Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা

ভয়-আতঙ্ক নয় : সতর্কতা ও প্রস্তুতি জরুরী

প্রকাশের সময় : ১৬ এপ্রিল, ২০৩০, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:২১ পিএম, ২৯ এপ্রিল, ২০১৬

শফিউল আলম : বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ ও আশপাশ অঞ্চলকে যেকোন সময়ই কাঁপিয়ে তুলতে পারে শক্তিশালী ভূমিকম্প। দিনক্ষণ সুনির্দিষ্ট করে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেয়া সম্ভব নয়। তবে বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান, ভূতাত্ত্বিক বা ভূস্তরের পরিস্থিতি ও আলামত জানান দিচ্ছে অশনি সঙ্কেত। বাংলাদেশ ও আশপাশ অঞ্চলে প্রবল মাত্রায় ভূমিকম্পের সম্ভাব্য আঘাতে ভয়াল দুর্যোগ এমনকি মানবিক বিপর্যয়ও সৃষ্টি হতে পারে। অথচ ভূমিকম্প নিয়ে যতটা ভয়-আতঙ্ক সেই তুলনায় ব্যক্তি-পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এই দুর্যোগের ব্যাপারে আগাম সতর্কতা ও প্রস্তুতির ক্ষেত্রে অনেক পেছনেই পড়ে আছে বাংলাদেশ। মাঝেমধ্যে ছোট-মাঝারি ভূকম্পন অনুভূত হলে কিংবা প্রতিবেশী ও অন্যান্য দেশে বড় মাত্রায় ভূমিকম্প আঘাত হানার পরপর সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন মহলে কিছুদিন নড়াচড়া ও তোড়জোড় ভাব দেখা যায়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ভূমিকম্পের মতো জটিল প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রস্তুতি-সতর্কতার জরুরী বিষয়টি নিয়েই নির্বিকার থাকেন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরাও।   
ভূতত্ত্ববিদ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, দেশের অভ্যন্তরে কিংবা কাছাকাছি কোন উৎপত্তিস্থল থেকে মাঝারি, মাঝারি-উঁচু কিংবা তীব্র মাত্রায় ভূমিকম্প আঘাত হানার আশঙ্কা জোরালো হয়ে উঠছে। যদি তাই ঘটে সেক্ষেত্রে রাজধানী ঢাকা, বন্দরনগরী চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, কুমিলা, ময়মনসিংহ, উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিরাট অংশজুড়ে ত্রুটিপূর্ণ ও অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত হাজার হাজার ভবন ভূমিস্যাৎ হয়ে যেতে পারে। এতে করে মৃত্যুর মিছিল ও সামগ্রিক ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা হবে অকল্পনীয়। সে ধরনের পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে মধ্যমআয়ের দেশে উন্নীত করার স্বপ্ন পরিণত হবে দুঃস্বপ্নে। বিগত ২৫ এপ্রিল’১৫ ইং নেপালে রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে দেশটিতে প্রায় ৯ হাজার মানুষ নিহত হয় এবং আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় কমপক্ষে ১ হাজার কোটি ডলারের। ২৬ অক্টোবর ’১৫ ইং ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্পে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে ৪শ’ লোক মারা যায়। সর্বশেষ গত ১৩ এপ্রিল মিয়ানমারের মাউলাইক এলাকায় সংঘটিত ৭ মাত্রার ভূমিকম্পের ধাক্কা এসে চট্টগ্রাম মহানগরীতে অন্তত ৯টি ভবন হেলে পড়ে। তবে চোখের আড়ালে আরও অনেক ভবন কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের সন্দেহ।    
সাম্প্রতিক এসব ভূমিকম্প বাংলাদেশের ‘চোখ-কান’ খুলে দেয়ার জন্য যথেষ্ট এবং বাংলাদেশ ও আশপাশ অঞ্চলে বড় কোন ভূমিকম্পের আলামত বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা জানান, অতীতে এ অঞ্চলে শক্তিশালী ও প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পের রেকর্ড রয়েছে। সচরাচর ৫০, ১০০, ১৫০ বছর অন্তর তীব্র মাত্রায় ভূমিকম্পের পুনরাবৃত্তি ঘটে থাকে। নেপালে একই স্থানে ৯০ বছর পর গত ২৫ এপ্রিল’১৫ ইং ভয়াল ভূমিকম্পটি সংঘটিত হয়েছে। সেই হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কারণ শক্তিশালী ভূমিকম্পের সেই শত বছর অনেক আগেই পেরিয়ে গেছে।   
আশঙ্কার কারণ                 
আমেরিকার কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর্থ-অবজারভেটরির যৌথ গবেষণায় বলা হয়, ভারতীয়, ইউরেশীয় এবং বার্মার গতিশীল ভূ-পাটাতনের (টেকটোনিক পেট) সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান। এখানে বাংলাদেশ অঞ্চলে দুইদিক থেকেই শক্তিশালী ভূমিকম্পের উপযোগী শক্তি ভূস্তরে অনবরত জমা হয়েছে। এতে করে দু’টি বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কার মধ্যেই রয়েছে বাংলাদেশ। এর মাত্রা হতে পারে রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৫ থেকে ৮ পর্যন্ত। তাছাড়া বাংলাদেশের ভেতরে ও কিনারের দিকে ১৩টি ভূ-ফাটল (ফল্ট) লাইন রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভূমিকম্প জোন বা বলয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।       
বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ঝুঁকি ও বিপদ প্রসঙ্গে সাদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ-এর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগীয় প্রধান ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম আলী আশরাফ দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, ভূমিকম্পে বাংলাদেশ অবশ্যই খুব ঝুঁকিতে রয়েছে। ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কক্সবাজারÑ এই বেল্টে ঝুঁকির মাত্রা বেশি। ভূ-স্তরের একটি ফাটল বা ফল্ট লাইন চট্টগ্রাম শহরের পাশ দিয়ে উত্তর-দক্ষিণ বরাবর লম্বা হয়ে চট্টগ্রাম উপকূল ও সমুদ্র দিয়ে আন্দামান পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে গেছে। এর সমান্তরালে আরেকটি ‘বার্মিজ ফল্ট লাইন’ বাংলাদেশ-ভারতের কাছে দিয়ে মিয়ানমারে চলে গেছে (গত ১৩ এপ্রিল সেই ফল্ট থেকে ভূমিকম্পটি সংঘটিত হয়)। আরেকটি ফল্ট লাইন সিলেট শহরের উত্তরে ‘ডাউকি ফল্ট’। যা ভারতের সীমানা পর্যন্ত চলে গেছে। ঢাকার কাছাকাছি আরও একটি ফল্ট লাইন সক্রিয় রয়েছে ‘মধুপুর ফল্ট’। রাজধানী ঢাকার বড় ঝুঁকি মধুপুর ফল্টের কারণে। তাছাড়া নেপালে শক্তিশালী ভূমিকম্প সংঘটিত হলে তার বড় ধাক্কা এসে পড়তে পারে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলোতেও। তিনি উল্লেখ করেন, প্রতি ১শ’ বছর পরপর বড় ধরনের ভূমিকম্পের পুনরাবৃত্তি ঘটে থাকে। সেই হিসাবে অতীতের বড় বড় ভূমিকম্পের একশ’ বছর অতিবাহিত হয়েছে। বড় ধরনের ভূমিকম্পের বিপদের ঝুঁকি রয়েছে যেকোন সময়েই।   
বাংলাদেশ ও এর কাছাকাছি অঞ্চলে বিশেষত নেপাল এবং আসামসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের ভূকম্পন-প্রবণ অঞ্চলটিতে বিগত ১৫০ বছরের মধ্যে রিখটার স্কেলে ৭ ও ৮ মাত্রায় কমপক্ষে ৭টি ভয়াল ভূমিকম্প আঘাত হানে। যা ‘দ্য গ্রেট সেভেন আর্থকোয়েক’ নামে পরিচিত। অতীতে উপরোক্ত সময়ের মধ্যে একাধিক ভয়াল সুনামি ছোবল হানে এমনটি রয়েছে দুর্যোগের রেকর্ডে। এর মধ্যে ২টি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল (ইপি সেন্টার) ছিল বর্তমান বাংলাদেশ ভূখ-ের ভেতরেই। ৭টির মধ্যে ৫টি ভূমিকম্পের উৎস ছিল রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ২৫০ কিলোমিটার ব্যবধানে।   
ঘন ঘন ভূকম্পন          
গত বেশ কয়েক বছর ধরে ঘন ঘন মৃদু, হালকা ও মাঝারি ভূকম্পন অনুভূত হচ্ছে বাংলাদেশেও। এগুলো কোন কোনটির উৎস বাংলাদেশের কাছে-কিনারে আবার অনেকগুলো বহু দূরে। এ ধরনের ঘন ঘন অথচ হালকা ভূ-কম্পনকে অদূর ভবিষ্যতে কোন শক্তিশালী ভূমিকম্পের পদধ্বনী, আগাম সতর্ক সঙ্কেত বা ‘ওয়েক আপ কল’ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন। উপর্যুপরি মৃদু, হালকা, মাঝারি মাত্রায় ভূকম্পনের কারণে এ অঞ্চলের ভূ-ফাটল লাইনগুলো নাজুক ও শিথিল হয়ে পড়ছে। এরফলে তীব্র ভূমিকম্পের অবস্থা তৈরি করছে। গত ২৬ এপ্রিল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী জাতীয় সংসদকে জানান, বিগত ১৪ বছরে দেশে ৪৮২ বার ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। এরমধ্যে ২০০১ সালে ৩১ বার, ২০০২ সালে ৪৩ বার, ২০০৩ সালে ৪২ বার, ২০০৪ সালে ৩৯ বার, ২০০৫ সালে ৩০ বার, ২০০৬ সালে ২৭ বার, ২০০৭ সালে ৩১ বার, ২০০৮ সালে ৩৬ বার, ২০০৯ সালে ৩৪ বার, ২০১০ সালে ৩৮ বার, ২০১১ সালে ৩৭ বার, ২০১২ সালে ৩৪ বার, ২০১৩ সালে ৩৫ বার এবং ২০১৪ সালে ২৫ বার ভূকম্পন হয়েছে। মন্ত্রী জানান, জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ভূমিকম্পের সময়, ভূমিকম্প পরবর্তী সময়ে জনগণের করণীয় সম্পর্কে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে বিজ্ঞাপনচিত্র প্রচার ও লিফলেট বিতরণ, বিলবোর্ড স্থাপন ইত্যাদি সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে এবং হচ্ছে। এছাড়া ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধার অভিযানের জন্য ৬২ হাজার আরবান সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ স্বেচ্ছাসেবক তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে ৩০ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।  
বিশ্বের অন্যতম সক্রিয় ভূকম্পন বলয়ের মধ্যে বাংলাদেশ ও এর আশপাশ অঞ্চল (বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব ভারত) রয়েছে উচ্চতর ঝুঁকিতে। বাংলাদেশ এবং সংলগ্ন ভারতীয়, ইউরোশীয় ও মিয়ানমারের ভূ-পাটাতন কয়েক সেন্টিমিটার করে ধীরে ধীরে গতিশীল হচ্ছে। এর ফলে শক্তিশালী মাত্রায় ভূমিকম্পের ভূতাত্ত্বিক অবস্থা বা কার্যকারণ অনিবার্য হয়ে উঠেছে। ভূ-কম্পনমাত্রা অত্যধিক হলে এবং ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল যদি বাংলাদেশের ভেতরে অথবা কাছাকাছি এলাকায় হয়, সেক্ষেত্রে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিলাসহ জনবহুল এলাকায় জানমালের ব্যাপক ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। অতীতকালে সংঘটিত ভূমিকম্পের মতোই বাংলাদেশে প্রবাহিত নদ-নদী, শাখা নদী ও উপনদী, অববাহিকা ও সমুদ্র উপকূলভাগে গতিপথ ও ভূমিরূপ পরিবর্তনের আশঙ্কা রয়েছে।   
বিপদের কারণ ও করণীয়       
বিশিষ্ট নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক এম আলী আশরাফ জানান, অপরিকল্পিত ও ত্রুটিপূর্ণ নগরায়ন ভূমিকম্পের দুর্যোগে বিপদের প্রধান কারণ। এ অঞ্চলে মাঝারি থেকে শক্তিশালীর মধ্যবর্তী এবং শক্তিশালী মাত্রার ভূমিকম্প হলে অধিকাংশ ভবন টিকে থাকবে না। এতে চট্টগ্রাম শহরের ৭০ ভাগ ভবন ধূলিস্যাৎ হয়ে যেতে পারেÑ একথা চুয়েটের এক গবেষণায় বলা হয়েছে। ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা যথাসাধ্য লাঘব করা এবং সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় যুগোপযোগী সতর্কতা, প্রস্তুতির ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, আমাদের প্রস্তুতি-সতর্কতা মোটেও যথেষ্ট নয়। একটি ‘রানা পাজা’ ধসের ঘটনায় হিমশিম অবস্থায় পড়তে হয়েছে, ভূমিকম্পে হাজার হাজার ‘রানা প্লাজা’র মতো ঘটনা যদি ঘটে তা সামাল দেয়ার উপায় কী?   
তিনি পরামর্শ দিয়েছেন, ঢাকা, চট্টগ্রাম শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে ভূমিকম্পে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে (ভালনারেবিলিটি এসেসমেন্ট) যথেচ্ছ ত্রুটিপূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত ভবনগুলো শনাক্ত করা এবং অনতিবিলম্বে কারিগরি নিয়মেই ‘শক্তি বৃদ্ধিকরণ’ করে টিকিয়ে রাখা যাবে। তাহলে ঝুঁকি অনেকটা মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। বিশেষ করে স্কুল ভবন, হাসপাতাল, ফায়ার ব্রিগেডের ভবনগুলো বর্তমানে এতটাই নাজুক সেগুলো ভূমিকম্পে ধসে পড়ে অনেকেই হতাহত হতে পারে। তাছাড়া গ্যাস, বিদ্যুৎ লাইনকে আরও নিরাপদ করে তুলতে হবে। অন্যথায় বিপদ বাড়বে। ভূমিকম্পে ধসে পড়া ভবনে আটকে থাকা জনগণকে উদ্ধার তৎপরতার বিষয়ে প্রশিক্ষিত জনবল গড়ে তোলা এবং উদ্ধার কাজে ব্যবহৃত আধুনিক যন্ত্রপাতি-সরঞ্জাম সংগ্রহ ও সেসবের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ, নিয়মিত মহড়া প্রয়োজন। তিনি আশঙ্কা করেন, গত ১৩ এপ্রিলের ভূমিকম্পের চেয়ে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে এতে আমাদের দেশে ত্রুটিপূর্ণ ও অপরিকল্পিবভাবে নির্মিত দুর্বল ভবনগুলো ধসে পড়তে শুরু করবে।     
ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ড. এএসএম মকসুদ কামালের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির (সিডিএমপি) ডিজিটাল জরিপে দেশে ভূমিকম্পের ঝুঁকির ক্ষেত্রে উদ্বেগজনক চিত্র ফুটে উঠে। এতে জানা গেছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কিংবা কাছাকাছি জায়গায় কোন উৎপত্তিস্থল থেকে যদি রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রায় ভূমিকম্প সংঘটিত হয় তাহলে রাজধানী ঢাকা, বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ও সিলেট নগরীর অন্তত ২ লাখ ৫০ হাজার ভবন কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বা ধসে পড়তে পারে। প্রাণহানির আশংকা রয়েছে এক লাখেরও বেশি মানুষের। জরিপ তথ্য মতে, রাজধানী ঢাকায় ৩ লাখ ২৬ হাজার ভবনের মধ্যে পরীক্ষা করে দেখা গেছে ৭৮ হাজার ভবন অপরিকল্পিত। যেগুলো ভূমিকম্প-প্রতিরোধী কারিগরি ব্যবস্থাবিহীন, নির্মাণে গুরুতর ত্রুটিযুক্ত এবং এসব কারণে ভূমিকম্পে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত। চট্টগ্রাম মহানগরীর চালচিত্র আরও বেহাল। চট্টগ্রামে জরিপ চালিয়ে ১ লাখ ৮০ হাজার ভবনের মধ্যে ১ লাখ ৪২ হাজার ভবনই নানাবিধ ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণে ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পাওয়া গেছে। সিলেট নগরীর ৫২ হাজার ভবনের মধ্যে ২৪ হাজার ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। তবে আরও ব্যাপক ও বিস্তৃত পরিসরে জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হলে ভূমিকম্পে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হবে দেশের বিশেষত বর্ধিষ্ণু ও জনবহুল শহর-নগর-শিল্পাঞ্চলে অনেক বাড়িঘর ভবন।   
ভূ-প্রকৌশল বিজ্ঞানী ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ড. মোঃ আলী আকবর মলিক বলেছেন, ভূমিকম্প সরাসরি ঘাতক (কিলার) নয়। তবে ভূমিকম্পের সময় সাক্ষাৎ ঘাতক হয়ে দাঁড়ায় ভবন ধসে পড়া সামগ্রী এবং গৃহস্থালী ভারী জিনিসপত্র। ভূমিকম্পের আগাম প্রস্তুতি ও গণসচেতনতা-সতর্কতা জানমালের ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা কমিয়ে আনতে পারে। ভূমিকম্প হলেই মাথার উপর ছাদ ভেঙ্গে পড়বে কিনা এ ধরনের অমূলক ভীতি-আতঙ্ক মোটেই যুক্তিসঙ্গত নয়। বরং ভূমিকম্প হওয়ার আগে এবং ভূকম্পন চলাকালীন স্বল্প সময়ের মধ্যেই উপস্থিত বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগানো, গণসচেতনতা, সতর্কতা ও পূর্ব-প্রস্তুতির প্রয়োজন সকল পর্যায়ে সঠিক সময়েই। আর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করা দরকার। কিন্তু বাংলাদেশে এসব ক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রাক-সতর্কতা ও প্রস্তুতির অভাব রয়েছে অত্যন্ত প্রকটভাবেই।



 

Show all comments
  • শুভ ৩০ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:৪১ পিএম says : 0
    ভূমিকম্প হলেই মাথার উপর ছাদ ভেঙ্গে পড়বে কিনা এ ধরনের অমূলক ভীতি-আতঙ্ক মোটেই যুক্তিসঙ্গত নয়। বরং ভূমিকম্প হওয়ার আগে এবং ভূকম্পন চলাকালীন স্বল্প সময়ের মধ্যেই উপস্থিত বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগানো, গণসচেতনতা, সতর্কতা ও পূর্ব-প্রস্তুতির প্রয়োজন সকল পর্যায়ে সঠিক সময়েই।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা

১৬ এপ্রিল, ২০৩০
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ