Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইন্টারনেটের খারাপ দিক

প্রকাশের সময় : ১ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মোহাম্মদ আবু নোমান
ইন্টারনেট সমগ্র পৃথিবীকে আমাদের হাতের মুঠোই এনে দিয়েছে। ঘরে বসেই আমরা সারা পৃথিবীকে অবলোকন করছি। ইন্টারনেটে অনেক ভাল দিক রয়েছে যা ব্যবহারের ফলে আমাদের জানার পরিধি বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এর খারাপ দিক মোটেই উপেক্ষা করার মত নয়। পর্নোগ্রাফি তেমনই একটি খারাপ দিক যা শিশুসহ যুবক-যুবতীদের ঠেলে দিচ্ছে ভয়াবহ বিকৃতির দিকে। অশ্লীল ভিডিও দেখার ফলে একজন তরুণ হয়ে উঠছে সেক্স অপরাধী। এতে তরুণ-তরুণীদের স্বাভাবিক কর্মতৎপরতা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। এ পরিস্থিতি আমাদের দেশের জন্য, আগামী ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যে, আমাদের সমাজ কাঠামোর জন্যে ভয়াবহ অভিশাপ ও হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা যদি আমাদের দেশটাকে এগিয়ে নিতে চাই তবে তরুণ সমাজকে অবশ্যই নৈতিকতার মানদ-ে উত্তীর্ণ হতে হবে।
বিভিন্ন সাইবার ক্যাফের উপর পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে যে সময়ে তরুণদের পড়ার টেবিলে অথবা খেলার মাঠে থাকার কথা অথচ সে সময়ে তারা নিমগ্ন থাকছে ইন্টারনেটে। তারা যেসব সাইট ব্রাউজ করে তার বেশিরভাগই পর্নোসাইড। যেখান থেকে অবাধে পর্নোছবি ডাউনলোড করা যায় মোবাইলে। পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে বেড়েছে মাদকাশক্তি। পর্নোগ্রাফিতে আসক্তরা মাদকাসক্তসহ মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত হচ্ছে। বেশিরভাগই স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। এরা লেখাপড়ায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। একপর্যায়ে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এসবের জন্য অর্থ জোগাতে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে।
ইসলামের ইতিহাসে দেখা যায়, আবু বকর (রা.) যখন খলিফা তখন তার সন্তান আবদুর রাহমান বিন আবু বকরকে তিনি এমনভাবে লালন-পালন করেন যে, অধিকাংশ মানুষ তাকে চিনতোই না। উমার বিন খাত্তাব (রা.) যখন খলিফা হিসাবে মৃত্যু শয্যায় তখন তার পুত্র আব্দুল্লাহ বিন উমারের নাম উল্লেখ করে বলে যান, তাকে তোমরা পরবর্তী খলিফা কে হবে সে মত দেবার জন্য রাখতে পারো কিন্তু সে খলিফা হতে পারবে না। উমার বিন আব্দুল আজীজ (রহ.) যখন কিশোর তখন তার বাবা আবদুল আজীজ (রহ.) ছিলেন সিরিয়ার মতো বিরাট প্রদেশের গভর্নর। তিনি ছেলেকে মদীনায় পাঠিয়ে দেন শিক্ষা গ্রহণের জন্য এবং শিক্ষককে বলে দেন, আল্লাহর শপথ, যদি গভর্নরের সন্তান হিসাবে তার প্রতি কোন পক্ষপাত আপনি করেন তাহলে আল্লাহর কাছে আপনাকে আমি দায়ী করব। একজন মুসলমানের রয়েছে ধর্মীয় নির্দেশনা। যে নির্দেশনার আলোকে প্রত্যেক মুসলমান চলতে বাধ্য। আনন্দ-ফুর্তি করা যাবে কিন্তু তা অবশ্যই পরিচ্ছন্ন হতে হবে। মদ, জুয়া, জিনা-ব্যভিচার, অশ্লীলতা ইসলাম সহ্য করে না। যে আনন্দ অন্যের অধিকার, শান্তি, সুখ ও সতীত্বকে কেড়ে নেয় এমন সংস্কৃতিকে ইসলাম ধিক্কার জানায়।
পর্নোগ্রাফি আর মাদক হাতের নাগালে হওয়ার কারণে যেমন অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে তেমনি সামাজিক অস্থিরতাও বাড়ছে। পুলিশের কর্তারাও বলছেন, ‘পর্নোগ্রাফি উৎসাহ দিচ্ছে ধ্বংসে, এটি আমাদের সমাজের জন্য অভিশাপ। শুধু শিক্ষার্থী নয় রিকশাচালকসহ বিভিন্ন শ্রমজীবীদের মোবাইলেও বিস্তার ঘটেছে এটি।’ টুইটারে প্রতিদিন কম করে হলেও ৫ লাখ পর্নো ছবির দেখা মিলছে বলে ডেইলি স্টারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়। পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সমাজ বিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী ও অভিভাবকরা।
রাজনৈতিক আগ্রাসনের চেয়ে সংস্কৃতির আগ্রাসন চরম মারাত্মক। রাজনৈতিক সংঘাত হলে দেখা যায় হইচই, ডামাডোল আর সাংস্কৃতিক আগ্রাসন কোন জাতিকে নিঃশেষ করে দেয় অতি গোপনে তিলে তিলে। সংস্কৃতিক আগ্রাসন হচ্ছে অ ারপঃড়ৎু রিঃযড়ঁঃ ধিৎ। এই অদৃশ্য যুদ্ধের সৈনিক হচ্ছে কিছু দেশী-বিদেশী ভাড়াটিয়া (পেইড এজেন্ট) সাংস্কৃতিক কর্মী, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী ও মিডিয়া। তারা এদেশের সকল সম্ভাবনা কুরে কুরে নষ্ট করতে চায়। আর আমাদের দেশের এনজিওরা এদেশের নারীদের শেখায়, ‘কিসের বর, কিসের ঘর। দেহ আমার, সিদ্ধান্ত আমার।’ গভীর রাত পর্যন্ত ছেলেমেয়েরা জম্পেশ আড্ডা দিয়ে রোমান্টিক আলোর মূর্ছনায় সেবন করছে মাদক। কিছু বিকৃত নব্যবিত্তবানদের জন্য উঁচু শ্রেণীর ক্লাবগুলো যেন নিরাপদ ও শান্তিতে অনাচার ও মদ্যপানের অভয়াশ্রম! আধিপত্যবাদের এই নগ্ন থাবা আমাদের সংস্কৃতি, সাহিত্য, জাতীয় আদর্শ ও জাতীয় ঐতিহ্য ও ঐক্যেও সবচেয়ে বড় বাধা।
আজকে তরুণ সমাজের যে অবক্ষয় তার অনেকাংশই এই যথেচ্ছা ইন্টারনেট ব্যবহারের কুফল। বিশ্বের অনেক দেশেই এর কুপ্রভাব থেকে বাঁচতে ১০/১২ বছর আগে থেকেই অশ্লীল, অসামাজিক ক্ষতিকর সাইট ব্লক করার ব্যবস্থা নিয়েছে। না চাইতেও স্ক্রিনে অশ্লীলতার লিঙ্ক চলে আসা বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু আমরা ঠিকই চলছি নিয়ন্ত্রণহীন গতিতে। আইটি প্রফেশনালদের অভিমত হলো কাজটি করতে হবে রাষ্ট্রের। বিটিআরসির নিজস্ব যে যন্ত্রপাতি আছে তা দিয়ে পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা সম্ভব হলেও তারা তা করছে না। বিটিআরসির দাবি, বিষয়টি আইনি সিদ্ধান্তের ব্যাপার। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, ওয়েবসাইট বন্ধ করার আইনগত ক্ষমতা বিটিআরসির যদি নাও থাকে সেই ক্ষমতাটা অর্জন করা তার কর্তব্য।
ইন্টারনেট যেমন জগৎটাকে আমাদের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে তেমনি তা আমাদের মূল্যবোধ, সংস্কৃতি, মেধা, আমাদের প্রজন্ম, ভবিষ্যৎ নষ্টের জন্য মহা হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের শিশু, কিশোর, পুত্র, কন্যারা ইন্টারনেট সার্ফিং ও ব্রাউজে চাইতে না চাইতেই স্ক্রিনে অশ্লীলতার লিঙ্ক চলে আসছে। এতে তার কোমলমতি মস্তিষ্ক বিকারগ্রস্ত হওয়াসহ অশ্লীল, নোংরা ও নষ্ট সংস্কৃতি তার স্বাভাবিক মূল্যবোধকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
মনোবিজ্ঞানীদের মতে, ইন্টারনেট ব্যবহারকারী তরুণদের মধ্যে মানসিক অস্থিরতা বাড়ছে। অশ্লীল বিষয়গুলো খোঁজা এবং সেগুলো পড়া ও দেখার বিষয়গুলোকে শুধু আইন করে বন্ধ করা যাবে না বলে মনে করছেন কম্পিউটার প্রকৌশলীরা। দুর্গন্ধের ভয়ে জানালা বন্ধ করা যাবে না। সুগন্ধ চিনতে পারার সাথে সুগন্ধ নেওয়াটাই প্রকৃত সচেতনতার কাজ। কিন্তু কথা হলো- যার সুগন্ধ বা দুর্গন্ধ চেনার বয়স হয়নি ভাবনা তো তাদের নিয়েই। এ জন্য দরকার সন্তানদের পারিবারিকভাবে কঠোর পর্যবেক্ষণ, ধর্মীয় অনুশাসন ও সামাজিক প্রতিরোধ। এক হাদিসে আছে, ‘কোনো বেগানা নারীর প্রতি দৃষ্টি দেওয়া চোখের যিনা, অশ্লীল কথা বলা জিহ্বার যিনা, স্পর্শ করা হাতের যিনা, ব্যভিচারের উদ্দেশ্যে হেঁটে যাওয়া পায়ের যিনা, খারাপ কথা শোনা কানের যিনা আর যিনার কল্পনা করা মনের যিনা’ (বুখারি)। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি যেনা করে কিংবা মদ পান করে, আল্লাহ তার কাছ থেকে ঈমান ছিনিয়ে নেন, যেভাবে কোন ব্যক্তি তার জামা মাথার উপর দিয়ে খুলে ফেলে’। এ হাদিসের মর্ম কথা হলো যেনা করার পরিণতি হলো ঈমানহারা হওয়া। এটা এমন একটা জঘন্য পাপ যে, মানুষ যখন তা করে আল্লাহ তা’আলা মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ ঈমানকেই নিয়ে নেন।
[email protected]



 

Show all comments
  • ১৫ জুলাই, ২০১৮, ৪:৪০ এএম says : 2
    ইন্টারনেট ব্যবহারে সুবিদা ও অসুবিধা
    Total Reply(0) Reply
  • আতিক ২৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১১:০৭ এএম says : 1
    অনেক ভালো লেগেছে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইন্টারনেটের খারাপ দিক
আরও পড়ুন