পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীর পোস্তগোলায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রথম বুড়িগঙ্গা সেতুকে টোলমুক্ত করার দাবিতে আন্দোলনরত পরিবহন শ্রমিকদের সাথে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের সময় গুলিতে একজন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ সময় গুলিতে আহত হয়েছে আরো শতাধিক শ্রমিক। সংঘর্ষে ওসিসহ ৩০জন পুলিশ আহত ও ব্যাপক গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টা থেকে থেমে থেমে বেলা ১টা পর্যন্ত ঢাকার উপকণ্ঠ কেরানীগঞ্জের পোস্তগোলা ব্রিজের ঢালে এ ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষের সময় ওই এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আশপাশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে মানুষ নিরাপদে সরে যায়। রাস্তার পাশে থাকা প্রাইভেটকারসহ পুলিশের গাড়িও ভাংচুর করা হলে সড়কের দুই পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় দূর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। নিহতের পরিবহন শ্রমিকের নাম সোহেল (২৮)। তিনি মহেন্দ্র গাড়ির চালক। আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ৮জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয়রা প্রথম বুড়িগঙ্গা সেতুর টোল নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে চলা অস্থির অবস্থার জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগের দুর্নীতিকে দায়ী করেছেন। শ্রমিক নেতাদের অভিযোগ, বরাবরই এই সেতুর টোল নির্ধারণ নিয়ে সড়ক বিভাগ সিন্ডিকেটের আশ্রয় নিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করে। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও লাখ লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে একটি অনভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানকে টোল আদায়ের দায়িত্ব দিয়েছে। শুধু তাই নয়, টোল আদায়কারী প্রতিষ্ঠানকে অবৈধ সুবিধা দিতে অসামঞ্জস্যপূর্ণ টোল নির্ধারণ করা হয়েছে। যেখানে দুই বছর আগে একটি ট্রাকের টোল ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৪০ টাকা করা হয়েছে। আবার এতদিন ত্রি-চক্রযান টোলমুক্ত থাকলেও সিএনজি অটোরিকশাতে ২৫ টাকা টোল ধরা হয়েছে। একই সাথে মোটরসাইকেলের টোল ধরা হয়েছে ১৫ টাকা। শ্রমিক নেতাদের অভিযোগ, মুন্সীগঞ্জ জেলা সড়ক বিভাগকে মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়ে টোলের অঙ্ক বাড়িয়ে নিয়েছে টোলের ইজারাদার। এই টোল কমিয়ে আনার দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ করেছিলেন পরিবহন শ্রমিকরা। গতকাল তা সহিংস রূপ নেয়। এই পরিস্থিতিতে সেতুর উপর দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক চান চলাচল কয়েক ঘন্টা বন্ধ থাকে। এ প্রসঙ্গে ইজারাদার আলম সাংবাদিকদের বলেন, দীর্ঘদিন এই সেতুতে সরকার টোল বসাতে পারেনি। গত ২২ অক্টোবর থেকে আমি টোল চালু করেছি। এতে সরকার রাজস্ব আয়ের সুযোগ পাচ্ছে। এখানে শাহীন চেয়ারম্যান কিংবা বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বললেই তাদের মুখের কথায় টোল আদায় বন্ধ করব না। যান চলাচলের পর রাস্তা স্বাভাবিক হলেই টোল চালু হবে।
আগেও এই সেতুতে টোল নেওয়া হতো এবং ২২ তারিখে টোলের পরিমাণ কয়েকগুণ বাড়ানো হয়-এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ইজারাদার আলম বলেন, আগে একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এই সেতুতে টোল আদায় করা হতো। কিন্তু টোলের টাকা সিন্ডিকেটের সদস্যরা সবাই ভাগ-বাটোয়ারা করে নিত। স্থানীয় নেতা থেকে শুরু করে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরাও এই টাকার ভাগ পেতেন। এতদিন এখান থেকে সরকার কোনো রেভিনিউ (রাজস্ব) পায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সকালে পুলিশের গুলিতে শ্রমিক নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকরা আরও বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে। থেমে থেমে সংঘর্ষ চলতে থাকে। পুলিশ গুলি করে বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে ব্যর্থ হয়। কয়েক ঘন্টা পর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
শ্রমিকদের অভিযোগ, ইজারাদার ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে সকালে প্রথমে আন্দোলনরত শ্রমিকদের উপর হামলা করায়। এতেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
ঢাকা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুম আহমে ভূইয়া জানান, দক্ষিন কেরানীগঞ্জ থানার ওসি শাহ জামান ও ওসি তদন্ত মো. কামাল হোসেনসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যদেরকে হত্যার উদ্দেশ্যে বিআরটিএ অফিসের ভিতর আক্রমন করা হলে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য রাবার বুলেট ও শর্টগান দিয়ে ফাঁকা গুলিবর্ষন করে। আন্দোলনকারীদের হামলায় ওসি প্রশাসন ও ওসি তদন্তসহ ৩০জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। এ ঘটনায় গতকাল সন্ধা পর্যন্ত থানায় কোন মামলা হয়নি।
এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সেতুর দক্ষিণপ্রান্তের ইকুরিয়া এলাকায় অবস্থান নেয় ট্রাক চালক শ্রমিকরা। তারা ট্রাক রেখে সড়কে বাধা সৃষ্টি করেন। এতে মূহুর্তে সড়কের দুই পাশে তিব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এভাবে সকাল ৯টা পর্যন্ত চলে। সকাল সাড়ে ৯টায় সেতুর দক্ষিন প্রান্তে হাসনাবাদ এলাকায় সিএনজি অটোরিকশা ও ট্রাক চালকরা মিছিল বের করে। এক পর্যায়ে পুলিশ ও ইজারাদারের লোকজন তাদের বাধা দেয়। এতে পুলিশের সাথে শ্রমিকদের সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ আন্দোলনকারীদের বেশ কয়েকজনকে মারধর করলে শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে প্রায় ১ঘন্টা ধাওয়া-পাল্টা চলতে থাকে। পুলিশ এক পর্যায়ে পিছু হটে ইকুরিয়া বিআরটিএ অফিসের ভিতর ঢুকে পড়ে। এতে আন্দোলনকারীদের সাথে উত্তেজিত জনতা একত্রিত হয়ে পুলিশের উপর বৃষ্টিরমতো ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এসময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য রাবার বুলেট ও শর্টগানের গুলি বর্ষন করলে সোহেল নামের এক শ্রমিক পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। এই ঘটনায় আরো ১০জন গুলিবিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আহত আকাশ ও মাসুদকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং আল-আমিন, তাসলিমা, মানিকসহ ৫জনকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ইকুরিয়া জেনারেল হাসাপাতালে বাকী ৩জনকে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার খবর পেয়ে গতকাল দুপুরে ঘটনাস্থলে কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ ও প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এসময় আন্দোলনকারীদের সেতুতে টোল মুক্ত করার ঘোষনা দিলে আন্দোলনকারীরা শান্ত হয়। পরে দুপুর ২টা থেকে সেতু দিয়ে টোল মুক্ত অবস্থায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
নিহত সোহেলের বাড়ি বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ থানায়। সে হাসনাবাদ এলাকায় একটি মোটর গ্যারেজে কাজ করতো। আহতদের মধ্যে পথচারী মহিলা, এক বৃদ্ধ ভিক্ষুক ও এক প্রতিবন্ধী যুবক রয়েছেন।
আমাদের কেরানীগঞ্জ উপজেলা সংবাদদাতা জানান, দক্ষিন কেরানীগঞ্জ থানার ডিউটি অফিসার এসআই শ্রীবাস জানান, নিহত সোহেলের লাশ ময়না তদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরন করা হয়েছে। গুলিবিদ্ধরা হচ্ছেন, আল আমিন (২৫), মো. মানিক (৩০), তাসলিমা বেগম (৩৫), মো. সিদ্দিক (৩৫), মো. আকাশ (৩৬), মো. মাসুদ (৩২), মো. লাইজুল ইসলাম (৪৩), মো. সাজু (৫৫), মো. বাক্কু মিয়া (৪৫), অজ্ঞাতনামা এক ভিক্ষুক (৬০) ও এক প্রতিবন্দী যুবক।
সুমন নামে এক সিএনজি অটোনিকশা চালক দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আলম শিপিং লিমিটেডের নামে একটি প্রতিষ্ঠান ইজারা নিয়ে সেতুতে চলাচলকারী সকল যানবাহনের অতিরিক্ত টোল আদায় করছে। আমরা এখন সেতুতে টোলমুক্ত করার দাবীতে সকালে মিছিল বের করি। এতে পুলিশ আমাদের বাধা দিলে তাদের সাথে সংঘর্ষ বাধে। এসময় পুলিশ মিছিলকারীদের লক্ষ করে গুলি বর্ষন করলে সোহেল গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় এবং আরো ১০জন গুলিবিদ্ধ হয়।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ শাহজামান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, শ্রমিকদের সরিয়ে দিতে গেলে তারা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) একটি কক্ষে পুলিশ আশ্রয় নিতে গেলে সেখানেও শ্রমিকেরা হামলা চালায় এবং আগুন লাগিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। সংঘর্ষের ঘটনায় ৫০ জন পুলিশ আহত হয়েছে। পুলিশ সেখানে ফাঁকা গুলি ছুড়েছে ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।
সরকারি নিয়ম মেনেই টোল আদায় করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইজারাদার এ আলম এন্টারপ্রাইজের পরিচালক মো. আলম বলেন, আমরা টোল বৃদ্ধি করিনি। সরকারি নিয়মে টোল বাড়ানো হয়েছে এবং আমরা সে অনুযায়ী আদায় করছি। তিনি বলেন, টাকা দিয়ে সেতু ইজারা নেয়া হয়েছে। টোলমুক্ত করার দাবি অযৌক্তিক। এটা মেনে নেয়া যায় না।
নিহত সোহেলের শ্যালক তানজিল সাংবাদিকদের জানান, পোস্তগোলা ব্রিজে সংঘর্ষের সময় সকালে সোহেল বাড়ি থেকে বের হওয়ার পরই পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান। তিনি হাসনাবাদ এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকতেন।
সংঘর্ষে আহত বিল্লালের ভাতিজা শাহবুদ্দিন জানান, সোহেল আগে পোস্তগোলা ব্রিজের ঢালে একটি সয়াবিন তেলের (মুদি দোকানে) কাজ করতেন। কোরবানি ঈদের পর তিনি গাড়ি চালানোর কাজ শুরু করেন। সকালে সংঘর্ষ শুরুর সময় তিনি বাড়ি থেকে বের হন। এ সময় পুলিশ বিক্ষুব্ধ হয়ে গুলি ছুড়ছিল। তখন একটি গুলি সোহেলের বুকে ও পেটে এসে লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই সোহেলের মৃত্যু হয়।
বিল্লালের ভাবি নাজমা জানান, হাসনাবাদে আমরা পরিবার নিয়ে একসঙ্গে বসবাস করি। সংঘর্ষের সময় বিল্লাল পাশের হোটেলে নাস্তা করছিল। আমিও গন্ডগোল দেখতে আসি। পাশের একটি ফার্মেসি দোকানে দাঁড়িয়েছিলাম। তখন সকাল ৯টা বাজে। শ্রমিকদের ওপর পুলিশ যখন গুলি ছোড়ে তখন এক লোক আমাকে ঠেলে ওই ফার্মেসির ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যে অনেকেই পুলিশের গুলিতে আহত হয়। সেখানে দেখি আমার দেবরও রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। তখন তাকে পাশের হাসপাতালে নিয়ে যাই।
এদিকে, গতরাতে এ রিপোর্ট লেখার সময় সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। তবে সেতু পারাপারের জন্য কোনো টোল আদায় করা হয়নি। স্থানীয়রা জানান, উত্তপ্ত পরিস্থিতির কারণে টোল আদায় করতে কেউ আসেনি। বিকালের পর থেকেই টোলমুক্ত সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।