পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রিজন সেলে চিকিৎসারত বন্দি অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়াকে জবরদস্তি করেই কারাগারে নেয়া হয়েছে। গতকাল নাইকো দুর্নীতির মামলায় হাজির করার পর সেখানে থেকে হাসাপাতালে ফেরত না এনে তাকে কারগারেই নেয়া হয়। বিএসএমএমইউ পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল হারুন বলেছেন, ‘খালেদা জিয়ার শারিরীক অবস্থার উন্নতি হওয়ার পর এখন স্থিতিশীল রয়েছে।’ তবে হাইকোর্টের নির্দেশে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অনুমতি না নিয়েই কারাগারে নেয়া হয়। অনদিকে আদালতে ‘কাউকে ‘সেভ’ কাউকে ‘বলি’ দেয়া হচ্ছে অভিযোগ তুলে বেগম খালেদা জিয়া জানতে চান নাইকো দুর্নীতি মামলায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আদালতে হাজির করা হয়নি কেন? তিনি বলেন, ‘নাইকো দুর্নীতির ঘটনায় ওনার (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) নামে তো একটা মামলা হয়েছে। কাউকে সেভ করবেন আর কাউকে বলি দেবেন এটা ঠিক নয়। ন্যায়বিচারের জন্য শেখ হাসিনাকেও আদালতে হাজির করা হোক। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও নাইকো দুর্নীতি মামলায় আসামি ছিলেন। কাজেই তাঁকেও এখানে হাজির করা উচিত’।
এর আগে বকশিবাজার থেকে আদালত স্থানান্তর করে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের বিশেষ আদালতে নেয়া হয়। এতোদিন বকশীবাজারে কারা অধিদপ্তরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী এজলাসে বসে ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মাহমুদুল কবির নাইকো দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম চলছিল। গতকাল নাইকো দুর্নীতির মামলার শুনানি ছিল। শুনানি শেষে এই আদালতের ১৪ নভেম্বর এই মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন। মূলত: বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের বিশেষ আদালতে খালেদা জিয়াকে হুইল চেয়ারে করে হাজির করা হয়। ১১টা ৫০ মিনিটে শুরু হয় আদালতের কার্যক্রম। অফ-হোয়াইট শাড়ি পরা খালেদা জিয়াকে হুইল চেয়ারে করে আদালতে আনা হয়। এ সময় নিরাপত্তাকর্মীরা সহায়তা করেন। শুনানি শেষে খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে ফেরত না নিয়ে জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে মোশাররফ হোসেন কাজল।
আদালতে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর আইনজীবী তাঁর অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে শুনানি পেছানোর আবেদন করলেও তা মঞ্জুর করা হয়নি। শুনানির একপর্যায়ে খালেদা জিয়া আদালতের উদ্দেশ্যে বলেন, এই মামলায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও (শেখ হাসিনা) ছিলেন। কাউকে সেভ করবেন আর কাউকে বলি দেবেন এটা ঠিক নয়। ন্যায়বিচারের জন্য ওনাকে আদালতে হাজির করা হোক। আমি তো সরকারে থেকে শুধু আগের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছি। যদি তা না করতাম তাহলে এখন হয় তো বলা হতো কেন করলাম না। তাই আদালতে যদি আমি আসি, তাহলে শেখ হাসিনাকেও এখানে আনতে হবে। এ সময় আদালতের বিচারক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ মামলার পার্ট নন।
শুনানির একপর্যায়ে খালেদা জিয়া আদালতের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি অসুস্থ। বসে থাকতে পারছি না। পরে তার আইনজীবীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৪ই নভেম্বর পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন আদালত। পরবর্তী সময়ে মামলার আসামি ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে শুনানি শুরুর নির্দেশ দেয়া হয়। তখন তিনিও সময়ের আবেদন করেন। কিন্তু এর বিরোধিতা করেন দুদক আইনজীবী। এই পর্যায়ে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ তাঁর বক্তব্য শুরু করেন। তিনি মুলতবি প্রার্থনা করে বলেন, ‘আমার বয়স ৮১ বছর। আমি অসুস্থ। আমার যে জুনিয়র, তাঁর নানি মারা গেছেন। এই কারণে তিনি গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন। মামলার সব কাগজপত্র তাঁর কাছেই রয়েছে। ফলে দীর্ঘক্ষণ মামলা চালিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। একারণে আমি আজকে মামলার মুলতবি চাচ্ছি। পরে আদালত আগামী ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত মামলার শুনানি মুলতবি করেন।
মামলার শুনানির সময় আদালতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত ছিলেন। এ সময় আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বিএনপির চেয়ারপারসনের সঙ্গে দলের মহাসচিব আদালতের ভেতর আধা ঘণ্টা মামলার বিষয়ে কথা বলতে চান উল্লেখ করে সময় প্রার্থনা করেন। কিন্তু বিচারক এই আবেদন মঞ্জুর করেননি। তিনি বলেন, এই এখতিয়ার আমার নেই। আপনি প্রয়োজনে এ ব্যাপারে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন। তিনি এ ব্যাপারে আইনি ব্যাখ্যা দিতে পারবেন। এর পরই খালেদা জিয়াকে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, আমরা আশা করেছিলাম আজ মওদুদ আহমদ ও খালেদা জিয়ার বক্তব্য শেষ হবে। কিন্তু তাঁর অসুস্থতার কথা বলে সময় প্রার্থনা করেছেন। আদালত আগামী বুধবার তাঁদের বক্তব্য শুনবেন। সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, মামলাটি আলিয়া মাদরাসায় বসত। গত বুধবার সন্ধ্যায় হঠাৎ করে প্রজ্ঞাপন দিয়ে এখানে স্থানান্তর করা হয়েছে। সেটা আমার দরজায় লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। খালেদা জিয়া অসুস্থ উল্লেখ করে তিনি বলেন, গাড়ি থেকে নামাতে তাঁকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। উনাকে নামাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজনকে হিমশিম খেতে হয়েছে। আদালত স্থানান্তর: এতদিন বকশীবাজারে কারা অধিদপ্তরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী এজলাসে বসে ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মাহমুদুল কবির নাইকো দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন। এর মধ্যেই গত বুধবার এ মামলার কার্যক্রম স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়ে একটি আদেশ জারি করে আইন মন্ত্রণালয়।
হাসপাতাল থেকে কারাগার:
আদালতের এজলাস স্থানান্তরের আদেশ জারির পর খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল থেকে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শাহবাগে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল এবং নাজিমুদ্দিন রোডে কারাগার এলাকায় নেয়া হয় ব্যাপক নিরাপত্তা। বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে পুলিশের একটি কালো এসইউভি বঙ্গবন্ধু মেডিকেল থেকে খালেদা জিয়াকে নিয়ে পুরান ঢাকায় কারাগারের পথে রওনা হয়। ১৫ মিনিটের মাথায় গাড়িটি কারাভবনের মূল ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। আর খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত জিনিসপত্র সকালেই একটি গাড়িতে করে হাসপাতাল থেকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল হারুন সাংবাদিকদের বলেন, দীর্ঘ এক মাস চিকিৎসা শেষে উনি ১১টা ৩০ মিনিটে উনার নিজ আবাসস্থলে ফিরে গেছেন। উনার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল আছে এবং আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে চেষ্টা করেছি, উনাকে চিকিৎসা সহায়তা দেয়ার। কারা কর্তৃপক্ষ প্রয়োজন মনে করলে এবং সহায়তা চাইলে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের চিকিৎসক দল কারাগারে গিয়ে তাকে চিকিৎসা দিয়ে আসবে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ছাড়া এই মামলার অপর আসামিরা হলেন সাবেক মন্ত্রী মওদুদ আহমদ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, সাবেক সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব মোঃ শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া এবং নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ
এদিকে সুস্থ্য হওয়ার আগেই চিকিৎসকদের অনুমোদন ছাড়াই বেগম খালেদা জিয়াকে হাসপাতাল থেকে কারাগারে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান প্রফেসর ডা. জলিলুর রহমান চৌধুরী এই মুহূর্তে দেশের বাইরে। বোর্ডের আরেকজন সদস্য ডা. বদরুন্নেসা দেশের বাইরে। প্রফেসর ডা. সৈয়দ আতিকুল হক চৌধুরী, যার অধীনে বেগম খালেদা জিয়া ভর্তি, তিনি বুধবার বিদেশ থেকে ফিরেছেন। তার সাথে কোনো পরামর্শ না করেই উনার ডিপার্টমেন্টের অধীনে ভর্তি থাকা অবস্থায় কারো সাথে পরামর্শ না করেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং সুনির্দিষ্টভাবে সরকারের ইচ্ছায় কারা কর্তৃপক্ষ বেগম খালেদা জিয়াকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে গেছে। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, বোর্ডের চিকিৎসকদের ভাষ্য উনার ব্যথা আগের থেকে বেড়েছে। আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, উনার অবস্থা স্থিতিশীল। যেসব মেশিনারি দিয়ে উনাকে ফিজিওথেরাপি দেওয়া হত সেটা একটা সুপারভাইসড স্পেশালাইজড সেন্টারে দেওয়া হতো। তা কিভাবে কারাগারে দেওয়া হবে আমাদের বোধগম্য নয়।
যার অধীনে উনি ভর্তি ছিলেন- প্রফেসর ডা. সৈয়দ আতিকুল হক, উনার কোনো ছাড়পত্র লেখার সৌভাগ্য হয়নি এবং রোগীর কী রোগ হয়েছে সেটি লেখারও সৌভাগ্য হয়নি। বিএনপির এই নেতা বলেন, আমরা জানি হাসপাতালে রোগী ভর্তি হয়, ডিসচার্জ সাটিফিকেট লেখা হলে তারপরে রোগী যায়। এখানে পুরোটাই উল্টো। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।