Inqilab Logo

বুধবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১, ২১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

তমা কনস্ট্রাকশনের ডিজিটাল জালিয়াতি

১৩১ কোটি ৬১ লাখ টাকার কাজ বাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ৫ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘তমা কনস্ট্রাকশনের’ বিরুদ্ধে দরপত্র মূল্যায়ন নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আর্থ এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অনুষদের’ ২১ তলাবিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণের কাজ বাগিয়ে নিতে দুই ধরণের তথ্য ও মূল্য দিয়ে দুটি দরপত্র দাখিল করেছে যা নিয়ম বহির্ভূত। যদিও প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে বিষয়টি প্রিন্টিংয়ের ভুল। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সহায়তায় ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমে কাজ বাগিয়ে নেওয়ার একাধিক অভিযোগও রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। এভাবে দীর্ঘ দশ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
সূত্র জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আর্থ এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের’ ২১ তলাবিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণের জন্য প্রধান প্রকৌশলীর অফিস হতে দরপত্র আহ্বান করা হয়। যার প্রাক্কলিত মূল্য ১৩১ কোটি ৬১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। সে আহ্বানে সাড়া দিয়ে চারটি ভবন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জিকেবি এন্ড কোম্পানি লিমিটেড, তমা কনস্ট্রাকশন প্রাইভেট কোম্পানি লিমিটেড, স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ারিং এইচডি (জেভি) আরপি কনস্ট্রাকশন প্রাইভেট লিমিটেড, দ্যা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড টেন্ডারে অংশ নেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ই-টেন্ডারিং পদ্ধতিতে অনলাইনের মাধ্যমে গত ১০ অক্টোবর অংশ নেয় প্রতিষ্ঠানগুলো।
টেন্ডারে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ‘তমা কনস্ট্রাকশন’ এর বিরুদ্ধে ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমে কাজ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটি দুই ধরণের তথ্য ও মূল্য দিয়ে দুটি দরপত্র দাখিল করেছে যা নিয়ম বহির্ভূত। কৌশলে একই ধরণের ভিন্ন ভিন্ন দরে দুটি পাতা সংযুক্ত করে দরপত্র দাখিল করা হয়েছে যাতে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান কাজ না পায়। যে কারণে তমা কনস্ট্রাকশন একই সঙ্গে সর্বনিম্ন ও তৃতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে বিবেচিত হয়। এক্ষেত্রে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে তমা কনস্ট্রাকশন কাজটি পায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি গত দশ বছর ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমে বিশ^বিদ্যালয়ের সকল বড় বড় কাজ বাগিয়ে নিয়েছে। আর কাজ পাওয়ার পেছনে বিশ^বিদ্যালয়ের কিছু অসাধু শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীও জড়িত রয়েছেন বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, গত ২৪ অক্টোবর দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানির জালিয়াতির বিষয়টি উত্থাপিত হলে দায়সারাভাবে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। নিয়ম অনুযায়ী এরকম জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া গেলে উক্ত কনস্ট্রাকশন কোম্পানীকে কালো তালিকাভুক্ত করার কথা। এর আগে অন্যান্য কাজে এ রকম জালিয়াতির জন্য বিভিন্ন কনস্ট্রাকশন কোম্পানীকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। কিন্তু তমা কনস্ট্রাকশনের ক্ষেত্রে এটি না করে শুধু কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। একই সঙ্গে দরপত্র প্রক্রিয়াটি বাতিল করে পিপিআর- ২০০৮ এর বিধান অনুযায়ী দ্রুত সময়ের মধ্যে আবার দরপত্র চাওয়া হয়।
এতে তমা কনস্ট্রাকশন প্রভাব খাটিয়ে পুনরায় দরপত্র দাখিল করে বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন। এমতাবস্থায় উচ্চতর তদন্ত কমিটি গঠন, পুনঃদরপত্র মূল্যায়ন এবং জালিয়াত প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন অন্যান্য কনস্ট্রাকশন কোম্পানিগুলো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) এ কে এম আফজালুল হক বলেন, তমাকে এখনও কাজ দেওয়া হয়নি। এর জন্য রি-টেন্ডার করা হয়েছে। একই সঙ্গে এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তমা কনস্ট্রাকশনকে কারণ দর্শানের নোটিশ (শোকজ) দেয়া হয়েছে। সাতদিনের মধ্যে এর জবাব দিতে বলা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তবে এর আগেও তমা কনস্ট্রাকশনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেলেও নেয়া হয়নি কার্যকর কোনো ব্যবস্থা। এর মধ্যে শেখ কামাল টাওয়ার নির্মাণে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরবরাহকৃত বিওকিউ (একটা বিল্ডিং এ কতটুকু রড, সিমেন্ট ইট ইত্যাদি লাগবে তার পরিমান) এডিট করে (৩৫ হাজার কেজি রডের জায়গায় তারা ১০ হাজার কেজি রড লেখে)। যেটি কোনো ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কোনোভাবেই করতে পারে না।
এদিকে, শেখ রাসেল টাওয়ারের নোটিশে তারা অভিজ্ঞতার জায়গায় শুধুমাত্র প্রাইম কন্ট্রাকটর লিখেছে। অথচ অনান্য টেন্ডারে এবং পিপিআর বইয়ে প্রাইম/সাব/ম্যানেজমেন্ট কন্ট্রাকটর লেখা থাকে। এটায় অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছে ‘সিমিলার ন্যাচারাল ওয়ার্ক’ অর্থ্যাৎ বেসমেন্টসহ দশ তলা বিল্ডিং। কিন্তু তমা কোম্পানি অভিজ্ঞাতা হিসেবে জমা দেয় বিজয় একাত্তর হল। কিন্তু বিজয় একাত্তর হলের কোন বেসমেন্ট নেই। এছাড়া বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের সম্প্রসারন কাজ তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানিকে দিতে রি-টেন্ডার করা হয়। কারন প্রথম নোটিশে তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি দরপত্র জমা দেয়নি। এ কারনে রি-টেন্ডার করে দ্বিতীয়বার করে তাদের কাজ দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) এ কে এম আফজালুল হককে অবহিত করা হলে তিনি বলেন, অন্যান্য ক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের সম্প্রসারণের কাজের রি-টেন্ডারের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দীনকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তমা কনস্ট্রাকশনের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক ইনকিলাবকে বলেন, ‘রেট কোড করতে গিয়ে টোটাল ক্যালকুলেশনে প্রিন্টিং মিসটেক হয়েছে। এটা সব টেন্ডারেই হয়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান ইনকিলাবকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি অবগত নয়। তবে দরপত্র মূল্যায়নে পৃথক কমিটি রয়েছে। অনিয়ম হলে নির্ধারিত কমিটি বিষয়টি দেখবে।’ #



 

Show all comments
  • MD. FAISAL RAHMAN ১৮ অক্টোবর, ২০২১, ১:৫২ পিএম says : 0
    আমি ইলেকক্টিসীয়ান এর চাকরি করতে চায়
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডিজিটাল জালিয়াতি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ