পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : ভারত থেকে আনা ব্রডগেজের লাল সবুজ কোচগুলোর ত্রুটি বিচ্যুতি মেরামতের কাজ চলছে। সৈয়দপুর রেলওয়ে ওয়ার্কশপে এসব ত্রুটি মেরামতের কাজে ব্যস্ত ভারতীয় প্রকৌশলী ও টেকনিশিয়ানরা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, লাইভ ট্রায়ালের পর ১৩টি কোচে যেভাবে ত্রুটি ধরা পড়েছে তাতে রেলওয়ে কর্মকর্তাদের অনেকেই বিরক্ত। কেউ মুখ খুলেছেন, কেউ সব জেনে চুপ করে আছেন। তবে যেভাবেই হোক ত্রুটি বিচ্যুতিগুলো মেরামতের জন্য রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা চাপ সৃষ্টি করে রেখেছেন। এরই মধ্যে সৈয়দপুর রেলওয়ে ওয়ার্কশপ ম্যানেজার (ডব্লিউএম) প্রকৌশলী কুদরত-এ খোদাকে রাজশাহীতে বদলি করা হয়েছে। অনেকের মতে, ভারত থেকে আনা কোচগুলোর যখন লাইভ ট্রায়াল চলছে ও লোড ট্রায়ালের অপেক্ষায় ঠিক সেই মুহূর্তে ওয়ার্কশপ ম্যানেজারকে বদলি করা রহস্যজনক। কেউ কেউ এর নেপথ্যে কারণ খুঁজছেন। একটি সূত্র জানায়, ভারতের পাঞ্জাবের কাপুরথালা কোচ ফ্যাক্টরীতে কোচগুলো তৈরীর আগে রেলওয়ের একটি বিশেষ টিমকে ভারতে পাঠানো হয়েছিল। তারা প্রায় তিন মাস ভারতে অবস্থান করেন। ওই টিমে সৈয়দপুর রেলওয়ে ওয়ার্কশপ ম্যানেজার কুদরত-এ খোদাও ছিলেন। কোচগুলো মানসম্মতভাবে তৈরী করা হচ্ছে কি না এবং এগুলোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্যই ১০ জনের বেশি সদদ্যের ওই টিমকে ভারতে পাঠানো হয়। অভিযোগ রয়েছে, টিমের সদস্যরা তিন মাস ধরে ভারতের বিখ্যাত স্থানগুলোতে ঘুরে বেড়িয়েছেন। তাদেরকে পাঞ্জাবের কাপুলথালা রেল কোচ ফ্যাক্টরীতে অবস্থান করার সুযোগই দেয়া হয় নি। সেখানকার একদল স্বেচ্ছাসেবক বাংলাদেশের টিমকে বিখ্যাত ও দর্শনীয় স্থানে ঘুরাঘুরিতে ব্যস্ত রেখেছিল। ভারতীয়দের আতিথিয়তায় মুগ্ধ টিমের সদস্যরা নিজেদের দায়িত্ব অনেকটা ভুলেই সারা ভারত চষে বেড়িয়েছেন। কোচগুলো মান সম্পন্ন না হওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে ওয়ার্কশপ ম্যানেজারকে বদলি করা হতে পারে। অনেকের মতে, এ বিষয়টি তদন্ত করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে। রেলের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যাদেরকে কোচগুলো পর্যবেক্ষণের জন্য পাঠানো হয়েছিল তারা কিভাবে আগ্রা, মুম্বাই, শিমলাসহ ভারতের বিখ্যাত ও দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরলো সে বিষয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। জানা গেছে, সে সময় ভারতে অবস্থানকারী টিমের সদস্যরা ফেসবুকে ছবি পাঠিয়ে তাদের দেখা দর্শনীয় স্থানগুলোর বর্ণনা তুলে ধরে রেল ফ্যানদের কাছে। এজন্য বিষয়টা গোপনীয় ছিল না। পক্ষান্তরে ইন্দোনেশিয়ায় অবস্থানরত টিমের সদস্যরা সে দেশের কয়েকটি স্থানে ঘুরলেও ১৫টি কোচ যখন জাহাজে তোলা হয় তখন টিমের সদস্যদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এমনকি টিমের সদস্যরা ইন্দোনেশিয়াতে যে ট্রেনিং করছেন তারও ছবি ফেসবুকে আছে। অনেকের মতে, এসব কারণেই ইন্দোনেশিয়ার কোচগুলো মান অনেক ভালো। ইচ্ছা করলেও টিমের সদস্যদের তৎপরতার কারণে কোচগুলোতে নিম্নমানের উপকরণ যুক্ত করার সুযোগ হয়নি। যা ভারতের কোচগুলোর ক্ষেত্রে সম্ভব হলেও হতে পারে।
গত ২০ এপ্রিল ৪০টি বিজি কোচের মাত্র ১৩টি নিয়ে লাইভ ট্রায়ালের আয়োজন করা হয়। ওইদিন সকালে সৈয়দপুর রেল কারখানা থেকে ১৩টি কোচের একটি বিশেষ ট্রেন সিরাজগঞ্জের জামতৈল স্টেশন পর্যন্ত এসে আবার সৈয়দপুরে ফিরে যায়। ৫২২ কিলোমিটার লাইভ ট্রায়ালের নেতৃত্ব দেন রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের অতিরিক্তি প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী ফকির মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। সূত্র জানায়, লাইভ ট্রায়ালের পর কোচগুলোর লোড ট্রায়াল করতে হবে। বড় ধরণের কোন ত্রুটি বিচ্যুতি ধরা পড়বে লোড ট্রায়ালে। কারণ খালি কোচে অনেক কিছুই বোঝা যায় না। লোড ট্রায়ালের সময় কোচপ্রতি যাত্রীর সংখ্যা হিসাব করে সে পরিমাণ ওজনের পাথর বা বালুর বস্তা কোচগুলোতে দেয়া হবে। যেমন একটি শোভন চেয়ার কোচে মোট আসন সংখ্যা ১০৫। প্রতিটি যাত্রীর ওজন ৭০ কেজি ধরে এবং তার সাথে আরও ২০ কেজি মালামালের হিসাবে আসন প্রতি ৯০ কেজি লোড ধরে সমপরিমাণ ওজনের পাথর বা বালুর বস্তা শোভন চেয়ার কোচে দেয়া হবে। এরপর সেটা লোড ট্রায়ালে রান করবে। এ সময় কোচের স্প্রিংগুলোর অবস্থাসহ চলার সময় কোচগুলোতে কোনো শব্দ হয় কি-না, এগুলো দোলে কি না- সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে। কোনো প্রকার ত্রুটি পাওয়া গেলে সেগুলো ভারতীয় প্রকৌশলীরাই তাদের দায়িত্বে মেরামত করে দিবেন।
এদিকে, বাকী ২৭টি কোচের লাইভ ট্রায়াল কবে হবে সে সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি। ১৩টি কোচের লাইভ ট্রায়ালের পর সেগুলোর মেরামতের কাজই শেষ হয়নি। সূত্র জানায়, গত কয়েকদিন ধরে সৈয়দপুর ওয়ার্কশপে লাইভ ট্রায়ালের কোচগুলোর ইলেকট্রিক ওয়ারিংয়ের কাজ চলছে। জেনারেটর চালু করে কোচের নীচ দিয়ে চলমান বৈদ্যুতিক কেবলগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন ভারতীয় প্রকৌশলীরা। পেস্টিং করা ওয়ারিংগুলোকেও বিকল্প ব্যবস্থায় প্রতিস্থাপণ করা হচ্ছে।
পাঞ্জাবের কাপুরথালা ফ্যাক্টরী থেকে আরও ২০টি কোচ মে মাসের প্রথম সপ্তাহে আসতে পারে বলে রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা জানান। তিনি বলেন, একটা কোচ তৈরীতে খুব বেশি দিন লাগে না। কাপুলথালা কোচ ফ্যাক্টরীতে ৮ হাজার কর্মচারী কাজ করে। তারা প্রতিদিন গড়ে ৫/৬টি কোচ তৈরী করে। সে হিসাবে তারা বাংলাদেশের জন্য ২০টি কোচ যে কোনো সপ্তাহে তৈরী করে দিতে পারে।
উল্লেখ্য, ভারত থেকে আমদানি করা ব্রডগেজের জন্য ৪০টি লাল সবুজ কোচের মধ্যে ২০টি আসে গত ২০ মার্চ। বাকী ২০টি আসে ৪ এপ্রিল। সৈয়দপুর রেলওয়ে ওয়ার্কশপে কোচগুলো প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বেশ কিছু সমস্যা ধরা পড়ে। প্রথমত কোচগুলো লাল সবুজ রঙ এবং রঙের ফিনিশিং নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। শুরুতে কোচগুলোকে স্টেইনলেস স্টীল বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে কোচগুলো স্টেইনলেস স্টীলের নয়। এছাড়া কোচগুলোর ইলেকট্রিক ওয়্যারিং, ফ্যানহীন এসি মেশিন ও ফ্রিজের ভিতরের কিছু যন্ত্রাংশ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বাংলাদেশের প্রকৌশলীরা। নতুন কোচগুলো নিয়ে ট্রেনের গতিবেগ ৯৫ থেকে বাড়িয়ে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার করা হয়। কিন্তু গত ২০ এপ্রিল প্রথম লাইভ ট্রায়ালে ট্রেনের গতিবেগ ১০৫ এর বেশি করা যায়নি। এসব নিয়ে দৈনিক ইনকিলাবে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর তোলপাড় শুরু হয়। রেলওয়ের ফেসবুকে চলে সমালোচনার ঝড়। অবশ্য এক পর্যায়ে রেলওয়ের ফেসবুক পেজ থেকে ইনকিলাবের সংবাদটি মুছে ফেলা হয়। রেলওয়ের ফেসবুকের কয়েকটি কমেন্ট এখানে তুলে ধরা হলো: জাকুয়ান খান নামে একজন ভারত থেকে আনা কোচগুলোর ত্রুটি সম্পর্কে লিখেছেন, “কিউসিতে যারা কাজ করে ডেলিভারির আগে ভালো করে পরীক্ষা করে তারপর আনার দরকার ছিল।” নুরুল আলম নামে একজন লিখেছেন, “ভারত কখনও আমাদের ভালো চাইবে না।” শেখ দীন মোহাম্মদ লিখেছেন, “কোচগুলো তৈরীর সময় আমাদের দেশের ইঞ্জিনিয়ার সেখানে রাখেননি কেন?”
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।