Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সেনা মোতায়েন করা হতে পারে

৩০ অক্টোবর থেকে নির্বাচনের কাউন্ট ডাউন শুরু :সিইসি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার নিয়ে কোনো আইন নেই। এ সংক্রান্ত আইন হলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সীমিত আকারে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। বিগত দিনের জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় আসন্ন নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হতে পারে। গতকাল শনিবার সকালে খুলনায় অনুষ্ঠিত ইভিএম মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এসব কথা বলেন।
একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জনগণকে ধারণা দিতে দেশের আট অঞ্চলে গতকাল ইভিএম মেলার এই আয়োজন করেছে নির্বাচন কমিশন। সিইসি বলেন, ৩০ অক্টোবর থেকে নির্বাচনের ক্ষণ গনণা বা কাউন্ট ডাউন শুরু হবে। ২৮ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। সে হিসেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি) অনুমোদন করলে নভেম্বরে নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা করা সম্ভব হতে পারে।
সরকার ও নির্বাচন কমিশনের আগ্রহ থাকলেও ইভিএমে ভোট নেওয়ার ক্ষেত্রে ঘোরতর আপত্তি রয়েছে বিএনপির। এর মাধ্যমে সরকার ভোট কারচুপি করবে বলে দাবি করেছে দলটি। দশম জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশন চলছে এখন। আগামী সোমবার অধিবেশন শেষের মধ্য দিয়ে এই সংসদের মেয়াদ শেষ হবে। জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করার লক্ষ্যে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের প্রস্তাব করেছে ইসি। সংসদে আরপিও সংশোধনী পাস হলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে সীমিত পরিসরে ইভিএম ব্যবহার করতে চায় ইসি। সে ক্ষেত্রে আগামী দুই দিনের মধ্যে সংসদের অধিবেশনে আরপিও সংশোধনী পাস না হলে অধ্যাদেশ জারি ছাড়া জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা সম্ভব হবে না। ২০১১ সালের পর কয়েকটি স্থানীয় নির্বাচনে সীমিত পরিসরে ইভিএম ব্যবহার হয়েছে। ১৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ইভিএম কেনার জন্য ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকার প্রকল্প পাস করা হয়। নির্বাচনী ব্যবস্থায় অধিকতর স্বচ্ছতা আনার লক্ষ্যে ইভিএম কেনা, সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় মোট দেড় লাখ ইভিএম কেনা হবে।
ইভিএম মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হুদা বলেন, ইভিএম নিয়ে বিতর্ক ছিল, আছে, থাকবে। উন্নত দেশেও এ নিয়ে বিতর্ক আছে। তথ্যের বিভ্রাট হলে তখন বিতর্ক হয়। তারপরও ইভিএমকে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। ইভিএম দিয়েই এবারের নির্বাচন করা হবে। ইভিএমের সুবিধা সম্পর্কে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ইভিএম সাশ্রয়ী, এতে নির্বাচনের ৬০ শতাংশ ব্যয় কমে যাবে। এতে ইন্টারনেট সংযোগ নেই বলে হ্যাকিং করা সম্ভব নয়। যন্ত্রটি এমন যে কেউ যদি ভোট চুরি করে নিয়ে যায়, তাহলেও ভোট কারচুপির সুযোগ নেই। নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা থাকবে। তাই আগে ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকবে না। ইভিএমে ভোটারের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করে ভোট দিতে হয়। পৃথিবীর ৬০০ কোটি মানুষের কারও সঙ্গে কারও আঙুলের ছাপ মেলে না। বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের নেতারা ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতার পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানিয়ে এলেও এ নিয়ে কমিশন ‘উদ্বিগ্ন নয়। তারা না জেনে ইভিএম এর বিরোধিতা করছেন। বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা না করে ইভিএম সম্পর্কে জেনে বুঝে পরামর্শ দিতে আহ্বান জানাব আমি জানান নূরুল হুদা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ হেলাল হোসেন,বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. হুমায়ুন কবীর এবং জলা পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নূরুল হুদা বলেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাত করে নভেম্বর মাসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন তিনি। নির্বাচনে সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অতীতে জাতীয় নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এবার কী হবে সে বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিগত দিনের জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় আসন্ন নির্বাচনে সেনাবাহিনী থাকতে পারে। তবে তা নির্বাচন কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে। নির্বাচন কমিশন অনুমোদন করলে এবং প্রয়োজন হলে নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষার্থে সেনা মোতায়েন করা হতে পারে।
নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম রাজশাহীতে, নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ফরিদপুরে, নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম রংপুরে, ইসি সচিব হেলাল্দ্দুীন আহমদ চট্টগ্রামে, নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মুখলেছুর রহমান ও যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহমদ খান সিলেটে এবং যুগ্ম সচিব খোন্দকার মিজানুর রহমান কুমিল্লায় এ মেলার উদ্বোধন করেন।
গতকালও ইভিএমের বিরোধিতা করে বক্তব্য দিয়েছেন বিএনপি নেতারা। সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করে বলেছেন, বিভিন্ন দেশে প্রত্যাখ্যাত ও বিতর্কিত ইভিএম ব্যবহার করে ইসি পাতানো নির্বাচন করতে চাইছে। জনগণের সব মতামত উপেক্ষা করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করতে দেশের আটটি অঞ্চলে ইভিএম মেলা করছে ইসি। ভোট কারচুপির জন্য সরকারি হুকুমেই এটা করা হচ্ছে।
আগামী নির্বাচনে সীমিত আকারে ইভিএম
সিলেট ব্যুরো জানান, সিলেট নগরীর জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে ইভিএম প্রদর্শনীর উদ্বোধনকালে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেসুর রহমান বলেছেন, সিলেটের সাথে দেশের আরো ৭টি অঞ্চলে একযোগে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রদর্শনী চলছে। জাল ভোট, কেন্দ্র দখল করা, এবং রাত জেগে কেন্দ্র পাহারা দেওয়া এরকম অবস্থা থেকে উত্তরণ পাওয়ার জন্য ইভিএম’র বিকল্প নেই। ইভিএম’র প্রশংসা করে তিনি বলেন, ইভিএম শতভাগ নির্ভরযোগ্য একটি সিস্টেম। রংপুরে এই মেশিনের মাধ্যমে মাত্র ভোটের ১৩ মিনিটে ফলাফল দেয়া সম্ভব হয়েছে। এতে প্রত্যেক ভোটারের আঙুলের ছাপ কন্ট্রোল ইউনিটে সেভ করা থাকে। সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটাররাই শুধু এতে ভোট দিতে পারবেন। অন্য কোন এলাকার লোক কোন ভাবেই ভোট দিতে পারবেন না।
সিলেট জেলা সিনিয়র নির্বাচনী কর্মকর্তা খোরশেদ আলম বলেন, ডেমো ভোটের জন্য মেলায় ১০টি ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন রাখা হয়েছে। এছাড়া নিয়ন্ত্রণ কক্ষসহ ছয়টি স্টল করা হয়েছে। সিলেট ছাড়াও দেশের আরও ৭টি (খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, ফরিদপুর, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা) অঞ্চলে ইভিএম প্রদর্শনী চলবে। ১২ ও ১৩ নভেম্বর ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র ইভিএম মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ফরিদপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেছেন, ইলেকট্রনিকস ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এর মাধ্যমে ভোট গ্রহন প্রক্রীয়া অত্যন্ত স্বচ্ছ ও আস্থার। তাই সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাইলে ইভিএম পদ্যতিকেই বেছে নিতে হবে। কারণ ইভিএম পদ্যতিতে ভোট চুরির কিংবা জাল ভোট প্রদানের কোন সুযোগ নেই। সাংবাদিকদের প্রশ্নের তিনি বলেন, এই মুহুর্তে সেনা মোতায়েনের কোন চিন্তাভাবনা নেই। তফসিল ঘোষনার পর পরিবেশের উপর নির্ভর করবে সেনা মোতায়েন করা হবে কিনা। ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়ার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন,নির্বাচন কমিশনের পরিচালক ফরহাদ হোসেন, পুলিশ সুপার মো. জাকির হোসেন খাঁন, আঞ্চলিক নির্ভাচন কর্মকর্তা নুরুজ্জামান তালুকদার, সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার মো. আলাউদ্দিন।



 

Show all comments
  • হাবিব ২৮ অক্টোবর, ২০১৮, ৩:৪৯ এএম says : 1
    এর কোন বিকল্প নেই।
    Total Reply(0) Reply
  • Jubaer Khan ২৮ অক্টোবর, ২০১৮, ২:০৮ পিএম says : 0
    তাদের কি জানা নেই ইভিএম এর হার্ডওয়্যার হ্যাক বা বাইপাস করা যায়। তখন মানুষ ভোট দেবে ঠিকই, কোন জাল ভোট হবে না। তবে সামান্য মোবাইল ফোন দিয়ে ইভিএম এর রেজাল্ট চেঞ্জ করা যাবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইভিএম

৩ অক্টোবর, ২০২২
৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ