পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আয়কর মেলায় উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। গতকাল শুক্রবার হওয়ায় আয়কর মেলায় রাজস্ব আদায়ের হারও গত কয়েকদিনের চেয়ে অনেক বেড়েছে। ছুটির দিন সামনে রেখে রাজস্ব কর্মকর্তা বা জনবলও অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি বাড়িয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গতকাল মেলার ৪র্থ দিনে কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়াই আয়কর দিয়েছেন। গতকাল মেলায় রিটার্ন দাখিল করেছেন ৭৫ হাজার ৭৩৬ জন। আয়কর আদায় হয়েছে ২৫৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
সরেজমিন মেলা কেন্দ্রে দেখা যায়, সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলার ৪র্থ দিনে সারাদেশে করদাতাদের সরব অংশগ্রহণ ও ব্যাপক উপস্থিতি। সকাল থেকেই করদাতাদের আনাগোনা বাড়তে থাকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুখরিত হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ। অনেকেই ভিড় সামলাতে ও দ্রæত রিটার্ন পরিশোধ করতে দিনের প্রথম প্রহরে এসে মেলায় হাজির হয়েছিলেন। সবমিলে করদাতা ও সেবাগ্রহীতাদের পদচারণায় মুখরিত ছিল মেলা প্রঙ্গণ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, আয়কর মেলায় করদাতাদের উপস্থিতি দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ছুটির দিন হওয়ায় ও মানুষের আগ্রহের পরিমাণ বাড়ার কারনে আয়কর মেলায় সব ধরনের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। তবে মনে হচ্ছে তরুণদের সংখ্যাই বেশি। তিনি বলেন, আগ্রহের জায়গা থেকে হয়তো তরুণরা মেলায় এসেছেন। এ ধারা অব্যাহত থাকলে দেশ অত্রি দ্রæত এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, আজ (শুক্রবার) উৎসবের আমেজে মানুষ দলে দলে আয়কর মেলায় রিটার্ন জমা দিচ্ছেন। কোনো রকম হয়রানি ছাড়াই নির্ভয়ে ও স্বাচ্ছন্দ্যে রিটার্ন জমা দিয়ে রশিদ নিচ্ছেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা সৈয়দ এ মুমেন জানান, শুক্রবার অনেক সাড়া পাওয়া গেছে। এদিন মেলায় সেবা গ্রহন করেছেন দুই লাখ ৮৮ হাজার ৪৬ জন। রিটার্ন দাখিল করেছেন ৭৫ হাজার ৭৩৬ জন। আয়কর আদায় হয়েছে ২৫৩ কোটি ১৫ লাখ ৮১ হাজার ৫৪০ টাকা। অন্যদিকে নতুন ইটিআইন নিয়েছেন তিন হাজার ৬৫১ জন।
তিনি বলেন, আজ শনিবার এ আয়ের হার দ্বিগুণ হতে পারে বলে আশাবাদী তিনি। তিনি বলেন, মেলায় ব্যাংক বুথ ছাড়াও ই-পেমেন্টের মাধ্যমে অনলাইনেও জমা দেওয়া যাচ্ছে আয়কর। করা যাচ্ছে ই-ফাইলিং। কর নিবন্ধন (ই-টিআইএন) নিতেও সময় লাগছে খুবই কম। যাবতীয় বিড়ম্বনা ছাড়া সহজে আয়কর জমা দিতে পেরে সন্তুষ্ট করদাতারা। মেলা ঘুরে দেখা যায়, মেলায় মুক্তিযোদ্ধা ও সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য আলাদা বুথ রাখা হয়েছে। বুথ রাখা হয়েছে প্রতিবন্ধীদের জন্যও।
কর দিতে আসা প্রবীণ ব্যক্তি নুরুল ইসলাম বলেন, দেশ পরিচালনার অর্থ জনগণের কাছ থেকে নিয়ে থাকে সরকার। ওই অর্থ দেশের উন্নয়নে ব্যয় হয়। আমরা অর্থ না দিলে সরকার কোথায় পাবে। তাই দেশের উন্নয়নের স্বার্থে সবার কর দেয়া উচিৎ।
বুথে কর্মরর্ত এনবিআর কর্মকর্তা খান মো. জাহাঙ্গীর বাবুল বলেন, আয়কর মেলার রিটার্ন দাখিল করেছেন সাড়ে তিনশর বেশি মুক্তিযোদ্ধা। এ সময় তারা বেশ আনন্দের সঙ্গে কর দিয়েছেন। তাদের কাছ থেকে কত অর্থ আদায় হয়েছে, তা এখনও গণনা করা হয়নি। খুব সকালেই কর দিতে আসেন কাঠাল বাগানের বাসিন্দা আলী আজগর। তিনি বলেন, সকালে মেলায় খুব একটা ভিড় থাকে না। তাই সকালেই এসেছি। অল্প সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করতে পেরেছি। তিনি বলেন, কর অঞ্চলগুলোতে গেলে অনেক প্রশ্ন করা হয়, খুটিনাটি ভুল ধরা হয়। কিন্তু মেলায় কর্মকর্তারা হয়রানি করের না। এ জন্য মেলায় কর দিতে এসেছি।
মেলায় ই-পেমেন্টের মাধ্যমেও কর দিচ্ছেন অনেক করদাতা। এনবিআর ওয়েবসাইট ব্যবহার করে খুব সহজেই জমা দেওয়া যাচ্ছে আয়কর। এক্ষেত্রে ২৮টি ব্যাংকের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা যাবে। গেটওয়ে পেমেন্ট সিস্টেম কিউ ক্যাশ এ সেবা দিচ্ছে। কিউ ক্যাশের বুথে কর্মরত হাসান মাহমুদ বলেন, গত তিন দিনে ১১৯ জন করদাতা ই-পেমেন্টের মাধ্যমে কর জমা দিয়েছেন। মেলায় এগিয়ে চলছে ই-ফাইলিংকার্যক্রমও। ই-ফাইলিং বলতে অনলাইনেই রিটার্ন জমা দেয়াকে বোঝায়। সেক্ষেত্রেও দুই শতাধিক রিটার্ন জমা পড়েছে।
আয়কর মেলার আহ্বায়ক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) জিয়া উদ্দিন মাহমুদ বলেন, শুক্র ও শনিবারের জন্য আমাদের বিশেষ প্রস্তুতি ছিল। শুক্রবার সফল হয়েছি। শনিবারও এ ধারা অব্যাহত থাকবে। আশা করি, কেউ ফিরে যাবে না। মেলায় সব ধরনের সুযোগ সুবিধা রাখা হয়েছে। করদাতাদের আশা যাওয়ার জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, চারদিন মিলে মেলায় মোট আয়কর আদায় হয়েছে ১,২৬৭ কোটি ৫৬ লাখ ৪৮ হাজার ৮১৯ টাকা। গতবছরের প্রথম চারদিনে কর আদায়ের পরিমান ছিল ১২০১ কোটি ৩৭ লাখ পাঁচ হাজার ৩৪০ টাকা। গতবারের চেয়ে এবার এ কর আদায়ের পরিমান বেড়েছে ৬৬ কোটি ১৯ লাখ ৪৩ হাজার ৪৭৯ টাকা। প্রবৃদ্ধির হার ৫.৫১ শতাংশ।
চারদিনে মেলায় মোট সেবা নিয়েছেন আট লাখ ৯৯ হাজার ৬৫৫ জন। গতবছরের একই সময়ে এ সংখ্যা ছিল পাঁচ লাখ ৯০ হাজার ৯৬২ জন। গতবারের চেয়ে এবার এ সংখ্যা বেড়েছে তিন লাখ আট হাজার ৬৯৩ জন। প্রবৃদ্ধির হার ৫২.২৪ শতাংশ। চারদিনে রিটার্ন দাখিল করেছেন ছয় লাখ ৬১ হাজার ২৩৪ জন আয়কর দাতা। যা গতবছর একই সময়ে ছিল এক লাখ ৬৩ হাজার ৬৮৯ জন। একবছর ব্যবধানে এর প্রবৃদ্ধির হার৫৯.৫৯ শতাংশ। নতুন ইটিআইন গ্রহনকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৪১৫ জন। গতবছর এ সংখ্যা ছিল মাত্র পাঁচ হাজার ৬৯৬ জন। অর্থাৎ নতুন ইটিআইন গ্রহন কারী সংখ্যা বেড়েছে ১৩ হাজার ৭১৯ জন। একবছরের ব্যবধানে বেড়েছে ২৪০.৮৫ শতাংশ।
মেলায় ফ্রি চিকিৎসাসেবা: আয়কর মেলায় ফ্রি চিকিৎসাসেবা দিতে মেডিকেল স্টল বসানো হয়েছে। এ স্টলে ডাক্তার, নার্স ও রোগের প্রথমিক সব ওষুধ নিয়ে সেবা দিচ্ছেন ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের একটি টিম। মেলায় প্রবেশ করতেই প্রথম প্যান্ডেলে চোখে পড়বে ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মেডিকেল স্টল। এখানে করদাতা রোগীদের ফ্রি প্রেসার মাপা, সুগার টেস্টসহ ইমার্জেন্সি চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। নবম বারের মতো আয়োজিত আয়কর মেলা এবার রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে চলছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।