Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সন্দেহের ভেতরেই ঘুরপাক তনু হত্যার তদন্ত

প্রকাশের সময় : ৩০ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : টিউশনি শেষ করে বাসায় ফেরার পথে খুন হয়েছিলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের স্নাতক দ্বিতীয়বর্ষের ছাত্রী ও ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের সদস্য সোহাগী জাহান তনু। খুনের পর পার হয়েছে ৪০ দিন। কিন্তু তনু কেন খুন হয়েছেন, কারা তনুকে খুন করলো? এমন প্রশ্নসহ তনু হত্যার তদন্ত সন্দেহের ভেতরেই ঘুরপাক খাচ্ছে। খুনি বা খুনিদের পরিচয় প্রকাশের কোন লক্ষণই তদন্তে উঠে আসছে না। অথচ তদন্তের স্বার্থে বিভিন্ন তথ্য যাচাই করতে তনুর পরিবারকে বারবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাহলে কী হত্যার বিষয়ে তনুর পরিবার এমন কিছু জানে যা আড়াল করে যাচ্ছে? না হয়, তাদেরকে বারবার মূল তদন্ত সংস্থা সিআইডিসহ অন্যান্য ছায়া তদন্ত সংস্থার মুখোমুখি হতে হচ্ছে কেন? আবার এক মাস ধরে কী কারণে আটকে আছে দ্বিতীয় ময়না তদন্তের প্রতিবেদন এমন প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে সব শ্রেণি-পেশা মানুষের মধ্যে।   
কলেজ ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যার ৪০ দিনেও জড়িত কাউকে চিহ্নিত বা আটক করা সম্ভব হয়নি। তবে কী তনু হত্যা মামলা সাংবাদিক দম্পত্তি সাগর-রুনির মতো হিমাগারে স্থান পাবে। নাকি মামলাটি ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে থাকবে বছরের পর বছর। তবে তনু হত্যার বিচারের দাবীতে আন্দোলনরত ছাত্র-শিক্ষক, মানবাধিকার সংগঠন, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিবাদী নারী সমাজের নেতৃবৃন্দ এখনো আশাবাদী একটি নিরাপরাধ অসহায় পরিবারের মেয়ের খুনের বিচার কুমিল্লার মাটিতেই হবে। পরিকল্পিত এ খুনের সঙ্গে জড়িতরা পেশাদার হোক আর যতই কৌশলী হোক সিআইডির মতো একটি শক্তিশালি ও বিচক্ষণ সংস্থা তাদের সর্বোচ্চ মেধা-চেষ্টা দিয়ে তনুর খুনিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনবেন এমন প্রত্যাশা তনুর পরিবারসহ সারা দেশবাসীর। গতকাল কুমিল্লার মুরাদনগরের মির্জাপুর গ্রামে তনুর চেহলাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় জামে মসজিদে জুমার নামাজ শেষে মিলাদ-দোয়া ও দুপুরে এতিমদের খাবার খাওয়ানো হয়।
কুমিল্লা সেনানিবাসের মতো একটি সুরক্ষিত স্থানে ওই এলাকার বেসামরিক বাসিন্দা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড কর্মচারি ইয়ার হোসেনের একমাত্র মেয়ে সোহাগী জাহান তনুকে হত্যা করে বাইরে থেকে লাশ এনে তাঁর বাড়ির দুইশ’ গজের মধ্যে ফেলে রাখবে এটা যেমন সাধারণ মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য নয়, তেমনি কুমিল্লা অঞ্চলের সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করীম খানও মনে করেন খুনিরা দক্ষ, পেশাদার এবং একাজে যথেষ্ট জ্ঞান রাখে। কিন্তু বাইরে থেকে লাশটি এখানে এনে ফেলে রাখা হয়নি। মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমে হত্যাকা-টি সংঘটিত করা হয়েছে। তনুর পরিবারকে বারবার জিজ্ঞাসাবাদ প্রসঙ্গে সিআইডির ব্যাখ্যা- তনুর পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার। তাদের কাছ থেকে অনেক তথ্য জানার আছে। আবার তদন্তের স্বার্থে প্রাপ্ত এবং অজানা বিভিন্ন তথ্য যাচাই করতে তনুর বাবা, মা, ভাইসহ পরিবারের সদস্যদের বারবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি তদন্তে সিআইডি অনেক দূর এগিয়েছে বলেও দাবী তদন্ত সহায়ক দলের। অন্যদিকে বারবার জিজ্ঞাসাবাদে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ছেন নিহত তনুর বাবা ইয়ার হোসেন। তার বক্তব্য- ‘ঘুরেফিরে একই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মনে হচ্ছে আমরাই মেয়েটাকে মেরে বাড়ির পাশে জঙ্গলে ফেলে এসেছি। একমাস পার হয়ে গেছে মেয়ের খুনিদের ধরা যাচ্ছে না। উল্টো আমাদেরকে পাহারা দেয়া হচ্ছে। আর কতো দিন গড়ালে তনুর খুনিদের চেহারা জাতির সামনে উঠে আসবে ?’  
এদিকে গত ৩০ মার্চ বুধবার সন্ধ্যায় তনুর লাশের পুন:ময়নাতদন্ত শেষে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সিআইডির ক্রাইম সিন টিম তনুর মাথার চুল, হাতের নখসহ কিছু অংশ নিয়ে যায়। এছাড়াও ডিএনএ টেস্টের জন্য তনুর শরীরের বিভিন্ন অংশ সংগ্রহ করা হয়। এরমধ্যে ১০ এপ্রিল চট্টগ্রামের ফরেনসিক ল্যাব থেকে তনুর ভিসেরা পরীক্ষার প্রতিবেদন ডাকযোগে কুমিল্লায় পাঠানো হয়। কিন্তু এক মাসেও তনুর লাশের দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দেয়া হচ্ছে না। তনুর লাশের দ্বিতীয় ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক দলের প্রধান ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কামদা প্রসাদ সাহা দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন কবে নাগাদ দেয়া হবে এবিষয়ে পরিষ্কার করে কিছুই বলতে চাচ্ছেন না। শুধু এতোটুকুই বলছেন, ডিএনএ রিপোর্ট এলেই ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেয়া সম্ভব হতে পারে। এদিকে সিআইডির তদন্ত সহায়কদল একাধিকবার তনুর লাশের ময়নাতদন্তকারি চিকিৎসকদের একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। তবে ময়নাতদন্তকারি চিকিৎসকের কাছ থেকে সিআইডি কোন দিকনির্দেশনা পায়নি। দিক-নির্দেশনা দিতে চিকিৎসকদেরও অনিহা রয়েছে বলে সিআইডির ধারণা। সবমিলে সন্দেহে ঘুরপাক খাচ্ছে তনু হত্যার তদন্ত। দেশের মানুষ আলোচিত তনু হত্যা মামলার প্রকৃত রহস্যের উদ্ঘাটন দেখতে চায়।
উল্লেখ্য, গত ২০ মার্চ রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু টিউশনি সেরে বাসায় ফেরার পথে কুমিল্লা সেনানিবাসের পাহাড় হাউজ আবাসিক এলাকায় খুন হন। ধারণা করা হয়, পাশবিক নির্যাতনের পর তনুকে দুর্বৃত্তরা হত্যা করে জঙ্গলে ফেলে রাখে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সন্দেহের ভেতরেই ঘুরপাক তনু হত্যার তদন্ত
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ