Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী চিন্তা-চেতনা বিরোধী শিক্ষা ব্যবস্থা রুখে দেয়া হবে

মানববন্ধন ও মতবিনিময়ে নেতৃবৃন্দ

প্রকাশের সময় : ৩০ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : ধর্মহীন শিক্ষানীতি হিন্দুত্ববাদের পাঠ্যসূচি এবং সেক্যুলার শিক্ষা আইন বাতিলের দাবিতে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ঢাকা মহানগর ও ইসলামী ঐক্য আন্দোলন গতকাল সকালে পৃথক পৃথক মানববন্ধন করেছে। হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগর মতবিনিময় সভা করেছে। এসব কর্মসূচিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ইসলামী চিন্তা চেতনা বিরোধী শিক্ষা ব্যবস্থা রুখে দেয়া হবে।
খেলাফত আন্দোলন
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, বাংলাদেশের শতকরা পচানব্বই ভাগ মানুষ মুসলমান। তাই ইসলামকে বাদ দিয়ে এদেশে কোনো শিক্ষা ব্যবস্থা হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রীর পিতা ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছেন বলে সন্দেহ প্রকাশ করে মাও. জাফরুল্লাহ খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজেকে মুসলমান দাবি করে নাস্তিক্যবাদীদের পরামর্শে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের চিন্তা-চেতনা, আশা-আকাক্সক্ষার বিপরীতে প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন ২০১৬ পাস করেন তাহলে তার মুসলিম হওয়ার দাবি, নামাজ, তাহাজ্জুদ ইত্যাদি লৌকিকতা বলেই গণ্য হবে। সরকার যদি তা করে তাহলে তা হবে সরকারের জন্য নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারার শামিল। জনগণ এই নাস্তিক্যবাদি শিক্ষা ব্যবস্থাকে কোনোভাবেই মেনে নিবে না।
গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শিক্ষা নীতি-২০১০ এবং তার আলোকে প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন-২০১৬ বাতিলের দাবিতে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ঢাকা মহানগর আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন। খেলাফত আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন খেলাফত আন্দোলন ঢাকা মহানগরীর উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল হান্নান আল-হাদী, খেলাফত আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি ফখরুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর সাধারণ সম্পাদক হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, সাংঠনিক সম্পাদক মাওলানা মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী বলেন, সরকার শিক্ষা নীতি-২০১০ এর আলোকে প্রণীত সিলেবাসের মাধ্যমে একটি নাস্তিক্যবাদী ও বিজাতীয় সংস্কৃতির প্রতি অনুরাগী প্রজন্ম তৈরির ষড়যন্ত্র তো করছেই উপরন্তু, এই বিতর্কিত শিক্ষা নীতিকে আইনে রূপান্তরের মাধ্যমে বিকল্প শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রাখার পথও বন্ধ করে দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। তিনি অবিলম্বে শিক্ষা নীতি, পাঠ্যসূচি এবং শিক্ষা আইন বাতিলের দাবি করেন। অন্যথ্যায় যেকোনো মূল্যে দেশের ইসলামী জনতা তা বাতিলে বাধ্য করবে।
আল্লামা নূর হোছাইন কাসেমী
মুসলিম দেশপ্রেমিক জনতা মিছিল মিটিং মানববন্ধসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষা নীতি এবং ধর্মবেদ্বিষী শিক্ষা আইন-২০১৬ এর ভয়ানক ক্ষতিকর বিষয়াদীসহ মুসলিম শিক্ষা সংস্কৃতি বিধ্বংশী ন্যক্কারজনক চক্রান্তসমূহের বিস্তারিত দিকগুলো শিক্ষা-বিষয়ক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ মিডিয়ার মাধ্যমে জাতির সামনে তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু এ যাবৎ শিক্ষা মন্ত্রণালয় তথা সরকারের পক্ষ থেকে দেশের লক্ষ লক্ষ মুসলিম শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ব্রাহ্মণ্যবাদী আগ্রাসন থেকে রক্ষার কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। আমরা পরিষ্কার বলে দিতে চাই, অনিতিবিলম্বে পাঠ্যপুস্তক থেকে বিজাতীয় শিক্ষা-সংস্কৃতি বাদ দিয়ে ইসলামী ভাবধারার কবিতা ও রচনাবলি সংযোজন না করলে এবং শিক্ষা নীতি-২০১০ ও শিক্ষা আইন-২০১৬ অবিলম্বে বাতিল না করা হলে আমরা দেশের সকল স্কুল কলেজ, মাদরাসাসহ সকল পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও লক্ষ লক্ষ অভিভাবকদের নিয়ে রাজপথে নেমে আসতে বাধ্য হবো। কঠিন কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামতে বাধ্য হবো। গতকাল বারিধারা অস্থায়ী কার্যালয়ে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন জোনের নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময়কালে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরীর আহ্বায়ক আল্লামা নূর হোছাইন কাসেমী  একথা বলেন। তিনি আরো বলেন, মুসলিম ঐতিহ্য ধ্বংসকারী শিক্ষা নীতি ও শিক্ষা আইন ও  পাঠ্যপুস্তকে বিভ্রান্তিকর জালিয়াতি বিষয়ে সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে গণসংযোগের কাজ চলছে। পরামর্শক্রমে বৃহৎ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। মতবিনিময় সভায় যাঁরা উপস্থিত ছিলেন তারা হলেন- মহানগর যুগ্ম আহ্বায়ক মাও. আবুল  কালাম, মাও. মোস্তফা আজাদ, মাও. অধ্যাপক আব্দুল করীম, মাও. আবু জাফর কাসেমী, মাও. ফজলুল করীম কাসেমী, মাও. মুজিবুর রহমান হামিদী, মাও. বাহাউদ্দিন যাকারিয়া, মাও. নাজমুল হাসান, মুফতি ফখরুল ইসলাম, মাও. ফয়সাল আহমদ ও মাও. শরীফুল্লাহ প্রমুখ।
ইসলামী ঐক্য আন্দোলন
ধর্মহীন জাতীয় শিক্ষা নীতি প্রবর্তনের প্রতিবাদে ইসলামী ঐক্য আন্দোলন ঢাকা মহানগরীর মানববন্ধনে শিক্ষা আইন-২০১৬ এ ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধর্মহীন করে গড়ে তোলার গভীর চক্রান্ত করা হয়েছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, স্কুলের দশম শ্রেণীর পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের ধর্মীয় শিক্ষা বাদ দেওয়া হলে গোটা জাতির ধর্মীয় চিন্তা-চেতনার বিরুদ্ধে গভীর চক্রান্ত হিসেবে প্রতীয়মান হবে এবং এ ধরনের যেকোনো চক্রান্তের বিরুদ্ধে কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তেলার শপশ গ্রহণ করা হবে। তারা বলেন, ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের হাতে যে পাঠ্যপুস্তক তুলে দেওয়া হয়েছে তাতে মুসলমানদের হিন্দুত্ববাদ পড়তে বাধ্য করা হয়েছে। বিভিন্ন শ্রেণীর বাংলা বইয়ে যেসব লেখকদের গল্প কবিতা প্রধান্য পেয়েছে তাদের অধিকাংশই হিন্দু ও মুসলিম নামধারী স্বঘোষিত নাস্তিক। ইসলামী চেতনা সম্পন্ন প্রবন্ধ, গল্প ও কবিতা বাদ দিয়ে সেখানে দেওয়া হয়েছে হিন্দুত্ববাদ ও নাস্তিক্যবাদী গল্প-কবিতা। মাদরাসার সিলেবাসেও একইভাবে নাস্তিকতা ঢোকানোর ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করা হয়েছে। তারা বাংলাদেশকে ইসলামশূন্য করার দেশি ও বিদেশি চক্রান্ত রুখে দেওয়ার জন্য দল-মত-নির্বিশেষে সকল ইসলামপন্থী জনতাকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান।
গতকাল সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংগঠনের মহানগর আমির মোস্তফা বশীরুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথি ছিলেন আন্দোলনের আমির ড. মাওলানা মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী, বিশেষ অতিথি ছিলেন আন্দোলনের নায়েবে আমির প্রিন্সিপাল শওকাত হোসেন ও মাওলানা মুহাম্মদ রুহুল আমীন, জয়েন্ট সেক্রেটারি মোস্তফা তারেকুল হাসান, মহানগরী নায়েবে আমির মাওলানা ফারুক আহমদ, মাওলানা মাহফুজুর রহমান, মহানগরী সাধারণ সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হুসাইন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবুবকর সিদ্দিক, মাওলানা মহিবুল্লাহ ভূঞা প্রমুখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলামী চিন্তা-চেতনা বিরোধী শিক্ষা ব্যবস্থা রুখে দেয়া হবে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ