পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সশস্ত্রবাহিনী দিবস উদযাপিত : শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত জনগণের সেবা করার সংকল্প ব্যক্ত করে এই দেশকে আগামী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য করে যাওয়ার আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করেছেন। তিনি গত বুধবার ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে বর্তমান সরকারের মেয়াদের শেষ সশস্ত্র বাহিনী দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভাষণে একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের চলার পথ কখনই মসৃণ ছিল না, কন্টকাকীর্ণ ছিল, তবুও আমরা এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি। অনেক প্রতিকূলতা অতিক্রম করে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’
তিনি রবার্ট ফ্রস্টের বিখ্যাত কবিতা ‘স্টপিং বাই উডস অন এ স্নোয়ী ইভনিং’ এর দুটি পংক্তি ‘উডস আর লাভলি, ডার্ক এন্ড ডীপ/বাট আই হ্যাভ প্রমিসেজ টু কীপ/এন্ড মাইলস টু গো বিফোর আই সøীপ/’ উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নের মতো করে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত করে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে চাই এবং আগামীর বাংলাদেশ হবে সুন্দর, উন্নত ও সমৃদ্ধ।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কাজেই আমি এটুকুই বলবো, আমি এগিয়ে যেতে চাই যতই অন্ধকার আসুক, ঘন দুর্যোগ আসুক, যতই গভীর হোক জঙ্গল কিন্তু এগিয়ে যাওয়ার পথ সে পথ করে নিতেই হবে।’
তিনি সুকান্তের ছাড়পত্র কবিতার পংক্তি উদ্ধৃত করে বলেন, চলে যাব-তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ/প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,/এ বিশ্বকে এ-শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি-/নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’
আসন্ন নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা পুনরায় দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলেন, নির্বাচনে জনগণ যদি ভোট দেয় তাহলে আবার ক্ষমতায় আসবেন। আর যদি নাও আসেন তাহলেও আফসোস নেই। কারণ বাংলাদেশকে যে উন্নয়নের মহাসড়কে তিনি তুলে দিতে সক্ষম হয়েছেন তার থেকে বাংলাদেশকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না।
তিনি পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন জীবনানন্দ দাসের ভাষায় বলেন-‘আবার আসিব ফিরে এই ধানসিঁড়িটির তীরে, এই বাংলায়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন করবো, ২০২১ সালে আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করবো। ইনশাআল্লাহ তখন বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করেই আমরা গড়ে তুলতে সক্ষম হবো।
এর আগে সকালে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে ঢাকা সেনানিবাসে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার নানা চিত্র তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে বলে যে মর্যাদা আমরা পেয়েছি সেক্ষেত্রে এই উন্নয়নের গতিধারাটা যেন অব্যাহত থাকে সেটাই হচ্ছে লক্ষ্য। ঘাত-প্রতিঘাত অতিক্রম করে বাংলাদেশের উন্নয়নের যে যাত্রা শুরু হয়েছে, তা কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।
মিয়ানমারে জাতিগত নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ১১ লাখ মানুষকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ার কথা তুলে ধরে এজন্য দেশের জনগণ ও কক্সবাজারবাসীকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের আশ্রয় দেয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমার ছোট বোন শেখ রেহানা আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল তুমি ১৬ কোটি মানুষের খাবার দাও, তুমি কি আর ৭-৮ লাখ লোকের খাবার দিতে পারবে না? আমি বলেছিলাম, পারব, অবশ্যই পারব। আমরা তা পেরেছি, সেটা সারা বিশ্বকে দেখিয়েছি।
যুদ্ধ নয়, আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের দিকে জোর দেয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী- সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনী-আমরা কারো সাথে যুদ্ধ করব না। যুদ্ধ করতে আমরা চাই না। কিন্তু একটি স্বাধীন দেশে যে সশস্ত্র বাহিনী হবে সেটা স্বাধীন দেশের উপযুক্ত হতে হবে। আমরা যুদ্ধ করব না, কিন্তু কেউ আক্রমণ করলে আমরা ছেড়ে দেব না। যতক্ষণ আমাদের শ্বাস আছে আমরা প্রতিরোধ করব। সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আরো বলেন, আমরা প্রত্যেকটা বাহিনীর জন্য আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র তৈরি করা, তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সব পদক্ষেপই আমরা নিয়েছি অল্প সময়ের মধ্যে। ন্যাশনাল বাজেটে ৭ ভাগ বৃদ্ধি করেছি। সেটা কেউ কখনো দিতে পারেনি। সেই সাথে সকলের বেতন ভাতা ২০০৯ সালে সরকারে এসে এক দফা বাড়িয়েছি। আবার ২০১৪ সালের পর সরকারে এসেও বাড়িয়েছি। দারিদ্র্যের হার আরও অন্তত ৫ ভাগ কমিয়ে দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার আশা ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, আগামীতে নির্বাচন আছে। সেই নির্বাচনে জনগণ যদি ভোট দেয়, যদি চায় দেশের সেবা করি হয়ত আল্লাহর রহমতে আবার ফিরে আসব। আবার আপনাদের সঙ্গে এখানেই দেখা হবে। আর যদি না দেয় আমার কোনো আফসোস থাকবে না। কারণ উন্নয়নের যেই গতিধারা শুরু করেছি, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। জাতির পিতা ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশকে আর কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না।
সেনা সদরে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য শেষে অনুষ্ঠানস্থল ঘুরে আমন্ত্রিত অতিথি ও সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার মাহফুজুর রহমান এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে ছিলেন। এ সময় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক সেনা প্রধান মাহবুবুর রহমানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, পেশাজীবী এবং সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী সাহসিকতাপূর্ণ ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সেনাবাহিনীর নয়জন, নৌবাহিনীর একজন ও বিমান বাহিনীর তিনজনসহ ১৩ জনকে ‘শান্তিকালীন পদক ২০১৭’ দেন।
সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপিত
অন্যদিকে আইএসপিআরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২১ নভেম্বর যথাযথ মর্যাদা ও উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে দিনের কর্মসূচির শুরুতে দেশের সকল সেনানিবাস, নৌ ঘাঁটি ও স্থাপনা এবং বিমান বাহিনী ঘাঁটির মসজিদসমূহে দেশের কল্যাণ ও সমৃদ্ধি এবং সশস্ত্র বাহিনীর উত্তরোত্তর উন্নতি ও অগ্রগতি কামনা করে ফজরের নামাজ শেষে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ হতে অপরাহ্নে সেনাকুঞ্জে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ
আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর শহীদ সদস্যদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রেসিডেন্ট ও সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক মোঃ আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার সকালে ঢাকা সেনানিবাসের শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল তাদের পৃথক পৃথকভাবে গার্ড অব অনার প্রদান করে। পুষ্পস্তবক অর্পণকালে শহীদদের স্মরণে বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী শিখা অনির্বাণে রক্ষিত পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন। এর আগে প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী শিখা অনির্বাণে এসে পৌঁছলে তাদেরকে স্বাগত জানান তিন বাহিনী প্রধানগণ এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধে শাহাদত বরণকারী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের স্মরণে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত নিজ নিজ বাহিনীর পক্ষ থেকে সম্মিলিতভাবে শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।