অর্থনৈতিক রিপোর্টার : স্থাপনা ভাড়ার ওপর ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) পরিশোধ না করে ৫টি মোবাইল অপারেটর ৮৪ কোটি টাকা ফাঁকি দিয়েছে। সম্প্রতি এলটিইউ থেকে এনবিআরে পাঠানো ফেব্রুয়ারি মাসের রাজস্ব পর্যালোচনা সভার কার্যবিবরণী সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। কার্যবিবরণীর তথ্যমতে, ৫টি মোবাইল ফোন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে স্থান-স্থাপনা ভাড়ার বিপরীতে ৮৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা আদায়ে দাবিনামা জারি করেছে এলটিইউ। এছাড়া গোয়েন্দা কার্যক্রম ও তদন্তের মাধ্যমে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৩ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করা হয়েছে। এর বিপরীতে ৭২ কোটি ৮১ লাখ রাজস্ব আদায় হয়েছে। দাখিলপত্র পরীক্ষার মাধ্যমে ৪১৮ কোটি টাকা অবৈধ রেয়াত চিহ্নিত করা হয়েছে।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, উচ্চ আদালতে রিট মামলা বিচারাধীন থাকায় মোবাইল অপারেটরগুলোর কাছ থেকে ভ্যাট আদায় বন্ধ থাকে। ২০১৪ সালে রিট নিষ্পত্তি হওয়ায় স্থাপনা ভাড়ার বিপরীতে ভ্যাট পরিশোধ করতে সম্প্রতি মোবাইল অপারেটরগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অধীনস্থ বৃহৎ করদাতা ইউনিট, ভ্যাটের (এলটিইউ) গোয়েন্দা বিভাগ।
সূত্র জানায়, ২০১০ সালে সবগুলো মোবাইল অপারেটর উচ্চ আদালতে স্থাপনা ভাড়ার বিপরীতে ভ্যাট আদায় নিয়ে রিট করে। এর পর থেকে স্থাপনা ভাড়ার বিপরীতে ভ্যাট আদায় কার্যক্রম বন্ধ থাকে। ২০১৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি মাসে একটি মোবাইল অপারেটরের রিট নিষ্পত্তি করে স্থাপনা ভাড়ার বিপরীতে ভ্যাট আদায়ে আইনগত বাধা নেই উল্লেখ করে রায় দেন আদালত। এর প্রেক্ষিতে সম্প্রতি মোবাইল অপারেটরগুলোকে ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত ৩০০ স্কয়ার ফিটের নিচের কাস্টমার কেয়ারের তথ্য ও ব্যবস্থাপনা ব্যয় জানানোর নির্দেশ চিঠি পাঠায় এলটিইউ ভ্যাট। মোবাইল অপারেটরগুলোর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ৮৪ কোটি টাকার দাবিনামা জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলালিংকের বিরুদ্ধে ৩৪ কোটি টাকা, গ্রামীণফোনের ১৯ কোটি, এয়ারটেল ১৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, রবি ১৩ কোটি ও টেলিটকের ১ কোটি ২৪ লাখ টাকার দাবিনামা জারি করা হয়েছে। ভ্যাট আইন অনুযায়ী, ৩০০ স্কয়ার ফিট পর্যন্ত স্থাপনা ভাড়ার বিলের বিপরীতে ভ্যাট আদায় করতে হয় না। অর্থাৎ ভ্যাট অব্যাহতিপ্রাপ্ত। এর বেশি আয়তনের স্থাপনা বিলের বিপরীতে ৯ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায়ের বিধান রয়েছে।
জানতে চাইলে এলটিইউ’র ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, বড় প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব ফাঁকি উদঘাটনের কাজ করছে এলটিইউ ভ্যাটের গোয়েন্দা ইউনিট। আগামীতে এলটিইউ ভ্যাটের অধিক্ষেত্রাধীন সব প্রতিষ্ঠানের কাছে স্থাপনা ভাড়ার তথ্য চাওয়া হবে। এগুলো যাচাই-বাছাই করে ক্রমান্বয়ে দাবিনামা জারি করা হবে। এ লক্ষ্যে কাজ করছে এলটিইউ ভ্যাটের একটি দল। এছাড়া ২০১৫ সালের জুনের পর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত স্থাপনা ভাড়ার তথ্য দিতে মোবাইল অপারেটগুলোকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এসব বিশ্লেষণ করেও দাবিনামা জারি করা হবে।
অন্যদিকে গোয়েন্দা ইউনিট এলটিইউ অধিক্ষেত্রভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে তৎক্ষণাৎ অভিযান চালিয়ে ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৩ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করেছে গোয়েন্দা ইউনিট। এর বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৭২ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক, বীমা, সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, সিরামিক খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। আরো বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে তদন্ত কাজ চলছে।
গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট গঠনের অনুমোদন দেন এলটিইউর কমিশনার শাহনাজ পারভীন। এলটিইউর অধিক্ষেত্রভুক্ত প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও কর ফাঁকি-সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহে কাজ করবে গোয়েন্দা ইউনিট। ভ্যাট আইনের ২৬ ধারা অনুযায়ী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তাৎক্ষণিক অভিযান পরিচালনা ক্ষমতা এবং বিধিমালা অনুযায়ী আমদানি পণ্য চালান বা পণ্য বহনকারী যানবাহনকে তল্লাশি ও জব্দ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে গোয়েন্দা ইউনিটকে।
কার্যবিবরণীর তথ্য মতে, এলটিইউ ভ্যাটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৬ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ২৩ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১৯ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা আদায় করেছে এলটিইউ ভ্যাট। ঘাটতি রয়েছে ৪ হাজার ৩৬১ কোটি টাকা। তবে গত বছরের একই সময়ে চেয়ে বেশি আদায় হয়েছে ২ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা।