Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চাঞ্চল্যকর হত্যার খুনিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে

প্রকাশের সময় : ১ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কলাবাগানে জোড়া খুনের তদন্ত সিসি ক্যামেরাতেই খাচ্ছে ঘুরপাক : তিন বছরে একই কায়দায় ২৮টি হত্যাকা-
স্টাফ রিপোর্টার : চাঞ্চল্যকর হত্যাকা-ের সাথে জড়িত খুনীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। সর্বশেষ কলাবাগানে জোড়া খুনের ঘটনায় জড়িত খুনীদের টিকিটিও ছুঁতে পারেনি আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। কিলিং মিশনে অংশগ্রহকারীদের কেউ গ্রেফতার হয়নি। শুধু শনাক্ত করা হয়েছে, শীঘ্রই গ্রেফতার হবে এমন আশার বাণীর মধ্যেই আটকে আছে খুনীদের গ্রেফতার অভিযান।
গত তিন বছরে দুই বিদেশীসহ কমপক্ষে ২৮টি হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটেছে একই কায়দায়। এসব চাঞ্চল্যকর হত্যাকা-ের ঘটনায় খুন হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর আবুল কাসেম ফজলুল হকের ছেলে দীপেনসহ ২৯ জন। একই কায়দায় প্রকাশ্যে পুলিশ বেষ্টনীতে টিএসসি’র কাছে খুন হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরের অজয় রায়ের ছেলে অভিজিৎ রায়। সর্বশেষ কলাবাগানে সুরক্ষিত ফ্ল্যাটে নৃশংস খুনের ঘটনায় নিহত হন আরো দুইজন। হত্যাকা-ের ৬দিন পরেও পুলিশ ওই খুনীদের টিকিটিও ছুঁতে পারেনি। ফলে অনেকেই মনে করছেন, পূর্বে ঘটনারগুলোর মতই এবারও কয়দিন পর সব কিছু থেমে যেতে পারে। এমন আশঙ্কা করেছেন নিহতের স্বজনেরাও। নিহতের স্বজনেরা বলছেন, একের পর এক ঘটছে টার্গেট কিলিং। আইন শৃংখলা বাহিনীর কথিত নিরাপত্তা ও কঠোর গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যেই ঘটছে এসব ভয়ঙ্কর হত্যাকা-। এসব ঘটনার একটির কিনারা হতে না হতেই একই কায়দায় আবারো ঘটছে আরো একটি হত্যাকা-। গতসোমবার কলাবাগান লেকসার্কস রোডের ডলফিন গলিতে নিজ বাসায় খুন হলেন মান্নানসহ দুইজন। এতে করে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে ওই এলাকায়। অপরিচিত লোকজন দেখলেই স্থানীয়রা তাদের সন্দেহের চোখে দেখেন। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা তিনজনকে শনাক্ত করেছে দাবি করলেও তারা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ঘটনার ৬ দিন পার হলেও কোন ক্লু উদঘাটন করতে পারেনি ডিবি পুলিশ। এমনকি জোড়া খুনের সময় ঘাতকদের বাধা দিতে গিয়ে আহত জুলহাজের মায়ের জবানবন্দিও রেকর্ড করেনি পুলিশ।
অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ডিবি এবং কাউন্টার টেররিজমের অন্তত পাঁচটি টিম খুনিদের ধরতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ঘটনার পর খুনিদের একজনের কাছ থেকে কেড়ে রাখা ব্যাগ থেকে গুরুত্বপূর্ণ আলামত নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। তিনি বলেনে,আগের ঘটনাগুলির সঙ্গে জুলহাজ ও তনয় হত্যাকা-ের প্রায় শতভাগ মিল পাওয়া গেছে। তিনি আরো বলেন, খুনিদের ধরার চেষ্টা করছি, ধরা পড়বে। আমাদের কাছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে।
সূত্র জানায়, খুনিদের দুটি মোবাইল ফোন থেকে তাদের অবস্থান ও যাদের সঙ্গে তারা নিয়মিত যোগাযোগ রাখতো তাদের বিষয়ে নজরদারি চলছে। তবে খুনিরা একে অপরের সঙ্গে সুরক্ষিত সফটওয়্যারের মাধ্যমে তথ্য আদান প্রদান করতো বলে জানা গেছে। প্রটেক্টেড টেক্সট ব্যবহারের ফলে তথ্য আদান-প্রদানের পর তা এক মিনিটের মধ্যেই মুছে যেতো। গোয়েন্দারা প্রযুক্তির সহায়তায় সেসব মেসেজ উদ্ধারের চেষ্টা করছে।
ইমন সাংবাদিকদের জানান, তার মা তার গুলশানের বাসাতেই রয়েছেন। তার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। তিনি বলেন, মা এখনো জানেন না জুলহাজ নেই। মাকে জানানো হয়েছে জুলহাজ বিদেশে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরবে। মায়ের স্মৃতিশক্তি আগে থেকেই একটু কম। তার পরও মাঝে মাঝে জুলহাজের বিষয় জানতে চান।
এদিকে ঘটনার পর কলাবাগান এলাকার কয়েকটি বাড়ির সিসি ক্যামেরার ফুটেজ জব্দ করেছে পুলিশ। তা দেখে কয়েকজনকে শনাক্তের চেষ্টা করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। দুর্বৃত্তদের কাছ থেকে পুলিশ যে ব্যাগটি ছিনিয়ে রেখেছে তা থেকে সংগৃহীত আলামত দিয়ে হত্যাকারীদের শনাক্তের চেষ্টা করছে তদন্তের দায়িত্বে থাকা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ওই প্রযুক্তি সংগ্রহের মাঝেই তদন্ত ঘুরপাক খাচ্ছে।
কয়েকটি ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্তদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করতে পারলেও মূল হোতারা থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এমনকি গোয়েন্দা নজরদারি, নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তুলেও এই চক্রটিকে ঠেকানো যাচ্ছে না। এই চক্রের কৌশলের কাছে রীতিমতো হার মানতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের।
অবশ্য এসব ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, সমৃদ্ধ হচ্ছে, তখন ষড়যন্ত্র হচ্ছে। শুধু দেশে না, আন্তর্জাতিকভাবেও ষড়যন্ত্র হচ্ছে। মানুষ হত্যা করা হচ্ছে আর নাম দেয়া হচ্ছে আইএসের।
আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বলেন, কোনো ঘটনা ঘটলে আমাদের দায়িত্ব খুনিদের খুঁজে বের করা। কিন্তু অনেক দেশ মায়াকান্না দেখাতে চায়। মায়াকান্না দেখিয়ে তারা চায় আমাদের পাশে আসতে। যেভাবে এসেছিল সিরিয়াসহ অন্যান্য দেশের পাশে। সেসব দেশের অবস্থা আমরা দেখেছি। এজন্য এই ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
আইজিপি আরো বলেছেন, আমরা এসব হামলার ৮০ ভাগ ক্ষেত্রেই রহস্য উদঘাটন করেছি। বাকিগুলোর তদন্ত চলছে। আসামিদের ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে।
গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোটরসাইকেলে দাপিয়ে বেড়ানো এই খুনি চক্রটি প্রশিক্ষিত। এরা এতটাই দুর্ধর্ষ যে শরীরের কোথায় গুলি করলে বা ছুরিকাঘাত করলে মৃত্যু নিশ্চিত হবে তা তাদের জানা। এ কারণে প্রতিটি কিলিং মিশনেই সফল হচ্ছে তারা।
জানা যায়, গোপীবাগে ৬ খুন, চ্যানেল আইয়ের ইসলামী অনুষ্ঠানের ইপস্থাপক মাওলানা ফারুকী খুন এবং সম্প্রতি পুরান ঢাকায় মসজিদের সিঁড়িতে মোয়াজ্জিন বেলাল হোসেনসহ চাঞ্চল্যকর হতাকা-ে নেপথ্যের রহস্য আজো পুলিশ উদঘাটন করতে পারেনি। শুধু তাই নয়, চাপাতি গ্রুপের হামলায় রাজধানী ঢাকায় ৯ জন ব্লগার-লেখক-প্রকাশক ও অ্যাক্টিভিস্ট নিহত হয়েছে। এসব হত্যাকা-ের পেছনে কারা জড়িত তাও রয়ে গেছে আড়ালে। ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান বাবু, নিলাদ্রী চট্টোপাধ্যায় ওরফে নিলয় নীল, প্রকাশক ও ব্লগার ফয়সাল আরেফিন দীপন, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নাজিমউদ্দিন সামাদ ও সর্বশেষ সমকামীদের অধিকার বিষয়ক ম্যাগাজিন রূপবান সম্পাদক জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু নাট্যকর্মী মাহবুব তনয় খুন হয়েছেন। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে সিলেটে অনন্ত বিজয় দাস নামে এক ব্লগারকে চাপাতি দিয়ে হত্যা করা হয়।
প্রসঙ্গত, ২৫ এপ্রিল বিকেলে রাজধানীর কলাবাগানের ৩৫, উত্তর ধানমন্ডির আছিয়া নিবাসের দ্বিতীয় তলায় চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ইউএসএআইডির কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান (৩৫) ও তার বন্ধু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাহবুব তনয়কে (২৫)।
জুলহাজের বড় ভাই মিনহাজ মান্নান ইমন জানান, মা সখিনা খাতুন জানেন তার ছেলে বিদেশে চিকিৎসাধীন। সুস্থ হলে দেশে ফিরবে। স্মৃতিশক্তি কম হলেও তিনি মাঝে মাঝেই জুলহাজের কথা জানতে চাইছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চাঞ্চল্যকর হত্যার খুনিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ