Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সঙ্কট কাটছেই না গার্মেন্টসে

প্রকাশের সময় : ৩ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪২ পিএম, ২ মে, ২০১৬

হাসান সোহেল : সরকার, মালিক ও শ্রমিক তিনপক্ষই আন্তরিক, তারপরও খড়া কাটছে না দেশের গার্মেন্টস শিল্পে। বিদেশীদের শকুনি দৃষ্টি যেন পড়েছে দেশের সম্ভাবনাময় এই পোশাক শিল্পে। বিদেশীদের প্রায় সব ধরনের শর্তই পূরণ করা হচ্ছে; তারপরও জিএসপির স্থগিতাদেশ উঠছে না; সংকটও কাটছে না। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ অনেকটা ক্ষোভ গোস্সার মিশ্রিত সুরেই বলেছেন, যতই শর্ত পূরণ করা হোক না কেন কেয়ামত পর্যন্ত জিএসপি সুবিধা দেবে না ওরা। মন্ত্রীর মতে রাজনৈতিক কারণেই আমেরিকা জিএসপি সুবিধা দিচ্ছে না। মন্ত্রীর এ বক্তব্যের সঙ্গে দেশের অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী সকলেই প্রায় একমত। কর্মসংস্থান, বেকারত্ব ও দারিদ্র্য দূরীকরণ, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন প্রভৃতি কর্মকা-ের মাধ্যমে দীর্ঘদিন থেকে পোশাকশিল্প দেশের অর্থনীতির এক বড় চালিকাশক্তি। অথচ অশনি কাটছে না।
নানা উদ্যোগ ও চেষ্টা তারপরও একের পর এক দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস তৈরী পোশাকশিল্পের সংকট কাটছেই না। গার্মেন্টসে কর্মপরিবেশ ও শ্রমিক সংগঠন ইস্যুতে ক্রেতা প্রতিষ্ঠান অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের নজরদারী এবং বিজিএমইএ’র ব্যর্থতায় এ শিল্পকে বিপর্যয়কর অবস্থায় ফেলে দেয়া হচ্ছে। মান সম্পন্ন উৎপাদন অব্যাহত থাকলেও নতুন নতুন বাজার সৃষ্টির বদলে পুরনো অনেক অর্ডার ফেরত গেছে। গত দুই বছরে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ১ হাজার ৬৯৩টির বেশি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে বিজিএমইএ সদস্যভুক্ত কারখানা সংখ্যা পাঁচশতাধিক। দীর্ঘদিন থেকে গার্মেন্টস সেক্টরে ব্যাপক সাফল্যের রেকর্ড থাকলেও গত কয়েক বছরজুড়ে ছিল অনিশ্চয়তা-উৎকণ্ঠা। জিএসপির প্রত্যাশায় গত বছর ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ করা হলেও সাফল্য আসেনি একরত্তিও। তার ওপর তৈরি পোশাক রফতানী করে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং দেশে ব্যাপক কর্মসংস্থান হলেও এ শিল্পের অগ্রগতি অব্যহত রাখার ব্যাপারে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বিজিএমইএ’র কোনো ভূমিকাই রাখতে পারছে না। কারখানা শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ সৃষ্টিতে ধীরগতিতে কিছুটা সাফল্য দেখালেও গ্রাহকদের প্রত্যাশা পূরণে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। আর তাই বিদেশি ক্রেতাদের কমপ্লায়েন্ট মানদ-ের চাপে অনেকেই কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে দেশের তৈরি পোশাক খাত।
এদিকে পূর্বের ধারাবাহিকতায় এবছরও কারখানার সংস্কারকাজ সন্তোষজনক নয় বলে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে বিদেশি ক্রেতাদের দুই জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স। সর্বশেষ গত ১৭ মার্চ দেশের ৮৩টি তৈরি পোশাক কারখানার সাথে সম্পর্ক ছেদ করে। এর আগে জোটটি ১৩টি কারখানার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল। এর ফলে দুই জোটের চুক্তিবদ্ধ ২১৮টি ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের হয়ে আর পোশাক তৈরি করতে পারবে না কারখানাগুলো। এছাড়া বিদেশি ক্রেতাদের চাপে প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন (কমপ্লায়েন্স) পরিপালনে ব্যর্থ হওয়ায় প্রায় ২৩০টি পোশাক কারখানার সদস্যপদ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ। যদিও সব মিলিয়ে এ সংখ্যা বেড়ে ২৫০টি হচ্ছে বলে জানা গেছে। এর আগে কমপ্লায়েন্সের শর্ত পরিপালনে ব্যর্থ হওয়ার কারণে ১ হাজার ৬৫৪টি কারখানার সদস্যপদ বাতিল করে বিজিএমইএ।
বিভিন্ন ইস্যু পোশাকশিল্পের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। আর এ অবস্থার উত্তরণে ব্যর্থ হলে সম্ভাবনাময় পোশাকশিল্প খাত মুখথুবড়ে পড়বে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এতে পোশাক শিল্পের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো বাজার দখল করবে, দেশ চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মত দিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশের পোশাক খাতের উপর এক গবেষণায় বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশের পোশাক খাতে আরও বিশ্বাসযোগ্যতা এবং নিরাপত্তার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার পোশাক খাতের বড় রফতানিকারক দেশ। তারা ৬ দশমিক ৪ শতাংশ চাহিদা পূরণ করছে। এই খাত অধিক পরিমানে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে। তবে এজন্য দেশটিকে উৎপাদনশীলতা, পণ্যের মান, বিশ্বাসযোগ্যতা, ভাল নিরাপত্তা পরিবেশ এবং অন্যান্য কমপ্ল্যায়েন্স নীতিমালার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। আরও বলা হয়েছে, বিশ্বক্রেতাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো এখানে নন কষ্ট ফ্যাক্টরগুলোর উন্নতি ঘটাতে হবে।
সফলভাবে এ খাতে সংস্কার কার্যক্রম বাংলাদেশের রফতানি বাড়াতে ও অধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে সহায়তা করবে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবি মনে করছে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পরে গত তিন বছরে বাংলাদেশের পোশাক খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, পোশাক খাতে অনেক অগ্রগতি হয়েছে, তবে আরও অনেক দূর যেতে হবে। ড. ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, নিরাপত্তা ও শ্রমিক স্বার্থ সংশ্লিষ্টসহ সার্বিকভাবে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন এসেছে। একই সঙ্গে অন্য কোন দেশে এতো বড় খাতে এতো অল্প সময়ে এমন ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে কিনা সেটাও দেখার বিষয় হতে পারে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রানা প্লাজা ধসের পর কারখানা নিরাপত্তা একটি বড় বিষয় হয়ে সামনে এসেছে। চীন বিশ্বে পোশাক রপ্তানি করছে ৪০ শতাংশ আর বাংলাদেশ মাত্র ৬ শতাংশ বাজার দখল করেছে। এর মধ্যে একটা বড় গ্যাপ রয়েছে। চীনে কমপক্ষে ১০ শতাংশ শ্রমের মজুরি বেড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে গত দশ বছরে ৩ বার শ্রমিকদের বেতন বেড়েছে। কিন্তু তারপরও কাক্সিক্ষত হারে বাড়েনি। তিনি বলেন, বাজার ও পণ্য বহুমুখী করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে দেখা যায় ভারত ও ভিয়েতনাম মার্কিন বাজারে জিরো ট্যারিফ সুবিধা ভোগ করে, যেখানে বাংলাদেশকে ১৫ শতাংশ ট্যারিফ দিয়ে রপ্তানি করতে হয়। এটা বৈষম্যমূলক।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রানা প্লাজা ধস, হরতাল-অবরোধ, রাজনৈতিক অস্থিরতা আর বিদেশি হত্যাকা-ের কারণে বিদেশে বাংলাদেশের পোশাক খাতবিরোধী প্রচারণায় অনেক ক্রেতা এ দেশ থেকে ভিয়েতনামে চলে গেছে। যার প্রভাব ছিলো দেশের রপ্তানি আয়ের শীর্ষ খাত পোশাকশিল্পে। এ ছাড়া শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির কারণে অনেকেই বেতন দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। তা ছাড়া কমপ্লায়েন্ট ইস্যুতে ক্রেতারা এখন কঠোর হওয়ায় বহু কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। তারা জানান, বড় কারখানাগুলো এ প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে টিকে গেলেও ছোট ও মাঝারি কারখানাগুলো তা পারছে না। এ ছাড়া পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ ও গ্যাস না পাওয়া এবং এর মূল্যবৃদ্ধিতে অনেকেই চাপ নিতে পারেছে না বলে মন্তব্য করেন তারা। আগে বড় কারখানাগুলো বেশি করে পোশাকের অর্ডার নিয়ে তা অন্য কারখানায় সাব-কন্ট্রাক্টের ভিত্তিতে করিয়ে নিতো। কিন্তু রানা প্লাজার দুর্ঘটনার পর এখন বড় ক্রেতারা কারখানাগুলোর পরিবেশ ও মান যাচাই করে তবেই অর্ডার দেন। আর এ ক্রেতারা শেয়ার্ড বিল্ডিংয়ে অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে ছোট কারখানাগুলো কাজ না পেয়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
অবশ্য কারখানা বন্ধের বিষয়ে বিজিএমই বলছে, যেসব কারখানা বিভিন্ন নিয়ম পালন করছে না এবং কারখানার মালিকদের দীর্ঘদিন ধরে প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন পরিপালনের তাগিদ দিয়ে আসা হয়েছিল তাদের জন্য এই সিদ্ধান্ত। সময় দেয়ার পরও তারা এ পর্যন্ত কারখানায় সুশাসন নিশ্চিত করতে পারেনি। এর মধ্যে শ্রমিকদের বীমা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, অগ্নি প্রতিরোধ ব্যবস্থাসহ অন্যান্য বিষয় জড়িত রয়েছে। তবে এসব কারখানা যাতে কমপ্লায়েন্স পরিপালন করে বিজিএমইএ সদস্যপদ টিকিয়ে রাখতে পারে, সেজন্য আরো এক মাস অর্থাৎ এ সাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত তারা সময় পাবে। এ সময়ের মধ্যে যারা কমপ্লায়েন্স পরিপালন করতে পারবে তাদের সদস্যপদ বহাল রাখা হবে বলে বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে গতকালও বেতন-ভাতা না দিয়েই পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণার প্রতিবাদে টঙ্গীতে ভাঙচুর চালিয়েছে শ্রমিক-কর্মচারীরা। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানান, কোনো কারণ না দেখিয়েই গতকাল কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়। খবর পেয়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানা গেইটে জড়ো হয়ে বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকে। তবে কারখানার ভেতরে থাকা মালিক পক্ষের প্রতিনিধিরা বেতন-ভাতার বিষয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি। এ অবস্থায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানায় ভাঙচুর চালায় ও ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকে। এসময় সড়কে যান চলাচলও সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে টঙ্গী থানা পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
টঙ্গী থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার জানান, বিক্ষুব্ধ শ্রমিক ও মালিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। মালিকপক্ষের প্রতিনিধিরা আশ্বাস দিয়েছেন ১০ তারিখের মধ্যেই বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করবেন।
বিজিএমইএ সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হাসান বলেছেন, পোশাক কারখানায় সুশাসন পরিপালনের জন্য সবসময় বিজিএমইএ কাজ করে যাচ্ছে। যেসব কারখানায় কমপ্লায়েন্স পরিপালন করা হচ্ছে না তার একটি তালিকা করেছে বিজিএমইএ। তালিকা অনুযায়ী তাদেরকে বার বার তাগাদ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও অনেকে কমপ্লায়েন্স পরিপালন করতে পারেনি। তাদেরকে আবারও মে মাস পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা কমপ্লায়েন্স পরিপালনে ব্যর্থ হয়, তাহলে মে মাসের শেষ দিকে বিজিএমইএ’র বোর্ড মিটিংয়ে ওইসব কোম্পানির বিরুদ্ধে সদস্যপদ বাতিলসহ সেবা বন্ধ করার সম্ভাবনা আছে, বলেন তিনি।
গত ৩০ এপ্রিল গার্মেন্ট কারখানাগুলোতে ডিজিটাল বায়োমেট্রিক ওয়ার্কার ডাটাবেজ বা তথ্যভা-ারে অন্তর্ভুক্তির সময় শেষ হয়েছে। ২০১৩ সালের ৬ এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত অসংখ্যবার ডাটাবেজ করার সময় বাড়ানো হযেছে। তবে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে তথ্যভা-ারের জন্য কারখানার নাম তালিকাভুক্ত না করলে ইউডি (ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন) বাতিল করাসহ অন্যান্য সার্ভিস বাধাগ্রস্ত করা হবে বলেও জানিয়েছিল বিজিএমইএ। আর এ বিষয়েও আগামী বোর্ড মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। যারা উল্লেখিত সময়ের মধ্যে ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত হয়নি তাদের অনেকেরই সদস্যপদ বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএ’র অন্য একটি সূত্র।
এদিকে অ্যালায়েন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেসবাহ রবিন বলেন, শেয়াররড ভবনে থাকা অনেক পোশাক কারখানা কর্তৃপক্ষই বলছে তারা অন্যত্র চলে যাবে। তবে সে জন্য কোনো কাজই তারা শুরু করছে না। তিনি বলেন, অবস্থা যেদিকে যাচ্ছে তাতে ৮৩ কারখানার সঙ্গে একই কাতারে আরও অনেক কারখানা যুক্ত হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই) জানায়, অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স ২ হাজার ২৪৬ কারখানার পরিদর্শন শেষ করেছে। জোট দুটির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের পোশাক তৈরি করে এসব কারখানা। এ ছাড়া জাতীয় ত্রিপক্ষীয় কর্মপরিকল্পনার (এনটিএপি) অধীনে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সহায়তায় ডিআইএফই ১ হাজার ৫৪৯ পোশাক কারখানা পরিদর্শন করেছে। পরিদর্শন হওয়া কারখানার মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় ৩৯টি কারখানা বন্ধ করা হয়েছে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বর্তমানে দেশে নন-কমপ্লায়েন্স বা উন্নত কর্মপরিবেশ ছাড়া কারখানা পরিচালনা করার কোনো সুযোগ নেই। কারখানাগুলোর সংস্কারকাজ না করা ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন হওয়াটা দুশ্চিন্তার। ভবিষ্যতে এটি বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা আছে। ঠিক কী কারণে তারা পারছে না, সেসব খতিয়ে দেখা দরকার। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের দিয়ে একটি পর্যালোচনা কমিটি করা যেতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিজিএমইএর ও বিকেএমইএ তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে নিবন্ধিত পোশাক কারখানা ৫ হাজার ৯৯৯টি। এর মধ্যে ঢাকা অঞ্চলে নিবন্ধিত কারখানা ৫ হাজার ১৪৫টি এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৮৫৪টি। এর মধ্যে ১ হাজার ৬৯৩টিই বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে সচল কারখানার সংখ্যা ৪ হাজার ৩০৬টি। এর মধ্যে নতুন ও পুরনো মিলিয়ে রুগ্ন কারখানা প্রায় ৪৩৯টি। কারখানাগুলোর মধ্যে ঢাকা অঞ্চলে বন্ধ হয়েছে ১ হাজার ৫৪৪টি আর চট্টগ্রাম অঞ্চলে ১৪৯টি কারখানা। আর বন্ধ হওয়া কারখানার মধ্যে ২০ শতাংশ হচ্ছে শিফট হওয়া এবং ৪০ শতাংশ শেয়ার্ড বিল্ডিং কারখানা। বাকিগুলো সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ করা কারখানা। পাশাপাশি নতুন কারখানা চালুর হার কমে আসছে। ১৩ সালে ১৪০টি, ১২ সালে ২০০টি। আর ১৪ সালে নতুন কারখানা হয়েছে ৮০টি। অর্থাৎ নতুন করে বিনিয়োগ হচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে ২০১০-১১ অর্থবছরে দেশে পোশাক কারখানা ছিল ৫ হাজার ১৫০টি। ২০১১-১২ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫ হাজার ৪০০টি। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ছিল ৫ হাজার ৮৭৬টি। কিন্তু ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২২২। বর্তমানে এ খাতে শ্রমিকের সংখ্যা ৪০ লাখ ছাড়িয়েছে বলে বিজিএমইএর তথ্যে জানা যায়।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশে পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তখন কর্মপরিবেশ উন্নয়নে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স গঠিত হয়। জোট দুটি ২০১৮ সাল পর্যন্ত কাজ করবে। অ্যাকর্ডের সঙ্গে এখন পর্যন্ত চুক্তিবদ্ধ ইউরোপীয় ব্র্যান্ডের সংখ্যা ১৯০টি। আর অ্যালায়েন্সের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ আছে উত্তর আমেরিকা ও কানাডার ২৮টি ব্র্যান্ড।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সঙ্কট কাটছেই না গার্মেন্টসে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ