Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রেকর্ড উষ্ণতায় পুড়ছে বিশ্ব

প্রকাশের সময় : ১৬ এপ্রিল, ২০৩০, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:২১ পিএম, ২৯ এপ্রিল, ২০১৬

ইনকিলাব রিপোর্ট : জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী উষ্ণতা বেড়েই চলেছে। কিন্তু এবার চলতি এপ্রিল-মে মাসে তা গত ৩০ বছরের মধ্যে রেকর্ড গড়তে চলেছে। অব্যাহত উষ্ণতায় বিশ্বের সিংহভাগ এলাকা যেন পুড়ছে। এশিয়া, আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়াÑএই চার মহাদেশের শত শত কোটি মানুষ এই মৌসুমে গরমে অতিষ্ঠ সময় পার করছেন। এর মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে পরিস্থিতি খুবই নাজুক আকার নিয়েছে। দরিদ্রপ্রধান জনগোষ্ঠীর এসব এলাকায় শত শত মানুষ মারা যাচ্ছে তীব্র দাবদাহে। শুধু ভারতেই গত কয়েকদিনে ১৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে। বেসরকারি হিসেবে এই সংখ্যা আরো অনেক বেশি। এছাড়া বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, লাওস, কম্বোডিয়া এবং ভিয়েতনামেও পরিস্থিতি সহ্যের সীমা ছাড়িয়েছে। থাইল্যান্ডে গত ৬৫ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে তাপমাত্রা। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন, আগামী কাল থেকে শুরু হওয়া মে মাস হবে গত ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণ মাস। এই গরম আবহাওয়ার জন্য দায়ী শক্তিশালী এল নিনোর নেতিবাচক প্রভাবে বাংলাদেশও দুঃসহ সময় পার করছে। এদিকে দিন দিন উষ্ণ আবহাওয়ায় বিশ্বব্যাপী চাষের জমি উর্বরাশক্তি হারিয়ে ফেলার কারণে কৃষি উৎপাদন কমে যাচ্ছে। জাতিসংঘ বলেছে, এল নিনোর প্রভাবে জলবায়ুর মারাত্মক পরিস্থিতির শিকার বিশ্বের প্রায় ছয় কোটি লোকের সহযোগিতা প্রয়োজন।
মে হবে ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে গরম মাস
দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে গতকাল জানিয়েছে, অস্ট্রেলীয় বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রশান্ত মহাসাগরীয় আবহাওয়া বলয়ে থাকা বেশিরভাগ দেশেই মে মাস হবে ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত মে মাসগুলোর গড়ের চেয়ে অনেক বেশি উষ্ণ। এমনকি উপসাগরীয় দেশগুলোতে জুন-জুলাই মাসেও অন্যান্য বছরের জুন-জুলাইয়ের চেয়ে বেশি গরম অনুভূত হবে। বিজ্ঞানীরা আরো বলছেন, চলমান এই অস্বাভাবিক উষ্ণতা মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাব।
দক্ষিণ এশিয়ায় পরিস্থিতি ভয়াবহ, কয়েকশ মৃত্যু
দক্ষিণ এশিয়ায় উষ্ণ আবহাওয়ায় পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ভারত, থাইল্যান্ড, নেপাল, মিয়ানমার, লাওস, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম ও শ্রীলঙ্কায় গরমে কয়েকশ লোক মারা গেছে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে। এর মধ্যে ভারতে তাপদাহে মারা গেছে ১৬০ জনের বেশি লোক। বেশিরভাগই মারা গেছে দক্ষিণের রাজ্য অন্ধ্র প্রদেশ ও তেলেঙ্গানায়। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে খরা বাড়ছে। একইসঙ্গে দেশব্যাপী পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ভারতের সুপ্রিম কোর্টে দেয়া সরকারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত কারণে হুমকির মুখে রয়েছে দেশটির প্রায় ৩৩ কোটি লোক। বিহারে অদ্ভুত নির্দেশনা জারি করা হয়েছে গরমের কারণে। সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে রাজ্যে রান্না করলে দুই বছরের কারাদ- হবে। ভারতে সাধারণত মে ও জুন মাসে বেশি গরম পড়ে। কিন্তু এপ্রিলেই তাপমাত্রা বাড়তে থাকায় মৃত্যু হার বাড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত বছর ভারতে তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত কারণে ২৪২২ জনের মৃত্যু হয়। ভারতের তাপদাহের কারণে ১৯৯২ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত ২২ হাজার ৫৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
থাইল্যান্ডে ৬৫ বছরের রেকর্ড তাপামাত্রা
গরমের রেকর্ড ভেঙেছে থাইল্যান্ডে। গত ৬৫ বছরের মধ্যে দীর্ঘ তাপদাহ চলছে থাইল্যান্ডে। দেশের অনেক জায়গাতেই তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করেছে। কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৪৪ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে। থাইল্যান্ডে পানির অভাবে চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। পূর্ব এশিয়ার সবকটি দেশের পরিস্থিতিও একই রকম।
পুড়ছে চার মহাদেশ
এশিয়ার বাইরে আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বেশ কয়েকটি দেশে বৃষ্টিপাতের দেখা নেই। দক্ষিণ আমেরিকার আর্দ্র ব্রাজিল ৩৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরার কবলে রয়েছে। অনাবৃষ্টির কারণে ৪৯ ট্রিলিয়ন লিটার পানি হারিয়েছে। নাসার তথ্য বলছে, হন্ডুরাস ও গুয়াতেমালায় ৩০ লাখের বেশি মানুষ কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়েছে। ইকুয়েডর ও এল সালভাদরে অনাবৃষ্টির কারণে ৬০ লাখ লোক অপুষ্টির শিকার হচ্ছে।
আফ্রিকাতে অনাবৃষ্টি-খরার কারণে ফসল না হওয়ায় চার কোটি মানুষ খাদ্য সঙ্কটের মুখে পড়েছে। মালাবি, মোজাম্বিক, লেসেথো এবং জাম্বিয়াতে খরা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ইথিওপিয়া, ইরিত্রিয়া, জেবুতি এবং সোমালিয়ায় অনাবৃষ্টিতে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। অস্ট্রেলিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিউ সাউথ ওয়েলস, সাউথ অস্ট্রেলিয়া, তাসমানিয়াতে বৃষ্টির দেখা মিলছে না। কুইন্সল্যান্ড ও নিউ সাউথ ওয়েলসে অনাবৃষ্টি চলছেই।  
আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী এল নিনোর কবলে পৃথিবী। যে কারণে চলতি বছরটি যে হতে যাচ্ছে সবচেয়ে উষ্ণতম বছর, এমন আশঙ্কা আগে থেকেই ছিল। ফলে ২০১৬ সালে ব্যাপক খরা এবং খাদ্যসঙ্কটের মুখোমুখি হতে চলেছে বিশ্ব। এ কারণে ২০১৬ সালে ক্ষুধা ও রোগবালাইয়ের প্রবণতা বাড়বে।
কেন এত গরম?  
আবহওয়া বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এত গরমের পেছনে মূলত ভূমিকা রাখছে ‘এল নিনো’। ‘এল নিনো’ হচ্ছে বায়ুুম-লীয় এবং গ্রীষ্মম-লীয় অঞ্চলের সমুদ্রগুলোর মাঝে একটি পর্যায়বৃত্ত পরিবর্তন। এর প্রভাবে বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ার লক্ষণ দেখা দেয় এবং আবহাওয়ার নিয়মিত ধরনগুলোতে পরিবর্তন দেখা দেয়। এল নিনো পর্যায়বৃত্তের উষ্ণ পর্যায়, আর ‘লা নিনা’ হচ্ছে শীতল পর্যায়। পর্যায়বৃত্ত এই পরিবর্তনের কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই, তবে প্রতি ৩ থেকে ৮ বছরের মাঝে দেখা যায়। এল নিনো বন্যা, খরা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে সম্পর্কযুক্ত। ২০১৫ সালে শুরু হওয়া এল নিনো ২০১৬ সালেও থাকবে বলে জানান আবহাওয়াবিদরা।
বাংলাদেশে পানি সঙ্কট, রোগের প্রকোপে জনজীবন অতিষ্ঠ
এপ্রিল মাস বাংলাদেশে সবচেয়ে উষ্ণতম মাস। এই সময়ে সূর্যের অবস্থান থাকে মাথার ওপরে। এছাড়া দিনের চেয়ে রাতের ব্যাপ্তিকালও কম। ফলে রাতের ব্যাপ্তিকাল কম হওয়ায় ওপরের বায়ুম-ল ঠা-া হওয়ার সুযোগ কম পাচ্ছে, যাতে গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে। তবে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বাংলাদেশ এবং ভারতের বিশাল এলাকাজুড়ে এল নিনোর প্রভাবে এই সময়ে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বৃষ্টি হচ্ছে না। এই সময়ে বঙ্গোপসাগর থেকে দখিনা বাতাস দেশের ভূখ-ে প্রবেশ করে বজ্র বৃষ্টি সৃষ্টি করে। এবার হঠাৎ করে পশ্চিমা বায়ু এই সময়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ওই দখিনা বায়ুকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, মৌলভীবাজারসহ কয়েকটি জেলার দিকে ঠেলে দিয়েছে। ফলে ওই এলাকায় টানা বৃষ্টি হচ্ছে আর সারা দেশে শুষ্ক খটখটে আবহাওয়া বিরাজ করছে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রাজশাহী বিভাগে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ঢাকা, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, মাঈজদীকোর্ট, খুলনা, যশোর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলসহ রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি আরো ২-৩ দিন অব্যাহত থাকতে পারে। এদিকে গরম বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পানি সঙ্কট। ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে মানুষ পানির জন্য হাহাকার করছেন। পানির অভাবে গরমজিনত বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বাড়ছে। বিশেষ করে নি¤œআয়ের মানুষজন এ ধরনের রোগের শিকার হচ্ছেন বেশি।
গরমের সাথে লোডশেডিং
তীব্র গরমের সঙ্গে বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানের বাসিন্দারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন স্থানে লোকজন স্থানীয় বিদ্যুৎ কার্যালয় ঘেরাও করাসহ বিদ্যুতের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন। কলকারখানায় উৎপাদন কমে গেছে। এইচএসসি পরীক্ষার্থীরাসহ সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক হাসান শাহনেওয়াজ বলেন, চাহিদার অর্ধেকেরও কম বিদ্যুৎ পাচ্ছেন তারা। চলতি (এপ্রিল) মাসজুড়েই এ অবস্থা বিরাজ করেছে। বিদ্যুৎ বিভাগ চাঁপাইনবাবগঞ্জের সহকারী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম বলেন, জাতীয় গ্রিড থেকে চাহিদার অনেক কম বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। ৩২ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১৪ থেকে সাড়ে ১৫ মেগাওয়াট। ফলে কখনো কখনো একসঙ্গে দু-তিনটি ফিডার লোডশেডিংয়ের আওতায় রাখতে হচ্ছে। কখনো ঘণ্টা খানেকের বেশি সময় লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
বুধবারের আগে কোনো সুখবর নেই
চলতি মাসে শতকরা ৫৮ ভাগ বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলের তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠা-নামা করছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। এদিকে প্রচ- রোদ ও গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে নগরীর মানুষেরা।
ভ্যাপসা গরমে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অস্বস্তিতে ভুগতে দেখা গেছে অনেককে। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হচ্ছেন না। গতকাল শুক্রবার রাজধানীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ইতোমধ্যে বৃষ্টিপাত শুরু হলেও রাজধানীবাসীর জন্য আগামী দুই-চার দিনের মধ্যে বৃষ্টিপাতের কোনো সম্ভাবনা নেই। গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহীতে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে আরো কয়েকদিন তীব্র দাবদাহ চলবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।
বৈরী আবহাওয়ায় কমে আসছে উৎপাদন
আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত কারণে বিশ্বে উৎপাদন কমে আসবে। প্রচ- তাপদাহে শ্রমিকরা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে। এতে তাদের স্বাস্থ্যহানী ঘটছে। প্রভাব পড়ছে আয় ও উৎপাদনের উপর। গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে হুঁশিয়ার করে বলা হয়, আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত কারণে বৈশ্বিক উৎপাদন দুই ট্রিলিয়নেরও বেশি কমে যেতে পারে।
আবহাওয়া পরিবর্তন ও শ্রম : কর্মক্ষেত্রে তাপদাহের প্রভাব শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক বিলিয়ন শ্রমিক তীব্র তাপদাহের মধ্যে কাজ করে যাচ্ছে এবং তারা ইতিমধ্যে এই তাপদাহের শিকার হয়েছে।
বর্তমানে তীব্র তাপদাহপূর্ণ এলাকাগুলোতে কর্মঘণ্টা ব্যাপকভাবে কমে আসতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, পরিস্থিতি এমন যে, ওইসব এলাকায় প্রখর তাপে স্বাভাবিক কাজকর্ম পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে পারে, যা কর্মঘণ্টা হ্রাসের মাধ্যমে উৎপাদন প্রক্রিয়ায়ও বেশ প্রভাব ফেলবে। জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা সমন্বিতভাবে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
আগেই বলা হয়েছে, তাপমাত্রা দিন দিন যেভাবে বাড়ছে, তাতে শ্রমিকদের কর্মঘণ্টা হ্রাস হয়ে ২০৩০ সাল নাগাদ বার্ষিক বৈশ্বিক উৎপাদন দুই ট্রিলিয়ন কমে আসতে পারে। শ্রমিকরা এ সময় হয় তো দীর্ঘ বিরতি নেবে, নতুবা এর চেয়ে কম উষ্ণ কোনো পরিবেশ বেছে নেবে কাজের জন্য, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে অতিমাত্রায় উষ্ণ এলাকাগুলোর উৎপাদনে।
ইউএনআই গ্লোবাল ইউনিয়নের প্রধান ফিলিপ জেনিংস বলেন, শ্রমিকরা প্রচ- গরম পরিবেশে কাজ করতে করতে এক সময় তাদের কাজের ধীরলয় প্রভাব পরবে নাটকীয়ভাবে। ৩৫ ডিগ্রি সেরসিয়াস তাপমাত্রার উপরে কাজ করাকে স্বাস্থ্যের জন্য খুবই হানিকর হিসেবে গণ্য করা হয়। কিছু কিছু শ্রমিক আছে, যাদের এ ব্যাপারে পছন্দের কোনো বিষয় নেই, তারা এমন পরিস্থিতিতে কাজ করে যাবে। তারা এমনকি পর্যাপ্ত পানি পান না করে এবং একটু ছায়াতলে বিশ্রাম না নিয়ে তাদের কাজ চালিয়ে যায়। এসব শ্রমিক টেবিলে বসে খাদ্য গ্রহণের নিকুচি করে ক্ষুধার তাগিদে বৈরী পরিবেশেও কাজ অব্যাহত রাখে, যা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য পরে ভয়ানক পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটায়।
আনুমানিক ৪ বিলিয়ন মানুষ এরকম প্রচ- উষ্ণ পরিবেশে বসবাস করছে। এই এরাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চল ও ক্যারিবিয়ান, দক্ষিণ আমেরিকার উত্তরাঞ্চল এবং উত্তর ও পশ্চিম আফ্রিকা।
পশ্চিম আফ্রিকায় প্রতি বছরই তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে ১৯৬০ সালের তুলনায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। প্রতি দশকেই সেখানে ১০ টি দিন তীব্র তাপদাহ বয়ে যায়, যা বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণতম দিন। ভারতে এই তাপদাহপূর্ণ দিনের সংখ্যা ১২। ভারত ইতিমধ্যেই তীব্র তাপদাহের কারণে দৈনন্দিন কর্মঘণ্টা হারাচ্ছে তিন শতাংশ। বিশ্বকে শীতল করতে নাকীয়ভাবে বৃষ্টিপাত না ঘটলে ২০৮৫ সাল নাগাদ এই কর্মঘণ্টা বেড়ে যাবে ৮ শতাংশে।
বিশ্বের একশো ৬০ টি দেশ বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামিয়ে আনতে গত সপ্তাহে ঐতিহাসিক প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করার পর এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলো। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, তাপমাত্রা হ্রাসের এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন একটি দুরূহ ব্যাপার হবে। বিশ্ব যদি গ্রিন হাইস গ্যাসের মাত্রা কমিয়ে আনতে না পারে, তাহলে তা বিশ্বকে ভয়ঙ্কর উষ্ণতার দিকে নিয়ে যাবে। এএফপি।



 

Show all comments
  • শহিদুল্লাহ ৩০ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:৪৩ পিএম says : 0
    বাংলাদেশে একের পর এক যেভাবে নাস্তিকতা ও আল্লাহ বিরোধিতা বাড়ছে তাতে এটা আল্লাহর গজব
    Total Reply(0) Reply
  • কাদের ৩০ এপ্রিল, ২০১৬, ১:১১ পিএম says : 0
    এই গরমে উত্তরবঙ্গের মানুষের শরীরে ফোসকা পড়ে যাচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রেকর্ড উষ্ণতায় পুড়ছে বিশ্ব
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ