পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
![img_img-1719628597](https://old.dailyinqilab.com/resources/images/cache/169x169x3_1678437663_IMG-20230310-WA0005.jpg)
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, আজ যে সীমাহীন নির্যাতন ও লুটপাট চলছে বাংলাদেশের মানুষ এর আগে তা কখনো দেখেনি। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে একটি মামলার রায় নিয়ে এখন আমাদের দেশে ব্যাপক আলোচনা চলছে। কী সে মামলা? এফবিআইয়ের একজন এজেন্টকে ঘুষ দিয়ে এক প্রবাসী বাংলাদেশী তরুণ বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের ব্যাপারে কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছিলো। সেই মামলার নথিতেই আছে প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের একটি অ্যাকাউন্টেই আড়াই হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ তিনশো মিলিয়ন ডলার জমা আছে। এই টাকা কোথা থেকে গেছে? এই টাকার উৎস কী? এভাবে তাদের আরো কতো টাকা আছে, বাংলাদেশের মানুষ তা জানতে চায়। গতকাল শনিবার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জাগপা’র ৩৬তম জাতীয় কনভেনশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপার্সন এসব কথা বলেন। ‘পথের বাধা সরিয়ে দাও’ শিরোনামে এই কনভেনশনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা জাগপার কাউন্সিলর ও নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।
বেগম খালেদা জিয়া বলেন, বাংলাদেশের মানুষ মনে করে এই টাকা বাংলাদেশের জনগণের টাকা। এভাবে দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে অর্জিত বিপুল টাকা বিদেশে পাচার করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা হয়েছে। এ নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। এ টাকা ফিরিয়ে আনা দরকার। কিন্তু এ টাকার ব্যাপারে সরকার নীরব। তারা এই টাকার কথা ধামাচাপা দিতে প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করেছে। কারারুদ্ধ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকেও এই মামলায় জড়িয়ে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে, তারা নাকি প্রধানমন্ত্রীর পুত্রকে অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের রায়েই এধরনের অভিযোগকে নাকচ করে দেয়া হয়েছে। এভাবে মিথ্যা প্রচারণা, অত্যাচার, নানা ইস্যু সৃষ্টি করে তারা তাদের লুটপাট ও অপরাধগুলো ঢেকে রাখতে চায়। জনগণের দৃষ্টিকে অন্যদিকে সরিয়ে দিতে চায়। বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, দুর্নীতি ও লুটপাট করে দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। শেয়ারবাজার থেকে লক্ষ কোটি টাকা লুটে নেওয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের নিঃস্ব করে ফেলা হয়েছে। ব্যাংকগুলো থেকে লুটপাট হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রিজার্ভের আটশ’ কোটি টাকা ডিজিটাল কারচুপির মাধ্যমে পাচার করা হয়েছে। দফায় দফায় অবিশ্বাস্য রকমের ব্যয় বাড়িয়ে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো থেকে কোটি কোটি টাকা লুণ্ঠন করা হচ্ছে।
বেগম খালেদা জিয়া বলেন, কোনো শ্রেণি-পেশার মানুষ আজ ভালো নেই। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম পাচ্ছে না। অথচ তাদের উৎপাদন খরচ কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। নিত্যপণ্যের দাম হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে। কোথাও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তিনি বলেন, সীমিত আয়ের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতি ও লুটপাটের অবাধ লাইসেন্স দেওয়া হলো। তারপরেও ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে জনজীবন আজ অতিষ্ঠ। আজ যে সীমাহীন নির্যাতন ও লুটপাট চলছে বাংলাদেশের মানুষ এর আগে তা কখনো দেখেনি।
বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, সরকার দেশের জনগণের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। দেশে এখন এক অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বর্তমান শাসকেরা এইভাবে বেশিদিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। তাই তাদের বলব, দেশের মানুষের ওপর নির্ভর করুন। এভাবে দেশ চলতে পারে না। দেশে গণতন্ত্র আনতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সুবিচার ফিরিয়ে আনতে হবে। জুলুম-নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। শান্তি ও নাগরিকদের নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনতে হবে। সে জন্য যে সেখানে আছেন সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রাম করতে হবে।
রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেই স্বাধীনতাকে সব মানুষের জীবনে অর্থবহ করে তুলতে হবে। আমরা একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিবেশীসহ সকল দেশের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ও মৈত্রীর সম্পর্ক চাই। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সব দেশের সঙ্গে সকল সমস্যা নিরসনের নীতিতে আমরা বিশ্বাসী। তবে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে আমরা সবকিছুই করব সমমর্যাদার ভিত্তিতে। আমরা কারো কাছে মাথা নত করব না। তিনি বলেন, বর্তমান ক্ষমতাসীনদের কোনো গণভিত্তি নেই। জনগণের মধ্যে তাদের কোনো সমর্থন নেই। তাই তারা অন্যের শক্তির ওপর ভর করে দেশের মানুষকে পদানত করে রাখতে চায়। এভাবে বেশিদিন চলা যায় না। দেশের চলমান এই ভয়াবহ সংকট নিরসনে আলোচনার বিকল্প নেই। সংকট নিরসনে তিনি আবারও সরকারের প্রতি আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন।
খালেদা জিয়া বলেন, দেশে কোনো সুস্থ-স্বাভাবিক অবস্থা নেই। প্রতিদিন গড়ে ১৪ জন মানুষ খুন হচ্ছে। নারী ও শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো স্বাভাবিকভাবে আইন অনুযায়ী তাদের কর্তব্য পালন করতে পারছে না। তাদের রাখা হয়েছে শুধু গণবিচ্ছিন্ন ও অবৈধ সরকারকে জনগণের ক্ষোভ থেকে রক্ষা করার জন্য। তারা সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। বিচার-বহির্ভূতভাবে যাকে খুশি তাকে হত্যা করছে। জোর করে ধরে নিয়ে গিয়ে গুম ও খুন করে ফেলছে। যেখানে সেখানে খুনের শিকারদের লাশ পাওয়া যাচ্ছে। অনেকের লাশের সন্ধানও মিলছে না। জুলুম, নির্যাতন, গ্রেফতার, হামলা, মামলা চলছে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর। অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে বাড়ি ছাড়া। গ্রেফতার ও নির্যাতনের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে সম্মানিত নাগরিকদেরও নির্যাতন করা হচ্ছে।
খালেদা জিয়া বলেন, গুপ্তহত্যা এবং অতর্কিতে হামলা চালিয়ে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। বগার, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, লেখক, প্রকাশক, বিদেশি নাগরিক, দূতাবাসকর্মী এবং বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের লোকেরাও এ ধরনের হামলা ও হত্যার শিকার হচ্ছে।
তিনি বলেন, আতঙ্কের ব্যাপার হচ্ছে, বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর নামে এই সব হত্যার দায় স্বীকার করা হচ্ছে। এইসব ঘটনায় প্রতিটি নাগরিক আজ নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন। সরকার এসব হামলা ও হত্যার ঘটনা বন্ধ করতে পারছে না। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের উপস্থিতির কথা তারা অস্বীকার করছে। কিন্তু প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে পারছে না। বরং তারা এর দায়-দায়িত্ব চাপাচ্ছে বিরোধী দলের ওপর। এতে তদন্ত প্রভাবিত হচ্ছে এবং প্রকৃত অপরাধীরা আড়ালে থেকে যাচ্ছে। সরকারের উদ্দেশে বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, এভাবে বেশি দিন ক্ষমতায় থাকা যাবে না। সেজন্য দেশের অভ্যন্তরে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে তা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিরসন করুন। সময় দ্রুত বয়ে যাচ্ছে।
জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের সভাপতিত্বে কনভেনশনে আরো বক্তব্য রাখেন দলটির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি এমাজউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক ড. সুকোমল বড়ুয়া। বিএনপি নেতাদের মধ্যে দলের ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান, শ্যামা ওবায়েদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
২০ দলীয় জোটের শরিক দলের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাতীয় পার্টি (জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) সভাপতি খন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির সৈয়দ মুজিবুর রহমান প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।