পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাবি রিপোর্টার : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যাকা-ে জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। বুধবার সাড়ে ১০টা থেকে ঘন্টাব্যাপী ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষক হত্যার বিচার দাবিতে শ্লোগানে শ্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠে বিশ্ববিদ্যালয়সহ পার্শ্ববর্তী এলাকা। হাজারো শিক্ষার্থীর কণ্ঠে উচ্চারিত হতে থাকে ‘এক দফা এক দাাবি-শিক্ষক হত্যার বিচার চাই’।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, বুধবার বেলা ১০টার দিকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বরে জড়ো হতে থাকে। সেখান থেকে সাড়ে ১০টায় বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তারা পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। একই সময় ইংরেজী বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মৌন মিছিল নিয়ে প্রধান ফটকে অবস্থান নেয়। পরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে হাজারো শিক্ষার্থী মহাসড়কে অবস্থান নেয়। ফলে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে ‘আমার শিক্ষক হত্যা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘শিক্ষা, সন্ত্রাস-এক সাথে চলে না’, ‘শিক্ষক হত্যার বিচার চাই’ ইত্যাদি প্রতিবাদী শ্লোগান দিতে থাকে।
একই দাবিতে সকাল সাড়ে ১১টার হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থপনা বিভাগ, ফোকলোর, মার্কেটিং, কম্পিউটার সায়েন্স, বাংলা বিভাগসহ অন্যান্য বিভাগ বিক্ষোভ করে। এছাড়া বিচারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ একটি প্রতিবাদী র্যালী বের করে। অন্য দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হত্যার আন্দোলন জোরদার করার জন্য শহীদুল্লাহ কলা ভবনের সামনে তৈরী করা হয়েছে মুকুল মঞ্চ। এই মঞ্চ থেকে আগামীকাল আন্দোলন শুরু হবে বলে জানা গেছে। আগামীকাল বেলা ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্যারিস রোডে এক সমাবেশের ডাক দিয়েছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট।
প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেত্রী তমাশ্রী দাস বলেন, যতদিন না শিক্ষক হত্যাকারীদের পুলিশ শনাক্ত করতে ও শাস্তি দিতে পারছে, ততদিন আমাদের এই আন্দোলন চলবে।
এদিকে রেজাউল করিম সিদ্দিকীর হত্যার পাঁচ দিন অতিবাহিত হলেও, এখনো কোন ক্লু উদ্ধার করতে পারিনি পুলিশ। রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওসি খন্দকার জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা ইতোমধ্যে হাফিজুর রহমানকে আদালতের মাধ্যেমে জেলহাজতে প্রেরণ করেছি। এছাড়া আটক বাগমারার দরগামারিয়া জামে মসজিদের ইমাম রায়হান আলী ও খায়রুল ইসলামকে কোর্টে পাঠানোর কথা রয়েছে।
এদিকে ডিবির এই কর্মকর্তার কাছে মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি বলেন, এখনো কোন ক্লু উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. শামসুদ্দিন বলেন, আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে তেমন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে এটা পরিকল্পিত হত্যাকা- বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, রেজাউল কমিরকে হত্যার সময় তিন জন মটরসাইকেলে যোগে এসে হামলা চালায়, এসময় দুই জন তাকে আঘাত করে এবং একজন মোটরসাইকেলে বসেছিল।
তিন ক্লু ধরে এগোচ্ছে তদন্ত কাজ:
হত্যাকা-ের ঘটনায় এ পর্যায়ে এসে তিনটি ক্লু ধরে মামলার তদন্ত কাজ নিয়ে এগোচ্ছে পুলিশ। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, সংস্কৃতিমনা, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় ধর্ম নিয়ে কোনো বক্তব্য এবং ব্যক্তি কোনো শত্রুতা আছে কিনা। এই তিনটি বিষয়ের মধ্যে প্রথম দুটিকেই আপাতত বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে পুলিশ। তবে এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য-প্রমাণাদি সংগ্রহ করতে পারেনি পুলিশ। যা তদন্ত হচ্ছে সবই অনুমান নির্ভর।
সূত্র মতে, গানের স্কুল প্রতিষ্ঠাকেন্দ্রিক প্রতিবন্ধকতার জের ধরেই নিভৃতচারী শিক্ষক রেজাউল করিমকে হত্যা করা হয়েছে কিনা সে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখতেই ওই গ্রামের জামে মসজিদের ইমামসহ দুজনকে গত মঙ্গলবার ভোরের দিকে আটক কর হয়। তারা হলেন, দরগামাড়িয়া জামে মসজিদের ইমাম রায়হান আলী (৩২) এবং একই এলাকার গোপালপুর ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার শিক্ষক মুনসুর রহমানকে (৪৮) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার মো: শামসুদ্দিন জানান, প্রফেসর রেজাউল করিম সিদ্দিকী তাঁর নিজ গ্রামে একটি গানের স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু তাঁর গ্রামের মসজিদের ইমাম রায়হান আলী সঙ্গীত তেমন পছন্দ করেন না। তিনি গানের স্কুল প্রতিষ্ঠার সময় সামান্য বিরোধিতাও করেছিলেন। কিন্তু তার পরেও রেজাউল করিম এলাকার শিশুদের সঙ্গীত শিক্ষার জন্য একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়েই ইমাম রায়হান আলী রেজাউল করিমকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল কিনা সেটি খতিয়ে দেখতেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁর সহযোগী হিসেবে পরিচিতি ফোরকানিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষককেও আটক করা হয়েছে। তাদের আলাদা আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
অপরদিকে পুলিশের আরেকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, শিক্ষক রেজাউল করিমের সঙ্গে ব্যক্তিগত কোনো বিষয়ের জের ধরে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে কিনা, সেটিও পুলিশ খতিয়ে দেখছে। এর জন্য তাঁর মোবাইল ফোনের কললিস্ট ধরেও তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, গত শনিবার সকাল পৌনে ৮টায় রাজশাহীর শালবাগান এলাকায় নিজ বাসা থেকে একটু দূরে প্রফেসর রেজাউল করিমকে কুপিয়ে হত্যা করে ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা।
সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের কর্মবিরতি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের প্রফেসর এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যাকা-ের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত বিচারের দাবিতে দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন ঘণ্টার কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। গতকাল বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল স্বাক্ষরিত এই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আগামী ২ মে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এই কর্মসূচী পালন করা হবে। একই সঙ্গে ওই দিন কালো ব্যাজ ধারণ ও ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্ধারিত স্থানে অবস্থান কর্মসূচিও পালন করা হবে। আগামী ৩রা মে সকাল ১১টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হবে। ৪ঠা মে বেলা ১১টায় ফেডারেশনের নেতৃত্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিকট স্মারকলিপি প্রদান করা হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ২৬শে এপ্রিল বিকাল ৪টায় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী পরিষদের এক জরুরি সভায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রফেসর এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে ধর্মান্ধ জঙ্গিবাদীগোষ্ঠী কর্তৃক নৃশংসভাবে হত্যা করায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। সভায় আলোচনা করে তিনটি দাবি উত্থাপন করে। দাবিগুলো হলো- সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অধ্যাপক রেজাউল করিমের হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে অনতিবিলম্বে গ্রেফতার ও দ্রুত বিচারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে; ধর্মান্ধ জঙ্গিবাদীগোষ্ঠী বারংবার মুক্তচিন্তার ধারক ও বাহক এবং অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের প্রত্যয়ে বিশ্বাসীদের উপর হামলা অব্যাহত রেখেছে। জঙ্গিবাদীগোষ্ঠীর এরূপ অনৈসলামিক এবং নিষ্ঠুর ও পাশবিক কর্মকা- বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে; মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকসহ জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।