পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আজ ৩ নভেম্বর, জেলহত্যা দিবস। স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের এই দিনে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এএইচএম কামারুজ্জামান এবং ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর বাঙালি জাতির ইতিহাসে এটিই ছিল দ্বিতীয় কলংকজনক অধ্যায়। এরপর থেকেই প্রতি বছর এই দিনটি জেলহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি ও জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করতে এ হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। এর আগে একই বছরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার সময় তার এই চার সহকর্মীকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়।
প্রতিবছরের মতো আজ শনিবারও জাতি গভীর শোক ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে জাতীয় চার নেতাকে। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি গ্রহন করেছে। শোক ও শ্রদ্ধা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রেসিডেন্ট তাঁর বাণীতে বলেন, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করার পাশাপাশি জাতিকে নেতৃত্বহীন করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ধারাবাহিকতায় জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে একটি নতুন রাষ্ট্র গঠন ও পারিচালনায় তারা অসামান্য অবদান রাখেন। জাতি তাদের অবদান চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। শহীদ চার নেতার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে প্রেসিডেন্ট বলেন, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়ন করাই হোক জেল হত্যা দিবসের অঙ্গীকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি বাংলার মাটি থেকে আওয়ামী লীগসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস ও বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করতে এই ঘৃণিত হত্যাকান্ড ঘটিয়েছিল। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর জাতির পিতাসহ জাতীয় চার নেতার হত্যাকান্ডের বিচার সম্পন্ন করেন।
কারা ও আদালত সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেলহত্যাকান্ডের পরদিন তৎকালীন উপ-কারা মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) কাজী আবদুল আউয়াল লালবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। তবে দীর্ঘ ২১ বছর এ বিচার প্রক্রিয়াকে ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ১৯৯৮ সালের ১৫ অক্টোবর এ মামলায় ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মতিউর রহমান এ মামলার রায় দেন। রায়ে ২০ আসামির মধ্যে ১৫ সাবেক সেনা কর্মকর্তার শাস্তি এবং অপর পাঁচ জনকে খালাস দেওয়া হয়। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে পলাতক তিন আসামির মৃত্যুদন্ড এবং অপর ১২ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়। এভাবে ঢিলেতালে মামলা চলতে থাকে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় আসলে জেল হত্যাকান্ডের পুনঃবিচারের সুযোগ আসে। ২০১৩ সালের ১ নভেম্বর সরকারপক্ষ জেলহত্যা মামলার আপিল বিষয়ে সারসংক্ষেপ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে জমা দিলে পুনঃবিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ৩০ এপ্রিল আপিল বিভাগের চূড়ান্ত সংক্ষিপ্ত রায়ে ২০০৮ সালের হাইকোর্টের রায় বাতিল করে ২০০৪ সালের নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখা হয়। অর্থাৎ পলাতক তিন আসামি তথা রিসালদার মোসলেম উদ্দিন ওরফে হিরন খান, দফাদার মারফত আলী শাহ ও এলডি দফাদার মো. আবুল হাসেম মৃধাকে মৃত্যুদন্ড এবং অন্য ১২ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়।
এ আসামীদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ২০১০ সালে সৈয়দ ফারুক রহমান, শাহরিয়ার রশীদ খান, বজলুল হুদা ও একেএম মহিউদ্দিনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। এছাড়া জেলহত্যা মামলার এখনো ১০ আসামি পলাতক রয়েছে। তারা হলেন- মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত মোসলেম উদ্দিন, আপিল বিভাগের রায়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত মারফত আলী শাহ ও আবুল হাসেম মৃধা, যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এমএইচএম বি নূর চৌধুরী, এএম রাশেদ চৌধুরী, আহমদ শরিফুল হোসেন, কিসমত হোসেন ও নাজমুল হোসেন আনসার। যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত আসামি আবদুল মাজেদ দেশের বাইরে মারা গেছেন বলে জানা গেছে।
কর্মসূচিঃ জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে আজ সকাল ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সব শাখা কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, কালো ব্যাজ ধারণ ও কালো পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জমায়েত এবং জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ। সকাল ৮টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদ ও জাতীয় নেতাদের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাত। সাড়ে ৯টায় পুরাতন কারাগারে জাতীয় চারনেতা যাদুঘরের ভেতরে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন। এতে শহীদ চার নেতার পরিবারের সদস্যরা ছাড়া বিভিন্ন নের্তৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। মাগরিব বাদ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের ধানমন্ডির বাসভবনে এম মনসুর আলীসহ চার নেতার রুহের মাগফেরাত কামনায় মিলাদ-মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠান।
বিকাল ৩টায় ফার্মগেটের খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এক স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে। একইভাবে রাজশাহীতে জাতীয় নেতা শহীদ কামরুজ্জামানের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে গতকাল গণফোরাম তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। বঙ্গবন্ধু পরিষদ আজ সকাল ৯টায় কলাবাগানের বশিরউদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ আজ বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করেছে।
গতকাল এক বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সংগঠনের সকল জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন শাখা এবং সকল সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মী-সমর্থক-শুভানুধ্যায়ী এবং সর্বস্তরের জনগণকে যথাযথ মর্যাদা ও শোকাবহ পরিবেশে জেলহত্যা দিবস পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।