পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের সর্বসাম্প্রতিক একটি সুখবর হচ্ছে নতুন স্পাইনাল কর্ড থেরাপির মাধ্যমে পক্ষাঘাতগ্রস্ত (প্যারালাইজড) রোগীরা ফের হাঁটতে পরছেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা গত বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেন যে, ইলেক্ট্রিক্যাল স্টিমুলেশন ব্যবহার করা হয় এমন এক ধরনের নতুন চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে কোমর থেকে নিচের অংশ পক্ষাঘাতগ্রস্ত ৩ ব্যক্তি ফের হাঁটতে সক্ষম হয়েছেন। চার বছরেরও বেশি সময় আগে এই ব্যক্তিরা গুরুতর স্পাইনাল কর্ডের সমস্যায় আক্রান্ত হন যার ফলে তাদের চলাফেরার ক্ষমতা সীমিত বা পায়ের নড়াচড়ার শক্তি একেবারে লোপ পেয়েছিল।
সুইজারল্যান্ডের গবেষকরা তারবিহীন যন্ত্র স্থাপনের মাধ্যমে মানুষের স্পাইনাল কর্ডে উদ্দীপক (স্টিমুলেশন) প্রয়োগ করেন যা বিদ্যুত স্পন্দন নিঃসরণ করে। এক সপ্তাহের মধ্যে এ রোগীরা উঠে দাঁড়াতে এবং সাপোর্ট নিয়ে হাঁটতে সক্ষম হন। পাঁচ মাস ফিজিক্যাল থেরাপি গ্রহণ ও প্রযুক্তির সাহায্যে প্রশিক্ষণের পর তিনজনই তাদের পায়ের মাংসপেশি নিয়ন্ত্রণ করতে এবং মাংসপেশিতে খিঁচ ধরা ছাড়াই এক ঘন্টার মত সময় হেঁটে বেড়াতে সক্ষম হন।
‘নেচার’সাময়িকীতে প্রকাশিত এ গবেষণার ফলাফল এমন সময় প্রকাশ পেল যখন গত মাসে প্রকাশিত একই ধরনের চিকিৎসার দুটি খবর নিয়ে বেশ আলোড়ন চলছে যাতে বলা হয় যে এ চিকিৎসা প্রথমবারের মত গুরুতর স্পাইনাল কর্ড সমস্যা আক্রান্তদের হাঁটতে সাহায্য করবে। লুইসভিল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল সেপ্টেম্বরে বলে যে স্পাইনাল কর্ড স্টিমুলেট করার কারণেই, যা নিউরোস্টিমুলেশন নামে পরিচিত, দু’ব্যক্তি নিজ শক্তিতে হাঁটতে সক্ষম হয়েছে। তারা ওয়াকারের মত সহায়ক যন্ত্রের সাহায্যে হেঁটেছে। একই দিনে প্রকাশিত আলাদা এক গবেষণায় মেয়ো ক্লিনিকের গবেষকরা দেখান যে, আরেক ব্যক্তির বেলাতেও তারা একই রকম ফল লাভ করেছেন।
প্রথম দু’রিপোর্টে নির্দিষ্ট ধরনের স্টিমুলেশনের উদ্দেশ্যে যন্ত্র প্রাক-স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। সর্বশেষ গবেষণায় সিনিয়র লেখক সুইস ফেডারেল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির নিউরোলজিস্ট গ্রেগয়ির কুর্টিন একটি মোবাইল অ্যাপ তৈরি করেছেন যাতে সঠিক সময়ে একটি ট্যাবলেটের সাথে স্টিমুলেশনকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কুর্টিন বলেন, এ ধরনের যন্ত্র গবেষণাগারের বাইরে থেরাপি নিয়ন্ত্রণে রোগীদের সক্ষমতা দিতে পারে।
ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের রিহ্যাবিলিটেশন মেডিসিনের সহযোগী অধ্যাপক সর্বসাম্প্রতিক গবেষণা বিষয়ে ‘নেচার’ পত্রিকায় সহ-সম্পাদকীয় লেখক চেট মরিজ বলেন, সামান্য কিছু গবেষণা ফলাফল আমাদের প্রচুর আস্থা প্রদান করেছে যে, এই সমাধান আসল এবং এতে এমনকি সম্পূর্ণ পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তিও পুনরায় হাঁটার ক্ষমতা ফিরে পেতে পারে।
সংযোগ পুনরুদ্ধার
অধিকাংশ মানুষই হাঁটা নিয়ে ভাবে না। আমাদের মস্তিষ্ক আমাদের হয়ে সে কাজ করে দেয়। শরীরের স্নায়ু কোষের এক প্রধান চ্যানেল স্পাইনাল কর্ডের মধ্য দিয়ে পায়ের মাংসপেশিতে সঙ্কেত পাঠিয়ে দেয়। স্পাইনাল কর্ডে বড় ধরনের ইনজুরি হলে এ যোগাযোগ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়, কারণ এই চ্যানেল বরাবর নার্ভগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
কিন্তু বিজ্ঞানীরা আশাবাদী যে, স্পাইনাল কর্ডের এই নার্ভ চ্যানেল স্পাইনাল কলামে পাওয়া নিউরাল সার্কিট নামে নির্দিষ্ট সংখ্যক নার্ভ সেল ট্যাপ করার মাধ্যমে সারিয়ে তোলা যেতে পারে। এই সার্কিট টার্গেটকৃত মাংসপেশির দিকে এগোলেও ইনজুরি তাদের সঙ্কেত বাধাগ্রস্ত করতে পারে না। তাই চিকিৎসায় ইনজুরি এলাকার নিচের অংশ সারিয়ে তোলার চেষ্টা করে।
নিউইয়র্কে ফেইনস্টেইন মেডিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটে সেন্টার ফর বায়োইলেক্ট্রনিক মেডিসিনের পরিচালক শাদ বুটন বলেন, এই স্নায়বিক পথ মোটের উপর অক্ষত ও কার্যকর। তিনি অবশ্য সর্বশেষ গবেষণার সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন না। তিনি বলেন, আপনি যদি এগুলোকে স্টিমুলেট করতে পারেন তাহলে তা হাঁটার জন্য সাহায্য করবে।
কুর্টিনের গবেষণায় ৩ অংশগ্রহণকারী রোগীর স্পাইনাল কর্ডের নিচের অংশে ১৬টি ক্ষুদে ইলেকট্রোডস ইমপ্লান্ট করা হয়। প্রতিটি ইলেকট্রোডই পায়ের মাংসপেশির নির্দিষ্ট গ্রæপকে সক্রিয় করতে সঠিক ভাবে স্থাপন করা হয়। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তলপেটে স্থাপন করা একটি ক্ষুদ্র ডিভাইসের সাথে ইলেকট্রোডগুলো সংযুক্ত থাকে যা বৈদ্যুতিক স্পন্দন সৃষ্টি করে। মেডট্রনিক নির্মিত এসব যন্ত্র পার্কিনসনস রোগের গভীর মস্তিষ্ক স্টিমুলেশনের জন্য ইতিমধ্যে বাজারে রয়েছে। ২ রোগীই দুটি পরিধানযোগ্য সেন্সর লাভ করেছেন, একজন দু’পায়ে যা অতিরিক্ত স্টিমুলেশন সরবরাহ করে।
আশ্চর্য যে, স্টিমুলেটর যখন বন্ধ করা হয় তখনো ৩ জনের মধ্যে ২ জন তাদের পায়ের মাংসপেশি নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। মরিজ বলেন, এ থেকে বোঝা যায় যে, স্টিমুলেটিং মস্তিষ্ক ও স্পাইনাল কর্ডের মধ্যে সংযোগ পুনস্থাপন করতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে ঐসব নার্ভ সংযোগগুলো পুনরুদ্ধার করা সম্ভব।
মরিজ বলেন, আমরা মনে করি যে, স্টিমুলেটর স্পাইনাল কর্ডের জন্য হিয়ারিং এইড বা অ্যামপ্লিফায়ারের কাজ করে।
মেয়ো ক্লিনিকের একজন ইনভেস্টিগেটর সেপ্টেম্বরের গবেষণাপত্রের অন্যতম লেখিকা ক্রিস্টিন ঝাও বলেন, প্যারালিসিস বা পক্ষাঘাতের জন্য নিউরোস্টিমুলেটিং এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। বিজ্ঞানীরা এখনো সঠিকভাবে জানেন না নড়াচড়া পুনরুদ্ধারে তা কিভাবে কাজ করে।
তিনি বলেন, যা ভাবা হয় তা হল এই যে, যেভাবেই হোক মস্তিষ্ক থেকে নেমে আসা কমান্ড নিচের অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে সক্রিয় হতে বলে এবং যেভাবেই হোক, স্টিমুলেটিং তা কার্যকর করে। এখন গবেষকরা ভালো ফল পাওয়ার জন্য স্টিমুলেশনের বিভিন্ন পদ্ধতি, দৈর্ঘ্য ও প্রবলতা বিষয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।