পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : ‘পরিশ্রম ধন আনে/পূণ্যে আনে সুখ/আলস্য দারিদ্রতা আনে/পাপে আনে দুঃখ’। যুগযুগের পুরনো এই প্রবাদটি সত্যে পরিণত করেছেন পলাশ উপজেলার চরনগরদী গ্রামের ডা. দীদার আলম ও তার স্ত্রী ডলি খান। দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে ডা. দীদার আলম ও তার স্ত্রী ডলি খান তাদের বাড়িতে গড়ে তুলেছেন দেশের বড় কোয়েল পাখির খামার। শুধু কোয়েল পাখির ব্যবসা করে শূন্য প্রায় অবস্থা থেকে কোটিপতিতে পরিণত হয়েছে ডা. দীদার আলমের পরিবার। মাত্র ২০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ৬ শত কোয়েল পাখির বাচ্চা লালন-পালন করে দীদার আলম ও তার স্ত্রী ডলি খান আজ ৪০ হাজার কোয়েল পাখির মালিক হয়েছেন। ডা. দীদার আলম দাবি করেছেন বাংলাদেশে তার কোয়েল পাখির খামারটি সর্বশ্রেষ্ঠ খামার। তিনি বর্তমানে ভোলা জেলা বাদে সারা বাংলাদেশের ৬৩টি জেলায়ই কোয়েল পাখি ও ডিম রফতানি করে থাকেন। পলাশ উপজেলার পলাশের চর গ্রামের আব্দুল হাকিম মিয়ার পুত্র ডা. দীদার আলমের জীবন খুব একটা সুখের ছিল না। চরনগরদী বাজারে তার একটি ছোটখাট ওষুধের ফার্মেসি ছিল। পল্লি চিকিৎসক ডা. দীদার আলম এখান থেকে যা আয় করতে পারতেন তা দিয়েই তার সংসার চলতো। ২০০৪ সালে কোনো এক ব্যক্তির অনুপ্রেরণায় তিনি ২০ হাজার টাকা ধার করে ৬ শত কোয়েল পাখির বাচ্চা ক্রয় করেন। এই বাচ্চাগুলো লালন-পালন করে ডিম পাড়ার উপযোগী করার পরই তার ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটতে থাকে। ৬ শত বাচ্চা যে ডিম দেয় তা বিক্রি করে তিনি মুনাফা করেন ১ লাখ ৮ হাজার টাকা। এরপর তিনি দ্বিতীয় কিস্তিতে আরো অধিক সংখ্যক বাচ্চা ক্রয় করেন। এতেও তার বিরাট অংকের টাকা লাভ হয়। এরপর তিনি ডিম ফোটানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি প্রথমে ৩টি ইনকিউবেটর ক্রয় করে বাচ্চা ফোটাতে শুরু করেন। শুরু করেন কোয়েল পাখির বাচ্চা বিক্রি। এসব বাচ্চা লালন-পালনের জন্য বাড়িতে কয়েকটি ঘর নির্মাণ করেন। এরপর তিনি আশেপাশের কয়েকটি ঘর ভাড়া করে বাচ্চা লালন-পালন ও বিক্রি শুরু করেন। চারদিকে তার খামারের সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ডিম ও বাচ্চা কেনার জন্য পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা তার বাড়িতে ভীড় জমাতে থাকে। এ অবস্থায় তার বাচ্চার চহিদা বৃদ্ধি পেতে থাকলে গ্রাহকদের চাহিদা মেটাবার জন্য আরো ৩টি ইনকিউবেটর ক্রয় করেন। এসব ইনকিউবেটর দিয়ে ফোটানো বাচ্চা সারা বাংলাদেশে সরবরাহ করতে থাকেন। তিনি একদিকে স্থাপন করেন ডিম ফোটানো বাচ্চা লালনের জন্য কয়েকটি খামার এবং ডিম বিক্রির জন্য স্থাপন করেন কয়েকটি খামার। শুধু তাই নয় তিনি মাংসের জন্য কোয়েল পাখি বিক্রি শুরু করেন। কিছুদিন পূর্বে ডা. দীদার আলমের শরিফা আক্তার নামে এক বোন ও তার স্বামী নুরুল হালিম খানকে নিয়ে তার খামারটি দেখতে যান। তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তার বাড়িতে একটি তিন তালা বিল্ডিং। এই বিল্ডিং’র নিচ তলায় তিনি থাকেন। দু তলা ও তিন তলায় তিনি স্থাপন করেছেন কোয়েল পাখির খামার। বাড়ির উঠানেই রয়েছে একটি কোয়েল পাখির বাচ্চা ফোটানোর আধুনিক ইনকিউবেটর। শুধু তাই নয় তিনি কোয়েল পাখির বিষ্টা দিয়ে গ্যাস তৈরি করে তা পারিবারিক কাজে ব্যবহার করেন। তিনি আধুনিক মডেলে তৈরি করেছেন একটি আধুনিক গ্যাস তৈরির কারখানা। সেখানে যাবার পর ডা. দীদার আলম জানান, তার এই সফলতার পেছনে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন এবং করছেন তার স্ত্রী আনোয়ারা খান ডলি। সূর্য উঠার পূর্ব থেকে খামারে খামারে ঘুরে তিনি কোয়েল পাখির পরিচর্যা করেন। তার স্ত্রী কোয়েল পাখি নিয়ে সারাদিন এতই ব্যস্ত থাকেন যে, তার শিশু বাচ্চাদেরকে নিয়মিত খাবার দিতেও ফুসরত পান না। ডলি খান খামারে খামারে ঘুরে খামারের কর্মচারীদের সাথে ডিম সংগ্রহ করেন। পাখির খাঁচাগুলো পরিষ্কার করেন। আবার কর্মচারীদের সাথে থেকে কোয়েল পাখিদের খাবার সরবরাহ করেন। এমনইভাবে অক্লান্ত পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে দিন কেটে যায় ডলি খানের। এ প্রতিবেদককে ঘরে বসিয়ে তিনি খামার থেকে ডেকে আনেন তার ভাগ্যবতী স্ত্রী ডলি খানকে। সুন্দর সুঠাম দেহের অধিকারী ডলি খানের চোখে মুখে কোনো ক্লান্তির ছাপ দেখা যায়নি। সহাস্য বদনে তিনি এই প্রতিবেদক ও তার এক সহযোগী মনসুর আলী শিকদারকে অভ্যর্থনা জানান। এরপর ডা. দীদার আলম ও তার স্ত্রী ডলি খান তাদের পরিবারের অতীত ও বর্তমানসহ ব্যবসার সাফল্য নিয়ে এ প্রতিবেদকের সাথে কথা বলেন। তার এ খামার নিয়ে টেলিভিশন চ্যানেলে বিভিন্ন সময় প্রচারিত প্রতিবেদনও এ প্রতিবেদককে দেখান। ডা. দীদার ও তার স্ত্রী ডলি খানের যৌথ শ্রমে গড়া কোয়েল পাখির খামার দেখে যে কেউই স্বগত: উক্তি করবেন ‘জীবনে যা কিছু কল্যাণকর/অর্ধেক তার করিয়াছে নারী/অর্ধেক তার নর। ডা. দীদার আলম জানান, একটি কোয়েল পাখি বিক্রি করেন ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। একশত ডিম বিক্রি করেন দেড়শত টাকা থেকে দুইশত টাকা দরে। নরসিংদী জেলার ৬টি উপজেলা শহর সারা দেশ থেকে হকাররা তার কাছ থেকে পাইকারি দরে কোয়েল পাখির ডিম কিনে নিয়ে ফেরি করে বিক্রি করে। তার এই খামারকে ঘিরে নরসিংদীসহ দেশের আনাচে-কানাচে সৃষ্টি হয়েছে বহুসংখ্যক ছোটখাট খামার। প্রায় প্রতিটি খামারই দিন দিন সমৃদ্ধি অর্জন করছে। সরকারের কাছে তার কিছু দাবি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, কোয়েল পাখি ও এর ডিম খুবই পুষ্টিকর খাবার। একটি কবুতরের বাচ্চা কিনতে দেড়শত টাকা লাগে। পক্ষান্তরে দেড়শত টাকা দিয়ে কমবেশি ৪টি কোয়েল পাখি কেনা যায়। অনেকে এখনো কোয়েল পাখির গোশত খেতে অভ্যস্ত হয়নি। সরকারের উচিৎ কোয়েল পাখি ও এর ডিমের উপকারিতা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে তোলা। এছাড়া তিনি তার ব্যবসার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের নিকট দাবি জানান।
এ সময় তিনি কোয়েল পাখির সিদ্ধ ডিম, চা, বিস্কুট, চানাচুর দিয়ে এ প্রতিবেককে আপ্যায়িত করেন। কথাবার্তা শেষ করে ফেরার সময় কয়েক কুড়ি ডিমও প্রতিবেদককে দিয়ে দেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।