Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গরমে অতিষ্ঠ জীবন

পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিদ্যুৎ ও পানি সঙ্কট

প্রকাশের সময় : ২৯ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩২ পিএম, ২৮ এপ্রিল, ২০১৬

রাজশাহীতে বৃষ্টির জন্য ইসতিসকা নামাজ আদায় : ইসলামে অনাবৃষ্টি, দাবদাহ থেকে রক্ষার পথ ইসতেগফার পানিবাহিত রোগে আক্রান্তের হার বাড়ছে ইনকিলাব রিপোর্ট : তীব্র গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। সূর্যের প্রখর তাপ আর অনাবৃষ্টির কারণে মানুষের প্রাণ প্রায় ওষ্ঠাগত। গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিদ্যুৎ ও পানি সংকট। ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র গরমের কারণে গত কয়েক দিনে ডায়ারিয়াসহ পানিবাহিত রোগে আক্রান্তের হার বাড়ছেই। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, চলমান তাপপ্রবাহ থাকবে আরও কয়েকদিন। এর মধ্যে দেশের কোথাও কোথাও বৃষ্টির আভাস থাকলেও রাজধানীবাসীর জন্য সহসা কোনো সুসংবাদ নেই। উপায় না দেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইসতিসকার নামাজ আদায় করছেন। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে গতকাল সকালে হযরত শাহ মখদুম রুপোষ (র.) কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে ইসতিসকার নামাজ আদায় করা হয়। মহাখালী মসজিদে গাউসুল আজম এর খতীব আল্লামা রুহুল আমীন খান এ প্রসঙ্গে বলেন, বৃষ্টি বর্ষণ সম্পূর্ণ আল্লাহপাকের হাতে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, “আমিই উপর থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করি। এতে রয়েছে তোমাদের বেঁচে থাকার জরুরী উপকরণ ও রিযিক।” পৃথিবীতে যখন অন্যায়-অনাচার সীমাতিরিক্ত হয়ে যায় তখন অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, ভূমিকম্প, তুষারপাত ইত্যাদি আজাব আসে। তখন তওবা, ইসতেগফার করার মাধ্যমে মানুষ আজাব থেকে রক্ষা পেতে পারে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোলরুম সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৭৫৯ জন। মহাখালী আইসিডিডিআরবিতে ভর্তি হয়েছে ৪৬৫ শিশু। অধিদপ্তরের হিসাব মতে, গত এক সপ্তাহে ডায়ারিয়াজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫ হাজারেরও বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, গরমে মানুষ শুধু ডায়ারিয়ায় নয়, অন্যান্য রোগেও আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে বয়োবৃদ্ধ, শিশু ও ব্লাড প্রেসারের রোগিদের জন্য এই গরম খুবই কষ্টের এবং ঝুঁকিপূর্ণ। গরমে মানুষ জীবনীশক্তি হারিয়ে ফেলছে। সামান্য পরিশ্রমেই মানুষ ক্লান্ত ও বিষণœ হয়ে পড়ছে। প্রচ- গরমে রাজধানীবাসীর জীবন প্রায় ওষ্ঠাগত। গতকাল বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ দিনে সকাল থেকেই ছিল ভয়াবহ যানজট। যানজটের কারণে আধা ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে সময় লেগেছে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। গরমের কারনে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে যাওয়ার মতো অবস্থাও ছিল না। আলাপকালে কয়েকজন গরমে কষ্টের কথা জানান। মিরপুরের বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক হারুন অর রশিদ বলেন, একটা জরুরী কাজে মতিঝিলে এসেছিলাম। দেড় ঘন্টায় মতিঝিলে এসে সামান্য পথ হাঁটতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। কাজ শেষে কিভাবে বাসায় ফিরবো সেই চিন্তায় আছি। ওই শিক্ষক বলেন, গত কয়েক বছরের মধ্যে গরমে এতোটা কষ্ট পাইনি। জুরাইনের বাসিন্দা ব্যবসায়ী আরিফ বলেন, সকালে বাচ্চাকে স্কুলে দিতে গিয়ে বুঝেছি ঘরে-বাইরে সবখানে একই অবস্থা। তিনি বলেন, এতো গরমের মধ্যে বাচ্চারা খুবই কষ্ট পাচ্ছে। পরীক্ষা চলছে বলে স্কুল না গিয়ে উপায়ও নেই। সরকারের উচিত এরকম পরিস্থিতিতে স্কুল কলেজ ছুটি ঘোষণা করা। গুলিস্তানের রিকশাচালক সোহরাব বলেন, গরমে রিকশা চালানোর শক্তিও যেনো হারিয়ে গেছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাত্র ১২০ টাকা রোজগার করেছেন জানিয়ে ওই রিকশাচালক বলেন, আজ জমার টাকা দিতে পারবো কিনা জানি না। এদিকে, গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বিদ্যুৎ ও পানি সংকট। ঢাকা ওয়াসার একজন কর্মকর্তা জানান, গরম পড়ায় রাজধানীতে পানির চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে সংকটও। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যেসব এলাকায় পানির সংকট স্থায়ীভাবে চলে আসছিল সে সব এলাকায় পানির জন্য রীতিমতো হাহাকার শুরু হয়ে গেছে। বিশেষ করে মিরপুরের শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, মান্ডা, বাসাবো, মগবাজার, বাদামতলী, আরসিন গেইট, যাত্রাবাড়ীর কিছু এলাকা, মহাখালী, কাফরুলের একটি অংশসহ রাজধানীতে বেশ কিছু এলাকায় মানুষ পানির জন্য সীমাহীন কষ্ট করছে। অন্যদিকে ত্রুটিপূর্ণ সরবরাহ লাইন মেরামত না করায় ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানির সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে। এসব পানি ফুটালেও ব্যবহারযোগ্য হয় না। অন্যদিকে, ওয়াসার পাম্পগুলো থেকে খাবারের পানি সরবরাহ করা হলেও মানুষের ভিড়ে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় সরকার দলীয় নেতা-কর্মীদের এক তরফাভাবে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে করে শত শত মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও পানি পাচ্ছে না। রাজধানীর কদমতলীর দনিয়া বর্ণমালা স্কুল সংলগ্ন পানির পাম্পেও দুপুরে পানির জন্য লম্বা লাইন দেখা গেছে। ভুক্তভোগিদের মতে, এ বিষয়ে ওয়াসার দিক-নির্দেশনা থাকা জরুরী। পানি সমস্যার সাথে বেড়েছে লোডশেডিংও। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে একই চিত্র পাওয়া গেছে। ঢাকাসহ সারা দেশে দিনে রাতে অসংখ্যবার লোডশেডিংয়ে পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। তীব্র গরমে বিদ্যুৎ না থাকায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে নগরবাসী। ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন জেলায় দিনের অধিকাংশ সময়ই বিদ্যুৎ থাকছে না। গরমে শিক্ষার্থী ও রোগীদের ভোগান্তি সবচেয়ে বেশি। ভুক্তভোগিদের মতে, লোডশেডিংয়ের সময় ফ্রিজে থাকা মাছ-মাংস ও তরকারি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গরম থেকে ক্ষণিকের জন্য একটু স্বস্তি লাভের আশায় মানুষ ফুটপাত থেকে লাচ্চি, লেবুর শরবত, জুস, মালাই ইত্যাদি কিনে খেয়ে উল্টো অসুস্থ হয়ে পড়ছে। গরমের কারণে বেড়ে গেছে তরমুজ, শসা, ডাব ও আনারসের দাম। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভয়াবহ এই গরমে মানুষের শরীর থেকে ঝরে পড়ছে প্রচুর ঘাম, যা কিনা স্বাস্থ্যের ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই এ সময়ে সবাইকে সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করতে হবে। না হলে যেকোনো সময় অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তাঁদের মতে, অতিরিক্ত গরমে ঘোরাফেরা করলে শরীরে অস্বস্তিবোধ, পানিশূন্যতা, প্রচন্ড মাথা ব্যথা, অনিদ্রা, মাংসপেশিতে ব্যথা, খাবারে অরুচি, চামড়ায় ক্ষত, কিডনি ও ফুসফুসে সমস্যা এবং হার্টের সদস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে অতিরিক্ত গরমে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। লবণ বা ইলেকট্রোলাইটসের অভাবও এ শূন্যতার প্রধান কারণ। এ সময়ে শরীরের কোষ সজীব রাখতে প্রচুর পানি খেতে হবে। লবণের অভাব পূরণ করতে খাবার স্যালাইন খাওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি ফলের রসও খাওয়া ভালো। রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহীতে তাপদাহ াব্যাহত রয়েছে। গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রী। প্রচ- খরা ও প্রখর দাবদাহ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার লক্ষ্যে আল্লাহর রহমত কামনা করে বৃষ্টির জন্য গতকাল সকালে হযরত শাহ মখদুম রুপোষ (র.) ঈদগাহ ময়দানে সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে ইসতিসকার নামাজের আয়োজন করা হয়। এতে ইমামতি করেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সোনাদীঘি জামে মসজিদের খতিব শেখ তৈয়বুর রহমান নিজামী। রাসিকের কাউন্সিলর ও মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার জনসাধারণ নামাজে অংশগ্রহণ করে খরা ও তাপদাহ থেকে পরিত্রাণের জন্য বৃষ্টি চেয়ে মহান আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করেন। দাবদাহ থেকে মুক্তি ও বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ মসজিদে গাউসুল আজম মহাখালীর মাননীয় খতীব আল্লামা রূহুল আমীন খান বলেন, বৃষ্টি বর্ষণ সম্পূর্ণ আল্লাহপাকের হাতে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, আমিই উপর থেকে বৃষ্টিবর্ষণ করি। এতে রয়েছে তোমাদের বেঁচে থাকার জরুরি উপকরণ বা রিযিক। পৃথিবীতে যখন অন্যায়-অনাচার সীমাতিরিক্ত হয়ে যায় তখন অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, ভূমিকম্প, তুষারপাত ইত্যাদির আজাব আসে। তখন তওবা, ইসতেগফার করার মাধ্যমে মানুষ আজাব থেকে রক্ষা পেতে পারে। আল্লাহর রহমত লাভ করতে পারে। ইসলামে অনাবৃষ্টি, খরা বা দাবদাহ থেকে রক্ষার পথ হল ব্যাপক তওবা। সুন্নত পদ্ধতি হিসেবে আছে সালাতুল ইসতিসকার নিয়ম। ইসতিসকা নামাজ মানে আল্লাহর দরবারে বৃষ্টি কামনা করে, দু’রাকাত নামাজ মাঠে গিয়ে জামাতের সাথে আদায় করা। তেজগাঁও মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবদুর রাজ্জাক বলেন, আল্লাহর সাথে আল্লাহর বান্দাদের সম্পর্ক স্থাপনের বড় মাধ্যমে হচ্ছে সালাত। নামাজ, দোয়া ও মুনাজাতের মাধ্যমে বান্দা মহান আল্লাহর কাছে নিজের আর্জি তুলে ধরতে পারে। ইসতিসকার নামাজও এমনই একটি পদ্ধতি। পাপী-তাপী, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ছোট-বড়, বিশিষ্ট ও সাধারণ সকল মুসলমান ময়দানে গিয়ে তীব্র রোদে যখন দু’রাকাত বৃষ্টির নামাজ পড়বে তখন মহান আল্লাহর দয়ার্দ্র হয়ে রহমতের বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। রহমত বরকত ও রিযিক নিয়ে বৃষ্টি আসবে। এ সুন্নত জাতীয় পর্যায়ে পালন করলে দ্রুত ফল পাওয়া যায়। স্থানীয় পর্যায়েও সকলের এ নামাজ পড়া কর্তব্য। বাজমে রাহমানি দরবারের সাজ্জাদানশীন পীর মুফতি আবুল হাবীব রাহমানি বলেন, হাদীস শরীফে আল্লাহর প্রিয়নবী বলেছেন, মানুষের গুণাহ বেশি হয়ে গেলে আল্লাহ বৃষ্টি বন্ধ করে দেন। যদি পশু-পাখী ও নিষ্পাপ শিশুরা না থাকত তাহলে আর তিনি বৃষ্টি দিতেন না। মানুষ তওবা, অনুশোচনা, অনুতাপ, ক্ষমা প্রার্থনা কিংবা ইস্তেগফার করলে আল্লাহর দয়ায় আবার বৃষ্টি হবে। ইসতিসকার নামাজ তওবারই একটি নিয়ম। অতীত যুগে মুসলিম শাসকরা ইসতিসকার নামাজ আদায় করতেন। ৯০-এর দশকে একবার সাবেক ধর্মমন্ত্রী মাওলানা এম এ মান্নানের পরামর্শে ঢাকায় ইসতিসকার নামাজ পড়া হয়। প্রেসিডেন্ট স্বয়ং এতে অংশ নিয়েছিলেন এবং জাতীয় ঈদগাহে নামাজ আদায়ের পরপরই বৃষ্টি নামে। আলেমগণ বলেন, আল্লাহর দরবারে রহমতের বৃষ্টি, দাবদাহ থেকে মুক্তি ও উত্তম পরিবেশ কামনা করার জন্য যখন একটি জনগোষ্ঠীর বিশিষ্ট ব্যক্তিরা মাঠে এসে দোয়া করেন তখন খুব দ্রুত কাজ হয়। খুলনা থেকে, আবু হেনা মুক্তি জানান, উপকূলের কাছাকাছি হওয়া সত্ত্বেও বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের তাপমাত্রা এখন অসহনীয়। খরা প্রবণতা দেখা দিয়েছে বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবন উপকূলীয় এ অঞ্চলে। তীব্র তাপদাহে ছটফট করছে দেশের মধ্য ও নিম্নআয়ের এ অঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষগুলো। খালে বিলে জঙ্গলে কিম্বা রাস্তাঘাটে শ্রমজীবী মানুষ তাপদাহে হাপিত্তেশ করছে। প্রবীণ ব্যক্তিরা বলছেন, এ কিসের আলামত। ক্রমশ তীব্রতর হচ্ছে পরিবর্তিত জলবায়ুর প্রতিফলন। গত ১০ বছরের তাপমাত্রার উর্ধ্বমুখী প্রবণতা এ অঞ্চলের মানুষ ও জীববৈচিত্রের জন্য চরম হুমকি স্বরূপ। সবুজ উপকূলীয় বেষ্টনীতে মরুকরণের আভাস পরিলক্ষিত হচ্ছে। সুপেয় পানির সকল উৎসে মহাসংকটের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। বর্তমান আবহাওয়া এই আশংকারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। ২০৫০ সালের মধ্যে খুলনাঞ্চলের গড় তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রীরও বেশি পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। একই সময়ে ২৬ শতাংশ হারে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ার আশংকাও করা হচ্ছে। জলবায়ুর নিরিখে খুলনার পরিবেশে এখন ভারসাম্যহীন। বৈশাখে এবারের তাপদাহ স্মরণকালের রেকর্ড ভেঙ্গেছে। চাতক পাখি কিম্বা ব্যাঙাচির করুণ আর্তনাদ কোনভাবেই আঘাত হানছে না প্রকৃতির হৃদয়ে। বৃষ্টির জন্য দোয়া হচ্ছে মসজিদে মসজিদে। তবুও বৃষ্টির দেখা নেই। এখন বর্ষা কালে বর্ষা নেই, শীতের সময় নেই শীত আর বৈশাখ জৌষ্ঠের যে অতিথি বৃষ্টি তাও হারিয়ে যেতে বসেছে। প্রকৃতি এমনই রুষ্ট, এমনই রুক্ষ। তাপমাত্রার ও বৃষ্টিপাতের হেরফের এখন আর ধারাবাহিকতা থাকছে না। অনুমান করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে এই ধারাবাহিকতাহীনতা আরও তীব্র হবে। বিপরীতভাবে শুষ্ক মৌসুমে বৃষ্টি কমবে, খরা প্রবণতা তীব্রতর হবে। এশীয়া উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) পরিচালিত এক গবেষণায়র উদ্বৃতি দিয়ে সূত্র জানায়, একটি ২০৫০ সালের মধ্যে খুলনাঞ্চলের মাসিক গড় তাপমাত্রা অক্টোবর শূন্য দশমিক ৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড থেকে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ১ দশমিক ৭ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড এর মধ্যে ওঠানামা করবে। খুলনায় চলতি মাসে ৩৬ থেকে ৪২ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। গত ১০ বছরের উপরোক্ত তথ্যসমূহ বিশ্লেষণ করে সূত্রটি জানায়, উল্লিখিত সময়ে খুলনার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এবং সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা মোটামুটিভাবে উর্ধ্বমুখী। সূত্রটি ২০৫০ সালের জলবায়ুর অনুমিত আশংকার স্বরূপ প্রসঙ্গে জানায়, তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে পরিবেশ প্রতিবেশের সবকিছুই জড়িত। অনুমিত পরিমানে তাপমাত্রা বাড়লে কৃষি ব্যবস্থা ধ্বংস হবে। খাদ্য উৎপাদন কমবে। খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিবে। বিদ্যমান রোগজীবানুর সংক্রমণ ধরন পাল্টে যাবে। মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়বে। সার্বিকভাবে যা খুলনা উপকূলীয় অঞ্চলের মত দারিদ্রবহুল কৃষিপ্রধান এবং বিপুল জনগোষ্ঠি অধ্যুষিত অঞ্চলে হাহাকার সৃষ্টি করবে। এছাড়াও খুলনা শহর এলাকার অন্য আরেকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে সুপেয় পানির উৎসের সংস্থা। খরা প্রবণতায় ভূ উপরিস্থ পানিসহ গভীর এবং অগভীর নলকূপসহ সকল উসের পানি প্রাপ্তিকেই অনিশ্চিত করে দিচ্ছে। ২০৫০ সালের মধ্যে ২৬ শতাংশ হারে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ার আশংকায় নিকট ভবিষ্যতে খুলনা শহরাঞ্চল সুপেয় পানি মহাসংকটের কারণ হতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। সূত্রটি উল্লিখিত গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে আরও জানায়, শুধু তাপমাত্রাই না ২০৫০ সালের মধ্যেকার সময়ের মধ্যে খুলনা অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের ধরনের মধ্যেও ব্যাপক অসামঞ্জ্যতা দেখা দিবে।



 

Show all comments
  • Noore Elahi Dilshad ২ মার্চ, ২০১৭, ২:৪৩ পিএম says : 0
    ইস্তিসকার নামাজের নিয়ম কি?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গরমে অতিষ্ঠ জীবন

২৯ এপ্রিল, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ