Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাম চাষে অফুরন্ত সম্ভাবনা

আবু হেনা মুক্তি | প্রকাশের সময় : ২২ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

পাম গাছ চাষের অমিত সম্ভাবনা রয়েছে। নেই সরকার প্রধানের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছার কোন ঘাটতি। এখন শুধু প্রয়োজন উদ্যোগ ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ। উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার পাশাপাশি পলিসি মেকারদেরও ভূমিকা নিতে হবে। দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে সংশ্লিষ্টদের। আর তাতেই অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। আর কিছু নয়, পামগাছ চাষের মধ্য দিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি দ্রুত জাতীয় সমৃদ্ধি অর্জন করা যায়। 

এখনই সময় এ ধরনের কর্মকান্ডে দেশের লাখ লাখ বেকারদের কাজে লাগানোর। মাত্র ৩ থেকে ৪ কোটি পাম গাছ রোপণ করলে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে এই সেক্টরে। মালেশিয়ার মত বাংলাদেশও আত্মনির্ভরশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে ঠাঁই করে নিতে পারবে। চিংড়ী, চা ও গামের্ন্টস শিল্পে যেমন অগ্রগতি হয়েছে তার চেয়েও ভালো ফলাফল হতে পারে এই সেক্টরে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি খুব কঠিন কিছু নয়। পরিকল্পনা মাফিক কাজ করলে সফলতা অর্জন হবেই। সম্প্রতি ‘সবুজ গাছের তরল সোনা বদলে দেবে বাংলাদেশ-চাষিকে সাথে নিয়ে গড়ব নতুন দেশ’ গ্রীন বাংলাদেশের এই স্লোগান নিয়ে দারিদ্র্য বিমোচন ও পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষায় পাম চাষের গুরুত্ব শীর্ষক এক কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরাও এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণ ও তার সাফল্য নিশ্চিতের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।
বিশেষজ্ঞরা জানান, কোন পরিবারে মাত্র ৫টি পামগাছ থাকলে তাদের ভোজ্য তেলের সারা বছরের চাহিদা মেটানো সম্ভব। পাম তেলে বিশেষ স্বাস্থ্যপ্রদ গুণাবলী রয়েছে। পাম তেলে কোলেস্টেরল থাকে না এবং খাদ্যে পাম তেল ব্যবহার করলে রক্তে মোট কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায় না। এই তেল খাদ্যে ব্যবহার করলে দেহে উপকারী এইচডিএল কেলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে এবং ক্ষতিকরএইচডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়। রক্তের জমাট বাঁধার প্রবণতা হ্রাস করে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। ভিটামিন ই ও ক্যারোটিন থাকে।
প্রাকৃতিক এন্টিঅক্সিডেন্টগুলো ক্ষতিকারক অক্সিজেন ফ্রি র‌্যাডিক্যালকে অপসারন করে এবং সেলুলার এজিং এথেরোসি কোরোসিস এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধী ভূমিকা পালন করে। পাম তেলে বিদ্যামান ক্যারোটিনয়েড পোকাফেরলস থাকায় এটি ক্যান্সার প্রতিরোধক ও হৃদরোগে উপকারী।
পামওয়েল ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন অনেক খাদ্য তৈরি হয়। এছাড়া ফল শূন্য কাদি ও আশকে প্রক্রিয়াজাত করার মাধ্যমে ঘনত্বের ফাইবার বোর্ড ও চিপ তৈরি সম্ভব হয়েছে। পাম গাছের গুড়ি থেকে চমৎকার আসবাবপত্র তৈরি সম্ভব। এর বীজ থেকে উৎপাদিত কার্নেল তেল থেকেই বিউটি সোপ (সাবান) ও বিভিন্ন প্রকার কাপড় কাঁচার ডিটারজেন্ট পাউডার তৈরি হয়।
কৃষিবিদ রতিকান্ত বিশ্বাস বলেন, পাম গাছ মাটির ক্ষয়রোধ করে। গত ৩৭ বছর ধরে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া পাম চাষের উপযোগী। কোন কোন স্থানে মালয়েশিয়ার চেয়েও পামের ভালো ফলন আশা করা যায়। প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা ও পরিচর্যা।
দেশে ১৯৭৯ সাল থেকে পাম চাষ শুরু হয়েছে। সঠিক পরিকল্পনা ও পরিচর্যার অভাব থাকা সত্তে¡ও পামের ফলন আমাদের আশান্বিত করেছে। এ চাষের ব্যাপকতার মধ্য দিয়ে ২০ হাজার কোটি টাকার ভোজ্য তেল আমদানির পরিবর্তে উল্টো ২৫ হাজার কোটি টাকার ভোজ্য তেল রফতানি করা সম্ভব। যার মধ্য দিয়ে দারিদ্র্য বিমোচন ও বেকারত্ব দূর করে দ্রুত জাতীয় অগ্রগতি ও উন্নয়ন সম্ভব। বর্তমান সরকার দারিদ্র্য বিমোচনে এমন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে পারেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন পরিবেশবিদ অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম।
এছাড়া নাগরিক নেতা অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও ক্ষুদ্র ঋণ সহায়তা ও বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে এ ধরনের প্রজেক্ট সত্ত¡র চালু করলে আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া সম্ভব। দেশে ভোজ্য তেলের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। সকলে মিলে এ কাজে এগিয়ে আসলে এর সুফল পাওয়া যাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাম চাষ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ