৫ হাজার কম্বল চাওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর নাম ব্যবহার করে ত্রাণের নামে ব্যাংকগুলোর কাছে কম্বল দাবি নির্বাচনী আচরণবিধির পুরোপুরি লঙ্ঘন।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আব্দুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহ-দপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন প্রমূখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ