পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, রাজধানীর কলাবাগানে জোড়া খুনের ঘটনায় প্রকৃত খুনীদের আড়াল করতে সরকার উদ্দেশ্যমূলক বিএনপিকে দোষারোপ করছে। গতকাল নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
রিজভী বলেন, সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনার প্রটোকল কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান এবং তার বন্ধু মাহবুব তনয়কে নির্মমভাবে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় সরকারের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে দায়িত্বশীল মন্ত্রীরা পর্যন্ত আঁততায়ীদের গ্রেফতারের মাধ্যমে বিচারের আওতায় না এনে উল্টো তাদেরকে আড়াল করার জন্য এই ঘটনায় উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিএনপিকে দোষারোপ করছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জঙ্গীবাদের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ‘১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগ আমলেই যশোরে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর অনুষ্ঠানে প্রথম বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। সেই বোমা হামলায় প্রকৃত দোষীকে না খুঁজে তৎকালীন সরকার বিএনপির শীর্ষ নেতা তরিকুল ইসলামকে প্রধান আসামি এবং স্থানীয় বিএনপি নেতাদের আসামি করে মামলা করে। একইভাবে গোপালগঞ্জে গির্জায় বোমা হামলা এবং নারায়ণগঞ্জে বোমা হামলার সাথে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করতেও তারা বিএনপির নেতাদের আসামি করে। পরবর্তীতে পুলিশি তদন্তে প্রমাণিত হয় যে, উক্ত জঙ্গী হামলাসহ রমনা বটমূল, সিলেট এবং আরও অনেক জঙ্গী হামলায় জড়িত ছিল ‘হরকাতুল জিহাদ’ নামে একটি জঙ্গী সংগঠন, যার জন্ম ১৯৯৬ সালে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর। হরকাতুল জিহাদের প্রধান মুফতী হান্নানকে গোপালগঞ্জ বিসিক শিল্প এলাকায় একটি কেমিক্যাল কারখানা স্থাপনের জন্য জমি প্রদান করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার বলে জানা যায়। সেই কারখানাতেই মুফতী হান্নান বোমা তৈরি করতো। এই মুফতী হান্নানকে গ্রেফতার করে বিচারের সম্মুখীন করেছিল বিগত বিএনপি সরকার, যোগ করেন তিনি।
রিজভী বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়েও দুই বিদেশি নাগরিক তাভেল্লা সিজার এবং হোসি কুনিও হত্যা মামলায় বর্তমান সরকার প্রকৃত জঙ্গীদের আড়াল করার জন্য দুইজন নিবেদিতপ্রাণ জনপ্রিয় বিএনপি নেতাকে আসামি করে মামলা দায়ের করে। যদিও এই হত্যাগুলোর দায় স্বীকার করেছে দুইটি জঙ্গী সংগঠন। সরকার মূল জঙ্গীদের আড়াল করার জন্যই বিএনপি নেতাদের ওপর বারবার এইসব জঙ্গী হামলার দায় চাপিয়ে যাচ্ছে। অথচ আলোচিত এসব হত্যাকা-ের ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কোনো ক্লু বের করতে পারেনি সরকার।’
বিএনপি কখনোই হত্যা-সন্ত্রাস-খুনের রাজনীতি করে না দাবি করে বিএনপির এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা এবং বর্তমান মন্ত্রীর আত্মীয়ের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত জেএমবিকে বিএনপি আমলেই নির্মূল করা হয়েছিল। বিএনপির জঙ্গীবিরোধী কঠোর অবস্থানের কারণেই সেই সংগঠনের শীর্ষ নেতা এবং বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতার আত্মীয় শায়খ আব্দুর রহমানসহ সকল জঙ্গীকে ধরে বিচারের মাধ্যমে মৃত্যুদ- নিশ্চিত করে বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের মেরুদ- ভেঙ্গে দেয়া হয়েছিল।
রিজভী বলেন, ‘বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি আমলে গ্রেফতারকৃত জঙ্গীরা বিভিন্নভাবে জেল থেকে পালিয়ে যায়, এতে কারা সহায়তা করেছে -তা জনগণের অগোচরে নেই। সরকার এদের জামিনে মুক্ত করে দিয়েছে এবং বিএনপি আমলে হরকাতুল জিহাদ ও জেএমবি’র জঙ্গীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ১৫৬টি মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ত্রিশালে জঙ্গী ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এই জঙ্গী ছিনতাইয়ের ঘটনার নেতৃত্বে ছিল ফারুক ও জাকারিয়া নামে দুই জঙ্গী। ফারুক জেএমবি’র বর্তমান আমির। ফারুক ও জাকারিয়া দুই জনই গ্রেফতার হয়েছিল বিগত বিএনপি সরকারের আমলে। কিন্তু তারা কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছে ২০১২ সালে। অর্থাৎ বর্তমান সরকার আমলে তারা ছাড়া পায়। এক কথায় বলা যায়, জঙ্গীদের ধরেছে বিএনপি সরকার, আর ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। ফারুক এবং জাকারিয়ার মতো আরও কত জঙ্গীকে বর্তমান সরকার কারামুক্ত করেছে সেটার একটি তদন্ত হওয়া উচিত বলে জনগণ মনে করে।’
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা জঙ্গীদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করা বন্ধ করুন। কারণ, আপনাদের মন্ত্রী ও নেতাদের কথাবার্তাতেই স্পষ্ট হয় যে, জঙ্গীরা আপনাদের দ্বারাই প্রশ্রয় লাভ করছে। কয়েকদিন পূর্বে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, লাদেনের প্রশিক্ষিত ৮ হাজার জঙ্গী বাংলাদেশে এসেছে। আবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার বক্তব্যে তা অস্বীকার করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নিকট আমাদের বক্তব্য হলো- বিএনপিকে দোষারোপ না করে হাসানুল হক ইনু সাহেবের নিকট জানতে চান যে, জঙ্গীরা কোথায় আছে। কারণ ইনুই জানেন, জঙ্গীদের হদিস কোথায় আছে। জঙ্গী হামলার পর আপনাদের পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া জঙ্গী আঁততায়ীদের আড়াল করতে বিএনপিকে জড়িয়ে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে কোনো লাভ হবে না, কারণ জনগণ তা বিশ্বাস করে না।’
বাংলাদেশ জঙ্গী দমনে সফল সরকার বিএনপি, এমন দাবি করে রিজভী বলেন, ‘বিএনপি মানবতা, সভ্যতা বিরোধী যে কোনো ধ্বংসাত্মক জঙ্গী কর্মকা-কে দমন করতে অতীতের অভিজ্ঞতা দিয়ে সহায়তা করতে প্রস্তুত। বিএনপি দলমত নির্বিশেষে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে শান্তি, স্বস্তি, মানুষ ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও গণতন্ত্র বিরোধী প্রাণবিনাশী জঙ্গী শক্তিকে দমন করতে সর্বশক্তি নিয়ে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সালাম, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।