পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর কারাদন্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। খালেদা জিয়ার আপিল খারিজ এবং এ সংক্রান্ত রুল যথাযথ ঘোষণা করে গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ এই রায় দেন। এর আগে নিম্ন আদালত খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদন্ড দেয়। এছাড়া ১০ বছরের দন্ড থেকে খালাস চেয়ে কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে কাজী কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদের আপিল খারিজ করেছেন আদালত। এদিকে এই রায়কে বেআইনি উল্লেখ্য করে আদালত বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রায়ে সন্তোষ্ট প্রকাশ করেছেন।
৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদন্ড দেন। এরপর খালেদা জিয়ার আপিল শুনানি গ্রহণ করে অর্থদন্ড স্থগিত করেন হাইকোর্ট। অপরদিকে খালেদা জিয়ার সাজা বাড়াতে আবেদন করে দুদক। সাজা বাড়ানোর বিষয়ে রুল জারি করেন আদালত। রুলসহ খালেদা জিয়ার আপিল শুনানি শেষে গত সোমবার রায়ের জন্য এ দিন ঠিক করে দেন হাইকোর্ট।
রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই সুপ্রিম কোর্টের প্রধান ফটকসহ সবকটি ফটকের সর্তক অবস্থান নেয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সুপ্রিম কোর্টর বর্ধিত ভবনের ১৭ নম্বর কক্ষের সামনে নেয়া হয় অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনালের মুরাদ রেজা, মোমতাজ উদ্দিন ফকির, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ, ফরহাদ আহমেদ, একরামুল হকসহ আইন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান ও মোশাররফ হোসেন কাজল। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র কয়েকজন আইননজীবী। তবে খালেদা জিয়ার কোন আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। সকাল সাড়ে ১০টায় দিকে আসন গ্রহণ করার পর আদালত বলেন, রায়ের কার্যকর অংশ ঘোষণা করা হচ্ছে। তিনটি আপিল (খালেদা জিয়া, সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ) খারিজ করে দেয়া হল। খালেদা জিয়ার সাজা বাড়াতে দুদকের রিভিশন আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত রুল জারি করেছিল, তা যথাযথ (অ্যাবসলিউট) ঘোষণা করা হলো। এবং খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর কারাদন্ড দেয়া হলো। এ রায়ের ফলে অপর আসামি সালিমুল হক ও শরফুদ্দিন আহমেদের ১০ বছরের কারাদন্ডও বহাল রইল।
এর আগে এ মামলায় হাইকোর্টের ওপর অনাস্থা জানিয়ে খালেদা জিয়ার পক্ষে করা আবেদন করা হয় আপিল বিভাগে। তবে শুনানি শেষে ওই আবেদন খারজি করে দেন আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগে শুনানিকালে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী সংশ্লিষ্ট হাইকোর্ট বেঞ্চের প্রতি অনাস্থা জানান। এসময় প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনারা প্রোপার ওয়েতে আসেন।তখন এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, এমন অনেক নজির আছে। আগেও এসেছি। তবে খালেদা জিয়ার অনাস্থা আবেদন গ্রহণ না করে তা ফিরিয়ে দেয় আপিল বিভাগ।
পরে জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, আদালত একতরফাভাবে সব কিছু করে যাচ্ছে। আমরা অত্যন্ত ব্যথিত, মর্মাহত। তিনি বলেন, আমরা আপিল বিভাগে একটি আবেদন নিয়ে গিয়েছিলাম। যদিও আদালত আবেদন সরাসরি খারিজ না করে নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন। এসময় আপিল বিভাগ হাইকোর্টকে আমাদের আবেদনটি মঙ্গলবারের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলেন। আমরা ভেবেছি যে, হাইকোর্ট আবেদনটি শুনে আদেশ দিবেন। কিন্তু হাইকোর্টের কার্যতালিকায় দেখলাম, মামলাটি রায়ের জন্য আছে। আমরা এ অবস্থায় বুঝতেই পারলাম না যে, আমাদের সেই আবেদনের আদেশ কি হলো?এতে আমরা বুঝতে পারলাম, হাইকোর্ট একতরফাভাবে সব করে যাচ্ছে। আমরা এজন্য সংক্ষুব্ধ হয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে বলেছি- যেহেতু এই হাইকোর্ট আপনাদের আদেশ পালন না করেই মামলাটি রায়ের জন্য রেখেছে। তাই আমরা মনে করি আপিল বিভাগে যথার্থ বিচার পাবো। এই কথা বলে আমরা একটি আবেদন নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তা আপিল বিভাগ তা গ্রহণ করলেন না। এখানেও আমাদের একটা ব্যথা। আমরা কোথাও বিচার পাচ্ছি না। ১/১১ সময় যেমনিভাবে রাজনীতিবিদরা বিচার পায়নি। আজকেও এখানে মনে হচ্ছে সে রকম ব্যবস্থা হচ্ছে। দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, জিয়া অরফানেজ মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে পাচ বছরের দন্ড থেকে হাইকোর্টে করা আপিলের রায়ে দশ বছর দন্ড করায় আমরা আপাতত সন্তোষ প্রকাশ করছি। তিনি বলেন, মামলায় খালেদা জিয়া প্রধান আসামি ছিলো। কিন্তু বিচারিক আদালত প্রধান আসামি খালেদা জিয়াকে ৫ বছর সাজা দিয়ে অন্য আসামিদের দশ বছর করেছিলো। এ কারণে আমরা সংক্ষুব্ধ ছিলাম। এরপর আমরা নিন্ম আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিশন আবেদন করেছি। আদালত শুনানি শেষে খালেদা জিয়ার সাজা দশ বছর করে দিয়েছেন। এ রায়ের কারণে খালেদা জিয়া আসন্ন নির্বাচণে অংশ নিতে পারবে না। আমরা আপাতত এ রায়ে আপাতত সন্তোষ প্রকাশ করছি।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, খালেদা জিয়ার ১০ বছরে দন্ড ঘোষণা করে দেয়া রায়টি সকল রাজনীতিবিদদের জন্য একটি ম্যাসেজ। এই রায় নিশ্চই একটি ইঙ্গিত বহন করে যে, রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে কেউ যদি অন্যায় করে সে কোন আইনের উর্ধে থাকতে পারেনা। তাই এই রায় সকল রাজনৈতিকদের জন্য একটি ম্যাসেজ।
বিচার কার্যক্রম:
গত ৮ ফেব্রুয়ারি স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মামলাটিতে খালেদা জিয়ার ৫ বছরের কারাদন্ড দেন। একইসঙ্গে খালেদা জিয়ার ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারর্পাসন তারেক রহমান, সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদন্ড দেন আদালত। এ মামলায় ছয় আসামির মধ্যে খালেদা জিয়াসহ তিনজন কারাবন্দি। বাকি তিন আসামি পলাতক। এরপর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ২০ ফেব্রুয়ারি এ আবেদন করেন তাদের আইনজীবীরা। ২২ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ এবং অর্থদন্ড স্থগিত করে নথি তলব করেন আদালত। ৭ মার্চ অপর তিন আসামির আপিলও শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। পরে ২৮ মার্চ খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকের করা আবেদনে রুল দেন হাইকোর্ট। পাঁচ বছরের দন্ডের বিরুদ্ধে আপিল করে জামিন আবেদনের পর খালেদা জিয়াকে ১২ মার্চ চার মাসের জামিন দেন হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের পর গত ১৬ মে তা বহাল রেখে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন আদালত। পরবর্তীতে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত করেছিলেন আপিল বিভাগ। এর মধ্যেই আইনজীবীরা অতিরিক্ত সাক্ষ্য ও আপিল নিষ্পত্তির সময় চেয়ে আপিলে আবেদন করেন। সময়ের আবেদন খারিজ করে দেন আপিল বেঞ্চ। এরপর হাইকোর্ট অতিরিক্ত সাক্ষ্য গ্রহণের আবেদনটি খারিজ করে দিয়ে শুনানির শেষ করেন। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।