Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

কুড়িগ্রামে জেএমবি সদস্য হাসান ফিরোজ গ্রেফতার

প্রকাশের সময় : ৩ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে : কুড়িগ্রামে ধর্মান্তরিত মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলী হত্যাকা-ের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। হত্যাকা-ে আইএস জড়িত দাবি করলেও পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সদস্যদের জড়িত থাকার অকাট্য প্রমাণ। ঘটনা সংঘটিত হওয়ার এক মাস ১০ দিন পর হত্যাকা-ের অন্যতম আসামি জেএমবির কিলার গ্রুপের সদস্য হাসান ফিরোজ (২৩)-কে সোমবার কুড়িগ্রাম পুলিশ গ্রেপ্তার করে। বিকাল সাড়ে ৫টায় চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করলে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে নিজের দায় স্বীকার করে হাসান ফিরোজ। জেএমবিতে তার কোড নেম মোখলেছ।
সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তবারক উল্ল্যাহ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার বাদাই ইউনিয়নের সারপুকুর গ্রামের রিয়াজুল ইসলামের পুত্র হাসান ফিরোজ হত্যাকারীদের রিসিভ করে এবং নিরাপদে পালিয়ে যেতে সহায়তা করে। সে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগে অনার্সের ৩য় বর্ষের ছাত্র। সে শহরের ভোকেশনাল মোড়ে একটি ছাত্রাবাসে থাকত। তার বাবা রিয়াজুল ইসলাম লালমনিরহাট সাপটিবাড়ি কলেজের শিক্ষক।
তিনি আরো জানান, সোমবার ভোর ৫টার দিকে রংপুর জেলার কাউনিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে হাসান ফিরোজকে গ্রেফতার করা হয়। হত্যাকা-ের পর থেকে সে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। গত ২৮ এপ্রিল গ্রেফতারকৃত অপর দুইজন জেএমবি সদস্য আবু নাশির ওরফে রুবেল (২০) ও মাহাবুব হাসান মিলন (২৮) রিমান্ডে যেসব তথ্য দিয়েছে তাতে হত্যাকা-ের পুরো ঘটনা উন্মোচিত হয়েছে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা অপর আসামিদের আইনের আওতায় আনা। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হাসান ফিরোজকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ নিয়ে এ হত্যা মামলায় ৩ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের সবাই জেএমবির সক্রিয় কর্মী।
মূলত হোসেন আলী জেএমবির হত্যাকা-ের টার্গেট ছিল না। তিনি পরিস্থিতির শিকার হন। জেএমবির হাইকমান্ড থেকে আবুল বাশিরের ওপর সিদ্ধান্ত আসে কুড়িগ্রাম অথবা লালমনিরহাট জেলায় একটি কাজ করার (হত্যাকা-)। লালমনিরহাটে ব্যর্থ হয়ে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি কুড়িগ্রাম শহরের গাড়িয়ালপাড়ায় মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলীর বাসার একটি রুম ভাড়া নেয় আবুল বাশির। খুঁজছিল টার্গেট। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে শিকারির কাছেই হোসেন আলী তার ধর্মান্তরিত হওয়ার ইতিহাস তুলে ধরে। শুধু তাই নয়, একপর্যায়ে সন্তানতুল্য আবুল বাশিরকে ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করার আহ্বান জানায়। এরপরই টার্গেটে পরিণত হয় হোসেন আলী। আবুল বাশির হোসেন আলীর সাথে প্রাতঃভ্রমণে কয়েকদিন সঙ্গী হয়। গড়ে তোলে নিবিড় সম্পর্ক। তার গতিবিধি সব জেনে হত্যার চূড়ান্ত পরিকল্পনা আঁটে।
উল্লেখ্য, গত ২২ মার্চ কুড়িগ্রাম পৌরসভার গাড়িয়ালপাড়ার (গড়ের পার) বাসিন্দা খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বনকারী মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলী (৬৮) প্রতিদিনের মতো সকাল ৭টার দিকে বাড়ির সামনে হাঁটছিল। এ সময় কালো রঙের ১৩৫ সিসি ডিসকভার মোটরসাইকেলে তিন আরোহী পেছন থেকে অতর্কিত এসে গলা কেটে হত্যা করে। পরে মৃত্যু নিশ্চিত হবার পর ককটেল ফাটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে কলেজপাড়া ও বকসীপাড়া দিয়ে পালিয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ৪ থেকে ৫ মিনিটের ছিল এই অপারেশন।
নিখিল চন্দ্র জোয়ার্দার হত্যায় ৩ আসামি ৬ দিনের রিমান্ডে
টাঙ্গাইল জেলা সংবাদাতা : টাঙ্গাইলের গোপালপুরে কাপড় ব্যবসায়ী দর্জি নিখিল চন্দ্র জোয়ার্দারকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলায় গ্রেফতারকৃত ৩ জনকে পৃথকভাবে ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। গতকাল (সোমবার) দুপুরে গ্রেফতারকৃতদের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গোপালপুর আমলি আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় আসামীপক্ষের আইনজীবী দুটি মামলাতেই পৃথকভাবে তাদের জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন। পরে পৃথক দু’টি মামলায় পুলিশের ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন শুনানি হয়। শুনানি শেষে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথকভাবে দু’টি মামলায় তিনদিন করে মোট ছয় দিনের রিমান্ড আদালত মঞ্জুর করেন। আসামীরা হলেন, গোপালপুর উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারী রফিকুল ইসলাম বাদশা, গোপালপুর উপজেলার আলমনগর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম ও একই এলকার বিএনপি কর্মী ঝন্টু মিয়া।
এ ঘটনায় তার স্ত্রী আরতি রাণী জোয়ার্দার ও গোপালপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোকসেদুল আলম বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করে। পরে মামলা দুটি গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করছে।
উল্লেখ্য, ৩০ এপ্রিল গত শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে একটি মোটরসাইকেলযোগে তিন যুবক ডুবাইল বাজারে অবস্থিত নিখিলের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে আসে। পরে নিখিলের সাথে কথা বলার জন্য তাকে ডেকে নিয়ে দোকানের অদূরে রাস্তার পাশে নিয়ে যায়। আলাপচারিতার এক পর্যায়ে অতর্কিতে পেছন থেকে নিখিলের উপর হামলা করে দুর্বৃত্তরা। এলোপাতাড়ি কুপিয়ে নিখিলের মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। লাশের পাশে বোমা সাদৃশ্য একটি ব্যাগ রেখে যায়।
আইএস’র অস্তিত্ব নেই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার-
এদিকে এই হত্যাকা-ের পর আইএস জড়িত এমন প্রশ্নের জবাবে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসলাম খান বলেছেন, বাংলাদেশে আইএস-এর কোন অস্তিত্ব নেই। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কাছে এখন পর্যন্ত আইএস-এর অস্তিত্ব সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যায় নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কুড়িগ্রামে জেএমবি সদস্য হাসান ফিরোজ গ্রেফতার
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ