পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মো: শামসুল আলম খান : প্রায় এক যুগ পর ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। আজ শনিবার সকালে নগরীর ঐতিহাসিক সার্কিট হাউজ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে এ সম্মেলন। এ সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে কারা আসছেন এ নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই দলীয় নেতা-কর্মীদের।
এ সম্মেলনকে ঘিরে দলের ভেতরে-বাইরে চলছে নানা সমীকরণ। মাত্র চারটি পদের বিপরীতে রয়েছেন প্রায় এক ডজন পদ-প্রত্যাশী। প্রবীণ-নবীনের সমন্বয়ে জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের ভবিষ্যত নেতৃত্ব বাছাই করা হবে। আর এ সিদ্ধান্ত নেবেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর ঘোষণা করবেন সম্মেলনের প্রধান অতিথি আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক, জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
ফলে কারা নেতৃত্ব পাচ্ছেন কিংবা কারা ছিটকে পড়ছেন জটিল এ সমীকরণ মেলাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে দলের নেতা-কর্মীদের। একেক প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা নগরীতে নিজেদের প্রার্থীর অনুকূলে নানা রকম আওয়াজ দিচ্ছেন। গুঞ্জন ছড়াচ্ছেন। এজন্য ব্যবহার করছেন জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক।
একেক নেতার অনুসারীরা একেক নেতাকে নিজেদের পছন্দমতো পদে বসাতে দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রচারণা চালাচ্ছেন। আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছেন প্রার্থীরাও। ফলে শেষ পর্যন্ত এ দু’ কমিটিতে নেতৃত্ব পরিবর্তন হবে না কী নতুন নেতৃত্ব উঠে আসবে এমন হিসাব-নিকাশও চলছে অন্দরে-বাইরে।
দলীয় সূত্র জানায়, সাংগঠনিক ও ভোট রাজনীতিতে ময়মনসিংহ আ’লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত। লড়াই-সংগ্রাম আর আন্দোলনে ময়মনসিংহ আওয়ামীলীগের রয়েছে বীরত্ব গাঁথা ইতিহাস। কিন্তু হাল সময়ে গ্রুপিং-কোন্দলে নড়েবড়ে হয়ে উঠেছে দলটির সাংগঠনিক শক্তি। আর এর প্রভাব পড়েছে ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ অঙ্গ সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনেও।
জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি পদে প্রার্থী হিসেবে দু’ নেতার নাম উচ্চারিত হচ্ছে বেশি। তারা হলেন- জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও ধর্মমন্ত্রী প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান এবং জেলা আ’লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি, জেলা পরিষদ প্রশাসক এডভোকেট জহিরুল হক খোকা।
সূত্র মতে, প্রায় এক যুগ যাবত সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করছেন বর্তমান ধর্মমন্ত্রী প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান। প্রবীণ এ রাজনীতিকের বয়স নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও ত্যাগ-তিতিক্ষা আর অভিজ্ঞতার বিচারে দলের নেতা-কর্মীদের অনেকেই মনে করেন ৩০ এপ্রিলের সম্মেলনে তিনি পুনরায় এ পদে দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন।
আবার জেলা আওয়ামীলীগের আরেক পক্ষের নেতা-কর্মীরা চান এ পদে পরিবর্তনের। তাদের ভাষ্যে, দলীয় রাজনীতিতে গতি ফিরিয়ে আনতে বিকল্প কাউকে এ পদে দায়িত্ব দেয়া সময়ের দাবি। আর সেই কা-ারী হতে পারেন আরেক প্রবীণ নেতা এডভোকেট জহিরুল হক খোকা।
প্রায় ৫০ বছরের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতা রয়েছে এ নেতার। দেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের এ শিষ্য এগিয়ে রয়েছেন নেতৃত্ব দৌড়ে।
গত কমিটিতে দলটির সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মতিন সরকার। এবার তিনি আর এ পদে প্রার্থী হননি।
তবে সাধারণ সম্পাদক পদে নিজেদের প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাজিম উদ্দিন আহম্মেদ, বর্তমান কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল আলম, জেলা আ’লীগ সদস্য এডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, কেন্দ্রীয় আ’লীগের সহ-সম্পাদক শরীফ হাসান অনু, তরুণ দু’সংসদ সদস্য শরীফ আহমেদ ও আনোয়ারুল আবেদিন।
তবে দলীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদিন তুহিনের হঠাৎ প্রার্থী হওয়া নিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের মাঝে চলছে কানাঘুষা। কেউ কেউ বলছেন, মহল বিশেষের বিশেষ এসাইনমেন্ট বাস্তবায়ন করতেই এ সাংসদ ‘ডামি’ প্রার্থী হয়েছেন। নিজের নান্দাইল উপজেলা কমিটি এখনো বৈধতা না পেলেও জেলার দায়িত্বশীল পদে তার হঠাৎ প্রার্থী হওয়াকেও আবার গুরুত্ব দিচ্ছেন না কেউ কেউ।
মহানগর আওয়ামীলীগে তারুণ্য নির্ভর নেতৃত্ব উঠে আসতে পারে বলে আলোচনা জমে উঠেছে। তারুণ্যের পছন্দ হিসেবে দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝে ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র মো: ইকরামুল হক টিটু ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন।
দলীয় সমর্থন নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হবার পর ইকরামুল হক টিটু আধুনিক, দৃষ্টিনন্দন, জনবান্ধব শহর হিসেবে ময়মনসিংহ পৌরসভাকে গড়ে তুলেছেন। নগরীর তরুণদের কাছেও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তার। দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতেও সোচ্চার মেয়র টিটু। তাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে আওয়ামী রাজনীতির একটি বলয়।
তার সমর্থকরা তাকে সভাপতি প্রার্থী হিসেবেই ফেসবুকে ও প্যানাফ্ল্যাক্স প্রচারণা চালাচ্ছেন। জনপ্রত্যাশারও পুরোটা ভাগজুড়ে রয়েছেন মেয়র টিটু।
আরেক নেতা মোহিত উর রহমান শান্ত’র প্রতিও সমর্থন রয়েছে তরুণদের। দলের আন্দোলন-সংগ্রামেও ছিল তার বলিষ্ঠ ভূমিকা। মাঝখানে রাজনীতি থেকে খানিকটা দূরে থাকলেও অস্তিত্বের প্রশ্নে তিনি ফের সরব হয়ে উঠেন। তাকে নিয়ে তার বলয়ের তরুণদেরও আকাক্সক্ষার শেষ নেই।
এ তরুণ দু’ নেতার বাইরেও মহানগর আওয়ামীলীগের নেতৃত্ব পুনরায় পেতে চান শহর আওয়ামীলীগের সভাপতি প্রকৌশলী আনিমুল ইসলাম তারা ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান মিল্কী টজু। তারা দু’জনেই এবার মহানগর আ’লীগের সভাপতি পদে প্রার্থী হিসেবে প্রচার চালিয়েছেন।
সূত্র জানায়, দলের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় নেতাদের মতামতের ভিত্তিতেই জেলা ও মহানগর আ’লীগে নেতৃত্ব নির্ধারণ করবেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কাকে বাদ দিয়ে কাকে রাখা যেতে পারে এ প্রশ্নে মতামত দিতেও গলদঘর্ম হতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাদের। এখন নতুন কমিটি ও নেতৃত্বের প্রত্যাশায় দলটির নেতা-কর্মীরা। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরাও তাকিয়ে নতুন কমিটির দিকে।
সাড়ে ৬ ফুট উচ্চতার মঞ্চ :
জেলা প্রশাসনের ডাকবাংলোর ঠিক উল্টো দিকে ঐতিহাসিক সার্কিট হাউজ মাঠে সম্মেলনকে ঘিরে প্রস্তুত করা হচ্ছে বিশালাকৃতির মঞ্চ। প্রায় সাড়ে ৬ ফুট উচ্চতার এ মঞ্চ নির্মাণ কাজ চলছে দিন-রাত। মঞ্চ ও প্যান্ডেল প্রস্তুতে সপ্তাহখানেক যাবত বিরতিহীনভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন জনা বিশেক কারিগর।
প্রায় ৬০ ফুট লম্বা ও ৩০ ফুট প্রশস্ত এ মঞ্চের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এখন শুধু সাজসজ্জার পালা। পুরো বিষয়টি তদারকি করছেন সম্মেলন মঞ্চ উপ-কমিটির আহবায়ক ও জেলা আওয়ামীলীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত।
সংশিষ্ট সূত্র জানায়, আড়াইশ’ লোক ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন এ মঞ্চের পাশেই তাপদাহ থেকে স্বস্তি দিতে থাকবে এয়ার কুলার। প্রায় ৫২ হাজার বর্গফুট প্যান্ডেলে থাকবে আড়াই শ’ সিলিং ফ্যান। থাকবে ৪০ টি’র অধিক স্ট্যান্ড ফ্যান। প্যান্ডেলে থাকবে প্রায় ৭ হাজার চেয়ার। ভিআইপি অতিথিদের জন্য থাকবে আলাদা সোফার ব্যবস্থা। বিশাল মঞ্চ ও প্যান্ডেল বাবদ খরচা হচ্ছে প্রায় ১০ লাখ টাকা, জানান সংশ্লিষ্টরা।
প্যানা আর বিলবোর্ডের নগরী ময়মনসিংহ : প্রায় এক যুগ পর ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর আ’লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনকে ঘিরে সড়কদ্বীপগুলোতে আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে শুভেচ্ছা স্বাগতম জানানো প্যানাফ্লাক্স বা বিলবোর্ডের বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে। গোটা ময়মনসিংহ যেন হয়ে উঠেছে সম্মেলনের নগরী।
এসব বিলবোর্ড, তোরণ আর ডিজিটাল ব্যানারে বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবিও শোভা পাচ্ছে। জেলা ও মহানগর আ’লীগের পদ-প্রত্যাশী নেতারা ও তাদের অনুসারীরা এসব ‘ডিজিটাল’ প্রচারণা চালিয়েছেন।
পানি খাওয়াবে পৌরসভা : তীব্র তাপদাহের সময় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এ সম্মেলন। এখানে আগত দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের তৃষ্ণা নিবারণের কথা চিন্তা করে খাওয়ার পানির ব্যবস্থা করেছেন ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র ও জেলা আ’লীগ সদস্য মো: ইকরামুল হক টিটু।
মেয়র জানান, সম্মেলনস্থলের কাছে আবুল মনসুর সড়কের পাশে শুক্রবার থেকে প্রায় অর্ধ শতাধিক ট্যাপকল বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। এ ট্যাপকল থেকে পানি পান করতে থাকবে কয়েক হাজার ওয়ান টাইম গ্লাস।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।