Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

এলভিস প্রিসলি ও মাইকেল জ্যাকসনের পর এবার প্রিন্সের রহস্যজনক মৃত্যু

পপ সঙ্গীত সম্রাটদের ট্র্যাজেডি

প্রকাশের সময় : ১ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : এ সময়কার সবচেয়ে জনপ্রিয় পপ সঙ্গীত তারকা প্রিন্সের রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।
মিনোপোলিসের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রিন্সের মৃত্যু নিয়ে এখনো অনেক প্রশ্ন রয়েছে যার সুরাহা হওয়া দরকার। বিশেষ করে অতিরিক্ত পেইনকিলার খাওয়ার জন্যই কি এই মৃত্যু? আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার একজন কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার বলেন, প্রিন্সের ওধুধ সেবনের প্রেসক্রিপশনের ইতিহাস জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন তদন্তকারী বার্তা সংস্থাকে বলেন, সম্ভবত: পারকোসেটের মতো অত্যন্ত শক্তিশালী বেদনানাশক ওষুধের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে এই মৃত্যুর সঙ্গে। এই কর্মকর্তা প্রিন্সের মৃত্যুর প্রাক্কালে কথিত টিএমজেড-এর ঘটনাও নিশ্চিত করেন। জানা গেছে, মৃত্যুর ৬ দিন আগে প্রিন্স বিমানে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েছিলেন। চিকিৎসকরা তখন তাকে দ্রুত সুস্থ করে তুলতে সম্ভাবত আফিমের যৌগ কোন ওষুধ দিয়েছিলেন এবং তা ওভারডোজ হয়েছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তদন্তে শেষ পর্যন্ত যদি দেখা যায় যে প্রিন্সকে ওষুধের ওভারডোজ দেয়া হয়েছিল তাহলে নামকরা ওষুধ ও মারাত্মক মাদক ব্যবহারের একটি ভয়ংকর যোগাযোগের আরেকটি যোগসূত্র পাওয়া যাবে। মৃত্যুর ঝুাঁকি থাকলেও তরুণ শিল্পীরা চিরাচরিতভাবে গড়মাত্রার চেয়ে বেশী মাত্রায় এ ধরণের ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন।
ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল ২০১১ সালে এক হাজার সঙ্গীত শিল্পীর অতীত সম্বন্ধীয় একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। রিপোর্টের উপসংহারে বলা হয়, বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পীদের জন্য তাদের ২০ ও ৩০ দশক বয়স সীমার মধ্যে মৃত্যুর ঝুঁকি সাধারণ ব্রিটিশ নাগরিকদের চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ বেশী।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা প্রিন্সের মৃত্যুর কারণ এখনো নিরূপণ করতে পারেননি। তিনি ৫৭ বছর বয়সে মিনেসোটায় নিজ বাসভবনে ২১ এপ্রিল মারা যান। তার বাসভবনে মৃত অবস্থায় পাওয়ার ঠিক ৬ দিন আগে জরুরী চিকিৎসায় ওধুধের ওভারডোজ দেয়া হয়েছিল বলে সূত্র জানায়। সেসময় ব্যক্তিগত বিমানে হঠাৎ সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লে ইলিনয়ে বিমান জরুরী অবতরণ করে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। সেসময় মুখপাত্রের মাধ্যমে প্রিন্স জানিয়েছিলেন যে তিনি ফ্লুতে ভুগছেন। চিকিৎসকরা খুব শক্তিশালী ওষুধ দিয়েছিলেন দ্রুত সুস্থ হওয়ার জন্য। তাকে হাসপাতালে রাতটি অবস্থান করার পরামর্শ দেয়া হলেও তিনি তিন ঘন্টা পর হাসপাতাল ত্যাগ করেন কারণ সেখানে তাকে ব্যক্তিগত কক্ষ দেয়া হয়নি। মৃত্যুর ১৫ ঘন্টা আগেও প্রিন্সকে একটি ফার্মেসি থেকে হেঁটে বের হয়ে আসতে দেখা যায়।
মাইকেল জ্যাকসন পরবর্তী যুগে সবচেয়ে জনপ্রিয় এই পপ সঙ্গীত শিল্পী তার ৪০ বছরের পেশাদারী জীবনে অসংখ্য গানও রচনা করেছেন। তার অ্যালবাম বিক্রির সংখ্যা ১০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। সাতবার গ্রামি পুরস্কার পেয়েছেন।
বৈবাহিক জীবন সুখের ছিলনা। একাধিকবার বিয়ে করেছেন। ১৯৯৬ সালে মেটি গার্সিয়াকে বিয়ে করেন। এই ঘরে একটি পুত্র সন্তান জন্ম নিলেও মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে সন্তানটি মারা যায়। ২০০০ সালে গার্সিয়ার সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
২০০১ সালে ম্যানুয়েলা টেসটোলিনিকে বিয়ে করেন তবে ২০০৬ সালে বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর ব্রিয়া ভ্যালেন্টির সঙ্গে ডেটিংয়ে জড়িয়ে পড়েন এবং ২০০৮ সালে সম্পর্কের ইতি ঘটে।
১৯৮৪ সালে পার্পল রেইন চলচ্চিত্র মুক্তি পাওয়ার পর প্রিন্স আরো বিখ্যাত হয়ে উঠেন। তার মৃত্যুতে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, বিশ্ব আজ এক সৃজনশীল আইকনকে হারিয়েছে এবং আমি প্রিন্সের আকস্মিক মৃত্যুতে সারাবিশ্বের শোকাভিভূত কোটি কোটিভক্ত অনুরাগীর সঙ্গে সামিল হচ্ছি। তিনি বলেন, মুষ্ঠিমেয় কিছু শিল্পী সঙ্গীত জগৎকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে এই ভবনকে আরো উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তারা তাদের মেধা ও প্রতিভা দিয়ে কোটি কোটি মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করেছেন। আমাদের সময়ে প্রিন্স ছিলেন এমনি এক প্রতিভা।
প্রিন্স রজার্স নেলসন মিনেসোটার মিনোপোলিসে ১৯৫৮ সালের ৭ জানুয়ারী জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি সঙ্গীতের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং যন্ত্র বাজানো শেখা শুরু করেন। মাত্র সাত বছর বয়সে তিনি তার প্রথম গান লিখেন।
কৈশোরে তিনি ‘ফাংক গ্রুপ নাইনটি ফোর ইস্ট’-এ যোগ দেন। তার কাজিনের স্বামী উইলি পিপ এই গ্রুপটির প্রতিষ্ঠাতা। স্থানীয়ভাবে এই ব্যান্ড গ্রুপ জনপ্রিয় হয়ে উঠে তবে ‘প্রিন্স’ নামে প্রিন্সের অ্যালবামের বিরাট সাফল্যের কারণে ১৯৭৯ সালের প্রথমদিকে ব্যান্ডটি ভেঙ্গে দেয়া হয়। তিনি সঙ্গীত নিয়ে ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় অবতীর্ণ হন এবং তখন থেকে শুরু হয় তার সাফল্যের বিজয়গাঁথা যা উর্ধগননে পৌঁছায়।
পশ্চিমা বিশ্বে বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় সঙ্গীত তারকা প্রিন্স-এর আকস্মিক মৃত্যুতেভক্ত অনুরাগীদের মধ্যে চলছে শোকের মাতম। গত ২১ এপ্রিল মিনেসোটার নিজ বাসভবনে বর্তমান পপ সঙ্গীতের আইকনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তার আকস্মিক মৃত্যুকে ঘিরে চলছে জল্পনা-কল্পনা। মৃত্যুর কারণ নিয়ে চলছে তদন্ত। তবে এখনো সঠিক কারণ জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে অতিরিক্ত পেইনকিলার সেবনের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে মেডিকেল বিশেষজ্ঞরা এখনো কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি। স্থানীয় শেরিফ বলছেন, তার লাশের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে তবে কোন আঘাতে চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে রক-এন রোল শিল্পীর জীবনধারা পর্যালোচনায় এটা সুস্পষ্ট যে তাদের ক্ষেত্রে মাদক ও ওষুধের মারাত্মক সাইডইফেক্ট খুই দৃশ্যমান। ৩৯ বছর বয়সে জ্যাজ শিল্পী ডিনাহ ওয়াশিংটন ১৯৬৩ সালে ওষুধের ওভারডোজে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি অন্যতম প্রথম পপ শিল্পী যিনি এভাবে মারা যান।
১৯৭০ ও ১৯৭১ এর মাঝামাঝি ঘুমের অতিরিক্ত ওষুধ সেবন জিম হেনড্রিক্স ও বিখ্যাত গিটারিস্ট অ্যালান উইলসনের প্রাণ কেড়ে নেয়। জেনিস জপলিন এবং জিম মরিসনের মৃত্যু হয় সম্ভবত অতিরিক্ত হেরোইন সেবনে। তাদের সবার বয়সই ছিল ২৭। তারা তথাকথিত ২৭ ক্লাবের বীজ বপন করেছিলেন। ১৯৮০’র শেষে সময়ের পরিক্রমায় মাদকের সঙ্গে যোগ হয় অতিরিক্ত এলকোহল সেবন। সম্ভবত অতিরিক্ত মাদক ও এলকোহলের কারণে মৃত্যু হয় জপলিন থেকে রকস্টার সিড ভিসিয়াস ও জেপিলিন’স জন বেনহামের মতো বিখ্যাত সব শিল্পীদের।
প্রিন্সের আকস্মিক মৃত্যুর ঘটনা পশ্চিমা সঙ্গীত অনুরাগীদের এরআগে মাইকের জ্যাকসন ও এলভিস প্রিসলির আকস্মিক মৃত্যুর কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। পশ্চিমা সঙ্গীতের এই দুই দিকপালেরর মৃত্যু হয়েছিল অতিরিক্ত ওষুধ ও মাদক ব্যবহারের কারণে। মাইকেল জ্যাকসনকে যেখানে বলা হয় পপ সম্রাট সেখানে রক-এন রোলের স¤্রাট ছিলেন এলভিস প্রিসলি। এলভিস প্রিসলির পর মাইকেল জ্যাকসন এবং তারপর প্রিন্সই পশ্চিমা সঙ্গীত অনুরাগীদের মাতিয়ে রেখেছিলেন।
মাইকেল জ্যাকসনের জন্ম ১৯৫৮ সালের আগস্টে আর এলভিস প্রিসলির মৃত্যু ১৯৭৭ সালের আগস্টে। মাইকেল জ্যাকসন মারা যান ৫০ বছর বয়সে সেখানে প্রিসলি মারা যান মাত্র ৪২ বছর বয়সে। এখন মারা গেলেন প্রিন্স। এরপর কে পশ্চিমা সঙ্গীত জগতকে আলোড়িত করবেন এটাই ভক্ত অনুরাগীদের প্রশ্ন।
জ্যাকসন মারা যান ২০০৯ সালে ৫০ বছর বয়সে।
মাত্র ৮ বছর বয়সে মঞ্চে পারফম শুরু করে। তার অ্যালব্যাম বিক্রির সংখ্যা ৭৫ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। গ্রামি এওয়ার্ড জিতেছেন ১৩ বার। ৬টি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। এলভিস প্রিসলি মারা যান ৪২ বছর বয়সে। ১৮ বছর বয়সে পারফম শুরু করেন। অ্যালবাম বিক্রি ১ শো ৩০ কোটির মতো। তিনবার গ্রামি এওয়ার্ড জিতেছেন। ৩১টি চলচ্চিত্রে তাকে দেখা যায়।
সূত্র :এনবিসি, সিএনএন, এপি, ওয়াশিংটন পোস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এলভিস প্রিসলি ও মাইকেল জ্যাকসনের পর এবার প্রিন্সের রহস্যজনক মৃত্যু
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ