Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফাঁস প্রশ্নে পাসের রেকর্ড

ডিজিটাল জালিয়াতির ব্যাপারে ভিসির স্বীকারোক্তি

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

ফলাফল প্রকাশ স্থগিতের ঘোষণা দিয়েও পূর্বনির্ধারিত দিন অনুযায়ী গতকালই প্রকাশ করা হয়েছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের দায়ে বিতর্কিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি অফিসে বিকেল ৩টা ৩০মিনিটে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ ফলাফল প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। এসময় তার সাথে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সামাদ, অনলাইন ভর্তি কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. হাসিবুর রহমান ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম। প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, এবছর ভর্তি পরীক্ষায় পাশের হার ২৬ দশমিক ২১শতাংশ, যা বিগত কয়েক বছরে অনুষ্ঠিত ঘ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রকাশিত পাশের হারের প্রায় দিগুণ। ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে ঘ ইউনিটে পাশের হার ছিল ১১ দশমিক ৪০ শতাংশ, ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে ছিল ১৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ৯দশমিক ৯১শতাংশ, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ ও ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে তা ছিল ১৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবছর এত রেকর্ড সংখ্যক পাশের বিপরীতে কি প্রশ্নপত্র ফাঁস কোন অবদান রেখেছে কিনা তা জিজ্ঞেস করলে ভিসি বলেন প্রশ্নপত্র প্রণয়ন কমিটি এবার বেশ সাবলীল প্রশ্ন করার কারণেই পাসের হার বেড়েছে, এর সাথে প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোন সম্পর্ক নেই।
তবে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ভিসি সরাসরি কোন উত্তর না দিয়ে বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস এই শব্দটি আমরা গ্রহণ করছিনা তবে তদন্ত কমিটি তাদের তদন্তে ডিজিটাল জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছে। তাৎক্ষণিক কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। সিআইডির মাধ্যমে অধিকতর তদন্তে জালিয়াতিতে যুক্ত বাকিরাও বের হয়ে আসবে এবং শাস্তির আওতায় আসবে, সেই সাথে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিবে বলেন জানান ভিসি। এসময় তিনি তদন্ত কমিটির কাজে সহযোগীতার জন্য তিনি বিশ^বিদ্যালয় সাংবাদিকদের ও শিক্ষার্থীদের আন্তরিক ধন্যবাদও জানান। অন্যদিকে, প্রশ্নপত্র পরীক্ষার আগেই ফাঁস হওয়া নিয়ে প্রশ্ন প্রণয়ন কমিটির দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান ভিসি। তিনি বলেন, এরকমটা হবার কোন সুযোগ নেই। প্রশ্নফাঁসের প্রমাণ পাওয়ার পর পরীক্ষা বাতিল করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ভিসি বলেন, পরীক্ষা বাতিলে কোন সুযোগ নেই। তবে যারা জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে তারা অতিদ্রুতই চিহ্নিত হবে এবং তারা যদি ভর্তিও হয়ে যায় সেক্ষেত্রে আমরা যে কোন সময় তারা ছাত্রত্ব বাতিল সহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এবারে ঘ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে মোট ৭০,৪৪০ জন শিক্ষার্থী ও এর মাঝে পাশ করেছে ১৮,৪৬৩ জন শিক্ষার্থী।
উল্লেখ্য, গত ১২ অক্টোবর ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শুরুর পৌনে এক ঘণ্টা আগে কয়েকটি পৃষ্ঠায় হাতে লেখে প্রশ্ন ফাঁস হয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। ভর্তি পরীক্ষার দিন সকাল ১০টা ২৮ মিনিটে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের কপিগুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অফিসে নিয়ে সহকারী প্রক্টর সোহেল রানার কাছে জমা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকরা। পরীক্ষা শেষে হাতে লেখা প্রশ্নের সাথে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়া প্রশ্নপত্রের মধ্যে বাংলায় ১৯টি, ইংরেজিতে ১৭টি, সাধারণ জ্ঞান ৩৬টি (বাংলাদেশ ১৬, আন্তর্জাতিক ২০) মোট ৭২টি প্রশ্ন হুবহু মিলে যায়। এঘটনায় গত ১৩ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা এস এম কামরুল আহসান শাহবাগ থানায় একটি এজহারও দায়ের করেন এবং সেই দিনই বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগীতায় প্রশ্নফাঁসের দায়ে অভিযুক্ত ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- জাহিদুল ইসলাম (৪৫), ইনসান আলী রকি (১৯), মোস্তাাকিম হোসেন (২০), সাদমান সালিদ (২১), তানভির আহমেদ (২১) ও আবু তালেব (১৯)। মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়, আসামিরা পরীক্ষার দিন রাত ১২টা ৫ মিনিট থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত প্রশ্নফাঁস করে। তারা মোবাইল সিমকার্ড, ইন্টারনেট, ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে জালিয়াতির মাধ্যমে ডিজিটাল সিস্টেমে প্রবেশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন দফতরের নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র সংগ্রহ এবং তা স্থানান্তর করে অবৈধভাবে অর্থ গ্রহণ করে আসছিল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফাঁস প্রশ্ন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ